নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূরে থাকুন তারা যারা ধর্মকে পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্তানী প্রেমী , রাজাকার ও তাদের ছানাপোনা ।
সময়টা শীতকাল, বার্ষিক পরিক্ষা শেষ, প্রতিবারের মত নানু বড় মামা কে পাঠিয়ে দিলেন আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য, মামা আসা মানে আমার আনন্দ দ্বিগুণ, উত্তেজনায় রাতে ঘুম কম হয়, একে পরিক্ষা শেষ, পড়ার বেমাক্কা চাপ নাই, তার উপরে বড় মামা এসেছে, বাড়ি যাবো আলাদা একটা উত্তেজনা। বড় মামা দিন দুই থাকতেন কিন্তু আমার তর সইতো না কারন যতদিন যায় আমার ছুটি কমে আসে, আমি মামা কে খোঁচাতে থাকি, মামা আজ যাই কাল যাই করে তিনদিন লাগিয়ে দিতেন সেই সাথে আমার উত্তেজনার পারদ চারশ ডিগ্রি ফারেনহাইডে উঠে যেত।
যেইদিন বাড়ি যেতাম সকাল থেকে আমার লম্ফজম্ফ দেখার মত হতো, আম্মা আমার প্রীয় পরোটা, আলু ভাজি , ডিম ভাজি, আর গরুর মাংসের ভুনা সকালের নাস্তা হিসেবে দিয়ে দিতো তার পরিমান এত্ত বেশি থাকতো যে দুই জন মিলা সকাল দুপুর খেয়েও শেষ করতে পারতাম না, বাসা থেকে বেড়িয়ে রিক্সা নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে চলে যেতাম, হুড়মুড়িয়ে বাসে উঠেই শুরু হতো আর কতো দূর , আর কতোক্ষন লাগবে। এক একটা ফেরি পার হতো আর আমার মনে হতো এইতো বাড়ি চলে এলাম। মামা পথে বিভিন্ন মজাদার খাবার খাওয়াতো, মুড়ি বানানো, চানাচুর মাখা, কোকাকোলা, স্প্রাইট, সকালের নাস্তা সাবাড় করেও আমরা ওগুলাও মনের আনন্দে সাবার করতাম। বাস থেকে নেমে লম্বা রাস্তা রিক্সায় ঝাকি খেতে খেতে যখন মামার কোলে ঘুমিয়ে পরতাম মামা হালকা নাড়া দিয়ে বলতো এই ওঠ বাড়ি এসে গেছি। তারপর আর কি কাচা ঘুম ভাঙ্গা চোখে লাফাতে লাফাতে নানুর কোলে ঝাপিয়ে পরতাম।
তো প্রতিবারের মত এইবারো বাড়ি এসে আনন্দের সিমা নাই, ছেলেবেলার বন্ধু গুলা কেমনে জানি গন্ধ পেয়ে যায়, রাতেই ঘরের জানালার কোনাকাঞ্চি দিয়ে সংকেত দিতে থাকে, বাহিরে বের হওয়ার, আমিও তক্কে তক্কে ছিলাম যেই না বড় মামা শুয়ে পরলো ওমনি দরজা বন্ধ করে বাহিরে বের হয়ে গেলাম, গ্রামের রাত নয়টা মানে গভির রাত। আসে পাশে শেয়াল আর কুকুরের ডাক ছাড়া কোন শব্দ নাই, এর মধ্যে আতিক বললো চল শিন্নি খাবো, শিন্নি হলো খেজুরের রস ও চাল নারেকেল দিয়ে একপ্রকারের মিষ্টান্ন। ব্যাস আমরা সবাই এক কথায় রাজি কিন্তু রস কই পাবো এমন জিজ্ঞাসা করতেই শিমুল খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠলো, শহুরে পোলায় দেখি সব ভুইলা গ্যাছে, ক্যান গতোবার যার গাছের রস পারলাম তার গাছের রস খামু
আমি চমকে উঠে বললাম না বাবা তোতাই ফকিরের গাছের রস আমি পারতে যাবো না, কি সব ফুক টুক দিয়ে রাখে হাত পা লেগে যাবে
ধুর তুই একটা বলদ, ওই তোতাই ব্যডা জানে না কিছু, দাত ক্যেলিয়ে বলল আতিক
শিমুল আমার কথায় সায় দিয়ে বললো হ রে তোতাই বাদ, বুইড়ার ডায়বেটিস আছে খালি পুসুত পুসুত পেশাব করতে বাহির হয় ধরা পরলে কামড় দিতে পারে ব্যাটার দাত দেখছি ইয়া বড়বড়।
আতিক জিজ্ঞাসা করলো তাইলে যামু টা কই ?
