নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুকনো পাতার ধ্বনি

কখনো সুরের ছন্দ মেলেনা,তো কখনো তাল তবু গেয়ে যেতে হয় মিলিয়ে সাথে সময়ের সুর-তাল!

শুকনোপাতা০০৭

আমার 'কলম' আজো আছে আমার সাথে, আমার কষ্টের সঙ্গী হয়ে,আমার সুখের ভাগ নিয়ে দেনা-পাওনা চুকিয়ে,এক চিলতে হাসি হয়ে...

শুকনোপাতা০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধূসর সময়ের কিছু কথা!

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১৯



টেবিলের ড্রয়ারটা অনেকদিন ধরে গোছাবে গোছাবে করেও গোছানো হচ্ছে না,আজ তেমন কোন কাজের ঝামেলা নেই দেখে বিকেল বেলা ড্রয়ার থেকে সব জিনিস পত্র নামালো অতসী। নামাতে যেয়ে নিজেও অবাক হলো! হায় আল্লাহ!এতো জিনিস ড্রয়ারে কবে ঢুকিয়েছে সে!!ড্রয়ার তো না যেনো স্টোর রুম! নামানো শেষ করে ড্রয়ার সাফ করে,সব কিছু সাজিয়ে রাখা শুরু করলো। আপন মনেই হাসতে লাগল অতসী,কতো কিছু যে সে জমিয়ে রাখে! অনেক গুলো ২টার নতুন নোট দেখতে পেল,মনে পড়লো এগুলো নানাভাই দিয়েছিল ঈদের সালামী হিসেবে,অনেক আগের আর্চিজের একটা প্যাকেট,যেটাতে করে আব্বু ছোট্ট আয়না গিফট করেছিল.... এমন অনেক অনেক পুরনো কিছু দিয়ে ভরা ওর ড্রয়ারটা, হঠাৎ একটা ভাঙ্গা চাবির রিং দেখতে পেলো...অতসী একটু থমকে গেল যেনো! রিং টা হাতে নিয়ে এক টুকরো হাসি ফুঁটে উঠলো ওর মুখে,রিংটাতে সুতা বাঁধা কাগজে লাল কালিতে লেখা 'লোকাল বাস',আর পাশে বিরক্তি ইমো!!



সেদিন ক্লাস শুরু হতে আর মাত্র দশ মিনিট বাকী ছিল,অনেক কষ্টে জ্যাম ঠেলে স্টপেজ এর কাছাকাছি আসা মাত্রই দৌড়ে বাস থেকে নামে অতসী। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আরেকদফা আঁতকে উঠে! ব্যাগ কাধে নিয়ে গায়ের শালটা কোনরকমে সামলে দ্রুত হাঁটা শুরু করে....কিন্তু চাইলেই কি আর দ্রুত চলা যায়!আফটার অল ঢাকা শহরের রাস্তা...!এই অফিস আওয়ারে এখানে মানুষের ভীড়ে না দ্রুত হাঁটা যায় না দাঁড়ানো যায়!

কোন মতে মানুষ ঠেলে হাঁটতে লাগল অতসী,ছেলে হলে ভালো হতো একটা দৌড় দেয়া যেতো!ওদিকে ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছে দেখে মিরা বারবার ফোন দিচ্ছে,আজকে স্যার আগে ক্লাস টেস্ট নিবে তারপর নতুন চ্যাপ্টার পড়াবে,আজ লেট করলে ১০মার্ক পুরাই জলে যাবে!!কথাটা মনে হতেই হাঁটার স্পিড আরো বাড়িয়ে দেয়... লেকের পাড়ে আসতেই অতসীর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়! কি বিচ্ছিরি গন্ধ! নাকে ওড়না চেপে হাঁটতে যেয়ে দেখে ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না সে!!কারন কি?!মাথা তুলে সামনে তাকাতেই বুঝতে পারল!! হায়রে কপাল!! এই সময় কি দরকার ছিল 'লোকাল বাসের' পেছনে পড়ার!!উফফ...!

