নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নীল অনিচ্ছুক কৃষকদের ধরে আগুন লাগিয়ে দিত। নতুন জমিদারগণ দস্যু-তষ্করদেরকে প্রতিপালন করতো ধন অর্জনের উদ্দেশ্যে।
অনাবৃষ্টি হইয়া সমুদয় শস্য শুষ্ক হউক, জল প্লাবন হইয়া দেশ উচ্ছিন্ন যাউক, রাজস্বদানে অক্ষম হইয়া প্রজারা পলায়ন করুক, তথাপি নির্দিষ্ট দিবসে সূর্যাস্তের প্রাক্কালে তাঁহাকে সমস্ত রাজস্ব নিঃশেষ পরিশোধ করিতে হইবে।
হতভাগ্য অসহায় কৃষকগণ ম্যজিস্ট্রেটের নিকট থেকে কোন প্রকারের প্রতিকার ও ন্যায় বিচারের আশা করতে পারতো না। সরকারের ঘরে যে রাজস্ব যেতো, তার চতুর্গুণ –দশগুণ প্রজাদের নিকটে জোর-জবরদস্তি করে আদায় করতো। তেইশ প্রকার ‘অন্যায় ও অবৈধ’ আবওয়াব রায়তদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করা হতো। বুকানন বলেন, “রায়তদেরকে বাড়ী থেকে ধরে এনে কয়েকদিন পর্যন্ত আবদ্ধ রেথে মারপিট করে খাজনা আদায় করা তো এক সাধারণ ব্যাপার ছিল। উপরন্তু নিরক্ষর প্রজাদের নিকট থেকে জাল রসিদ দিয়ে জমিদারের খাজনা আদায় করে আত্মসাৎ করতো”।
সূফি বরষণ
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলাদেশের কৃষক বইয়ের লেখক বিখ্যাত বামধারার গবেষক বদরুদ্দীন উমর তাঁর বইয়ের ভূমিকায় বলেন, বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে সম্প্রদায় হিসেবে মুসলমানরাই ছিলেন অনেক সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদের ওপর জোতদার মহাজনদের নির্যাতন ও ছিলো নিদারুণ। ...............তাঁর কারণ বাংলাদেশের জমিদার জোতদার মহাজনদের মধ্যে বর্ণ হিন্দুদের ছিল ব্যাপক প্রাধান্য। এই বর্ণ হিন্দুরাই ছিলেন কংগ্রেসের নেতৃত্বে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলাদেশের কৃষক, বদরুদ্দীন উমর, মাওলা ব্রাদার্স প্রকাশনী, সপ্তম মুদ্রণ জানুয়ারি ২০১৩।
বর্ণ হিন্দু জমিদার ও জোতদার মহাজনদের দ্বারা কৃষকদের উপর নির্যাতনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করার সম্পর্কে একই বইয়ের ১৪ পৃষ্ঠায় গবেষক বদরুদ্দীন উমর বলেন, এই নতুন রাজস্ব ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রাপ্য ভূমি রাজস্ব নির্ধারিত হয় দুই কোটি ৬৮ লাখ টাকা অর্থাৎ ৩৪ লাখ পাউন্ড।
এই প্রসঙ্গে ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জয়া চ্যাটার্জীর কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, তিনি বলেন: অধীন প্রজা ( কোর্ফা) ছিল সবচেয়ে বেশি গরীব; জমিদারদের চেয়ে তাদের ওপর বেশি অত্যাচার করত রায়তি স্বত্বের অধিকারী বা পতনিদার_ কারণ তাদের কাছ থেকেই তারা জমি গ্রহণ করত। রায়তি স্বত্বের অধিকারী বা পতনিদার জমিদারকে যে খাজনা দিত তার চেয়ে বেশি তারা আদায় করত অধীন প্রজাদের কাছ থেকে । বাঙলা ভাগ হল( হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা ও দেশ বিভাগ ১৯৩২- ১৯৪৭ ) জয়া চ্যাটার্জী, এল অ্যালমা পাবলিকেশনস, প্রথম সংস্করণ ১৯৯৯।
