একটি 'জীবনমূখী মৃত্যু'র সাথে, কাল রাতে

০৮ ই মে, ২০১০ সকাল ১০:৫০

খুব সম্ভবত মৃত্যুই আমাদের সর্বশেষ মিলন কে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছিল, অথবা আমরাই দু'জনে চুম্বনে সঙ্গমে মৃত্যুকে বিচ্ছিন্ন করেছিলাম, আমাদের একান্ত শহর থেকে; তারপর, আমরা দু'জন

মিলে কি দুর্নিবার মরে গিয়ে ছিলাম, কেননা মৃত্যু এবং আমাদের

মাঝখানে তখন একমাত্র দেয়াল ছিল আমাদের স্কুলব্যাগে জমা

রাখা এক বান্ডিল কিশোর সময়, আর আমরা জানতাম

মৃত্যুর কোন সময় জ্ঞান থাকে না, সে কোন কালেই না।



মৃত্যুর নিজস্ব কোন রঙও থাকে না, আমরাই বরং জীবনের রঙ দিয়ে

মৃত্যু সাজাই-আর মৃত্যুগুলো তখন কি ভয়ংকর-সুন্দর হয়ে ওঠে !

তারপর, আমরা আমাদের মতো কোরে মরে যেতে চাই, এক সময়

আমরা মরে যাই, আর কে না জানে মরণের পর প্রতিটি মৃত্যুই আরো

সুন্দর হয়ে ওঠে, আর প্রত্যেক মৃত্যুকেই একটি করে নাম দিতে হয়; আমরা তখন মৃত্যুকে জীবনের ডাক নামে ডাকতে শুরু করি, আমরা

বলে উঠি পরস্পর -'ঐ তো, ঐ যে কাল রাতে মারা গেলো একটি জীবন,

ও শুধু জীবন নয়- একটি মানুষ ছিল'; এভাবে আমরা মূলত মানুষকেই

মহিমান্বিত করি, স্কুল ব্যাগে জমা রাখা আমাদের কৈশোরের কাছে

আমরা নতজানু হই; জীবন তখন আমাদের কাছে মানুষের সমার্থক

নাম হয়ে ওঠে। তারপর, আবারো আমাদের মৃত্যু হয়, আমরা আবার

জীবনের জন্য মৃত্যুকে বরণ করি, আর এভাবেই

জীবনমূখী মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে আমরা বার বার মানুষ হয়ে ওঠি।



ইদানিং মানুষের মৃত্যুও খুব একটা চোখে পড়ে না, মরে যাবার মতো মানুষও যে খুব একটা আছে তা-ও কিন্তু নয়, এই যে আমাদের চোখের সামনে এত এত মৃত্যু, এত এত মূলোৎপাটন, তারপরও আমরা কেউ

বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না যে আমরা কোন মানুষের মৃত্যু দেখেছি, আমরা একটা মানুষকেও মরে যেতে দেখিনি, কেননা মানুষের মৃত্যু হয়

খুব কম, অথবা আমাদের চারপাশে আসলে কোন মানুষই নেই।



কাল রাতে, এ কান্তিমান শহরের অলিগলি রাস্তার সব আলো নিভিয়ে

দিয়ে, আমাদের দু'জনের স্কুল ব্যাগে জমা রাখা কিশোর সময়,

মিলনের ঘ্রাণভর্তি পিদিম হাতে, এ শহরের পাঁচিল ভেঙ্গে পালিয়ে ছিলো;

আসলে কাল রাতে আমাদের দু'জনের মৃত্যু হয়েছিল।

তবে কি আমরা দু'জন মানুষ ছিলাম ?

না, প্রিয় সাইরেণ ! কাল রাতে একটি 'জীবনমূখী মৃত্যু'র মরণ হয়েছিল।

১২ টি +৩/-০