নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিকেলের রোদ

স্বাগতা জেবিন

স্বপ্নচারী

স্বাগতা জেবিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীদিবস

০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৫৬

#নারীদিবস
আমার জন্মদিনের পরেরদিন অনেক ব্যস্ত ছিলাম । ঘুমিয়েছিলাম ফোন নীরব করেই । ঘুম থেকে উঠে দেখি ১৪ বার ফোন ইন্ডিয়ার নাম্বার থেকে । খারাপ খবরের ভয়ে ব্যাক করার সাহস পাচ্ছিলাম না । পরে আবার ফোন আসল । তনুর বাবা , বললেন গতকাল তোমার জন্মদিন ছিল না ? তনুকে আইসি ইউ তে নেয়া হয়েছে গতকাল । আইসিইউ তে যাবার সময় আমাকে বার বার বলছে তোমাকে আমি যেন শুভেচ্ছা জানাই । ও তো ফোনে কথা বলতে পারছে না । স্তব্ধ ছিলাম অনেকক্ষণ ।

তনুর সাথে আমার পরিচয় ১৩ বছর আগে , কিন্তু পরিচয়ের শুরু থেকেই আমাদের কোনও বন্ধুত্ব ছিলনা ।বরং এত নাচানাচি লাফালাফি মেয়েকে খুব একটা পছন্দও ছিলনা । আমাদের বন্ধুত্ব হয় গেল কিভাবে মনে নাই । শুধু বন্ধুত্ত না খুব কাছের বন্ধুত্ত । জীবনে কিছু মানুষ এর সাথে পরিচয় না হলে পানসে জীবন মনে হয় সেই রকম বন্ধুত্ত । আমরা ছিলাম পৃথিবীর ২ মেরুর মত । আমি চুপচাপ বেশি বুঝি সব কিছু আর তনু সব সময় অনেক বেশি শক্তি নিয়ে লাফালাফি আর স্বপ্নের জীবনে বাস করা । এর ভেতরেই কিভাবে যেন খুব হিংসা করা এক ভালোবাসা ছিল আমাদের । খুব অবাক হয় দেখতাম যে আমি জীবন নিয়ে হতাশা ভয় দুশ্চিন্তা করতাম আর সে সব কিছু তুরি মেরে উরায় দিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করত । ওর এই পজেটিভ মোটিভেশন আমাকে অনেক হতাশা থেকে ফিরিয়ে আনত ।

জীবনে সব থেকে বেশি ঝগড়া আমি ওর সাথেই করছি সেটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই । ঝগড়া এর বিষয় খুব সুন্দর । দেরিতে কেন ক্লাসে আসলি ? এইভাবে কেন ছবি দিলি ? আমার ছবিতে কমেন্ট কই ? এত নাচিস কেন ? একটু সিরিয়াস হবি কবে ?

প্রায় ৬ বছর আগে আমাদের ২ জনের জীবন বাংলাদেশের ২ শহরে হয় যায় । বছরের পর বছর দেখা নাই । মাঝে মাঝে যখন দেখা হত মনেই হত না এতদিন দুরে আছি , আর অবাক কথা এই সময়ও অভিমানের কথা কাটাকাটি চলবেই ।

৬ মাস আগে শুনলাম তনু অনেক দিন কাশিতে ভুগছে হাসপাতালে ভর্তি সাধারন চেক আপে । এর সাত দিনের মাথায় ডাক্তার ঢাকায় পাঠিয়ে দিল ফুসফুসে পানি জমেছে কমছেই না সেই জন্য । অনেক দিন পরে দেখতে গেলাম তনুকে । স্বাভাবিক লাগছিল এই দৌড়াদৌড়ি এর ভেতরেও । বারবার বলছিল কয়দিন পরে ফাইনাল পরিক্ষা অনেক পড়ার ক্ষতি হয় যাবে । তার মাত্র ১৫ দিন পরেই শুনি মহাখালির বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা লাগবে । ডাক্তাররা বোর্ড বসান , অনেক মিটিং হয় । বয়স মাত্র ২২ এই বয়সে এমন হবার কথাও না । যেটা আমরা আসা করিওনি এত দুরের রোগ এই বয়সে যাবার কথাও না । সেটাই হল । এক দুপুরে বান্ধুবি শারমিনের ফোন আসল আমার কাছে । তনুর ক্যান্সার যা ফুসফুস লিভারে ছড়িয়ে পড়েছে । অন্য যায়গা থেকে যদি ফুসফুসে ক্যান্সারের কোষ আসে সে ক্যান্সারের ভয়াভয়তা অনেক । ঢাকাতে ২ টা কেমোথেরাপির পরে ভারতে আরও ২ টা কেমো আর মেজর অপারেশান করা হয়েছে । বাকি আছে আরও কেমো ।মাঝে এক বার ঘুরে এসেছে আই সি ইউ থেকে । পা পর্যন্ত দোলানো চুলের একটাও নেই এখন মাথায় । যখনই কথা বলি এখনও অনেক শক্ত । বার বার পড়াশুনায় দেরি হয় যাচ্ছে সেই কথা । কত দিন পেট ভরে ভাত খায়না সেই আপসোস ।

জীবনের এই মুহূর্তে সব থেকে সাহসী নারী আমার কাছে আজ আমার তনু । মাত্র ৬ মাস আগেও সে ছিল ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে খুলনা ভার্সিটিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ছুটে গিয়ে ক্লাস ধরার জীবন । ৬ মাসে সে বাসায় যায় না । প্রিয় বোন ভাই এর চেহারা দেখে না । পেট ভরে ভাত খায় না । কিন্তু মনে আছে এক আকাশ সমান শক্তি ।
বিশ্ব নারী দিবসে আমার জীবনে দেখা এর সত্য সৈনিক , জীবন যুদ্ধে লড়ে যাওয়া এক নারী ।
সবাই দোয়া করবেন ওর সুস্থতা এর জন্য ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.