কোম্পানীর হিন্দু কর্মচারীগণ গ্রামবাংলার ধ্বংস সাধনে কেন সর্বনাশা ভূমিকা পালন করেছিল। জনৈক ইংরেজ মন্তব্য করেন, ইংরেজ ও তাদের আইন-কানুন যে একটি মাত্র শ্রেণীকে ধ্বংসের মুখ থেকে রক্ষা করেছিল তা হলো, তাদের অধীনে নিযুক্ত এতদ্দেশীয় গোমস্তা-দালাল প্রতিনিধিগণ। এসব লোক পংগপালের মতো যেভাবে দ্রুতগতিতে গ্রামবাংলাকে গ্রাস করতে থাকে তাতে করে তারা ভারতের অস্তিত্বের মূলেই আঘাত করছিল। -(Muinuddin Ahmad Khan, Muslim Struggle for Freedom in Bengal, pp. 8)।
ইংরেজদের পলিসি ছিল, যাদের সাহায্যে তারা এ দেশের স্বাধীনতা হরণ ক’রে এখানে রাজনৈতিক প্রভুত্ব লাভ করেছে, তাদেরকে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত ক’রে মুসলমানদেরকে একেবারে উৎখাত করা, যাতে ক’রে ভবিষ্যতে তারা আর কখনো স্বাধীনতা ফিরে পাবার কোন শক্তি অর্জন করতে না পারে। হ্যাস্টিংসের ভূমি ইজারাদান নীতি ও কর্ণওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে হিন্দুরা মুসলমান জমিদারদের স্থান দখল করে। নগদ সর্বোচ্চ মূল্যদাতার নিকটে ভূমি ইজারাদানের নীতি কার্যকর হওয়ার কারণে প্রাচীন সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদারগণ হঠাৎ সর্বোচ্চ মূল্য নগদ পরিশোধ করতে অপারগ হয়। পক্ষান্তরে হিন্দু বেনিয়অ শ্রেণী, সুদী মহাজন, ব্যাংকার ও হিন্দু ধনিক-বণিক শ্রেণী এ সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে। প্রাচীন জমিদারীর অধিকাংশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে এসব ধনিক-বণিকদের কাছে অচিরেই হস্তান্তরিত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান জমিদারদের অধীনে নিযুক্ত হিন্দু নায়েব-ম্যানেজার প্রভৃতির স্বীকৃতি দান।
উপরের কথার সূত্র ধরে বলতে হয় যে, জমিদার এবং ইংরেজরা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণ ফসল কম হলে বা না হলেও খাজনা মওকুফ করতো না।
সেই কথাই উঠে এসেছে ডাব্লিউ হান্টারের লেখা পল্লী বাংলার ইতিহাস বইয়ের( দিব্য প্রকাশ সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০০২ ) ২৪ পৃষ্ঠায়। ডাব্লিউ হান্টার লেখেন, ১৭৬৮ সালে আংশিকভাবে ফসল বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৬৯ সালের প্রথম দিকে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তবে এই অভাব অনটনের ফলে সরকারের আদায়কৃত খাজনার পরিমাণ তেমন হ্রাস পায়নি। স্থানীয় অফিসারদের অভিযোগ আপত্তি সত্ত্বেও সদর দফতরের কর্তৃপক্ষ জানান যে, কড়াকড়ি ভাবে খাজনা আদায় করা হয়েছে।
১৮৪৪ সালের Calcutta Review-তে যে তথ্য প্রকাশিত হয় তাতে বলা হয়। এক ডজন জমিদারীর মধ্যে, যাদের জমিদারীর পরিধি ছিল একটি ক’রে জেলার সমান, মাত্র দু’টি পূর্বতন জমিদারদের দখলে রয়ে যায় এবং অবশিষ্ট হস্তগত হয় প্রাচীন জমিদারদের নিম্নকর্মচারীর বংশধরদের। এভাবে বাংলার সর্বত্র এক নতুন জমিদার শ্রেণীর পত্তন হয়, যারা হয়ে পড়েছিল নতুন বিদেশী প্রভুদের একান্ত অনুগত ও বিশ্বাসভাজন।
হান্টার তাঁর The Indian Mussalmans গ্রন্থে বলেন, যেসব হিন্দু কর আদায়কারীগণ ঐ সময় পর্যণ্ত নিম্নপদের চাকুরীতে নিযুক্ত ছিল, নয়া ব্যবস্থার বদৌলতে তারা জমিদার শ্রেণীতে উন্নীত হয়। নয়া ব্যবস্থা তাদেরকে জমির উপর মালিকানা অধিকার এবং সম্পদ আহরণের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। অথচ মুসলমানেরা নিজেদের শাসনামলে এ সুযোগ সুবিধাগুলো একচেটিয়াভাবে ভোগ করেছে। -(Hunter, The Indian Mussalmans: অনুবাদ আনিসুজ্জামান, পৃঃ ১৪১)।