চল আমজু দুদুর ভিটায় যাই, অনেক রস হয় দুদূর গাছে।
এ্যা সাহস কতো চিল্লিয়ে ওঠে নুরু, যা আমজু দুদ ধইরা দেবে নে।
দুস সালা সব গুলা বলদা, গেলে আমজু দুদুর ভিটায় যাবো নতুবা না , কল্লোল আইছে কত্তদিন পর সিন্নি খামু না, হয় নাকি এমন?
দোনোমোনো করে সবাই রাজি হয়ে গেলাম, সবাই পা টিপে টিপে জংগলের মধ্যে দিয়ে আমজু দুদুর ভিটার দিকে রওনা দিলাম, আবু চৌকিদার যাতে টের না পায় একটু দুরেই তার গলা শুনছি, ওই দেখি কইলাম, কই যাও? আগে ভয় পেতাম কিন্তু এখন আসল রহস্য জানি তাই আর ভয় পাইনা আবু চৌকিদার রাত কানা রাতে কিছুই দেখে না, চাকুড়ি চলে যাওয়ার ভয়ে রাতে একটু পর পর চিল্লায় আসলে সে ঘুমিয়ে আছে অভ্যাস বসতো ঘুমের মধ্যে চিল্লায় ওই দেখি কইলাম যাও কই। এলাকার সব চোর জানে এই কথা, তারা নিশ্চিন্তে চুরি করে মাঝে তো শুনেছিলাম কোন চোর নাকি আবু চৌকিদারের বদনা চুরি করে নিয়ে তার বাড়ির তাল গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিলো আমার অবশ্য জোর সন্দেহ নুরুর উপরে কারন নুরু ছাড়া এত্ত বড় তাল গছে কেউই উঠতে পারে না নুরু অবশ্য স্বিকার করে না ।
আমরা অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে আমজু দুদুর ভিটায় পৌছে গেলাম, আতিক আর নুরু ভালো গাছ বাইতে পারে চোখের নিমিষে ওরা বড় বড় সুপাড়ি গাছে উঠে যায় আর এটাতো খেজুর গাছ, তরতরিয়ে ঊঠে গেলো, চারটা গাছ থেকে হাড়ি ভর্তি খেজুরের রস নামিয়ে আনলো এখন হাড়ি জায়গা মত রাখার পালা, আমাকে বললো ওই তুই পশ্চিম দিকে তাকা আমি মেজাজ দেখিয়ে বললাম কেন পশ্চিম দিকে তাকাবো কেন।
তুই শহুরে পোলা, তোর সত্য কথা বলার বাতিক আছে ধরা পরলে সব বলে দিবি তাই
ক্যান তোরা কি করবি, অবাক হয়ে বললাম
রসে একটু ঝাঝ মেশাবো তাই হে হে করে বলল নুরু
মেশা আমার সামনেই মেশা এতে পশ্চিম দিকে তাকাতে হবে কেন, তো কি ঝাঝ মেসাবি আমাকেও দে আমিও মিশাই
ওরা তিন জন হা হা করে হাসতে হাসতে একে অন্যের গায়ে গড়িয়ে পরলো, তোরে দেব কি রে ছাগল তোর সাথেই ঝাঝ আছে, কোত করে চাপ দে বেরিয়ে আসবে।
আমি অদ্ভুত ভাবে গোল গোল চোখে চেয়ে বল্লাম মানে কি
আতিক সুন্দর মত প্যান্ট খুলে হাড়ির মধ্যে পেশাব করে দিলো ওর দেখা দেখি নুরু শিমুল ওরাও হাড়িতে পেসাব করে দিলো, এই নে আমজু দুদুর রসে ঝাঝ দিয়ে দিলাম , আমার গলা দিয়ে বমি চলে আসলো, আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম মানে কি এই রস কাল খাবে আমজু দুদু।
চুপ থাক সালা বলদ, চ্যাচ্যাইস না লোক জন বুঝলে ঠ্যাং ভেঙে দবে। আতিক আমার মুখ চেপে ধরে বলল
সবাই মিলে আতিকের বাড়ি গেলাম, আতিকের বড় বোন সুফিয়ে কে জাগিয়ে সিন্নি রাধতে বললাম, সুফিয়া আপা তো আমাদের দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসলেন চোরার দল আবার তোতাই ফকিরের গাছের রস চুড়ি করছোস আতিক ঝপাত করে সুফিয়া আপার পা চেপে ধরে বললো না আপা এইবার আমজু দুদুর গাছের রস পারছি, এইবারের মত শিন্নি রেধে দে পরের বার আর চুড়ি করবো না, ওই কল্লোলটা এলো তাই তো আমরা সবাই মিলে সিন্নি খাবো বলে ভাবলাম, দে না