নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলা না বলা কথা

নীলপরি

গল্পের বই পড়তে , গান শুনতে , ব্লগ লিখতে ও পড়তে ভালবাসি

নীলপরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতা ( ২য় পর্ব )

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৪৩

ওপ্রান্ত থেকে একটু ঝাঁঝাঁলো সুরে ভেসে এলো ' কি রে কি করছিস ? কতক্ষন থেকে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ করছি , উত্তর দিচ্ছিস না । কার সাথে এতো চ্যাট করছিস ? তাই ফোন করলাম । '
এপ্রান্ত থেকে মনসিজ হাল্কা সুরে বলে ওঠে ' রোহিনী গিয়াছে চলি ..।চাঁদ কাঁদে একা একা..............'
এই সুর শেষ হওয়ার আগেই রোহিনী : ধেৎ , আমার এসব শুনতে ভালো লাগছে না !
মনসিজ : তো কি শুনতে ভালো লাগছে বল ? দেখি বলতে পারি কিনা !

রোহিনী : সিজ , আমি সিরিয়াস ।

মনসিজ : নে আমিও সিরিয়াস হয়ে গেছি । নে বল

রোহিনী : সেই ইন্জিনিয়রের বাড়ি থেকে মাকে ফোন করেছিল ।

মনসিজ হাসি চেপে : কেনো তোর মা কি আবার বিয়ে করবেন নাকি ?

রোহিনী ধীর সুরে : সি ইজ মাই মাদার অ্যান্ড দ্য জোক ইজ নট সো ফানি ।

মনসিজ : সরি ! সরি ! তুই এখন কি করছিলি বল

রোহিনী : আর কি ? তোকে কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করছিলাম ।তুই নাজানি কি করছিলি ! যে শুনতে পারছিলি না !

মনসিজ : আরে , আমি তো ব্যস ঐ আর কি .......।

রোহিনী রাগত স্বরে : তবে ঐ আর কি কর । আর আমি এদিকে জীবন মরনের মাঝে দুলতে থাকি ।

ফোন কাট ।

কি করবে এখন মনসিজ ? রিং ব্যাক করবে ? কিন্তু তাহলে তো ফোন তুলবে না । আবার না করলে বলবে ইনসেনসিবল । নিজেই ঝগড়া করবে , আবার নিজেই কাঁদবে ! ওফফ ,ইমপসিবল সিচুয়েশন ।অথচ এই সিচুয়েশনে পড়বার জন্য , সেদিন কতো প্রার্থণা করেছে । স্মৃতি যেন এক লহমায় ভেসে ওঠে তার চোখের সামনে । মনে পড়ে যায় কলেজের দিনগুলির কথা ।কিভাবে তার কেরিয়ার গ্রাফটা উর্ধগামী করছিল সে ।কলেজের সেই মিত্র স্যর , যিনি কোনো কিছুতেই সন্তুুষ্ট হতেন না , তিনি পর্যন্ত বলেছিলেন ' ব্র‌াভো ,খুব ভালো করেছো । এভাবে এগোলে ফার্স্ট ক্লাস পাবেই । আর সেটা হয়েও ছিলো । কিন্তু এরমধ্যে তার জীবনে রোহিনীর গল্পও শুরু হয়ে যায় ।