মুসলিম শাসনামলে আইন ছিল যে, জমিদারগণ সমাজবিরোধী, দুষ্কৃতিকারী ও দস্যু-তস্করের প্রতি কড়া নজর রাখবে। ধরা পড়লে লুণ্ঠিত দ্রব্যাদিসহ তাদেরকে সরকারের নিকটে সমর্পণ করবে। ১৭৭২ সালে কোম্পানী এ আইন রহিত করে। ফলে, নতুন জমিদারগণ দস্যু-তষ্করকে ধীরয়ে দেয়ার পরিবর্তে তাদের প্রতিপালন করে লুণ্ঠিত দ্রব্যাদির অংশীদার হতে থাকে। এটা অনুমান করতে কষ্ট হবার কথা নয় যে, এসব দস্যু-তষ্কর কারা ছিল, এবং কারা ছিল গ্রামবাংলার লুণ্ঠিত হতভাগ্যের দল। ১৯৪৪ সালে Calcutta Review-প্রকাশিত তথ্যে বলা হয় যে, এসব নতুন জমিদারগণ দস্যু-তষ্করদেরকে প্রতিপালন করতো ধন অর্জনের উদ্দেশ্যে। ১৭৯৯ সালে প্রকাশিত ঢাকা-জালালপুরের ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টেও এসব দুষ্কৃতি সত্য বলে স্বীকার করা হয়।
-(Muinuddin Ahmad Khan –Muslim Struggle for freedom in India –oo.10)।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত মুসলমান জমিদারদের উৎখাত ক’রে শুধুমাত্র এক নতুন জমিদার শ্রেণীরই পত্তন করেনি, নতুনভাবে জমির খাজনা নির্ধারণেরও পূর্ণ অধিকার তাদেরকে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে তারা চরম স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দেয়। এসব জমিদার সরকারী রাজস্বের আকারে অতি উচ্চহারে ঠিকাদার তথা পত্তনীদারদের নিকটে তাদের জমিদারীর ভারার্পণ করতো। তারা আবার চড়া খাজনার বিনিময়ে নিম্নপত্তনীদারদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করতো। অতএব সরকারের ঘরে যে রাজস্ব যেতো, তার চতুর্গুণ –দশগুণ প্রজাদের নিকটে জোর-জবরদস্তি করে আদায় করতো। বলতে গেলে, এ নতুন জমিদার শ্রেণী রায়তদের জীবন-মরণের মালিক-মোখতার হয়ে পড়েছিল।
ফরিদপুর জেলার ম্যাজিস্ট্রেট আপিস থেকে এমন কিছু সরকারী নথিপত্র পাওয়া যায়, যার থেকে এ তথ্য প্রকাশিত হয় যে, অন্ততঃপক্ষে তেইশ প্রকার ‘অন্যায় ও অবৈধ’ আবওয়াব রায়তদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করা হতো। বুকানন বলেন, “রায়তদেরকে বাড়ী থেকে ধরে এনে কয়েকদিন পর্যন্ত আবদ্ধ রেথে মারপিট করে খাজনা আদায় করা তো এক সাধারণ ব্যাপার ছিল। উপরন্তু নিরক্ষর প্রজাদের নিকট থেকে জাল রসিদ দিয়ে জমিদারের খাজনা আদায় করে আত্মসাৎ করতো”। (M. Martin –The History, Antiquities, Topography & Statistics of Eastern India, London-1838, Vol. 2).।
এই প্রসঙ্গে বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা (১৮০০-১৯০০) বইয়ের লেখক বিনয় ঘোষ ( বুক ক্লব প্রথম প্রকাশ বইমেলা ২০০০)২৪-২৫ পৃষ্ঠায় বলেন, রেভারেন্ড আলেকজান্ডার ডাফ ও আরও ২০ জন মিশনারি বলেন, (এপ্রিল ১৮৭৫ ) জমিদাররা চাষীদের সঙ্গে ব্যবহার করেন ঠিক প্রজাদের মতো নয়, কতকটা ক্রীতদাসের মতো। তাঁরা নিজেদের রাজা মহারাজাদের মতো মনে করেন। প্রজাদের কাছে খাজনাদি যা তাঁদের ন্যায্য পাওনা, তার চেয়ে অনেক বেশি তাঁরা নানা কৌশলে আদায় করেন এবং বিনা পারিশ্রমিককে, নিজের নানারকমের কাজে প্রজাদের খাটিয়ে নেন। তাছাড়া অত্যাচার যে কতরকমের করেন তা বলে শেষ করা যায় না।।
