নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন দেখি আমার দুটি পাখা হোক,

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো...

কামরুল হাসান ভুঞা

জ্বলে পুড়ে মরে ছাড়খার তবুও মাথা নোয়াবার নয়......

কামরুল হাসান ভুঞা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদ্যুৎখাত: সাশ্রয়ি বিদ্যুৎ ব্যবস্হার বিকল্প নেই

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৬

বিদ্যুৎখাত: সাশ্রয়ি বিদ্যুৎ ব্যবস্হার বিকল্প নেই

হাসান কামরুল



আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধিন মহাজোট সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন বিদ্ৎ সেক্টরের অবস্হা ছিল নি¤œগামি। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৯৪২মেগাওয়াটের বিপরীতে চাহিদার প্রার্থক্য ছিল প্রায় ২হাজার ৫শত মেগাওয়াট। লোড শেডিংয়ের জ্বালায় অতিষ্ঠ ছিল জনজীবন। প্রতিদিন ১ঘন্টা পর পর ১ঘন্টার নিয়মিত লোডশেডিং দিয়ে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলা হয়েছিল। বিদ্যুৎখাত ঘিরে ছিল চরম নৈরাজ্য। পুর্ববর্তী সরকারের অব্যবস্হাপনা ও অসহনীয় দুর্নীতিই মুল কারন বলে বিশেষঙ্ঘদের ধারনা। তাই নতুন সরকারের নিকট বিদ্যুৎখাতের ধ্বস ঠেকানো এক জনগুরুত্বপুর্ন বিষয় হয়ে দাড়ায় । যার থেকে উত্তোরনের লক্ষ্যে বিদ্যুৎখাতে নেয়া হয় বিশেষ প্রকল্প । ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান সরকারের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠে। সরকারি কর্মসূচির গুরুত্বপুর্ণ জায়গা দখল করে নেয়। যদিও ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত। বিশেষ করে বিষেশঙ্ঘরা রেন্টাল কুইক রেন্টাল পাওয়ার হাউজগুলোকে সরকারের অতি উচ্চবিলাসি পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে। ক্রমাগত সমালোচনার পরও সরকার একের পর এক ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ¯হাপন করে যায়।



Click This Link



গেল ১২নভেম্বর সরকার খুব ঘটা করেই ১০হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনকে সাফল্য হিসেবে উদযাপন করেছে। সেই সঙ্গে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে যারা এতদিন সমালোচনা মুখর ছিল তাদের প্রতি উল্টো সমালোচনা তীর ছুড়ে মারা হয়েছে। সরকার দাবি করছে ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া এ খাতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারতোনা। এখন সরকারের হাতে ১০হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি রয়েছে। আর এ ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎখাতে শৃঙ্খলাও ফিরে এসেছে বলে সরকার দাবি করেছে। যা থেকে ১০হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অর্থাৎ প্রচলিত পাওয়ার প্লান্টগুলো এখন ১০হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে। এর মানে এই না, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমান ১০হাজার মেগাওয়াট। তবে এ সক্ষমতাকেও ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। এখাতে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং বা সক্ষমতা অর্জন সরকারের সাফল্যের পাল্লাকে ভারি করবে নি:সন্দেহে ।

এখ নপর্যন্ত এ সরকারের আমলে ২হাজার ৭শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতিয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। ভারত থেকে ৫শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানীর মাধ্যমে সরকার বিদ্যুৎ ট্রেডিং শুরু করেছে বলে অর্থমন্ত্রীর দাবি। যার ফলে এ অঞ্চলে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের সম্ভাবনাকে আরো উজ্জ¦ল করেছে । কারন দীর্ঘ দিন যাবত পলিসিগত ভাবেই দাবি উঠেছে আঞ্চলিক গ্রিড ¯হাপনের। বিশেষ করে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে অভিন্ন গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুতের জোগান নিশ্চিত করন সময়োচিত দাবি। যার কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে। তবে অদুর ভবিষ্যতে ভারতের পাশাপাশি ভুটান, নেপাল থেকেও জলবিদ্যুৎ ও বায়ু বিদ্যুতের জোগান দেয়া সম্ভব হবে । কারন জল ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে নেপাল ও ভুটানের অমিত সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করা সম্ভব।

আওয়ামীলীগের এবাকার আমলে ৩৮টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ¯হাপন করা হয়েছে। যার বেশির ভাগই তেলভিত্তিক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্লান্ট। দেশের মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা এখন ৫৮তে পৌছেছে। আর ৫৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমান ৭হাজার ৫শত মেগাওয়াট। তবে সরকারকে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে অতীতের যেকোন সময়ের চাইতে কয়েকগুন বেশি। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টগুলোতে স্বল্প মুল্যে তেল সরবরাহ করতে গিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের মুল্য আকাশচুম্বি হওয়ায় এ সরকারের আমলে এখ নপর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে ৭বার বিদ্যুতের মুল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের শ্রেনীবিভাজনে গ্রাহকদের হয়রানিও বেড়েছে।