সেবার কলেজ ম্যাগে সে একটা কবিতা লিখেছিলো । হঠাৎ একদিন জয়িতার সাথে একটা মেয়ে এসে জিঙ্ঘাসা করল ' আপনিই এই কবিতাটা লিখেছেন ? ' উত্তর দেওয়ার জন্য মুখ তুলতেই চোখ যেন স্থির হয়ে যায় মনসিজের । হলুদ মাখনের মতো গায়ের রঙ , ঈষৎ খাটো নাক এবং দুনিয়া এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়া দৃষ্টি । আর পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর আঙুলগুলো কপালে এসে পড়া অবাধ্য চুলগুলোকে বশ মানাতে ব্যস্ত । তার মনে হোলো ' ভগবান ইন্জিনিয়রিং না পড়িয়ে এখানে পাঠিয়েছেন , বোধহয় শুধু এই মেয়েটার সাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য । অটোর লাইনে , মেট্রোর ভিড়ে বা অন্যকোথাও যাকে দেখেও দেখেনি , সেই এই মেয়ে । তার বাদবাকি জীবনের প্রেমের কবিতার সাবজেক্ট । ' এসবের মধ্যে জয়িতা বলে উঠল ' ইনট্রো করিয়ে দেই। এই হচ্ছে রোহিনী বসু । হিস্ট্রী অনার্স । ফার্স্ট ইয়ার। আমাদের পাড়ায় থাকে । 'এবারে রোহিণীই শুরু করলো ' আপনি সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়েও ভালো কবিতা লেখন তো! ' সে ভাবছিল উত্তর দেবে, কেনো সাইন্সের স্টুডেন্টদের কবিতা লেখায় কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে নাকি ? কিন্তু সে সুযোগ পেলো না । মনের কথা মনেই থেকে গেলো। কারন রোহিণীই আবার বলে উঠল 'আমি কিন্তু আপনাকে তুই বলবো । কারন আমি জয়িতার থেকে একটু জুনিয়র হলেও আমরা কিন্তু বন্ধু আর আমার আবার ওসব দিদি , দাদা আপনি টাপনি আসে না । তাছাড়া তুইও জয়িতার বন্ধু আর আমিও জয়িতার বন্ধু । তাই তুই । এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে একটু হেসে উঠল রোহিণী । যেন সে একটা জোক শুনিয়েছে । তবে মনসিজের কাছে এটা ছিল পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম জোক ।হাসির রেখা কিভাবে ফোটাতে হয় সেটাই ভুলে গিয়েছিল সে । যাকে সবে প্রেমিকা ভাবতে শুরু করেছে সে যদি এক নিমেশেই বন্ধু হয়ে যায় , তাহলে ছেলেদের অবস্থাটা ঠিক কেমন হয় ? রসগোল্লা খেতে গিয়ে গলায় আটকে গেলে যেমন হয় , সেরকম বোধহয় ।
এই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি থিতু হোয়ার আগেই সে দেখতে লাগলো , ইউনিওনের দাদা থেকে স্টাইল ভাই মার্কা ছেলেগুলো রোহিণীর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে । অজুহাত একটাই । রোহিণী একটু দেরী করে কলেজ জয়েন করেছে । তাই নাকি সবাই তাকে হেল্প করতে চায় ।হেল্প না ওয়েটিং লিস্টে নাম লেখানো সেটা সিজের থেকে আর কে ভালো বুঝবে ! ওরা জানতো না এরথেকে এ।কে ৪৭ চালালে তার কম লাগতো ।কারন ছেলেরা গুলিবিদ্ধ হওয়ার যন্ত্রনা হয়তো সহ্য করতে পারে । কিন্তু একবার যাকে দেখে প্রেমিকা মনে করেছে , তার দিকে অন্য কেউ তাকালে সেটা সহ্য করার ক্ষমতা তাদের নেই ।
তবে রণে সে ভঙ্গ দিলনা ।তার মনে হয়েছিলো ইউনিওনের দাদা বা জিম মেড হিরো টাইপ হতে বিশেষ কোনো ট্যালেন্টের প্রয়োজন নেই ।কিন্তু কবিতা তো আর চাইলেই কেউ লিখতে পারবে না ।তার এই ক্যালি তাকে একটু হলেও এগিয়ে রেখেছে । সেই ক্যালির বহিঃপ্রকাশ করতে সে লিটল থেকে লিটলতর পত্রিকার অফিসে গেছে , আর সেইসব পত্রিকা তুলে দিয়েছে জয়িতার হাতে । তার কেনো জানিনা বিশ্বাস হয়েছিলো , জয়িতার হাতে পৌঁছলে কবিতাগুলো রোহিণী পড়বেই । বিশ্বাস এক ভীষণ ব্যপার । যা যুক্তির ধার ধারে না , কিন্তু ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পাওয়া যায় । আর তার এই সৎ চেষ্টা দেখে ঈশ্বরও বেশীদিন বিমুখ থাকতে পারলেন না ।


