নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহাকালের গর্ভে সবই হারিয়ে যাবে থাকে শুধু কিছু সুখ দুঃখের স্মৃতি !?
মুহাম্মদ নূরে আলম (সূফি বরষণ)
লেখক: লন্ডন প্রবাসী(গবেষক-সাংবাদিক এবং ব্লগার)
মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর ॥ এই করে পৃথিবীর আনুমানিক বয়স হয়ে গেলো ৪,৫০০ মিলিয়ন বছর। প্যালিওলিথিক বা আদি প্রস্তর যুগ থেকে সভ্যতা প্রবেশ করে নব্য প্রস্তর যুগ বা নিওলিথিক যুগে এবং কৃষি বিপ্লবের (খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০০-খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ) সূচনা ঘটে। এমনই করে সভ্যতা মোড় নেয় আরও একটি নব যু গের দিকে যখন মানুষ আগুন আবিষ্কার করতে শিখলো সাথে সাথে কৃষি যন্ত্রপাতিও। মানুষ গাছের পাতা ও বাকলের পরিবর্তে পশুর চামড়ার ব্যবহার শিখলো নিজেদের লজ্জা নিবারণের জন্য । এইভাবেই মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটতে থাকলো হ্রদ ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে, আর গড়ে উঠলো অনেক শহর জনপদ । এদের মধ্যে উন্নতি ও উৎকর্ষতার দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা, মিশরের নীলনদ তীরবর্তী সভ্যতা ও সিন্ধু সভ্যতা উল্লেখযোগ্য । এভাবেই মানুষের কল্পনার আত্মারা এক জনপদ থেকে অন্য জনপদে ঘুরে বেড়ায় কবির ভাষায়,..
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদি পিতা হযরত আদম আঃ ও তাঁর সন্তান হাবিল কাবিলের সভ্যতা এখন আর নেই । কিন্তু এখনও আমরা একই সহোদর দুবোন কে বিয়ে করি??! এখন আর হযরত সালেহ আঃ এর সামুদ জাতির জন্যে পাহাড়ের ভেতর থেকে গর্ভবতী উট বের হয়ে আসে না, কিন্তু টেস্ট টিউব বেবি আর জরায়ু কেটে মাংসপিণ্ড বের করি ঠিকই কিন্তু আমরা এখনও সেই সময়ে মতোও সভ্য হতে পারি নাই' মানব সভ্যতা আজ হাজার হাজার বছর অতিক্রম করার পরও । এখন আমরা সুউচ্চু অট্রলিকা বানাতে পারি ঠিকই কিন্তু সামুদ জাতির মতো পাহাড়ের পাথর কেটে এমন সুন্দর কারুকার্য খচিত সুবিশাল অট্রলিকা আজও বানা তে পারি নাই ?? সেই প্রতাপশালী সামুদ ও আদ জাতিও পৃথিবী থেকে ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের পাপের কারণে । মানব জাতির পিতা নবী ইব্রাহীম আঃ তাঁর পুত্র নবী ইসমাঈল আঃ আর তাদের বাবেল শহরের সভ্যতা ও প্রতাপশালী নমরুদও নেই' কিন্তু হিংস্র নমরুদের হিংস্র বাসনা এখনও মানুষের মনে রয়েছে জী বন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে বা পিটিয়ে মারার পাশবিকতা মধ্যদিয়ে ?!!! কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায় আমরা কি আজও সভ্য হতে পেরেছি ?? না পারি নাই' আজ ও আমাদের মাঝে রয়ে গেছে আদিম হিংস্র নমরুদের অশুভ পাপিষ্ঠ আত্মারা।
