নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফোরকান ওয়াহিদ

ফোরকান ওয়াহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঊনমানুষের গল্প।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৪৭





সাদা পাজেরো গাড়ীটি থেকে যে লোকটি এইমাত্র নামল, যাকে ঋজু ভঙ্গিতে হেটে যেতে দেখে অফিসের পিয়ন করিম মিয়া ত্রস্তভাবে উঠে দাড়িঁয়ে ঠুক করে সালাম ঠুকল তাকে ঘিরেই আমাদের এ গল্প। যেহেতু তাকে নিয়েই গল্প, তার একটা নাম থাকা প্রয়োজন। ধরে নিই তার নাম আজিজুল হক। অফিসে তিনি হক সাহেব নামে পরিচিত অতএব গল্পেও আমরা উনাকে এ নামেই চিনব। হক সাহেবের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। আপাত সুখী দাম্পত্যজীবনে তিনি দু'সন্তানের গর্বিত জনক। এই নিয়েই উনার সংসার। না, এটুকু বললেই সব বলা হয় না, হক সাহেবের আরো একটি পরিচয় আছে। আমাদের হক সাহেব ভারুয়াকান্দি হাই স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক মৌলভী ইউনুচ আলীর সন্তানও বটে। ভারুয়াকান্দি গ্রামে আরো অনেকের মতো হক সাহেবের পিতা-মাতা, ভাই-বোনেরাও থাকেন; যাদের কথা হক সাহেবের প্রায়শই মনে থাকে না। হক সাহেবের মনে না থাকলেও তার বৃদ্ধ স্কুল শিক্ষক পিতা কিংবা চোখে ছানী পড়া বছরজুড়ে বাতের রোগী তার বৃদ্ধা মা কিন্তু এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারেন না তাদের এই বড় অপিচার সন্তানকে।



মৌলভী ইউনুচ আলী সারা জীবন অন্যের ছেলেমেয়েকে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নীতি শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তার নিজের সন্তানদেরও তিনি একই শিক্ষায় মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। সিরাজুল হক আর মফিজুল হক না পারলেও তার বড় ছেলে আজিজুল হক ঠিকই তার শিক্ষায় মানুষ হয়েছেন। বাল্যকালে সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা- এই বাণীকে চিরজীবন সত্য মনে করা মৌলভী ইউনুচের অন্য দু'সন্তান গেরস্ত করেই চলে। এ নিয়ে তার মনে তেমন আফসোস নেই অন্তত একটা সন্তান যে মানুষ হয়েছেন এজন্যই তিনি আল্লাহপাকের কাছে শোকরিয়া জানান। মৌলভী ইউনুচের বড় ছেলে ডিস্টিক ফুড অফিসার। খাদ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে নানা দূনীর্তির কথা শুনা গেলেও তার সন্তানকে নিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত। তিনি ভাবতে ভালবাসেন তার সন্তান তারই আদর্শে মানুষ হয়ে দেশের সেবা করছেন। এমন সন্তানের জন্য কোন্ পিতামাতার না গর্ব হয়! মৌলভী ইউনুচ সুযোগ পেলেই তার ছেলের সততার কথা গ্রামের লোকদের বলে বেড়ান। এতে তিনি বড়ই তৃপ্তি বোধ করেন।



পাঠক হয়তো ভাবছেন এগল্প আসলে কার। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আজিজুল হকের না গ্রামের স্কুল শিক্ষক মৌলভী ইউনুচের। গল্পকার নিজেও জানে না এগল্প আসলে কার। হয়তো এ গল্প হক সাহেবের কিংবা মৌলভী ইউনুচের অথবা কোন একক সময়ের।



মৌলভী ইউনুচের শরীরটা ইদানিং ভাল যাচ্ছে না। বড় ছেলের কথা খুব মনে পড়ে। কতদিন তাকে দেখেন না। গত দশ-বার বছর থেকে ঈদে-চাদেঁও ছেলে গ্রামে আসে না। তার খুব ইচ্ছে করে ঢাকা গিয়ে ছেলের সাথে দেখা করে আসে, কিন্তু শরীর সাহস কোনটাতেই কুলোয় না। এখনতো ঠিকমতো হাটঁতেই পারেন না। বাড়ী থেকে হেঁটে বটতলার মোড়ে গিয়ে গত দিনের বাসি পত্রিকা পড়া তার অতি প্রিয় একটি অভ্যাস। শারিরীক অসুস্থতার কারনে গত কয়েকদিনের পত্রিকা তিনি পড়তে পারেননি। ইজি চেয়ারের শুয়ে শীতের নরমরোদ পোহাতে পোহাতে পত্রিকার জন্য বিষন্নবোধ করছিলেন তিনি। এমন সময়ই পাশের বাড়ীর কলেজ পড়ুয়া ছেলে আমীন আলী দৌড়াঁতে দৌড়াঁতে এসে মৌলভী ইউনুচকে গতকালের পত্রিকাটি দিয়ে বলে- পত্রিকায় চাচাজানের ছবি ছাপসে, আর কি জানি লিখছে।