সেদিন মনসিজ তার বন্ধু তমালের সাথে কলেজ ক্যান্টিনে বসেছিলো । হঠাৎ দেখল রোহিণী তাদের দিকে এগিয়ে আসছে । হাতে তারই দেওয়া একটা পত্রিকা ।
মনসিজ প্রমাদ গুনলো এইভেবে যে,তার এই পত্রিকা প্ল্যানিং রোহিণী ধরে ফেলেছে । তারমধ্যেই রোহিণী আগমণী সুর বেজে উঠেছিলো , ' আমি , তোর আর জয়িতার কমন ফ্রেন্ড । অথচ তোরা আমাকেই বললি না । " মনসিজ অনুচ্চ স্বরে বলেছিলো ' মানে ? কি বললাম না ? ঠিক বুঝতে পারছি না ? ' এক মুহূর্তের ব্যবধানে রোহিণীর স্বরটা কেমন যেনো ভাঙ্গা ভাঙ্গা শোনাল ।সে বলেছিলো ' আসলে আমিই স্টুপিড , জানিস তো ।তুই জয়িতাকে ম্যগগুলো দিতিস । আর আমি ওর কাছ থেকে নিয়ে পড়তাম । এমনিতে আমি , কবিতা টবিতা পড়ি না । কিন্তু তোর লেখা বলেই পড়তাম ।তবু বুঝতে পারিনি । ' একটু শ্বাস নিয়ে সে যোগ করেছিলো "আজ আমার বন্ধুরা বলছিলো যে , আমি তোদের কমন ফ্রেন্ড , অার আমিই বুঝলাম না । দেখ ,আজ জয়িতা কলেজে আসেনি । কিন্তু আমি ওকে ফোন করিনি । কারন আমি সামনা সামনি শুনতে চাই । তুই সামনে আছিস তুই ই বল প্লিজ । ' শেষের কথাগুলো বলার সময় ওর গলাটা কেঁপে গিয়েছিলো । মনসিজ খেয়াল করেছিলো , মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে গিয়ে রোহিণীর চোখে জল স্থির হয়ে আছে । তবে যে কোনো মুহূর্তে হার মানতে পারে । তার মনে হয়েছিলো সে কি কনফেস করবে যে সে ঐ পত্রিকাগুলো কেনো দিত ।সেই ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই রোহিণী বলে উঠেছিলো ' সিজ , তুই কি কাউকে পছন্দ করিস ? সে কি এই কলেজের কেউ ? আমি চিনি তাকে ? ' এই অভাবনীয় প্রশ্ন গুলো শুনে মনসিজ প্রথমেই তাকিয়েছিলো তমালের দিকে । তমালকে দেখে মনে হয়েছিলো , সে যেনো কোনো ফিল্মের শুটিং দেখছে । তারপর দেখেছিলো যে চারপাশের জটলাগুলো নিজেদের নিয়ে এতো ব্যস্ত যে , তাদের দিকে খেয়াল করছে না । কিন্তু রোহিণী কেনো কউকেই খেয়াল করছে না , সেটা বুঝে উঠতে পারার আগেই সে দেখতে পেয়েছিলো রোহিণী ঐ পত্রিকাটা খুলে কি যেনো খুঁজছে ? সে সময়ে মনসিজ ভেবেছলো তথাকথিত অপশব্দ তো সে ব্যবহার করে না ! যথাসম্ভব নীচুস্বরে