এইরকম আরও অনেকের উক্তি উদ্ধৃতি করা যায়, বক্তব্য সকলেরই এক- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে চাষীর সর্বনাশ হয়েছে, চাষের অবনতি হয়েছে, গ্রাম ও গ্রাম সমাজ ধ্বংসের পথে এগিয়ে গিয়েছে। .....উনিশ শতকের সাময়িকপত্রের আলোচনা থেকেও বাংলাদেশের এই জমিদারদের সম্বন্ধে অনেক কথা জানা যায়। কয়েকটি আলোচনার কথা আমরা এখানে উল্লেখ করছি। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা জমিদারদের রাজস্ব সংগ্রহ প্রসঙ্গে লিখেছেন শ্রাবণ ১৩৭২ বাংলা " রাজস্ব সংগ্রহার্থে কি অপূর্ব কৌশল, কি পরিপাটি নিয়ম, কি অদ্ভুত নৈপুণ্যই প্রকাশ করিয়াছেন! প্রজারা নিঃস্ব ও নিরন্ন হউক, তথাপি তাহারদিগকে নিরূপিত রাজস্ব দিতেই হইবে, ভূস্বামির সর্ব্বস্বান্ত হউক, তথাপি তিনি ত্রি মাসের পর কপর্দ্দক মাত্র রাজস্বও অনাদায়ী রাখিতে পারেন না। অনাবৃষ্টি হইয়া সমুদয় শস্য শুষ্ক হউক, জল প্লাবন হইয়া দেশ উচ্ছিন্ন যাউক, রাজস্বদানে অক্ষম হইয়া প্রজারা পলায়ন করুক, তথাপি নির্দিষ্ট দিবসে সূর্যাস্তের প্রাক্কালে তাঁহাকে সমস্ত রাজস্ব নিঃশেষ পরিশোধ করিতে হইবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলার মুসলিম সমাজের অবস্থা উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কেমন ছিল, তার একটা নিখুঁত চিত্র অংকন করতে হলে জানতে হবে এ সমাজের তিনটি প্রধান উপাদান বা অংগ অংশে কোন অবস্থা বিরাজ করছিল। সমাজের সে তিনটি অংগ অংশ হলো –নবাব, উচ্চশ্রেণী ও কৃষক সম্প্রদায়। হান্টার বলেন, জীবিকার্জনের সূত্রগুলির প্রথমটি হচ্ছে, সেনাবাহিনী। সেকানে মুসলমানদের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ হ’য়ে যায়। কোন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান আর আমাদের সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করতে পারে না। যদিও কদাচিৎ আমাদের সামরিক প্রয়োজনের জন্যে তাদেরকে কোন স্থান দেয়া হতো, তার দ্বারা তার অর্থোপার্জনের কোন সুযোগই থাকতো না।
তাদের অর্থোপার্জনের দ্বিতীয় সূত্র ছিল –রাজস্ব আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদ। কিন্তু উপরে বর্ণিত হ’য়েছে কিভাবে নিম্নপদস্থ হিন্দু রাজস্ব আদায়কারীগণ কোম্পানীর অনুগ্রহে এক লাফে মুসলমানদের জমিদারীর মালিক হ’য়ে বসে। লর্ড মেটকাফ ১৮২০ সালে মন্তব্য করেন, দেশের জমি-জমা প্রকৃত মালিকের নিকট থেকে কেড়ে নিয়ে একশ্রেণীর বাবুদের নিকটে হস্তান্তরিত করা হয় –যারা উৎকোচ ও চরম দুর্নীতির মাধ্যমে ধনশালী হয়ে পড়েছিল। এ এমন এক ভয়াবহ নির্যাতনমূলক নীতির ভিত্তিতে করা হয় যার দৃষ্টান্ত জগতে বিরল।
-(E. Thompson The life of Charls Lord Metcalfe; A.R. Mallick : British Policy and the Muslims of Bengal)।
ঊনবিংশ শতাব্দীর পূর্বেই রাজস্ব বিভাগের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত মুসলমান কর্মচারী ও ভুমির প্রকৃত মালিকের স্থান অধিকার করে বসে ইংরেজ ও হিন্দুগণ। আবহমান কাল থেকে ভারতের মুসলমান শাসকগণ জনগণের শিক্ষা বিস্তারকল্পে মুসলিম মনীষীদেরকে জায়গীর, তমঘা, আয়মা, মদদে-মায়াশ প্রভৃতি নামে লাখেরাজ ভূ-সম্পত্তি দান করতেন। বুকাননের
