নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মনের মাঝে শঙ্খচিল ডানা মেলে প্রতিদিন,ভুলতে পারিনি সেই অভিমান আবার ফিরে আসা তোমার কাছে !
view this link
কদিন আগে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ক্যান্সার এন্ড রিসার্চ (NICRH) যে একটি ট্রেনিং হলো, সেখানে আমি যার সাথে সবচেয়ে বেশী সময় কাটিয়েছিলাম তার নাম সুজান হোয়েকস্ট্রা। তার সাথে আমার দীর্ঘ আড্ডার পরে তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি যেহেতু ব্লগিং করো, তুমি তাহলে খুব সহজ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে লিখতে পারো। তোমাদের মেয়েদের জন্য সেটি খুব ভালো হবে’। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম, আমি লিখবো। ইন্টার্নশিপের অসম্ভব রকমের টাইম স্কেজ্যুলের ফাঁকে সে সময়টা হয়ে উঠছিলো না। তাই আজকে এক ফাঁকে লিখে ফেললাম। আমি একদম সবাইকে অনুরোধ করবো পড়বার জন্য।
প্রত্যেক বছর প্রতি ১ লক্ষ জন মহিলার মাঝে ২১.৪ জন মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। সংখ্যাটা নেহাত কম মনে হলে, আরেকটু বোধগম্য করে দিচ্ছি। বাংলাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি, এবং তার মধ্যে অর্ধেকই মহিলা। অর্থাৎ, প্রায় সাড়ে ৮ কোটি। সে হিসেবে প্রায় ১৮ হাজারের বেশী নারী প্রতি বছর নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে নারীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে স্তন ক্যান্সারের শতাংশ ২৬%, অপরদিকে জরায়ুর ক্যান্সারের শতাংশ হলো ২১%। অথচ, সামাজিক এক অদ্ভুত ট্যাবুর কারণে আমাদের সমাজে এই মারাত্মক রোগসমূহ নিয়ে কোন কথা নেই, নেই কোন প্রতিরোধের ব্যবস্থা। যেনো স্তন নিয়ে, জরায়ু নিয়ে কথা বললেই সম্মান শেষ হয়ে যায়। যেনো সমস্ত শরীরের শুধু স্তন আর জরায়ুতেই জমা আছে সব সম্মান! জীবনের থেকেও কি এই লজ্জা বেশী দামী? আমি তো কখনওই চাইবো না, আমার মা, আমার বোন কিংবা আমার স্ত্রী কখনওই এই মরনব্যাধীতে আক্রান্ত হোক। আর তাই এই নিয়ে চাই ব্যাপক প্রচারণা, এই নিয়ে কথা বলতে হবে স্কুলে-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে, চায়ের আড্ডায়, মাঠে-ঘাটে সব জায়গায়। জীবনের চেয়ে কোন কিছুই দামী হতে পারে না, কোন কিছুই না।
স্তন ক্যান্সার থেকে কি আমরা বাঁচতে পারবো? আমি সেটার উত্তর দিবো না। আমি শুধু বলবো, আমরা চেষ্টা করতে পারি। আর সেই চেষ্টার জন্য রয়েছে কিছু ধাপ। আমি খুব করে চাইবো, আমাদের মায়েরা, আমাদের মেয়েরা প্রত্যেকে নিয়ম মেনে এই ধাপ গুলো পালন করবেন।
প্রথমত, স্তন ক্যান্সার থেকে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টার জন্য যে কাজ গুলো করতে হবে, সেগুলোর একটা লিস্ট করে ফেলতে পারি আমরা।
১। ঘরে বসে নিজে নিজে কিছু পরীক্ষা, যেটাকে বলে Self Breast Examination
২। ডাক্তারের কাছে কিছু পরীক্ষা, যেটাকে বলে Clinical Examination
এরপর, যদি এই পরীক্ষাগুলো শেষে কোন ধরণের টিউমর অথবা, ক্যান্সারের খোজ পাওয়া যায়, দেড়ি না করে স্টেজিং করে সেভাবে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সমস্যা হলো, সেই চিকিৎসার মুল্যমান অর্থের হিসেবে এতোই বেশী যে, মধ্যবিত্তদের জন্য সেটি প্রায় স্বপ্নের মতো, দরিদ্রদের কথা বাদই দিলাম। আর তাই, প্রতিকারের আগে চাই প্রতিরোধ।
১। Self Breast Examination-
প্রত্যেক মাসে নিজ স্তনের এই পরীক্ষাগুলো করতে হবে। এটিকে একটি অভ্যাস বানিয়ে ফেলতে হবে। গোসলের সময়, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, বিছানায় শুয়ে বিভিন্ন সময়ে এই পরীক্ষা নিরীক্ষা গুলো করতে হবে। আমি এক এক করে ছবি সহ বর্ণনা গুলো লিখছি। ছবিতে নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি, যাতে বর্ণনার সাথে ক্রমিক নম্বরে মিল থাকে।