সে বলেছিলো ' আমিতো ঠিক কিছুই বুঝতে পারছি না । ' রোহিণী মাথা না তুলেই জবাব দিয়েছিলো ' বুঝতে পারছি না বললে কি করে হবে ! আমাকে বলতেই হবে । ' প্রায় সাথে সাথেই মনসিজর সামনে পত্রিকাটা তুলে বলেছিলো ' এই তো এখনে লিখেছিস - ঐ চোখের কাজল ধোয়া প্রেমজল / ছুঁয়ে যায় দীঘির করতল । এটা কার জন্য লেখা ? জয়িতা না ? ওই তো লাউড করে কাজল লাগায় । তাই তুই এটাকে হাইলাইট করেছিস? ' মনসিজ এক মুহূর্তের জন্য ভাবতে চেষ্টা করেছিলো যে জয়িতা ঠিক কিভাবে কাজল পড়ে , কিন্তু মনে করতে পারেনি । তারপর হাল্কাসুরে বলেছিলো ' হ্যা । কাউকে পছন্দ করি । তবে সেটা জয়িতা নয় ।' রোহিণী ততোটাই কাটাকাটা সুরে বলেছিলো ' তো কে ?' মনসিজ গলাটা খাদে নামিয়ে উত্তর দিয়েছিলো ' সে আছে একজন । পরে বলবো । রোহিণীর মায়াবী চোখগুলো খুব কঠিন লেগেছিলো সে সময়ে । সে ততোধিক কঠিন অথচ কাঁপা সুরে বলে উঠেছিলো ' না তোকে এখনই বলতে হবে । আমি এখনই শুনতে চাই । ' গলাটা খাদে রেখে হাসি মেশানো কন্ঠে জবাব দিয়েছিল মনসিজ ' তবে শোন , সেটা তুই । ' কিন্তু এই জবাবের রিয়্যাকশনে রোহিণীর স্তব্ধতা দেখে মনসিজেের মনে হয়েছিলো সে বোধহয় কিছুই সুনতে পায়নি । তখন সে নীচু কিন্তু দৃঢ় কন্ঠে বলেছিলো ' সেটা তুই । আর এই কবিতাটাও তোর জন্যেই লেখা ।'
আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় লজ্জাবতীর লতা যেমন গুটিয়ে যায় , রোহিণীর ঝুঁকে যাওয়া দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মনসিজের তাকে সেরকমই লেগেছিলো । এরপর রোহিণী সেখানে এক মুহূর্ত স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে , অস্ফুস্ট স্বরে 'ধেৎ' বলে উঠেই প্রায় দৌড়িয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো । আর জোড়ে হেসে উঠে তমাল মনসিজকে বলেছিলো 'হোয়াট আ সিন ইয়ার ! কেয়া স্টাইল থা তেরা প্রোপোজ করনেকা ! '
তবে এর অনেকদিন পর রোহিণী মনসিজকে প্রশ্ন করেছিলো ' হোয়াট ইজ দীঘির করতল ? আই কান্ট ইমাজিন । '
সত্যি কবিরা যার কথা ভেবেই কবিতা লিখুন না কেনো , পাঠকদের কথা মোটেই ভাবেন না !