আফা, সুফিয়া আপা আমাদের সবাই কে দশ বার করে কান ধরের ওঠ বস করারা চুক্তিতে শিন্নি রেধে দিলো আমরা বিনা প্রতিবাদে রাজি হয়ে গেলাম, সুফিয়া আপা অনেক রুপসি ওনাকে দেখলেই আমার মন উদাস হয়ে যেতো। আতিক কি করে যেনো জেনে ফেল্লো একদিন আমার মনের উদাসি হওয়ার কথা, তো একদিন খেলার ছলে আমার গলা টিপে ধরে বলেছিলো খবরদার আফার দিকে নজর দিবি না দিলে চোখ তুলে নিয়ে মান্দার গাছে পেরেক মেরে রাখবো। মান্দার গাছে অনেক কাটা সেই ভয়ে আমি আড়ালে আবডালে মন উদাস করতাম।
পরের দিন সকালে দাত মাজতে মাজতে আমজু দুদুর বাড়ি গেলাম দেখি কি হয়, দেখি যে মামী বিশাল এক ডোঙ্গায় রস জ্বাল দিচ্ছেন আমাকে দেখে বললেন আয় এইদিকে আয় কতোদিন পর আইলি গরম গরম রস খা আমি পড়ি মরি করে দে দৌড়। ওই দিকে যে রাসু চোরা আমাদের দেখে ফেলেছে তার খবর তো আমারা জানি না, ব্যাটা বদের হাড্ডি নিজে চুরি না করতে পেরে আমাদের নামে বড় মামার কাছে নালিশ লাগিয়ে দিলো, আমি দৌড়ে এসে চিত হয়ে পরলাম বড় মামার পায়ের কাছে মাম খপ করে কান ধরে বললো এই তো চোর ধরা পরছে বাকি গুলারে আনার ব্যাবস্থা হচ্ছে। দূরে দেখি রাসু চোরা দাত ক্যালীয়ে হাসছে আর পিঠ চুলকাচ্ছে। বাকি তিন জন কেও ধরে আনা হলো সমস্যা হলো সুফিয়া আপা নিজ দায়িত্বে ওদের কান ধরে টানতে টানতে আনছে। ইজ্জতের উপর মানহানি। আর চোখে সুফিয়া আপার দিকে তাকিয়ে গাল লাল করে বসে থাকলাম। মামার হাতের বেতের বাড়ি আর কান মলা গুলো কিছুই মনে হলো না এর থেকে সুফিয়া আপার খিক খিক হাসি দেখে কষ্ট বেশি পাইছি।
লবনের ভিটার পাড়ে বসে চার জন মিলে ভাবতে লাগলাম কি করে রাসু চোরার ঠ্যাং ভাঙ্গা যায়, আমি তো চিৎকার করে বললাম কোন সুন্দুরী মহিলার সামনে এই ভাবে অপমান হওয়া মেনে নেয়া যায় না, আর চোখে তাকিয়ে দেখি আতিক হাত দিয়ে পেরেক মারার ভঙ্গি করছে তারাতারি গলা নামিয়ে কিচকিচ করে বাকি অংশ শেষ করলাম
ঠিক কইছস রে কল্লোল, ইস আগে জানলে কানে তেল মেখে রাখতাম তাইলে আফা ধরতে পারতো না, ইস্কুল বন্ধ তো তাই মনে নাই তেল মাখতে কান ডলতে ডলতে বললো নুরু
আমি শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললাম কি রে তুই কিছু বলবি না
আরে ও তো প্রত্যেকদিন মাইর খায় চাচার কাছে খিক করে হেসে দিলো আতিক
সর ব্যটা, আমারে মারে এমন কার বুকের পাটা, ও তো আব্বা মুরুব্বি তাই মাইনা নেই তেজ দেখিয়ে বলল শিমুল , আমি ভাবছি কি করে রাসু চোরার দাত ভাঙ্গা যায় এক লাথিতে।
এমন সময় বাড়ি থেকে ডাক আসলে নানু ডাকে, কি আর করা পরে এই সভার আলোচনা পরে করা হবে বলে আপাততো মুলতবী ঘোষণা করলাম। নানু ডেকে বলল আমাকে আমার দাদু বাড়ি যেতে হবে, দুপুরের খাবার শেষ করেই যেন যাই। দাদুর কবর জিয়ারত করে আসি। আমি গোসল টোসল করে ভাত খেয়ে রওনা দিলাম।
নানু বাড়ি থেকে দাদু বাড়ির দুরত্ব দেড় কিলোমিটারের থেকে একটু বেশি, নদির পাড় দিয়ে হেটে যেতে হয়, শিতকাল তাই তেমন কষ্ট হয় না। তরতরিয়ে হেটে দাদু বাড়ি গিয়ে দাদুর কবর জিয়ারত করে চাচার সাথে দেখা করলাম, চাচির হাতের ডিম ভাজা আমার বরাবরই প্রীয়। চাচী দুইটা ডিম একসাথে ভেজে এক গ্লাস দুধ দিলো খেতে দ্রুত খেয়ে চাচার অনুরোধ সত্বেও নানু বাড়ি ছুটলাম, কারন মিটিং সারতে হবে রাসু চোরার শাস্তি আজ রাতেই হবে।
