নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুস্থ মানসিকতা এবং সুন্দর মনের মানুষদের বন্ধু হিসেবে পেতে চাই...
সর্বশেষ কয়েকটি ব্লগ পর্বে আপনাদের জানাচ্ছিলাম ইরানের ঐতিহাসিক শহর সিরায ভ্রমনের কথা। সিরাযে আমাদের শেষ দিনটি ২৮ মার্চ ২০১৫। সেদিন বিকেল নাগাদ পাসারগাদে সাইরাস দ্য গ্রেট সমাধিতে ছিলাম। সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ পাসারগাদ থেকে রওনা দিয়ে তেহরানে ফিরতে প্রায় ভোর ৪ টা বেজে যায়।
ভেবেছিলাম, নোরুজ ঘোরাঘুরি এখানেই শেষ। কিন্তু, হঠাৎ বন্ধু হামিদ প্রস্তাব দিয়ে বসল, চল তাবরিয ঘুরে আসি। তেহরান থেকে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিযের দূরত্ব প্রায় ৬৩০ কি.মি.। যেতে প্রায় ৭/৮ ঘন্টা লাগে। একটু চিন্তা করে রাজি হয়ে গেলাম। কারণ, সিরায ট্যুরে আমরা সবাই এক সাথে যেতে পারি নি। বিভিন্ন সময়ে আমরা তিনটা গ্রুপে ভাগ হয়ে গিয়েছিলাম। এবার একটু বড় গ্রুপে যেতে পারি আমরা, যেহেতু সবাই নিজেদের গাড়ি নিয়েই যাচ্ছি।
১ এপ্রিল ২০১৫, সকালে রওনা হয়ে গেলাম। মোট তিনটা গাড়ি। ৪ টা পরিবার আর কয়েকজন সাময়িক ব্যাচেলর ভাই। তেহরান থেকে হালকা একটু উত্তর-পশ্চিম দিকে আলবোর্জ প্রদেশের রাজধানী ক্যারাজ পার হয়ে গাজভিন হাইওয়ে ধরে চলতে লাগল আমাদের গাড়ি বহর। গাজভিন থেকে এগিয়ে যেতে থাকলে পথে পড়বে জানজান শহর, এরপর আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে উঠে যেতে থাকলে পূর্ব আজারবাইজানের রাজধানী তাবরিয।
তাবরিয থেকে তুর্কি, আর্মেনিয়া আর আজারবাইজান বেশ কাছেই। আর তাবরিজের উপর তুর্কির প্রভাব বেশী, তাই ওখানকার মানুষও তুর্কি ভাষাতেই কথা বলে। কেউ কেউ দেখলাম ফারসি জানেই না!
যাহোক, তাবরিয যাওয়ার আগে পথের কিছু কথা শেয়ার করি। ইরানে এসে যে জিনিসটা খুব উপভোগ করি সেটা হলে মহাসড়ক ধরে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো। এখানকার দূরত্বগুলো যেমন বড়, তেমন সুন্দর মহাসড়ক। মহাসড়কের সর্বোচ্চ গতিসীমা বেধে দেয়া আছে ১২০ কিমি/ঘন্টা। কিন্তু, কিছু কিছু জায়গা এমন যে এই গতিসীমার মধ্যে গাড়ি চালাতেই ইচ্ছে করে না। মনে হয় ১৪০ কিমি/ঘন্টা কেন হল না গতিসীমা।
সিরায ট্যুরে গিয়ে যে অভিজ্ঞতাটা হয়েছিল সেটা হল, এত দীর্ঘ সড়ক ব্যবস্থায় ওদের পক্ষে সব জায়গায় অটোমেটিক স্পিড ক্যামেরা বসানো সম্ভব হয় নি। তাই জায়গায় জায়গায় পুলিশ ক্যামেরা নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। এই ক্যামেরা দিয়ে কিভাবে গাড়ি ধরে সে সম্পর্কে আমার তেমন কোন সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। আমি ভাবতাম, এই ক্যামেরার সামনে দিয়ে যারা অতিরিক্ত গতিতে অতিক্রম করবে তাদের পরের পুলিশ ধরবে বা তাদের নামে জরিমানা চলে যাবে। সেই ধারণা থেকেই সিরায যাওয়ার সময় ১৪০ কিমি/ঘন্টাতে গাড়ি চালালেও দূর থেকে পুলিশের গাড়ি আর ক্যামেরার নিশানা চোখে পড়লেই গতি কমিয়ে ১২০ কিমি/ঘন্টার নীচে নিয়ে আসতাম। এবং আল্লাহর রহমতে কোথাও ধরা খেলাম না!