কি রে এখনও যন্ত্র নিয়েই খুটখাট করছিস ? ঘরে তোর জলজ্যান্ত মা ও আছে । এবারে আমি লাস্ট সিরিয়াল দেখবো । তারপরেই খেতে দেবো । মায়ের এহেন বচনে মনসিজের স্মৃতি রোমোন্থন হোঁচট খায় । কেনো যে মোবাইলের উপর তার মায়ের এতো রাগ সেটা ভাবতে গিয়েও না ভেবে রোহিণীকে কল করে সে । কে জানে এতোক্ষনে হয়তো রাগ কমেছে । প্রথমবারের চেষ্টাতেই রোহিণীর কন্ঠস্বর শুনতে পায় সে ' পেত্নীর সাথে প্রেম করা হোলো ? এই প্রশ্নের কি জবাব দেবে ঠিক করতে না পেরে মনসিজ বলে ' মানে ? '
রোহিণী : মানে তখন বললি না ঐ আর কি করছিলাম । তোর ঐ আর কি মানে তো কবিতা লেখা ?
মনসিজ : তো ?
রোহিণী : তুই এখন যখনই কবিতা লিখিস তখনই তো দেখি , তুমি হেন ছিলে , তেন ছিলে । পাস্ট টেন্স । ছেলেরা কি সামনের জিনিস দেখতে পায় না ? নাকি তোর আগেও কেউ ছিলো ?
মনসিজ : ( হাসি মিশিয়ে ) ইটস অনলি ইউ ।
রোহিণী : ছাড় সেটা আগে বলতিস । এখন তোর কবিতার নতুন সাবজেক্ট হয়েছে ।
মনসিজ : মানে ?
রোহিণী : মানে মা তাই বলছিলো ।
মনসিজ : বাহ । গুড নিউজ । তোর মা ও আমার কবিতা পড়ছেন নাকি ?
রোহিণী : আমি সিরিয়াসলি তোকে একটা রিকোয়েস্ট করছি সিজ । প্লিজ রিকোয়েস্টটা রাখ । তুই গল্প লেখ ।
মনসিজ : ( অবাক কন্ঠে ) কি ?
রোহিণী : দেখ তুই কবিতা লিখতে পারিস । তারমানে তোর লেখার হাত আছে । তুই পারবি ।
মনসিজ : উফস । গল্প লেখা বললেই লেখা নাকি ! প্রথমে একটা থিম মাথায় আনা , তারপর সেটাকে ইন্টারেস্টিং ভাবে সাজিয়ে লেখা । আর যতদিন না সেটা শেষ হচ্ছে ততদিন হাজারটা কাজের মধ্যেও সেটাকে মাথায় রাখা । ফোকাস ঠিক রাখা । তাছাড়া একটানা লেখার জন্য ফিজিক্যাল পেন , মেন্টাল স্ট্রেস কি নেই । দূর আমার অতো সময় নেই । আমার দ্বারা ওসব হবে না ।
রোহিণী(শান্ত কন্ঠে) : বুঝতে পারছি ব্যপারটা সোজা নয় । আর তাই তো সবাই পারে না । দেখ , পন্ডিত তো অনেকেই হতে পারে । কিন্তু অনেক পন্ডিতই গল্প লেখার মতো মৌলিক কাজটা করতে পারে না । ।
সাথে সাথেই কান্নার আওয়াজ শোনা যায় ।
মনসিজ :কি মুশকিল ! কাঁদছিস কেনো ? হঠাৎ তোর কি হোলো বলতো ?
রোহিণী : আজ মা তোর সম্পর্কে জানতে চাইলো । আমি যেই বললাম তুই রাইটার । অমনি ..
মনসিজ (কথার মাঝখানে ) : হোয়াট ? রাইটার কেনো বললি ?
রোহিণী : আমার ইচ্ছা ।
মনসিজ : আচ্ছা ঠিক আছে বল
রোহিণী : মা বলল যে ,রাইটার তো এমন ভাবে বলছ , যেন চেতন ভগত ।
মনসিজ : তোর মা কি চেতন ভগতের লেখা খুব পড়েন ?
রোহিণী : না । মা নাচ বলিয়ে দেখত । তাই ।
মনসিজ : এরপর আমি যেই বললাম তুই লিটল ম্যগাজিনে লিখিস , তখন মা বলল যে ঐ পত্রিকাগুলো ঝালমুড়ি বিক্রী ছাড়া আর কোনো কাজে আসে না । তারপর ........
মনসিজ : তারপরও আছে ?