দাদু বাড়ি থেকে বাহির হতেহতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো, নদীর পারদিয়ে হেটে নানু বাড়ির দিকে আসছি। শিতকাল সন্ধ্যার ভেতর সবাই যারযার ঘড়ে চলে যায়, দূরে মাঠে কিছু লোক দেখা যাচ্ছে ধানের বোঝা মাথায় করে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। রাস্তার দুই পাশ আকন্দ ফুলের গন্ধে ম ম করছে। কাচা রাস্তা আমি হেটে যাচ্ছি ভয়ভয় লাগছে, বেশ কিছুটা পথে হেটে আসার পর হঠাত পেছন দিকে মনে হলো বেশ কিছু লোক ছুটে আসছে, চমকে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি শুনসান কেউই নাই আবার হাটা দিলাম আস্তে আস্তে সন্ধ্যার আলো নিভে গিয়ে রাতের আকাশ ফুটে উঠলো আমি আমার হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম আবার পেছন দিকে মনে হলো কিছু ছুটে আসছে এইবার ও পেছন ফিরে কাউকেই পেলাম না কিন্তু হঠাত করে কিছু একটা ছায়ার মত চোখের আড়াল হতে দেখলাম সেই সাথে ফোস ফোস আওয়াজ পেলাম, এটা জানি শীতকালে সাপ ঘুমিয়ে থাকে তাই সাপের ভয় পেলাম না অন্য কিছু হবে হয়তো।
কিছুদুর হাটার পর টের পেলাম কিছু একটা চার হাতপায়ে ছুটে আসছে এইবার আর ভয় না পেয়ে ঘুড়ে দাড়ালাম বেশ খানিকটা দূরে দুইটা শেয়াল কে থমকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখলাম। অন্ধকারে শেয়ালের চোখ গুলো কুপির বাতির মত জ্বলছিলো, হিস হিস করে মুখ দিয়ে শব্দ করে তারাতে চেস্টা করলাম শেয়াল দুইটা পালিয়ে না গিয়ে এক পা এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে পরলো ওরা বুঝে গেছে আমি একা। পথ থেকে মাটির ঢিল নিয়ে ছুঁড়ে মারলাম কাজ হলো না একপাশে সরে গিয়ে ঢিল থেকে বাচলো। আমি আশে পাশে তাকিয়ে কোন লাঠি খুজে পেলাম না শেয়াল দুইটা আগ্রহী চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে যেন দুইজন মিলে সিধান্ত নিচ্ছে কি করে আমাকে কামড়ানো যায়। আমি পেছন ফিরে হাটা দিলাম জোড় পায়ে।
হাটতে হাটতে নানু বাড়ির কাছাকাছি চলে এলাম আবার সেই হাটার শব্দ পেছন পেছন আসতে লাগলো, রাস্তার পাশে একটা লাঠি পরে থেকতে দেখে তুলে নিলাম আজ আর রক্ষা নাই শেয়ালের, কামরাতে এলেই লাঠির বারিতে সোজা করে দেব। লাঠি হাতে সাহস করে সামনে এগিয়ে গেলাম, খানিক পর একটা দমকা বাতাস গায়ের উপর দিয়ে চলে গেলো মনে হলো কেউ যেনো গায়ের উপর দিয়ে চাদর টেনে নিয়ে গেলো।
মনের ভুলে ভাড়ি কাপড় নিয়ে আসি নাই সাথে তাই বেশ ঠান্ডা লাগতে লাগলো, হাতের লাঠি শক্ত করে চেপে ধরে সামনে আগাতে লাগলাম, ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে, মনে মনে নিজে কে বললাম আর কিছুদুর পরেই নানু বাড়ির উঠান। রাস্তার পাশে নদীর কোল ঘেসে একটা খেজুর গাছ তার বাকানো পেট টা নদীর পানি ছুয়েই বাকা হয়ে আকাশের দিকে উঠে গেছে, দূর থেকে নজরে আসছে গাছের আগায় কিছু একটা জ্বলজ্বল করছে, যতো সামনে যাচ্ছি জ্বলজ্বল ভাবটা