সামনে ব্ল্যাক জ্যাকেট গায়ে একজন হাঁটছে,অনেকটা কচ্ছপের গতিতে,আর একটু পর পর লোকাল বাসের মতো দাড়াচ্ছে! ঘাড় ঘুড়িয়ে কি কি যেন সে দেখছে আসে-পাশে!অতসী খুবই বিরক্ত হচ্ছে,একেতো রিকসার জন্য এক পাশ দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে তার উপর এই জনাব 'লোকাল বাস' এমন ভাবে হাঁটছে যেনো সে ঢাকা শহরে নতুন এসেছে,এতো উঁচু উঁচু বিল্ডিং সে জীবনেও দেখেনি!!নাহ,আর সহ্য হয় না,বলেই বসে,

'এক্সকিউজমি,প্লিজ একটু সাইড হবেন?আমি যাবো'

এবার সে ঘাড় ঘুড়িয়ে ওর দিকে তাকালো,দেখে একটু হোঁচট খেলো অতসী!ও ভেবেছিল হবে কোন আংকেল বয়সী লোক,কিন্তু এতো অনেক কম বয়সী,একে ছেলেও বলা যায় না,আবার লোক ও বলা যায় না!ভাইয়া টাইপ!!

--সাইড কিভাবে দেবো বলেন?পাশে পানি দিয়ে হাঁটবো?

ভাইয়া টাইপ' এর কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো অতসীর!বুঝতে পারল,একে দেখতে যতোটা সহজ মনে হয়,আসলে সহজ না,বেশী রকমের ত্যাড়া!সময় থাকলে আরেকটু ত্যাড়া বানানো যেতো,কিন্তু সময় নেই দেখে অতসী কথা বাড়ায় না,অনেকটা ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দ্রুত হেঁটে ভার্সিটিতে ঢুকে,বলা যায় দৌড়েই!তারাহুড়ার জন্য ওর ব্যাগের রিং এর সাথে লাগানো ডলটা খুলে পড়ে যায়...!

কিন্তু কে জানতো?সেই লোকাল বাসের সাথেই আবারো দেখা হয়ে যাবে!!



আরেকবার হাসল অতসী,তমাল কে আর কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি,ও সেদিনের কথা ওর মনে আছে কি না,রিং টা বক্সে রেখে ড্রয়ারে ঢুকালো। একটু পরে হাতে পড়ল একটা বিয়ের কার্ড। আবারো হাসল!



কয়েক বছর আগে এই কার্ড নিয়ে আব্বু-আম্মুর সাথে সেকি ঝগড়া! বিয়ের কার্ড কেন লাল রঙ না হয়ে নীল রঙ এর হলো...! প্রথম যেদিন আম্মুর হাতে ছবি সহ তমালের সিভি দেখছিল হাসতে হাসতে পড়ে যাচ্ছিল বারবার!হায় আল্লাহ!এই লেখা ছিল কপালে?শেষ পর্যন্ত 'লোকাল বাস'এর গলায় মালা পড়াতে হবে! বান্ধবীরা তো ওকে 'মিসেস লোকাল বাস' বলে ক্ষেপাতে ক্ষেপাতে শেষ! যদিও তমালকে কখনো বলা হয়নি অতসীর এই কান্ডের কথা তবে তমালের ভাবি খুবই পছন্দ করতো অতসীকে,আর তাই একমাত্র দেবরের জন্য অতসীকে অনেক ধুমধামের সাথে বউ করে নিয়ে গিয়েছিলেন।



সব কাজ শেষ করে ব্যালকনিতে এসে বসে অতসী। সন্ধ্যের এই আধো-আঁধারীতে নিজেকে অনেক অচেনা মনে হয়! বদলে যাওয়া জীবনের সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা সে যতোই করুক না কেন,কোথাও না কোথাও তো আপন সুর বেজে উঠে... না চাইলেও দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুকচিরে...