পত্রিকার শিরোনামটি মৌলভী ইউনুচ পড়েন, পড়েন এবং পড়তেই থাকেন। তিনি ঠিক বিশ্বাস করতে পারেন না। আবারো পড়েন, বারবার পড়েন। একসময় তার হাত থেকে পত্রিকাটি পড়ে যায় মাঠিতে। পত্রিকাটি মাঠিতে ভাজঁ হয়ে থাকে। মৃদু বাতাসে যদি পত্রিকার পাতা উল্টে যেতো তাহলে হয়তো শিরোনামটি আমরাও দেখতে পেতাম - দূনীর্তির অভিযোগে উচ্চপদস্থ খাদ্য কর্মকর্তা আজিজুল হক গ্রেপ্তার, বাড়ী তল্লাশী করে উদ্ধার অর্ধ কোটি টাকা।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৫০

ধূসর মানচিত্র বলেছেন: বাস্তবময় গল্প

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:০৯

ফোরকান ওয়াহিদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:০২

হাসান মাহবুব বলেছেন: সময়ের গল্প

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:১৬

ফোরকান ওয়াহিদ বলেছেন: একজন প্রিয় গল্পকারের মন্তব্য পেয়ে অনুপ্রাণিত।

৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:০৪

রেফিন বলেছেন: পুরাপুরি বাস্তবতার সাথে মিল আছে।যাইহোক, লেখনীটা ভালো ছিল।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৩২

ফোরকান ওয়াহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:২১

মেরিনার বলেছেন: বাংলাদেশে গত শতবর্ষ ধরে হয়তো এটাই বাস্তবতা - সময়ের সাথে দুর্নীতির ক্ষেত্র বেড়েছে, সুযোগ বেড়েছে, দুর্নীতির প্রয়োজনীয়তাও(?) বেড়েছে, আর বলাবাহুল্য তার সাথে সম্পৃক্ত জনসংখ্যাও বেড়েছে। সেই সাথে, সুযোগ থাকলে, দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত না হবার কারণও প্রায় কর্পুরের মত শূন্যে মিলিয়ে যেতে বসেছে। আল্লাহয় যেভাবে বিশ্বাস করা উচিত, সেভাবে বিশ্বাস না করলে, সঠিক "আল্লাহ সচেতনতা" না থাকলে - মানুষ শুধু শুধু সৎ থাকবে কেন? অন্য কোন কারণে যদি বা থাকেও, সেটার একটা মূল্য থাকে - প্রলোভনের মাত্রা সেই মূল্যমান ছাড়িয়ে গেলেই, সেই ঠুনকো "সততা-বেষ্টনী" ভেঙ্গে পড়ে। আরেকভাবে বলতে গেলে "আল্লাহ-বিহীন" সততার একটা মূল্য রয়েছে - কারও জন্য তা ১০০ টাকা হতে পারে আবার কারো জন্য ১০০ কোটিও হতে পারে - তারতম্যটা শুধু মাত্রার। উপযুক্ত মূল্য দিতে পারলে, এখনকার দুঃসময়ে, সকল সততাই ক্রয়েযাগ্য!!

৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩১

মেরিনার বলেছেন: Correction: উপরের মন্তব্যের শেষ শব্দটা হবে "ক্রয়যোগ্য"!

৬| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:০০

মনির হাসান বলেছেন: পোস্ট করেছেন: ১টি
মন্তব্য করেছেন: ৬টি
মন্তব্য পেয়েছেন: ৮টি
ব্লগ লিখেছেন: ১ বছর ৫ মাস
ব্লগটি মোট ২০৮ বার দেখা হয়েছে



হে হে হে হে হে হে ... মাইর আছে কপালে ....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.