রোহিণী :হ্যা । তুই সোস্যাল মিডিয়াতে লিখিস শুনে মা বলল যে , ওখানে লোকে লাইক আর কমেন্ট পেতে ওসব করে ।
মনসিজ : কি ?
রোহিণী : হ্যা , আর এটা মা ঠিকই বলেছে । তুইও তো কতো লাইক আর কমেন্ট পাস । বিশেষ করে মেয়েদের কাছ থেকে । তোর তো মজাই লাগে বল ?
মনসিজ : কি বলছিস এসব ?
রোহিণী : নয়তো কি ? আমার জন্য তো একটা গল্পও লিখতে পারবি না বললি । আচ্ছা আমার জন্য কি করতে পারিস তুই ?
মনসিজ ( বাউন্ডারি লাইনে গিয়ে ক্যাচ ধরার মতো করে রাগটাকে সামলে নেওয়া গলায় ) : তুই জানিস না , আমি তোর জন্য কি করতে পারি ?দেখ স্কুলে পড়তে আমি পড়াশুনোটাকে সিরিয়াসলি নিইনি । বাবার আমাকে ডাক্তার , ইন্জিনিয়র বানানোর ইচ্ছা ছিলো । আমি ওসব চেষ্টা করিনি । কিন্তু কলেজে উঠে আমি বুঝতে পারলাম জীবনের গুরুত্ব । তুই জানিস রেজাল্ট কতো ভালো হয়েছিলো । বি ।টেক বা এম ।এস ।সি যে কোনো একটা করতেই পারতাম । কিন্তু সেসব না করে চাকরীটা কেনো নিলাম ? কার জন্য ?
রোহিণী (কান্না জড়ানো গলায় ) : তো আমি কি করবো ? মেয়েরা ওরকম কমেন্ট লিখলে আমার হিংসে হয় না বুঝি ?
মনসিজ ( কাটাকাটা স্বরে ) : আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে । আমি ছোটো থেকেই জানি আমার সামর্থ্য কতটা । তাই বাবাকে কোনোদিন ব্রান্ডেড জিন্স কিনে দিতে বলিনি । তিন হাজার টাকার জুতো চাইনি । প্রথম মোবাইল সেটটা পর্যন্ত নিজের টাকা জমিয়ে কিনেছিলাম ।
একটু থেমে সে আবার বলে : কিন্তু তোকে দেখে কেনো জানিনা খুব নিজের মনে হয়েছিলো । মনে হয়েছিলো তোকে আমার জীবনে চাই । তারজন্য করতে হয় আমি করবো ।
রোহিণী : আই অ্যাম সরি ।
মনসিজ : সরির দরকার নেই । তোর মা যখন .......
রোহিণী( কথা শেষ করতে না দিয়েই ) : তখন থেকে তোর মা ,তোর মা বলছিস কেনো ?

