নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ৮০ বৎসরের বয়স্ক এমন লোককে দেখেছি এখনো প্রবল আগ্রহ নিয়ে স্ব স্ব কাজে মনোনিবেশ করতে। তাঁরও ২ বৎসর, ৩ বৎসর, ৫ বৎসরের প্ল্যান রয়েছে। এবং একে একে সম্পাদন করার কাজে উনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও সদা তৎপর। কী উৎসাহ উনার মধ্যে !!! মাঝে মাঝে লজ্জা হয়, কেন আমি উনার মতো হতে পারলাম না। কেন একটা কাজে ব্যর্থ হওয়ার সাথে সাথে পৃথিবীর যত হতাশা আছে সব আমার নিজের মাথার উপর এসে পড়ে।
আবার বেশির ভাগ মধ্য বয়স্ক লোককে (যাঁদের বয়স ধরুন ৫০+) দেখি প্রচণ্ড রকমের হতাশাগ্রস্থ। কোন রকমে চাকুরী থেকে অবসরে গেলেই উনার জীবনের সকল কর্মকাণ্ড যেন নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। এ রকম চরমমাপের হতাশাগ্রস্থ লোকগুলো সবসময় নেতিবাচক চিন্তায় মগ্ন থাকে। উনাদের জীবনই আসলে ঐ অবসর গ্রহণের মুহূর্ত পর্যন্ত। এ সমস্ত লোকগুলো থেকে আর সৃষ্টিশীল কিছু পাওয়া যায় না। এঁরা পৃথিবীকে নতুন কিছু দিতে পারে না।
দেখুন তফাত টা। একদিকে আশি বছরের বৃদ্ধের রয়েছে পূর্ণ তারুণ্য আর অন্যদিকে ৫০ বা ৬০ পেরুলেই উনি হয়ে যান লাঠি হাতে ন্যুজ এক বুড়ো। তাঁর মানে বার্ধক্য আসলে বয়সে বা শরীরে নয়, বার্ধক্য আমাদের মনে।
৩০ পার হলেই আমাদের মনের এক ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তখন তারুণ্য আস্তে আস্তে বার্ধক্যে মোড় নেয়। বিয়ে হয়, ছেলে-মেয়ে হয়, ওরা বড় হয়। আর কোন রকম একটা মেয়ে বা ছেলে বিয়ে দিতে পারলেই আমরা বৃদ্ধের কাতারে গিয়ে পড়ি। আহ কি শান্তি, পড়াশুনা, চাকুরী, বিয়ে, ছেলেমেয়ে, তাদের বিয়ে, চাকুরী থেকে অবসর আর কি। অনেক হয়েছে এ জীবনে। আসলে এভাবে যারা চিন্তা করে তাঁরা অবসরের পর আর কোন কাজ হাতের কাছে পায় না। আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ট জীব হয়েও এখনো গরু, ছাগল, পশু পাখির মতো একই ছন্দে একই মাত্রায় জীবনটাকে সাজাই আর ইহকালের কার্য সাঙ্গ করি।
মানুষের আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় অবসরকাল। জীবনের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে কিছু উপহার দেয়ার খুবই মোক্ষম সময়। যা আমরা অযত্নে অবহেলায় শেষ করে কেবল মৃত্যুর প্রহর গুনি।
কোন মানুষ তাঁর শিশু-কৈশোরকাল কাটে পড়ালেখায়, যৌবন যায় জীবিকা নির্বাহে অতঃপর বার্ধক্য কাটে স্রষ্টার সান্নিধ্যে আর অবহেলায়। স্রষ্টার সান্নিধ্য শিশুকাল থেকে অজন্ম হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের পরবর্তী সময়টা আসলে নিজেকে পৃথিবীর বুকে স্মরণীয় করে রাখার গুরুত্বপূর্ণ সময়। যাঁরা এ সময়টাকে সদ্ব্যবহার করে তাঁরা পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে থাকেন।
আপনি আজ মরলেন তো কাল আপনার ছেলেমেয়ে মনে রাখলো পরশু বড়জোর নাতি নাতনিরা মনে রাখল। এর পর পৃথিবীতে আপনার অস্তিত্ব আর থাকবে না। আপনি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। এটাই কি জীবন? তাও আবার মানুষের জীবন !!! পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ যদি মৃত্যুর আগে অন্তত তাঁর জীবন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে যেত তাহলে এসব জীবনের এবং এসব ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি বোধহয় হতো না। পরবর্তী প্রজন্ম তাঁর জীবন কে অন্যভাবে সাজানোর সুযোগ পেত।
আমরা মানুষরা আসলেই খুবই স্বার্থপর জাতি। আমার ব্যর্থতা আমি অন্যের কাছে শেয়ার করে যেমন নিজেকে ছোট করতে চাইনা তেমনই আমার ভুলের চোরাবালিতে অন্যরাও হাবুডুবু খাক তা-ই চাই। এতে করে আমাকে এক্সট্রা কোন কাজ করতে হচ্ছে না। এক্সট্রা কোন পরিশ্রম করতে হচ্ছে না। সবাই মরুক ঐ ভুলের চোরাবালিতে। আমরা সবাইকে ভালবাসি, সবাইকে নিয়ে মরার জন্য; অন্যদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য নয়।
আমাদের মাইন্ড সেট চেঞ্জ করতে হবে। উদার হতে হবে। পরিশ্রমী হতে হবে। পরোপকারী হতে হবে। দায়িত্ব নিতে শিখতে হবে। আর পরবর্তী প্রজন্মের যদি সৃষ্টি আমরাই করি তবে তাদেরকে আমাদের নিজের অভিজ্ঞতা লব্ধ পথটি বাতলিয়ে দিতে হবে। তাদের কোন চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। তাদের চিন্তা চেতনায় স্বাধীনতা দিতে হবে এবং নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার সাহস যোগাতে হবে। তবেই আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণীয় হয়ে থাকবো।
এটাই হোক মানব জীবনের লক্ষ্য। পৃথিবী সকল মানুষ জন্মজন্মান্তর স্মরণীয় হয়ে থাক মানুষের যোগ্যতা নিয়ে।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৮
অজয় শীল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমিও অনুপ্রাণিত।
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৫
বঙ্কু বাবু বলেছেন: আমরা সবাইকে ভালবাসি, সবাইকে নিয়ে মরার জন্য; অন্যদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য নয়। - ঠিকই বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটি পোষ্ট।
চমৎকার সব কথা লিখেছেন।