অভিশপ্ত গোষ্ঠী কওমে লুত ধ্বংস হয়েছিল সমকামের অপরাধে। নবী হযরত লুত (আ.) এর জাতি ছিল সমকামী। হজরত লুত তাদের এহেন কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য এবং হালাল পন্থায় নারীদের সঙ্গে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার অনুরোধ করেছেন বারবার। কিন্তু কে শোনে লুতের কথা! হজরত লুত ব্যর্থ হলেন। কিন্তু গেল বছরই বিশ্বব্যাপী সমকামীতাকে বৈধ ঘোষণা করলো আর ফেবুর প্রোফাই ছবি সমকামের রঙের নিজেকে রাঙিয়ে অভিশপ্ত লুত জাতির সাথে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা স্বগর্বে বিশ্বকে জানিয়ে দিলাম । আল্লাহ গজবের চিহ্ন জর্ডানের মৃত সাগর মানব সভ্যতার পাপের সাক্ষী হয়ে রয়েছে আজও । কিন্তু আজ পৃথিবীর প্রত্যেকটি শহুর নগর লূত জাতির পাপাচারে ভরপুর । আজ লূত আঃ বেঁচে থাকলে আল্লাহ কাছে হয়তো প্রশ্ন করতেন হে আল্লাহ পৃথিবীতে এতো পাপাচারে ভরপুর হওয়ার পরও কেন আমার জাতির মতো গজব দিচ্ছেন না?? লুত জাতি বিনাশ হয়ে গেছে কিন্তু আমরা কি সত্যিই সভ্য হতে পেরেছি ? আমরা কি লূত জাতির পাপের কাজ স্বগর্বে করছি না।
মহান আল্লাহ মানুষকে অন্যসব প্রাণী থেকে করেছে আলাদা, দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা। কিন্তু একজন মানুষও যখন কুকুর-বিড়ালের মতো লাগামহীন হয়ে যায় তার শ্রেষ্ঠত্ব কি আর থাকে? বন্যপ্রাণীও যৌন চাহিদা পূরণে বিপরীত লিঙ্গের দ্বারস্থ হয়। কুকুর-বিড়ালও সমলিঙ্গের সঙ্গে যৌন চাহিদা পূরণে অনাগ্রহী। মানব সমাজ তো বটেই চতুষ্পদ জানোয়ারও সমকামিতাকে ঘৃণা করে। কিন্তু যেই সমকামিতার অপরাধে একটি জাতিকে ধ্বংসের ভয়াল পরিণতি বরণ করতে হয়েছে, সেই ঘৃণ্য কাজটিকেই 'আধুনিকতা' এবং 'অধিকারের' কথা বলে আবার ছড়িয়ে দিতে কিছু মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের চেষ্টা চলছে অব্যাহতভাবে। চলছে দৈহিকভাবে মানুষ রেখে চেতনায় পশু বানিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতা। হে আল্লাহ এইসব ধ্বংসের আর পাপাচারের কথা মনে করে তোমার গজবের ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে এই বুঝি আজাব শুরু হলো!!??