মতে একমাত্র বিহার ও পাটনা জেলার একুশ প্রকারের লাখেরাজ ভূমি দান করা হয়েছিল বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। ইংরেজ আমলে নানান অজুহাত এসব লাখেরাজদারকে তাদের মালিকানা থেকে উচ্ছেদ করা হয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, বর্ধমারে স্পেশাল ডিপুটি কলেক্টর মিঃ টেইলার একদিনে ৪২৯ জন লাখেরাজদারের বিরুদ্ধে তাদের অনুপস্থিতিতে রায় দান করেন।
ইংরেজ সরকারের Tribunals of Resumption-এর অধীনে লাখেরাজ সম্পত্তি সরকারের পুনর্দখলে নেয়া হয়। চট্টগ্রাম বোর্ড অব রেভেনিউ-এর জনৈক অফিসার নিম্নোক্ত মন্তব্য করেনঃ সরকারের নিয়তের প্রতি লাখেরাজদারগণ সন্দিগ্ধ হ’য়ে পড়লে তাতে বিস্ময়ের কিছুই থাকবে না। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। ১৪৬৩টি মামলার মধ্যে সব কয়টিতেই লাখেরাজদারদের অনুপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ তিক্ত অভিজ্ঞতার পর Tribunals of Resumption-এর প্রতি তাদের আস্থাহীন হবারই কথা (Comment by Smith in Harvey’s Report of 19th June 1840; A.R. Mallick British Policy and the Muslims of Bengal).।
মুসলমান লাখেরাজদারদের ন্যায্যা ভূমির মালিকানা থেকে উচ্ছেদ করার জন্যে নানাবিধ হীনপস্থা অবলম্বন করা হতো এবং ইংরেজ কর্মচারীদের মধ্যে এ ব্যাপারে এক বিদ্বেষদুষ্ট মানসিকতা বিরাজ করতো। লাখেরাজদারদের সনদ রেজেষ্টী নাক রার কারণে বহু লাখরাজ বাজেয়াপ্ত করা হয়। জেলার কালেকটরগণ ইচ্ছা করেই সময় মতো সনদ রেজেষ্ট্রী করতে গড়িমসি করতো। তার জণ্যে চেষ্টা করেও লাখেরাজদারগণ সনদ রেজেষ্ট্রী করাতে পারতেন না। চট্টগ্রামে লাখেরাজদারদের কোর্টে হাজির হবার জন্যে কোন নোটিশই দেয়া হতো না। অনেকক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে যে, মামলার ডিক্রী জারী হবার বুহ পূর্বেই সম্পত্তি অন্যত্র পত্তন করা হয়েছে। ১৮২৮ থেকে ১৮৫১ সাল পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে সমগ্র বাংলা বিহারে লাখেরাজদারদের মিথ্যা তথ্য সংগ্রহের জন্যে চর, ভূমা সাক্ষী ও রিজাম্পশন অফিসার পংগপালের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসলমানদেরকে মামলায় জড়িত করে। এসব মামলায় সরকার ছাড়াও তৃতীয় একটি পক্ষ বিরাট লাভবান হয়। যারা মিথ্যা সাক্ষদান করে এবং যারা সরকারী কর্মচারীদের কাছে কাল্পনিক তথ্য সরবরাহ করে –তারা প্রভূত অর্থ উপার্জন করে। পক্ষান্তরে, মুসলিম উচ্চম্রেণী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। লাখেরাজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার ফলে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হ’য়ে যায়।
পন্ডিত জওহরলাল নেহরু বলেন: ইংরেজরা বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে বহু ‘মুয়াফী’ অর্থাৎ লাখেরাজ ভূ-সম্পত্তির অস্তিত্ব ছিল। তাদের অনেক ছিল ব্যক্তিগত, কিন্তু অধিকাংশই ছিল শিক্ষায়তনগুলির ব্যয় নির্বাহের উদ্দেশ্যে ওয়াকফকৃত। প্রায় সকল প্রাইমারী স্কুল, মকতব এবং বহু উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান এসব ‘মুয়াফীর’ আয় নির্ভর ছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বিলাতে তাদের অংশীদাগণকে মুনাফা দেয়ার জন্যে তাড়াতাড়ি টাকা তোলার প্রয়োজনবোধ করে। কারণ কোম্পানী ডিরেক্টরগণ এজন্যে খুব চাপ দিচ্ছিল। তখন এক সুপরিকল্পিত উপায়ে ‘মুয়াফী’র ভূ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নীতি গৃহীত হয়। এসব ভূ-সম্পত্তির সপক্ষে কঠিন সাক্ষ্যপ্রমাণ পেম করার হুকুম জারী করা হয়।