তাবরিযের পথে যেতে আমি বাকী দুই গাড়িকে বললাম, আমাকে অনুসরন করবেন শুধু। আমি পুলিশ দেখলেই গতি কমিয়ে দেব। কিন্তু, একবার রোকন ভাইয়ের গাড়ি একটু পেছনে পড়ে যাওয়াতে উনি গতি বাড়িয়েছিল, পুলিশ সামনে ছিল সেটা খেয়াল করতে পারে নি! হঠাৎ রিয়ার ভিউ মিররে দেখে বুঝলাম রোকন ভাইকে পুলিশে ধরেছে। বেচারা ওভার স্পিডের জন্য ৪০০,০০০ রিয়াল জরিমানা খেল। বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১০০০ টাকা। যাহোক, বললাম ভাই, আমাকে অনুসরণ করেন। খুব একটা ওস্তাদ বনে গেলাম। কিন্তু, একটু পর আল্লাহ যে আমার জন্যও শিক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছেন তা কে জানত !
গাড়ির গতি তখন ছিল প্রায় ১৪০ কিমি/ঘন্টা। পাহাড়ের নীচের দিক থেকে উঠছিলাম। যেই না ওপরে উঠেছি, দেখি সামনে পুলিশের গাড়ি। সাথে সাথে দিলাম ব্রেকে চাপ, কিন্তু একটু আগাতেই পুলিশ সিগনাল দিল গাড়ি থামাতে। অথচ যেখানে ক্যামেরা রাখা সেই জায়গা কিন্তু আমি ১২০ কিমি/ঘন্টার নীচেই পার হয়েছি। তখন একটু আধটু ফারসি শিখে গেছি। পুলিশকে কনফিডেন্টলি জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে থামিয়েছ কেন? আমিতো ১২০ এর নীচেই ছিলাম। পুলিশ বলে, আস সোনা দেখে যাও। এই বলে সে আমাকে ক্যামেরার সামনে নিয়ে গেল আর পেছনের ভিডিও দেখাল। দেখলাম, সেইরাম এক ক্যামেরা! মূলতঃ রাডার প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। প্রায় ৫০০ মিটার বা তার দূর থেকেও যেসব গাড়ি আসছে, সব গাড়ির ওপর আলাদা আলাদাভাবে লাল একটা বাক্সের মধ্যে সেই গাড়ির গতি দেখাচ্ছে! আমার গাড়ির ওপর গতি দেখাচ্ছে ১৩৬ কিমি/ঘন্টা! পুরাই স্পিকার হয়ে গেলাম। বড় পুলিশ বলে, গাড়ি কি পার্কিং এ রেখে দেব? কই যাচ্ছ, কেন যাচ্ছ? বললাম, মামা তাবরিয যাচ্ছি বেড়াতে, এবারের মত ছেড়ে দেন। এইবার আমি পুরোপুরি শিক্ষিত হলাম।
যাহোক, তাবরিয পৌছাতে বেলা প্রায় ১টা বেজে গেল। আমার বন্ধু হামিদের অফিসের এক সহকর্মী আগেই এপার্টমেন্ট হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিল। বিশাল বিশাল এপার্টমেন্ট কিন্তু ভাড়া বেশ কম। এপার্টমেন্ট পছন্দ করে হোটেলে উঠতে আরে ফ্রেশ হতে ২ টার বেশী বেজে গেল। ক্ষিধেয় পেট চো চো করছে। ঐ সহকর্মীই আমাদের কাছের এক রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল। ইরানের প্রচলিত খাবার জুজে কুবিদে দিয়ে মোটামুটি খাওয়া দাওয়া সেরে নেয়া গেল।