বাড়ছে, গাছ থেকে দশ হাত দুরত্বের মধ্যে আসার পরেই ওটা দেখলাম। শরীরটা বেড়ালের মত কিন্তু সাইজে বড়, মুখটা বৃধ্য মানুষের মত তোবড়ানো কান আবার বেড়ালের মত খাড়া, লালচে ঠোটের কস বেয়ে লালা ঝরছে, তীক্ষ্ণ সাদা দাত গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে প্রানী টা গাছ থেকে নামছে ঠিক বেড়াল যেভাবে গাছ থেকে নামে সেই ভাবে, দুই পা সামনের দিকে ধিরে ধিরে নামছে আর আমার দিকে তাকিয়ে তোবারানো মুখের দাত দেখিয়ে হাসছে, নামছে খুব ধীরেধীরে আমার পায়ে কে যেন পেড়েক পুতে দিয়েছে এক পা সামনে বাড়ার ক্ষমতাও নাই, সম্পুর্ন সম্মহিত অবস্থায় আছি অনেক চেস্টা করছি সামনে যাওয়ার কোন ভাবেই পারছি না জিনিসটা নামতে নামতে গাছের নিচ অবাদি চলে আসছে, হঠাত করে মনে হলো এক সাথে লক্ষ্ কন্ঠ চিৎকার করে বকছে পালাও পালাও দাড়িয়ে আছো কেনো, আমি হুস ফিরে পেলাম হাতের লাঠি ফেলে জোরে দৌড় লাগালাম, অনুভব করছি পেছন পেছন চাদরের মত কিছু একটা উড়ে উড়ে আসছে, নানু বাড়ি যেতে একটা জঙ্গল পার হয়ে যেতে হয় আমরা সাধারনতো ওই জঙ্গল এড়িয়ে চলি কারন অনেক ঘন সেই জঙ্গল ওখানে অনেকেই সাপের কামড়ে মারা গেছে আমি ওই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ছুটে আসছি কারন ওটাই একমাত্র শর্টকার্ট, দৌড়ে এসে নানু বাড়ির উঠনে হাত পা ছড়িয়ে পরে গেলাম,
উঠানে সবাই বসে গল্প করছিলো, আমাকে ওভাবে দৌড়ে এসে পরতে দেখে সবাই ছুটে এলো, এর পর আমার আর কিছু মনে নাই। মুখে পানির ছিটা পেয়ে চোখ খুলে দেখি নানু মামা সুফিয়া আপা শিমুল নুরু আতিক সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। নানু জিজ্ঞাসা করলো কি রে কি হইছে আমি বিড়বিড়িয়ে বললাম নানু বেড়াল ভুত। নানু লোহা পুড়িয়ে তাতে লবন দিয়ে আমাকে তিন বাড়া চেটে খেতে বললেন এতে নাকি ভয় দূর হয়ে যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দাত মাজতে পুকুর পাড়ে গিয়ে দেখি আমার আগেই আতিক শিমুল নুর বসে আছে আর আতিক হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন বলছে আর সবাই হাসতে হাসতে এ ওর গায়ে গড়িয়ে পরছে, আমাকে দেখে সব চুপ হয়ে গেলো, আতিক আমার হাত ধরে বলল কি রে ভয় পাইছিস আমি মাথা নাড়লাম হু আতিক হাসি দিয়ে বললো ধুর ওটা কিছু না বলেই হা হা করে হাসতে লাগলো।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম হাসিস কেন
তুই যে এমন ভিতু আগে জানলে আমরা এই কাজই করতাম না, তুই সন্ধ্যায় আসবি বলে নুরু প্ল্যান করে রাখছে রাসু চোরারে ভয় দেখাবে, ওই তো গাছের উপর বসে ছিলো আর ওর দাদির পুরানো ছেড়া কাথাটা গায়ে জড়িয়ে কিন্তু ওটা যে তুই হবি এটা জানতাম না অন্ধকারে রাসু মনে করে তোকেই ভয় দেখালো। আবার সবাই খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগলো যে একখান দৌড় তুই দিলি রে গাধা। ভাগ্যিস কেউই দেখে নাই দেখলে মাইর একটাও মাটিতে পরবে না।