কিন্তু পুরানো সনদগুলি ও সংশ্লিষ্ট দলিলপত্র ইতিমধ্যে হয় কোথাও হারিয়ে গেছে, নয় পোকায় খেয়ে ফেলেছে। অতএব প্রায় সকল ‘মুয়াফী’ বা লাখেরাজ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হলো। বহু বনেদী ভূম্যাধিকারী স্বত্বচ্যুত হলেন। বহু স্কুলে কলেজের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেল। এভাবে বহু জমি সরকারের খাস দখলে আসে আর বহু বনেদী বংশ উৎখান হয়ে যায়। এ পর্যন্ত যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপরোক্ত ‘মুয়াফী’র আয় নির্ভর ছিল, সেগুলি বন্ধ হয়ে গেল। বহু সংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষা বিভাগীয় কর্মচারী বেকার হ’য়ে পড়লেন। -(Pandit Jawhellal Nehru: The Discovery of India, pp. 376-77)।
উচ্চ ও সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর মুসলমানদের জীবিকার্জনের তৃতীয় অবলম্বন ছিল সরকারের অধীনে চাকুরী –বিচার ও প্রশাসনিক বিভাগগুলিতে। কোম্পানী দেওয়ানী লাভের পরও প্রায় পঞ্চাশ বছর যাবত তাঁরা চাকুরীতে বহাল ছিলেন। কারণ তখন পর্যন্ত সরকারী ভাষা ছিল ফারসী। কিন্তু হঠাৎ আকস্মিকভাবে ফারসীর পরিবর্তে ইংরেজীকে সরকারী ভাষা করা হয়। মুসলমানগণ তার জন্যে পূর্ব থেকে মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। ১৮৩২ সালে সিলেক্ট কমিটির সামনে ক্যাপ্টেন টি ম্যাকাম প্রস্তাব পেশ করেন যে, ক্রমশঃ ইংরেজী ভাষার প্রচলন করা হোক এবং মুস্যলমান কর্মচারীদেরকে অন্ততঃ পাঁচ/ছ’বছরের অবকাশ দিয়ে নোটিশ দেয়া হোক। হন্ট ম্যাকেঞ্জীও অনুরূপ প্রস্তাব পেশ করেন। তিনি বলেন, জেলাগুলিতে ক্রমশঃ এবং পর পর ইংরেজীর প্রচলন করা হোক। কিন্তু সহসা সর্বত্র ও পরিবর্তন সাধিত হওয়ার ফলে হাজার হাজার মুসলমান কর্মচারী চাকুরী থেকে অপসারিত হন যাদের জীবিকা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতো একমাত্র চাকুরীর উপর। ১৮২৯ সালে সবরকম শিক্সার বাহন হিসাবে স্কুল-কলেজে ইংরেজী ভাষা শিক্ষা দেয়া শুরু হয়। ১৮৩৭ সালের ১লা এপ্রিল থেকে (তৎকালীন আর্থিক বৎসরের প্রথম দিন) সহসা সরকারী ভাষা হিসাবে ইংরেজীর প্রবর্তন হয়।
হান্টার সাহেবও এসব সত্য স্বীকার করে বিদ্রুপ করে বলেছেনঃ
“এখন কেবলমাত্র জেলখানায় দু’একটা অধঃস্তন চাকুরী ছাড়া আর কোথাও ভারতের এই সাবেক প্রভুরা ঠাঁই পাচ্ছে না। বিভিন্ন অফিসে কেরানীর চাকুরীতে, আদালতের দায়িত্বশীল পদে, এমনটি পুলিশ সার্ভিসের উর্ধ্বতন পদগুলিতে সরকারী স্কুলের উৎসাহী হিন্দু যুবকদেরকে নিযুক্ত করা হচ্ছে”।