আমাদের এই ট্রিপের সময়কাল খুবই কম। যাওয়া আসা মিলিয়ে মাত্র দু’দিন। তাই ঘোরাঘুরির জায়গাগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনাতে খুব দক্ষ হতে হবে। আমার পরিকল্পনা ছিল, প্রথম দিন এল গোলি পার্কে যাব আর সেখান থেকে ফেরার পথে তাবরিজ গ্র্যান্ড বাজার এবং নীল মসজিদ দেখব। একটা ব্যাপার ভাল ছিল, সূর্য ডোবে প্রায় সন্ধ্যা ৮ টায়, তাই দিনের আলো অনেকক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বন্ধু হামিদের যে সহকর্মী ছিল, সে জানাল যে নোরুজের সময় হওয়াতে আজকে নাকি গ্র্যান্ড বাজার বন্ধ। ঠিক আছে, তাহলে আমরা এল গোলি পার্কে যাই। কিন্তু, ঐ সহকর্মী সব জায়গাতে দেখলাম বাগড়া দেয়া শুরু করল, মানে তার মতামত চাপিয়ে দিতে চাইল। ওর কথামত আমরা তাবরিযের বিখ্যাত কবি শাহরিয়ারের সমাধি সৌধ দেখতে গেলাম প্রথমেই। গিয়ে দেখলাম, সেখানে আসলে তাবরিযের আরো অনেক কবির সমাধি আছে।
সম্ভবতঃ সাত জন বিখ্যাত কবির সমাধি আছে এই স্থাপনায়
সমাধির ভেতরের দৃশ্য
কবি শাহরিয়ার
কবি শাহরিয়ারের কবর
সমাধিস্থলে সাজিয়ে রাখা ইরানি শিল্পকর্ম
সমাধিস্থলের বাইরে শাহরিয়ারের আবক্ষ মূর্তি
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, সে আরো কই কই নিয়ে যেতে চায়, বললাম যে না এল গোলি পার্কেই চল।
এল গোলি পার্ক
এল গোলি পার্কটি শাহ গোলি পার্ক নামেও পরিচিত। নামটি আসলে তার্কিশ ভাষায় এবং এই গোল মানে হল পুকুর। ১৭২৭ সালের দিকে আগ গোয়ুনলি রাজাদের আমলে এটা সেচের জন্য তৈরী করা হয়। পরবর্তীতে এটা গাজার সাম্রাজ্যের রাজকন্যার গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। এই পার্কে যে বর্গাকার পুকুর রয়েছে তার গভীরতা সর্বোচ্চ ৯ মিটার পর্যন্ত। পুকুরের মোটামুটি মাঝ বরাবর একটি ছোট্ট প্রাসাদ রয়েছে।
চারিদিকে গাছা পালা ঘেরা পার্ক, রয়েছে পুকুরে নৌকা চড়ার ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছে বেড়ানোর জন্য দারুণ একটা জায়গা। আমরাও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় উঠে পানিতে চক্কর দিলাম। বেশ লাগল। পাশের মসজিদেই আসর নামায পড়ে নিলাম।
ফিরে এসে দেখি, ঐ ইরানি সহকর্মী বাকী ভাবীদের পটিয়ে ফেলেছে। বলেছে, চলেন “লালেহ পার্কে” যাই। দারুণ জায়গা। সব ভাবীরা তখন জৈ জৈ করছে, লালেহ পার্কে যাবে বলে। আমি ভেবেছিলাম, এল গোলি পার্কে অন্ততঃ সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকব। সন্ধ্যায় নিশ্চয় খুব সুন্দর আলো জ্বলবে পার্কে, ইরানিরা আবার খুব আর্টিস্টিক এবং পার্কগুলোকে খুব সুন্দর করে সাজায়। কিন্তু জনমতের কাছে হার মেনে সন্ধ্যার একটু আগেই “লালেহ পার্ক” এর দিকে রওনা দিলাম।
এল গোলি পার্ক
রাস্তা ধরে গাড়ি চালিয়ে এগুচ্ছি। দেখি ঐ ব্যাটা আমাদের এক বিরাট শপিং মল এর পার্কিং এ গাড়ি ঢুকাতে বলছে। ভাবলাম, আশে পাশেই হয় পার্ক, হয়ত পার্কিং এর জায়গা নেই, তাই শপিং মল এর পার্কিং এ পার্ক করাচ্ছে। পার্কিং করে সবাই উপরে উঠে শুনি এটাই লালেহ পার্ক ! মানে হল, ঐ শপিং মলের নামই হল লালেহ পার্ক! মেজাজটা চরম খারাপ হল, আমরা কি ঘুরতে এসেছি না কি শপিং মল দেখতে এসেছি!!