পেছন থেকে কে যেন আতিকের কান ধরে টান দিলো তাকিয়ে দেখি সুফিয়া আপা, পাজীর পাজী আমি সব শুনেছি বলেই তিনজন কে লাঠি দিয়ে মাইর শুরু , এইবার আমার পালা হাসার। আপা আমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আছেন, তার গায়ের মিস্টি গন্ধে আমার মন পাখির মতো উড়ে যাচ্ছে, কি মিস্টি একটা গন্ধ, আপা কি পারফিউম মাখে এক ফাঁকে যেনে নিতে হবে ঢাকায় গিয়ে আমিও এমন পারফিউম মাখবো। আহ এমন করে প্রতিদিন নুরু যদি আমাকে ভুতের ভয় দেখাতো। আর চোখে দেখলাম আতিক পেড়েক পোতার মতো করে হাত নারছে, কে পরয়া করে, সুফিয়া আপাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম, শুনলাম আপা বলছে আহারে বেচারির ভয় এখনো কাটে নাই, সব তোদের দোষ বলেই আবার সপাং সপাং বেতের বারি।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১১
রানার ব্লগ বলেছেন: ঝাঝ মেশানোর ঘটনা সত্য
ধন্যবাদ কস্ট করে পুরটা পড়েছেন।
২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৫
ভুয়া মফিজ বলেছেন: স্মৃতিচারণ ভালো হইছে। তবে বানাম অনেক বুল তাকায় পরার মজা কইমা গেছে। সুপিয়া আপার অংশটা সবচেয়ে বেশী বালো লাগলো।
সবচেয়ে আজিব ব্যাপার হইলো, পুরা ঘটনায় একেক জায়গায় আপনের বয়স একেক রকমের মনে হইছে। কোথাও বাচ্চা ছেলে, কোথাও মোটামুটি ম্যাচিওরড, কোথাও পুরাই ম্যাচিওরড!! এমন মনে হইলো ক্যান?
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৩০
রানার ব্লগ বলেছেন: এক বসায় লিখে ফেলেছি তাই কিছু বানান সমস্যা হয়েছে, একবার লেখা হয়ে গেলে আমার বড্ড আলসেমি লাগে পরে রিভাইস দিতে।
গল্প টা তখনকার যখন একটা ছেলে ধিরে ধিরে পুরুষ হয়ে উঠতে শেখে তাই এমন লাগছে।
৩| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৩৩
ভুয়া মফিজ বলেছেন: না....... শুরুতে একজায়গায় দেখলাম, মামার কোলে ঘুমায়ে পড়ছেন। শেষে সুফিয়া আপার বিষয়টা!! আর মাঝের বিভিন্ন অংশের কথা তো বললামই না।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৫
রানার ব্লগ বলেছেন: বয়স আমার ৪২ এখনো মামা বাড়ি গেলে বড় মামার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরি। ঘুমটা ভালো হয়, নিশ্চিন্ত ও নির্ভার।
৪| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এখন নাকি গ্রামে খেজুর গাছ কাটার লোক পাওয়া যায় না।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৪
রানার ব্লগ বলেছেন: খেজুর গাছই নাই, সব ইটের ভাটায় পুড়ে গেছে। ধন্যবাদ।
৫| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: আমি ভূত ভয় পাই। গেছো হোক বা মামদো।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১০
রানার ব্লগ বলেছেন: ভয় পাওয়া উচিৎ, ভুত জিনিসটা মোটেও ভালো না।
৬| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৪
কামাল১৮ বলেছেন: সত্যজিৎত রাতের ভুত খুব ভালো ভুত।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫৭
রানার ব্লগ বলেছেন: কি আর করা আমি তো সত্য বাবু নই
৭| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ২:০৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
যাহা নেই, তা'নিয়ে লেখার কি দরকার? মানুষ নিয়ে লেখেন!