মনসিজ : সরি মানে আন্টি যখন .....।
রোহিণী(আবার কথা শেষ করতে না দিয়েই ) :ডোন্ট ব্লেম হার । মা তোর সাথে কথা বলবে বলেছে । তুই প্লিজ একবার আয় আমাদের বাড়ীতে ।
মনসিজ : গিয়ে আর কি হবে ?
রোহিণী : প্লিজ সিজ । এভাবে বলিস না । আমাকে বাড়ীতে খুব প্রেশার দিচ্ছে । মা বলল যে যতসব ফুলিশ রোম্যান্টিসিজম ।
মনসিজ : তাই তো বলছি

রোহিণী : প্লিজ এরকম বলিস না ।কিছু একটা কর । না হলে আমি কিন্তু সুইসাইড করবো । ঠান্ডা মাথায় বললাম ।
মনসিজ জানে রোহিণী কতটা ইমোশনাল । তাই সে তাড়াতাড়ি বলে ' কি বলছিস এসব ? এইজন্য চাকরী করছি ? ঠিক আছে । আমি যাবো ।
রোহিণী : সত্যি ?
মনসিজ : হ্যা , বললাম তো । এখন কান্না থামা । প্লিজ ......।


ফুলিশ রোম্যান্টিসিজম । সত্যি , প্রেমে যারা পড়ে , তারা ছাড়া বাকিরা খুব যুক্তিবাদী হয় । এই প্রেমের কথা বলেছিলেন বলেই না লোকে চৈতন্যদেবকে পর্যন্ত ন্যাকা চৈতন্য বলে । বস্তু নির্ভর এই সমাজে মানুষ নিজে ভালোবাসতে পারে না বলে , অন্যের ভালোবাসাকে এতো ছোটো করে দেখে কেনো ?

মনসিজের মাথায় কথাগুলো এলোমেলো ভাবে ঘুরপাক খেতে থাকে ।
'

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: প্রেমের কথা বলেছিলেন বলেই না লোকে চৈতন্যদেবকে পর্যন্ত ন্যাকা চৈতন্য বলে । বস্তু নির্ভর এই সমাজে মানুষ নিজে ভালোবাসতে পারে না বলে , অন্যের ভালোবাসাকে এতো ছোটো করে দেখে কেনো ?
দারুন তত্বকথা বলা হয়েছে গল্পের শেষ প্রান্তে এসে ।
ভাল লাগল ++++
শুভেচ্ছা জানবেন ।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩২

নীলপরি বলেছেন: আমি তো এই পোষ্টের কথা ভুলেই গেছিলাম । :)

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

আপনাকেও শুভেচ্ছা ।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যটি নজরে পড়েছে বলে ।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫২

নীলপরি বলেছেন: কাল দেখেছিলাম । কিন্তু নেট স্লো ছিল বলে উত্তর দেও্য়া হয় নি ।

আর লেখাটা পড়ে আপনিই এটাকে স্বীকৃতি দিলেন । তাই মন্তব্য নজরে পড়তে বাধ্য ।

ধন্যবাদ । :)

৩| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ, লিখাটি নীজগুণেই স্বিকৃত :) , আমি শুধু আমার ভাললাগা আর শুভেচ্ছা জানিয়েছি, ব্লগের এখন যে গতি, তাতে মন্তব্য নজরে না পরারই কথা । ব্লগের গতির জন্য পোস্ট দেয়া কস্টকর হয়ে যাচ্ছে । গতকাল মেঘদুত ২য় পর্বটা পোস্ট দিতে গিয়ে বুঝতে পারছি , কিছু ছবি ডাওনলোড করতে গিয়ে দেখি চাকা ঘুরছে তো ঘুরছেই । তাই মাঝপথ থেকে ফিরে আসছি , পরে চেস্টা করে দেখব বলে ।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৩

নীলপরি বলেছেন: জেনে ভালো লাগলো ।
মেঘদুত ২য় পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ।

৪| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৩

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:



বস্তু নির্ভর এই সমাজে মানুষ নিজে ভালোবাসতে পারে না বলে , অন্যের ভালোবাসাকে এতো ছোটো করে দেখে কেনো ?



কথাটি মতই খুব সুন্দর প্রেমকথা! এই প্রেমগুলো বেচে থাকুক আরো বহু বহু বছর! মানুষ ভুলে যাক বস্তুবাদ, প্রেমের কাছে যুক্তি নির্বাক হয়ে থাক। লেখায় প্লাস+++

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৫

নীলপরি বলেছেন: আমার তো তেমনই মনে হয় ।

সহমত দেখে খুশি হলাম ।

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

শুভেচ্ছা ।

৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ । আশা করি মেঘদুতের দেখা মিলবে দু এক দিনের মধ্যেই । নীলপরির লিখায় অন্যের ভালোবাসাকে মানুষ বড় করে দেখার চেষ্টা করুক এ কামনা রইল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.