তবে, শপিং মলে ঘুরে মনে হল, না এটাও একটা দেখার জায়গা! মনেই হচ্ছিল না ইরানে আছি! তেহরানেও এত বিলাসবহুল শপিং মল দেখিনি। ঘটনা হল, এই শপিং মল পুরোটাই তুর্কিদের ইনভেস্টমেন্ট এ তৈরী হয়েছে। সব দোকানই মূলতঃ তুর্কিশ ব্র্যান্ড! দামও সে রকম। আমার বন্ধু হামিদ তুর্কি গিয়েছিল। ও বলল, তুর্কিতে যা দাম, এখানে সব কিছুর দাম তার দ্বিগুন ! যাহোক, এর মধ্য থেকেই আমাদের খানুমরা কিছু শপিং করেও ফেলল। শপিং মল এ ইরানিরা ব্যাপক শপিং করছে। জানলাম, তারবিযের লোকজন নাকি অনেক ধনী।
শপিং মল এ হাটতে হাটতে পা ব্যাথা হওয়ার যোগাড়। প্রায় ৭০০ কিমি গাড়ি চালিয়েছি, কয়েক জায়গায় ঘুরেছি, এর পর শপিং মলের দোকানে দোকানে ঘুরতে কার ভাল লাগে বলেন? কিন্তু, আশ্চর্য ফ্রেশনেস এর সাথে আমাদের সাথে থাকা মহিলারা দোকানে ঘুরছেন। বললাম, মাফ চাই, চল কোন একটা দোকানে কিছু খেয়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমাই। কিন্তু, আল্লাহ মনে হয় আরো একটু ধৈর্য্যের পরীক্ষা বাকী রেখেছিলেন!
আমার বন্ধুর ঐ সহকর্মী (ব্যাটার নামটা আসলে ভুলে গেছি) এইবার সত্যিকারের ভিলেন এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হল। রাত প্রায় সাড়ে নয়টা। মন চাচ্ছে এখনই যদি বিছানায় পিঠটা লাগাতে পারতাম ! ব্যাটা বলে, আশে পাশে কোথায় নাকি স্পেশাল কাবাবের দোকান আছে, সেটা না খেয়ে গেলে নাকি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে! বললাম, কত দূর ভাই? বলে, এইতো বেশী দূর না। অগত্যা সবাই রাজী হল, আচ্ছা স্পেশাল কাবাব খেয়েই যাই।
এই সেই ইরানি বান্দা যিনি আমাদের ট্যুর প্ল্যানে অব্যাহতভাবে বা হাত ঢুকিয়েছেন !
গাড়ি চলছে তো চলছেই, খেয়াল করলাম আমরা তেহরানের দিকের হাইওয়ে ধরে এগুচ্ছি। প্রায় ৩০/৪০ মিনিট ড্রাইভ করার পর এক হোটেলে পৌছালাম। মনে মনে ব্যাপক ক্ষ্যাপা, এই তোমার কাছের রেস্টুরেন্ট! মেজাজ চরম খারাপ, ভাবছি খাবার যদি শালা ভাল না হয়, তোমারেই কাবাব বানায়ে খেয়ে ফেলব। কাহিনী হল, আমার বড় ছেলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ার কারণে ভালই ইংলিশ বলে আর ঐ ব্যাটাও ইরানিদের মধ্যে মোটামুটি ভাল ইংলিশ জানে। তাই সে আর আমার বড় ছেলে পুরা দোস্ত বনে গেছে, দুইজন একসাথে কথা বলে, ঘুরে, আমার ছেলেদের আবার বেলুন কিনে দিয়েছে। সব মিলিয়ে দাতে দাত চেপে পরিস্থিতি সহ্য অরা ছাড়া আর কোন গতি ছিল না।
যাহোক, কপাল ভাল, কাবাবগুলো বেশ সুস্বাদু ছিল। প্রচন্ড ক্ষুধা থাকায় ঐ মাঝরাতে গোগ্রাসে গিলেছি! এই ফাকে বন্ধু হামিদকে বললাম, দোস্ত, এই ফেউ বিদায় কর। কালকে যাতে কোনভাবেই ওরে না দেখি, নাইলে খুন খারাবি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু, ঐ ব্যাটাও নাছোড়বান্দা, সে আমাদেরকে ঘোরাবেই, এটা তার পবিত্র দায়িত্ব! শেষ পর্যন্ত হামিদকে একটু মিথ্যেই বলতে হল। বলল, অফিসের কিছু আর্জেন্ট কাজ পড়ে গেছে, আমরা হয়ত কালকে সকালেই তেহরানের উদ্দেশ্যে রওনা হব। এরকম বহু কথা বলে গায়ে হাত বুলিয়ে ব্যাটাকে বিদায় করলাম। বলে, আচ্ছা চল তোমাদের শহরে হোটেল পর্যন্ত পৌছে দিয়ে আসি। বললাম, ভাই মাফ কর, আমরা নিজেরাই যেতে পারব। বিদায় কালে বেশ খারাপই লাগল, আমার বড় ছেলের সাথে ওর খুব দোস্তি হয়ে গিয়েছিল, বিচ্ছেদে দু’জনেই বেশ কষ্ট পাচ্ছিল।
এই ট্যুর করে আসার পরে আমি ফেইসবুকে যে এলবামটা আপ্লোড করেছিলাম, সেটার নাম দিয়েছিলাম “Eventful Tabriz Tour”. কেন জানেন? বলি তাহলে।