অর্থমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, এ সরকারের আমলে মাথা পিছু বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে। ২০০৯ সালে মাথা পিছু বিদ্যুতের ব্যবহার ছিল ২২০কিলোওয়াট ঘন্টা। আর এ পাচ বছরে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৩২০কিলোওয়াটঘন্টা। অর্থাৎ মাথা পিছু বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে ১শত কিলোওয়াটঘন্টা। এ সরকার এখ নপর্যন্ত নতুন করে ১কোটি ২০লক্ষ লোককে বিদ্যুতের আওতায় আনতে পেরেছে। সৌর শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের বিশেষ প্রকল্প রয়েছে। যা থেকে ১২০মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতিয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। তবে সরকার অতি অল্প সময়ে ৫০মেগাওয়াটের সোলার পাওয়ার প্লান্ট ¯হাপনে কাজ করছে । এ লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ভাবে দর কষাকষি চলছে বলে অর্থমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন।



সরকার বলছে আগামি বছরের জুন জুলাই থেকে দেশ থেকে লোড শেডিংকে চিরতরে বিদায় করা সম্ভব হবে। কারন ঔ সময়ের মধ্যে ১০হাজার ৩শত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতিয় গ্রিডে যুক্ত হবে। অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে এতদ পরিমান বিদ্যুৎ পৌছে দেয়া সম্ভব হবে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী আগামি বছরের জুন জুলাইতে দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা দাড়াবে ৮হাজার ৫শত মেগাওয়াট। অর্থাৎ তখন সত্যি সত্যি যদি ১০হাজারের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তাহলে দেশের মোট চাহিদা মিটিয়েও প্রায় ১হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উদ্বৃত থাকবে। আঞ্চলিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় এ অঞ্চলে একমাত্র শৃলঙ্খায় চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বাদ বাকি সবারই কম বেশি বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। হয়তো আগামিতে বাংলাদেশ সত্যি সত্যিই বিদ্যুতে সক্ষমতা অর্জন করবে।



বর্তমান উৎপাদিত বিদ্যুতের ২হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সিস্টেম লস ও চুরির কারনে নষ্ট হচ্ছে। যদি এ খাতে চুরি ও সিস্টেম লস কমানো যায় তাহলে আরো বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। দেশিয় মোট বিদ্যুতের চাহিদা ৭হাজার মেগাওয়াটের একটু বেশি। বর্তমানে উৎপাদন ও চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের লোড শেডিং ৫শত থেকে ৭শত মেগাওয়াট। তবে বিতরন ব্যবস্হার অভাবে মাঝে মাঝে ৮হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও গ্রাহক পর্যায়ে নেয়া সম্ভব হয়না। তাই ডিস্ট্রিবিউশন ও ডিসপাস সিস্টেমে স্মার্ট গ্রিড প্রবর্তন চালু করা অত্যাবশকীয় হয়ে উঠেছে।

এ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ চোররা ফুলে ফেপে মোটা তাজা হয়েছে। সরকারের বিভিন্নমহলের যোগসাজশে বিদ্যুতের চুরি ঠেকানো যায়নি। শিল্পায়নে বিদ্যুৎ অত্যাবশক হলেও সময় মতো জোগান দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের নামে শিল্পমালিকদের সঙ্গে এক রকম তামাশা করা হয়েছে। অতি উচ্চ মুল্যের কারনে সরকারের এ উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। অনেক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট মালিকরা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও কম মুল্যে সরকারের কাছ থেকে তেল নিয়েছে। যে তেল বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হওয়ার কথা সেই তেল বেশি দামে কেউ কেউ বাইরে বিক্রি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টগুলোতে সরকারের পলিসিগত দুর্বলতা ছিল স্পষ্ট। ” আগে আসলে আগে পাবেন” বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানে সরকারের এমন ঘোষনায় নাম সর্বস্ব অনেক কোম্পানী বিদ্যুৎ ব্যবসা নেমেছে। যাদের পুর্ব কোন অভিঙ্ঘতা নেই তারা এখাতে বিনিয়োগ করে শেষ পর্যন্ত পাওয়ার প্লান্টগুলোকে সচল করতে পারেনি। অদক্ষ ও ব্যবহৃত মেশিনারিজ দিয়ে পাওয়ার প্লান্ট ¯হাপন করায় অনেক রেন্টাল পাওয়ার উৎপাদনে এসেই বন্ধ হয়ে গেছে।

সর্বপরি এ আমলে বিদ্যুতের অভুত সাফল্য এসেছে। ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের কবল থেকে জাতি এখন অনেকটাই মুক্ত। যদিও উচ্চ মুল্যের কারনে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের সেবা যতটা যুগোপযুগি করার কথা ছিল তার অনেক কিছুই করা সম্ভব হয়নি। তবুও সরকারের সক্ষমতা অর্জন জাতির জন্য বিরাট কিছু। কেননা আগে এক সময় যে জাতি যতবেশি ভূমি ব্যবহার করতো সেই জাতি ততবেশি উন্নত হিসেবে গন্য করা হতো। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে জাতির উন্নতির মানদন্ড নির্ণিত হয়। তাই শিল্পযোগে বিদ্যুতের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ এখাতে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু অনগ্রসর এখাত এখন উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা দাড়াবে ২০হাজার মেগাওয়াট আর সেই লক্ষ্য অর্জনে সরকারের যে ভিশন ২০২১ রয়েছে তা পুরণে বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। আর সেই নিশ্চয়তার মধ্যেই নিহিত রয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন। যা পুরণে সরকারকে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবস্হা গড়ে তোলতেই হবে।



হাসান কামরুল: জ¦ালানী ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক।

যশমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.