এ পরিবর্তনের ফলে হিন্দু সম্প্রদায় পূর্ণ সুফল ভোগ করে। বিভিন্ন কলেজ থেকে ইংরেজী ভাষা শিক্ষা করে তারা সর্বথ্র সরকারী চাকুরীতে একচেটিয়া অধিকার লাভ করে। পক্ষান্তরে রাজনৈতিক অগনে পট পরিবর্তনের ফলে সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারসমূহ জীবিকার্জনের সকল সুযোগ-সুবিধা তেকে বঞ্চিত হ’য়ে দারিদ্র্য, অনাহার ও ধ্বংসের মুখে নিক্ষিপ্ত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষককুলের যে চরম দুর্দশা হ’য়েছিল তার কিঞ্চিত আভাস উপরে দেয়া হয়েছে।
একথারও উল্লেখ করা হয়েছে যে, জমিদার এবং প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে আরও দুটি স্তর বিরাজ করতো। যথা পত্তনীদার ও উপপত্তনীদার। জমিদারের প্রাপ্য খাজনার কয়েকগুণ বেশী এ দুই শ্রেণীর মাধ্যমে রায়তদের কাছ থেকে আদায় করা হতো এবং তাতে করে রায়ত বা কৃষকদের শোষণ-নিষ্পেষণের কোন সীমা থাকতো না। জমিদার-পত্তনীদারদের উৎপীড়নে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়তো। বাধ্য হয়ে তাদেরকে হিন্দু মহাজনদের দ্বারস্থ হতে হতো। শতকরা ৩৭ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত হারে সুদে তাদেরকে টাকা কর্জ করতে হতো। উপরন্তু তাদের গরু/মহিষ মহাজনের কাছে বন্ধক রাখতে হতো। অভাবের দরুন মহাজরেন কাছে অগ্রিম কোন শস্য গ্রহণ করতে হলে তার দ্বিগুণ পরিশোধ করতে হতো। আবার উৎপন্ন ফসল যেতেতু মহাজনের বাড়ীতেই তুলতে হতো, এখানেও তাদেরকে প্রতারিত করা হতো। মোটকথা হতভাগ্য কৃষকদের জীবন নিয়ে এসব জমিদার মহজনরা ছিনিমিনি খেলে আনন্দ উপভোগ করতো।
কৃষকদের এহেন দুঃখ-দুর্দশার কোন প্রতিকারের উপায়ও ছিল না। কারণ তা ছিল অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। উপরন্তু জমিদার ও তাদের দালালগণ উৎকোচ ও নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে খরচ কয়েকগুণে বাড়িয়ে দিত। পরিণাম ফল এই হতো যে, জমিদার মহাজন তাদেরকে ভিটেমাটি ও জমিজমা থেকে উচ্ছেদ করে পতের বিভারীতে পরিণত করতো।
কৃষক সম্প্রদায় ধান ও অন্যান্য শস্যাদি উৎপন্নের সাথে সাথে নীলচাষও করতো। এই নীলচাষের প্রচলন এদেশে বহু আগে থেকেই ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ভারত থেকে নীল রং সর্বপ্রথম ইউরোপে রপ্তানী হয়। ব্রিটিশ তাদের আমেরিকান ও পশ্চিম ভারতীয় উপনিবেশগুলিতে নীলচাষের ব্যবস্থা করে। এগুলি তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবার পর বাংলা প্রধান নীল সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়। ১৮০৫ সালে বাংলায় নীলচাষের পরিমাণ ছিল ৬৪,৮০৩ মণ এবং ১৮৪৩ সালে তার পরিমাণ হ’য়ে পড়ে দ্বিগুণ। বাংলা, বিহার এবং বিশেষ করে ঢাকা, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, নদিয়া, মুশিদাবাদ প্রভৃতি মুসলিম অধ্যুষিত জেলগুলিতে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশের তত্বাবধানে ব্যাপক আকারে নীলচাষ করা হয়। কিন্তু বিদেশী শাসকগণ নীলের এমন নিম্নমূল্য বেঁধে দেয় যে, চাষীদের বিঘাপ্রতি সাত টাকা ক’রে লোকসান হয় যা ছিল বিঘাপ্রতি খাজনার সাতগুণ। তথাপি চাষীদেরকে নীলচাষে বাধ্য করা হতো। বাংলার নীলচাষীদের উপরে শাসকদের অমানুষিক অত্যাচার উৎপীড়নের মর্মন্তুদ ও লোমহর্ষক কাহিনী ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। ক্ষমতা মদমত্ত শাসক ও তাদের দালালদের মানবতাবোদ সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছিল। নতুবা তাদের নিষ্পেষণের দরুন কৃষক সমাজের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার মর্মন্তুদ হাহাকারে বাংলার আকাশ বাতাস বিদীর্ণ হতো না।