হোটেলে খেয়ে শহরে ফেরার পথে আমরা ৩ গাড়ি এক সাথে রওনা দিলেও এক সময় আর এক সাথে থাকা হল না। গুগল ম্যাপ দেখে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এক জায়গায় পাশাপাশি দু’টো রাস্তা থাকাতে পথ ভুল করে ফেললাম। আমরা দুই গাড়ি পথ ভুল করলাম আর বন্ধু হামিদ সঠিক পথেই হোটেলের দিকে যেতে লাগল। ইন্টারনেট খুব একটা ভাল না থাকাতে ম্যাপ ঠিক মত পথ দেখাতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত বহু ঘুরে সাড়ে বারটা একটা নাগাদ হোটেলে পৌছালাম। এসে দেখি হামিদের গাড়ি তখনো পৌছাতে পারে নি। ফোন করে শুনি, হোটেলের কাছাকাছি কোন জায়গায় এসে ওর গাড়ি নষ্ট হয়েছে, গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরাতে পারছে না। অনেক কষ্টে আস্তে আস্তে গাড়ি হোটেলের কাছে নিয়ে আসল। কোথায় একটু ঘুমাবো, রাত একটায় মিস্ত্রি ডাকতে হল। মিস্ত্রি এসে দেখেন, গাড়ির একটা পার্টস ভেংগে রাস্তায় পড়ে গিয়েছে। রাস্তায় খুজে পেতে সেটা নিয়েও আসল। কিন্তু, এই পার্টস পুরোপুরি বদলাতে হবে। নোরুজের সময়, দোকান পাট সব বন্ধ, মেকানিক তার পরিচিত চ্যানেলে কথা বলে নিশ্চিত করল যে কালকে সকালে বিশেষ ব্যবস্থায় সে এক দোকান থেকে এই পার্টস জোগাড় করে গাড়ি ঠিক করে দেবে। এই সব ঝক্কি ঝামেলা শেষ করে আমাদের ইভেন্টফুল তাবরিয ভ্রমনের প্রথম দিন শেষ হল!
আমার যত ভ্রমন ব্লগ...
২৬ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৩
মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: ইরানে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কোন বৈধ শ্রমিক নাই। যারা আছেন তারা সবাই অবৈধ, তবে ভাল আছেন, আয় রোজগার ভাল। মূলত: ইউরোপ যেতে গিয়ে ইরানেই থেকে গেছেন।
বাসা বাড়ি, অফিসে কাজ করে অনেকে। পার্টি এরেঞ্জ করে অনেকে ইরানিদের জন্য, এতে ভাল আয় হয়। অনেকে কারখানায় কাজ করে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুনাম আছে।
২| ২৫ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩২
অশ্রুকারিগর বলেছেন: ভালো লাগছে বিশেষ করে আপনার ওভারস্পীডের অতিচালাকি করে ধরা খাওয়াটা
শিল্পকর্ম হিসেবে যেগুলোর ছবি দিলেন দেখতে তো ক্রেস্টের মতো লাগে! মনে হচ্ছে কবির জীবনে পাওয়া সকল উপহার!
২৬ শে জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৮
মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: হ ভাই, এরপর আর কখনো ওভার স্পিড এর জন্য পুলিশের কাছে ধরা খাই নাই! শিক্ষিত চোর হয়ে গিয়েছিলাম!!
ইরানিরা হস্তশিল্পে খুব দক্ষ। ওরা সুযোগ পেলেই সেগুলো প্রদর্শনীতে রাখে। অধিকাংশেরই ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকে।
৩| ২৬ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:১৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
ইরানী সাধারণ মানুষের কি অবস্হাা?
২৬ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৪:৩১
মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: ইরানি সাধারণ মানুষের আয় খরচের তুলনায় খুব বেশী না। ওখানে আবাসন ব্যয় খুব বেশী। আর ওরা পোষাক আর সাজগোজের ওপর খুব খরচ করে। শিক্ষাও বেশ ব্যয়বহুল।
তবে, সব মিলিয়ে অবস্থা খারাপ না, যদিও ইরানিরা খুব একটা খুশী না। কারণ, ওরা তুলনা করে ইউরোপের সাথে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫০
চাঁদগাজী বলেছেন:
ইরানের শ্রমিকদের আয় কি রকম? যা পায়, তা দিয়ে ভালো থাকেন?