পৃথিবীর প্রথম নৌযান বা জাহাজ আবিষ্কারক বিজ্ঞানী নবী হযরত নূহ আঃ মহা প্রাবন হতে জাতিকে রক্ষা করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন। কিন্তু মাবন সভ্যতা উন্নত হয়ে টাইটানিকের মতো বিশাল জাহাজ বানাতে পারলেও সুনামীর সময় সাহস করে আর জাহাজ চালাতে পারিনা বা নূহের মতো সেই বিশাল নিরাপদ জাহাজ আমরা এখনও বানাতে পারি নাই!!?? আসলে আমরা কতটুকু উন্নতি করতে পেরেছি সেটা এখন বিশাল বড় একটি প্রশ্ন ।
আমরা আজকাল প্রেমিক হওয়ার তীব্র উত্তেজনা নিয়ে বেপরোয়া প্রতিযোগিতা করি। কিন্তু নবী ইউসুফের মতো সুন্দর আর পবিত্রতম প্রেমিক হয়ে উঠতে পারি নাই?? আজকের যুবকরা কেন প্রেম শিখে না নবী ইউসুফের জীবন থেকে ?? এবং নবী মুসা আঃ থেকে যিনি পরিষ্কার করে কথা না ( জিহ্বা জড়তা) বলতে পারার পরও মানুষকে আকর্ষণ করার ছিল তাঁর অসাধারণ যোগ্যতা । এখনকার যামানার তরুণরা প্রেম করতে চাই কিন্তু নবী ইউসুফ ও নবী মুসার মতো স্মার্ট হতে পারে নাই আর তরুণীরা ও আছিয়া জুলেখার মতো হতে পারে নাই। হাজার বছরের পথপরিক্রমায় আজও আমরা প্রেমের ক্ষেত্রে সুসভ্যতার পরিচয় দিয়ে পারি নাই। যেখানে প্রেমের নামে বর্তমান সমাজে অশ্লীলতা নোংরামী আর অবৈধ যৌনতায় ভরপুর করে ফেলেছি । অতঃপর জরায়ুকে কাটাকাটি করে গোপনে চলে মানব শিশু হত্যার উৎসব। ছিঃ ছিঃ শত ধিক্কার এইসব মানুষ নামের জানোয়ারদের।
অভিশপ্ত বনী ইসরাঈল আর ফেরাউনরা বিনাশ হয়েগেছে কিন্তু তাদের কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছে বর্তমান পৃথিবীর প্রত্যেকটি শাসক। ফেরাউনদের অত্যাচারি আত্মা হয়ে উঠেছে বর্তমান পৃথিবীর শাসকদের আত্মা' এরা পিরামিডের মমীতে অভিশপ্ত ফেরাউনদের লাশ দেখেও শিক্ষা নেইনি। পৃথিবীর সমাজ সভ্যতা বদলায় কিন্তু শাসকদের চরিত্র বদলায় না। অভিশপ্ত বনী ইসরাঈলরা আল্লাহ নবী জাকারিয়া আঃ এর দেহ দ্বিখন্ডিত করে ছেড়ে দিলেও বর্তমানে বনী ইসরাঈসের সন্তান ইহুদিরা মানুষের দেহ দ্বিখন্ডিত করে মিট বার্গার বানিয়ে ম্যাকডোনাতে বিক্রি করে!?? বারবার মনে প্রশ্ন জাগে আমাদের এই হিংস্রতার শেষ কোথায়? অভিশপ্ত বনী ইসরাঈসের মতো আমরা নবীদেরকে হত্যা না করলেও প্রতিদিনই অসংখ্য বনী আদম সন্তানদের হত্যা করছি। এইভাবে আমরা জানতে পারি কিভাবে আল্লাহ গজবে অসংখ্য উন্নত সভ্যতার শহর নগর জনপদ বিনাশ হয়ে গেছে, কোনো কিছুরই আজ আর অবশিষ্ট নেই, এই পাপাচার পূর্ণ হিংস্র সভ্যতাও একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, সেই দিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যে দিন আমরা শুনবো আদ সামুদ আর লূতের জাতির মতো বিকট শব্দে আমাদের জনপদ গুলো কেঁপে উঠছে আর মুহুর্তে মধ্যে সব সাঙ্গ লীলা শেষ হয়ে যাবে । অতঃপর যার যার আমলনামা হাতে নিয়ে হাশের ময়দানে সব বনি আদম বিচারের জন্য হাজির হবে।