দরিদ্র ও দুঃস্থ কৃষকগণ বেঁচে থাকার জন্যে নীলচাষের মাধ্যমে কিছু অর্থ উপার্জনের আশা করতো। তাদের দারিদ্র্য ও অসহায়তার সুযোগে ইংরেজ নীলকরগণ কৃষকদের স্বার্থের পরিপন্থী বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হ’তে তাদেরকে বাধ্য করতো। অনেক সময় অনিচ্ছুক কৃষকদের ধরে আগুন লাগিয়ে দিত। এতেও সম্মত করতে না পারলে জাল চুক্তিনামার বলে তাদের জমাজমি জবরদখল ক’রে নীলকরগণ তাদের কর্মচারীদের দ্বারা সেসব জমিতে নীলচাষ করাতো। কখনো কখনো অত্যাচারী জমিদার তার প্রজাকে শাস্তি দেবার জন্যে তার কাছ থেকে জমি কেড়ে নিয়ে নীলকরদেরকে দিয়ে দিত। একবার অ্যাশলী ইডেন নীল কমিশনের সামনে ১৮৬০ সালে সাক্ষ্যদানকালে বলেন যে, বিভিন্ন ফৌজদারী রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, ঊনপঞ্চাশটি ঘটনা এমন ঘটেছে, যেখানে নীলকরগণ দাংগা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি, লুটতরাজ এবং বলপূর্বক অপহরণ প্রভৃতি গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকে। তার বহু বৎসর পূর্বে জনৈক ম্যাজিস্ট্রেট একজন খৃষ্টান মিশনারীর সামনে মন্তব্য করেন যে, মানুষের রক্তে রঞ্জিত হওয়া ব্যতীত একবাক্স নীলও ইংলন্ডে প্রেরিত হয় না। (১৮৬১ সালের নীল কমিশন রিপোর্ট এবং ক্যালকাটা খৃষ্টান অবজার্ভার, নভেম্বর, ১৮৫৫ সাল)।
নীল চাষীদের দুঃখ-দুর্দশার কোন প্রতিকারের উপায় ছিল না। চৌকিদার-দফাদারের সামনে চাষীদের উপর নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হলেও চৌকিদারদের ঘৃণাক্ষরেও সেকথা প্রকাশ করার সাধ্য ছিল না। একবার নিষ্ঠুর নীলকরগণ একটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করলে তা নির্বাপিত করার জন্যে এক ব্যক্তি চীৎকার ক’রে লোকজন জড়ো করে। তার জন্যে তাকে নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করে আহত অবস্থায় একটি অন্ধকার কামরায় চার মাস আটক রাখা হয়। ও দিকে আবার নীলকরগণ পুলিশকে মোটা ঘুষ দিয়ে বশ করে রাখতো। (নীল কমিশন রিপোর্ট ১৮৬১)।
হতভাগ্য অসহায় কৃষকগণ ম্যজিস্ট্রেটের নিকট থেকে কোন প্রকারের প্রতিকার ও ন্যায় বিচারের আশা করতে পারতো না। উক্ত নীল কমিশন রিপোর্টে বলা হয়ে ছে যে, সাদা চামড়ার ম্যাজিস্ট্রেটগণ আপন দেশবাসীদের পক্ষই অবলম্বন করতো। ফৌজদারী আইন-কানুন এমনভাবে তৈরী করা হয়েছিল যে, ইংরেজ প্রজাকে শাস্তি দেয়া ছিল অসম্বব ব্যাপার। একজন দরিদ্র প্রজা সূদুর প্রত্যন্ত এলকার তার স্ত্রী-পুত্র-পরিজনকে ফেলে কোলকাতায় গিয়ে মামলা দায়ের করার সাহস রাখনো না। কারণ তার অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী-পুত্র-পরিজনের জানমাল ইয্যৎ-আবরু নীলকরদের দ্বারা বিনষ্ট হতো। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিতে অধিক পরিমানে নীলচাষ করা হতো। ফলে নিম্নশ্রেণীর মুসলমান নীলকরদের চরম নির্যাতন-নিপীড়নের সার্বক্ষণিক শিকারে পরিণত ছিল।
©somewhere in net ltd.