![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে...!
দূরের বাতিঘর
মানুষ নামের প্রাণীটি এই গ্রহের সবচেয়ে আশ্চর্য সৃষ্টি। ভালো-মন্দ দিকের এমন বিচিত্র সমাবেশ আর কোনো প্রাণীতে দেখা যায় না। কী করে সম্ভব হলো এটি? এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার অন্ত নেই। সম্প্রতি এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, 'বনবুস' নামে এক প্রাণীর সঙ্গে মানুষের জীন-নকশার আশ্বর্য মিল রয়েছে। আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ কঙ্গোতে দেখা যায় বিলুপ্তপ্রায় এ প্রাণীটি। মানুষের খুবই নিকটতম বানরগোত্রীয় এই প্রাণীর স্বভাব খুবই শান্ত এবং এরা অনেক সামাজিক জীবনযাপনও করে। বনবুসের সঙ্গে মানুষের জীন-নকশা প্রায় ৯৮.৭ শতাংশ মিলে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, মানুষের শান্তিপ্রিয়তার গুণটি সম্ভবত এই প্রাণীটি থেকেই এসেছে। আমেরিকার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ব্রয়ান হেয়ার বলেন, 'তবে কি বনবুসের জিনোমেই লুকিয়ে আছে শান্তির জিনতাত্তি্বক ব্যাখ্যা?' এরপর তিনি বনবুসের শান্তিপ্রিয়তার প্রতি ইঙ্গিত করে আরো বলেন, 'বিবর্তনের ধাপে তারা এমন কিছু করেছিল, যা মানুষ করেনি, তাই তাদের চরিত্রে আমাদের মতো মন্দ দিকগুলো অনুপস্থিত।' এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে বনবুসের সঙ্গে জিনোমের এত মিল থাকার পরও মানুষের মাঝে খারাপ দিকগুলো এলো কোথা থেকে? এর জবাবও দিয়েছেন গবেষকরা। বিজ্ঞানীরা প্রাইমেট (বানরগোত্রীয় প্রাণী)-দের ডিএনএ ম্যাপ তৈরি করেছেন এবং তাদের বিশ্বাস, এটি মানব চরিত্রের অন্ধকার অংশটির অভিযোজন-রহস্য উদ্ঘাটনে সহায়ক হবেন। তারা দেখিয়েছেন, মানুষ জিনগতভাবে স্বল্প পরিচিত ও শান্তিপ্রিয় বনবুস এবং অপেক্ষাকৃত সংঘর্ষপ্রবণ শিম্পাঞ্জির সঙ্গে সমানভাবে সম্পর্কিত এবং মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির জিনোমেও ৯৮.৭ শতাংশ মিল রয়েছে। সম্প্রতি 'নেচার' ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক স্টাডিতে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীদের পরিচালিত এ গবেষণায় বলা হয়, বনবুস এবং শিম্পাঞ্জি খুব কাছাকাছি সম্পর্কিত এবং তাদের জিনোমে ৯৯.৬ শতাংশ সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই দুই বিপরীত চরিত্রের প্রাণীর জিনোমের মিশ্রণেই মানুষের চরিত্রে ভালো-মন্দ দিকে এমন আশ্চর্য সমাবেশ। গবেষণার প্রধান কেই প্রুফার বলেন, 'মানুষের জিনোম হলো বনবুস এবং শিম্পাঞ্জির জিনোমের মোজাইকের মতো।' এখন দেখা যাক মানুষ, বনবুস এবং শিম্পাঞ্জি কীভাবে এত ঘনিষ্ট সম্পর্কে আবদ্ধ হলো? প্রুফার বলেন, ছয় মিলিয়ন বছর আগে এই তিন প্রজাতি একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত হয়। এরপর বিবর্তনের ধাপে প্রায় এক মিলিয়ন বছর আগে কঙ্গো নদী সৃষ্টির সময় শিম্পাঞ্জি এবং বনবুস নদীর দুই তীরে পৃৃথক হয়ে যায় এবং আলাদভাবে বিবর্তিত হতে থাকে। উল্লেখ্য, বনবুস এবং শিম্পাঞ্জি যে আলাদা প্রজাতি, তা মাত্র ৯০ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়। বনবুস এবং শিম্পাঞ্জির উদ্ভব একই পূর্বপুরুষ থেকে হলেও এদের চরিত্র ঠিক বিপরীত। বনবুস যুদ্ধ পছন্দ করে না, কিন্তু শিম্পাঞ্জির ক্ষেত্রে সংঘর্ষ ও হত্যার নজির আছে। বনবুস সমপূর্ণ অপরিচিত প্রাণীর সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করলেও শিম্পাঞ্জিরা তা করে না। আবার শিম্পাঞ্জি বনবুসের তুলনায় যন্ত্র ব্যবহারে বেশি দক্ষ এবং এদের মগজও বড় এবং বুদ্ধিমান। বনবুসের ছানারা মানুষের মতোই বড় হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত মায়ের কাছেই থাকে। এছাড়া উভয়ের দৈহিক গড়নেও রয়েছে ভিন্নতা। বনবুসের মাথা অপেক্ষাকৃত ছোট এবং এদের দাঁতের বিন্যাসও ভিন্ন। এছাড়া ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়েছে এদের আচরণেও। বনবুস আচরণে বেশি সহনশীল এবং সামাজিক। এরা সংঘর্ষ ও গোলমাল করার চেয়ে নিজ সঙ্গিনীকেই বেশি সময় দিতে পছন্দ করে। এদের যৌনাকাঙ্ক্ষাও শিম্পাঞ্জির তুলনায় অনেক বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বনবুসের জিন আলফা ফিমেল প্রভাবিত এবং শিম্পাঞ্জিদেরটা আলফা মেল দ্বারা। তাদের এই আচরণের পার্থক্য সম্পর্কে হেয়ার বলেন, 'বনবুস এবং শিম্পাঞ্জির আচরণ ঠিক বিপরীত যেমনটি দেখা যায় মানুষের মধ্যে। আমাদের ভালো আচরণগুলো যেমন বনবুসের সঙ্গে মেলানো যায়, তেমনি খারাপ দিকগুলো শিম্পাঞ্জির আচরণের সঙ্গে মিলে যায়।' বনবুসদের ওপর এই গবেষণার গুরুত্ব বোঝাতে তিনি বলেন, 'আমরা যদি কেবল শিম্পাঞ্জির নিয়েই গবেষণা করে যেতাম, তাহলে মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণা অপূর্ণাঙ্গই থাকত।' তবে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটির নিয়তির পরিহাস সম্পর্কে তিনি বলেন, শান্তিপ্রিয় এই প্রাণীটি এমন একস্থানে বাস করে যেখানে মানুষের শান্তি সবচেয়ে বেশি বিপন্ন। তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:১০
সাফিউল ইসলাম দিপ্ত বলেছেন: বাহ্।আমি বনবুস হইতে চাই।