আমিও একদিন হারিয়ে যাব এই বর্ষ গুলোর মতো এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়া মানব সভ্যতার মতো মহাকালের অতল গর্ভে। এই পাপাচার পূর্ণ পৃথিবীতে সেই যে আমার পথ চলা শুরু শ্রাবনের এক বর্ষণমুহুর ভোরে, যার চিৎকারে মেঘনার ঘুম ভেঙে ছিলো॥ মেঘনার ভোরের শীতল বিশুদ্ধ বায়ু আমাকে প্রথম ছুঁয়ে ছিলো ॥ পৃথিবীতে এসে ই বুঝতে পেরেছিলাম এটাই পৃথিবীর শেষ যামানা কিন্তু আমরা পূর্বের জাতি গুলোর অনুসরণ না করলে হয়তো বা কিছু কাল শান্তির আয়ু বাড়াতে পারতাম। মাকে নিয়ে একবার মেঘনার পাড়ে আমার নাড়ি পুতার স্হানটি দেখে এসেছিলাম॥
সেই যে আমি মেঘনা বুড়িগঁঙ্গা ব্রহ্মপুত্র বুড়ি আরেকটা তিতাসের পাড় মাড়িয়ে এখন হাঁটছি টেমস নদীর পাড়ে ॥ এখনে এসেও কোনো স্বস্তি নেই এ যে আর এক মহা শয়তানে পাপের রাজ্য, যেখানে পাপাচার করা ও বলাকে মানুষ বেশি গর্ববোধ করে। নৈতিক অবক্ষয় আর কাকে বলে!! এই যে আমার মহাকালেরর পথে পথ চলা, এই চলার পথে কুড়িয়েছি অনেক আনন্দ দুঃখ কষ্ট হাসি কান্না ॥ মহাকালের পরতে পরতে জড়িয়েছি অনেক মায়ার বন্ধন ॥
মহাকাল বড়ই নিষ্ঠুর, হয় জয় করে নিজের নাম লিখাও সোনালী অক্ষরে মহাকালের গর্ভে, না হয় চিরদিনের জন্যে হারিয়ে যাও মহাকালের অতল গহ্বরে॥ এই হারা আর জিতার খেলায় দুবছর হলো চিরদিনের জন্যে হারালাম আমার জন্মদাতা প্রিয় পিতাকে ॥ আরও যে কত প্রিয় মুখ হারিয়েছি তার হিসেব নাই॥ মহাকাল বলে তোর জীবন নদীর মতো ঐ যে মেঘনার পাড়ে জন্ম ॥ শুধুই চলছে ভাঙা গড়ার খেলা॥ এই ভাবেই ছুটে চলছে জীবন নদীর মতো ॥ এখনও নদীর কূলের দেখা পায়নি শুধুই মাঝ নদীতে হাবুডুবু খেয়েই চলছি। জীবন নামক এই নদীর যদি কোনো দিন ছুটে চলাবন্ধ হয়ে যায়' তবে নদীর অস্তিত্ব আর থাকে না ॥ জীবনও তেমনই শুধু ছুটে চলছে, তা না হলে অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে যে ॥ এই অস্তিত্ব রক্ষা করা আর না করা নিয়ে আজ আমি বড়ই বিপাকে পড়েছি । নিজে কি স্রষ্টার অনুগত বান্দা হিসেবে তুলে ধরবো নাকি পাপাচার পূর্ণ সমাজের স্রোতের নিজেকে ভাসিয়ে দিব? আমি সূফি কি করে জেনে শুনে বিধাতার অবাধ্য হয়, এই প্রশ্নের মুখে নদীর মতো প্রবাহমান জীবনকে নিয়ে এই আমি মহাকালের পথে চলতে চলতে আজ বড়ই ক্লান্ত আর কত কাল চলতে হবে এমনই করে জানি না॥ তবে আজ শুধু একটিমাত্র প্রার্থনা বিশ্ব জাহানের মালিকের কাছে ২০১৬ সাল আমার জন্যে সকল মানুষের জন্যে মঙ্গলময় কল্যাণময় হোক॥ বয়ে যাক সকলের প্রাণে প্রাণে শান্তি আর প্রশান্তির পুষ্প বর্ষণের ছোঁয়া ॥ আর হে আল্লাহ তোমার একটি মাত্র বিশ্বাসী বান্দা বেঁচে থাকা পর্যন্ত পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিয়ো না। তোমার অনুগ্রহকে স্মরণ করে আমার শুধু আমীন আমীন ধ্বনি করতে চাই ।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
©somewhere in net ltd.