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫২
রানার ব্লগ বলেছেন: পরবর্তীতে অবশ্যই মানুষ নিয়ে লিখবো।
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০৯
রানার ব্লগ বলেছেন: আমার সৌভাগ্য আপনি এটাকে গরুর রচনা বলেন নাই বললে অবশ্য প্রতিবাদ করতাম বলতাম একদম না এটা ভুতের রচনা হবে ।
৮| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৫৭
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি ঝিনেদা ক্যাডেট কলেজেছের ছাত্র ছিলাম। ঐ এলাকায় প্রচুর খেজুর গাছের চাষ হয়-আর খেজুরের রসের জন্য বিখ্যাত। ছাত্রাবস্থায় আমরা যখন সিনিয়র ক্যাডেট তখন ক্যাম্পাসের পাঁচিল টপকায়ে রাতের অন্ধকারে খেজুরের রস খেতে বের হতাম। পরদিন সকালে গাছিরা গালি দিতো-সেকি অশ্লীল গালি! গালি শুনে একজন ক্যাডেট একটা ছড়া কবিতা লিখে পরের দিন কয়েকটা গাছে লটকিয়ে দেয়। ছড়াটা এখনো মনে আছে-
"তোমার আছে আমার নাই, তাইতো আমরা রস খাই
আবার গালি দিলে-দেখবেন হাড়ি নাই!"
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০৮
রানার ব্লগ বলেছেন: বাহ বেশ মজার ছড়া। আসলে খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার মধ্যে যেই রকম মজা তা বুঝি অন্য কিছুতেই নাই। হা হা হা !!!!
৯| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১০
ওমেরা বলেছেন: লিখাটা ভালো ছিল কিন্ত যদি আরো একটু গুছানো হত তাহলে আরো ভালো লাগতো।
২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৪
রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !! আগামীতে চেস্টা করবো !!!
১০| ১২ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৯
মিরোরডডল বলেছেন:
তিন তারিখে রানার কি শো হয়েছে সেটার ওপর পোষ্ট চাই ।
১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:২৪
রানার ব্লগ বলেছেন: আমি একজন থিয়েটার কর্মী !!!! তিন তারিখে আমার নাট্যগোষ্ঠী খেয়ালীর একটা নাটক গঙ্গা যমুনা উৎসবে এক্সপেরিমেন্টাল হলে প্রদর্শিত হয়েছে।
১১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২১
মিরোরডডল বলেছেন:
সো গুড টু নো ।
ওয়েল ডান !
লিংক দিয়ে আমাদের সাথে শেয়ার করবে নাহ ?
১৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৫২
রানার ব্লগ বলেছেন: থিয়েটারের নাটক কেউ ভিডিও করে কি না জানা নাই। আপনি যদি বাংলাদেশে থাকেন নেক্সট প্রদর্শনী তে আপনাকে জানানো হবে এসে দেখে যাবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৯
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ভাই, রস চুরি আর গ্রামের পোলাপানের শীতকাল - এক অন্যতম অনুসংগ এবং অংগাঅংগীভাবে জড়িত । এই আকাম কত যে করছি তার ঠিক নাই তবে ঝাঝ মিশাই নাই।
আর ভুতের গল্পে ভাই পুরাই শিহরণ এনে ছেড়েছেন। পরে যদিও প্রমাণ হয়েছে গেছো ভূত নয় বন্ধু ভূত তবে প্রথমেত ভাই গায়ের পশম দাড়িয়ে গেছে।
গ্রামীণ আবহ-পরিবেশ,মামার বাড়ী বেড়ানো - আতিথেয়তা, বন্ধুদের আকাম সব মিলিয়ে চমতকার এক শৈশবের আবহ দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং গল্পে +++।