অতসীর বিয়ের কয়েক মাস পর রোড একসিডেন্টে মারা যান তমালের বড় ভাই...একটা মৃত্যু বদলে দেয় অনেক গুলো জীবন। বৃদ্ধ মা,ভাবি আর বড় ভাইয়ের তিন সন্তানের দায়িত্ব এসে পড়ে তমালের উপর। একদিকে নিজের নতুন জীবন অন্যদিকে পরিবার,সব দিক চিন্তা করে দূর দেশে পাড়ি জমায় তমাল। উদ্দেশ্য একটাই,সবার মুখে হাসি ফুটানো। তমাল চলে যায়,ভাবি শ্বাশুড়ি-সন্তানদের নিয়ে গ্রামে স্যাটেল হোন,একটা স্কুলেও চাকরী নেন,অতসীর পড়াশুনা এখনো শেষ হয়নি তাই সে রয়ে যায় বাবার বাড়ি।

ঠান্ডা বাতাসে মনে হয় প্রকৃতি একদম জমে বরফ হয়ে যাবে! কিন্তু অতসীর সেদিকে কোন খেয়াল নেই...! উত্তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফুরোয় না যেনো।

বান্ধবীরা টিপ্পনী কেটে বলে,'ম্যারিড ব্যাচেলর'। কথাটা অতসীর অনেক কানে লাগলেও,কিছু বলে না। কিন্তু সত্যিই অনেক লাগে... কখনো খুব অভিমান জমে,জমতে জমতে এক সময় তা অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ে।

আজকাল খুব একটা কথা হয়না তমালের সাথে,কখনো সময় মিলে না তো কখনো সুযোগ! অপেক্ষা করতে করতে কখন যে অপেক্ষার বাঁধ ভেঙ্গে গেছে তা জানে না,আর তাই অতসীও এখন আর অভিযোগ করে না এ নিয়ে,এই কয়েক বছরে যেনো সে ধরেই নিয়েছে তমাল অনেক দূরের কেউ! তার সাথে কথা না বললেও চলে! এফবি,ইয়াহু কোনটা তে এখন আর খুব একটা ব্যাস্ত থাকে না। মোবাইল হাতে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আর বসেও থাকা হয় না।

অতসীর মাঝে মাঝে মনে হয়,সে কোন বাস্তবে বাস করছে না সময়টাকে শুধু পাড় করছে,কিছু একটার অপেক্ষায়,কিন্তু সেই কিছু একটা কি তা সে এখন আর জানে না...!এ নিয়ে আর কোন রাগ-অভিযোগ নেই অতসীর,শুধু একরাশ হাহাকার আছে বুকের ভেতর...জমে থাকা অভিমান আর ভালোবাসায় পূর্ন। অতসী জানে তমাল একদিন ফিরে আসবে ওর কাছে,নিজের সব দায়িত্ব শেষ করে,কিছু স্বপ্ন হাতে...কিন্তু যে সময় গুলো আজ চলে যাচ্ছে তমাল-অতসীর জীবন থেকে সে গুলো কি নিয়ে আসতে পারবে? অতসীর মনে হয়,অন্ধকারে মিশে থাকা কুয়াশার মতো করেই ঢাকা পড়ে রবে ওর সময় গুলো,যা দেখা যাবে না,হাত বাড়ালে ছোঁয়া যাবে হয়তো!অনুভব করা যাবে হয়তো...যেমন ও ছুঁয়ে যাচ্ছে,অনুভব করে যাচ্ছে...হয়তো ও প্রান্তে তমাল ও ছুঁয়ে দেখে কখনো... অনুভব করে কখনো... নিজেকে নিজে স্বান্তনা দেয় আর অশ্রু ভেজা কন্ঠে ক্ষীন স্বরে হয়তো সেও গায়,

''দূরে দূরে থাকা মানেই,দূরত্ব বেশি নয়

কাছাকাছি থাকলে হয়তো থমকে যেতো

এ সময়...''



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪০

মেঘের আড়ালে ভোর বলেছেন:
খুব ভাল লাগলো লিখাটি পড়ে ।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫০

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :)

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০১

নির্ণায়ক বলেছেন: +++++++

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৯

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: :)

৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ++++++++++++++++

ভালো লাগলো ।

ভালো থাকবেন :)

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: ধন্যবাদ,আপনিও ভালো থাকবেন :)

৪| ০৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৩

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: হুমম

১০ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭

শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.