প্রথমে খেয়াল করতে হবে স্তনের চারিদিকে, বগলের ভেতরে বা আশে পাশে কোন স্থানে কোন স্থান ফুলে উঠেছে কি না। কিংবা আলতো করে ছুঁয়ে দেখলে কোন শক্ত চাকার মতো অনুভব হয় কি না।view this link
স্তনের কোন অংশ ফোলা অনুভূত হয় কি না, কিংবা কোন স্থানের বর্ণ পরিবর্তন হয়েছে কি না, অথবা কোন অংশ উষ্ণ লাগে কি না।
view this link
দুইটি স্তনের মধ্যে আকারে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় কি না।view this link
স্তনের কোন অংশের ত্বক ভেতরের দিকে কুঁচকে আছে কি না, কিংবা ঢুকে গিয়েছে কি না।view this link[l
স্তনের বোঁটার কোন অংশে চুলকানো আছে অথবা র্যাশ উঠেছে কি না।view this link
বোঁটার কোন অংশ ভেতরের দিকে ঢুকে গিয়েছে কি না।view this link
বোঁটা থেকে কোন ধরণের তরল নির্গত হয় কি না।view this link
স্তনের কোন অংশে ব্যাথা অনুভুত হয় কি না, যেটি একই জায়গায় থাকে, কোথাও ছড়িয়ে যায় না।view this link
উল্লেখিত কোন কিছু আপনার সাথে মিলে যাওয়া মাত্রই ভেবে বসবেন না, আপনার স্তন টিউমর বা ক্যান্সার হয়েছে। যেমন, বেশীরভাগ নারীরই দুইটি স্তন একদম একই আকৃতির নয়। কিছুটা উনিশ-বিশ থাকেই আকারে। আবার, কোন স্থান কিছুটা ফোলা মনে হলেই সেটি ক্যান্সার নাও হতে পারে, সেটি বিনাইন (অক্ষতিকর) টিউমরও হতে পারে। তবে, সাবধানের যেহেতু মার নেই, তাই এমন অনুভূত হলে দেড়ি না করে ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হবে। আবার, অনেক সময় বিভিন্ন ইনফেকশনের কারণে কিংবা ঔষধ সেবনের কারণেও স্তনবৃন্ত হতে তরল (দুধ, কিংবা দুধের মতো সাদা তরল, কখনও অন্য বর্ণের) নির্গত হতে পারে। তবে, যেহেতু এর কোনটিই সাধারণ ঘটনা নয়, তাই এমন কিছু পরিলক্ষিত হলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
২। Clinical Examination-
আমেরিকায় প্রায় প্রত্যেকেরই হেলথ ইনস্যুরেন্স করা থাকে। তাই, সকল নারী বছরে একবার ম্যামোগ্রাফি করতে পারেন বিনামুল্যে। কিন্তু, কখনও যদি আরেকবার করা লাগে, তখন অতি চরা মুল্যে সেটি করতে হয়, তখন ইনস্যুরেন্স কোম্পানি কোন সাহায্য করে না। উন্নত দেশগুলোর স্টাডি অনুযায়ী, ১৫ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি ৩ বছরে অন্তত একবার আপনার স্তনের ম্যামোগ্রাফি করান, এবং ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি বছর করান।
যদি ম্যামোগ্রাফিতে সন্দেহজনক কিছু ধরা পরে, তাহলে আরও নিশ্চিত হবার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি হতে এটি সিস্ট নাকি ফাইব্রয়েড নাকি অন্য কোন জাতীয় টিউমর/ক্যান্সার সেটি বোঝা যাবে। পরবর্তীতে আরও নিশ্চিত হবার জন্য রয়েছে MRI, এটি কিছু ব্যয়বহুল হওয়ায় প্রথমেই চিকিৎসকগন এটি সাজেস্ট করেন না। যদি এমআরআইতেও টিউমর সাজেস্ট করে, তবে বায়োপসির মাধ্যমে স্তন থেকে টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয় এবং স্টেজিং এর মাধ্যমে ক্যান্সার কোন স্তরে রয়েছে সেটি নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসার প্ল্যানিং করা হয়।
খুব দুঃখজনক একটি ব্যাপার হলো, আমাদের দেশে অধিকাংশ স্তন ক্যান্সারের রোগী আসে স্টেজ ৩ বা তারও পর। ২০০৭-০৮ সালে খুলনায় করা একটি স্টাডি অনুযায়ী ৮৭% নতুন ডায়াগনোজ করা স্তন ক্যান্সারই ছিলো স্টেজ ৩+, যেখানে ক্যান্সার স্তন ছাড়িয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৩ সালের একটি স্টাডি অনুযায়ী, বাংলাদেশে কোয়ালিফাইড অনকোলজিস্ট (ক্যান্সার স্পেশালিস্ট) এর সংখ্যা মাত্র ১৫০ জন, পেডিয়াট্রিক বা শিশু ক্যান্সার স্পেশালিস্ট এর সংখ্যা মাত্র ১৬ জন। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর এই দেশে হাতে গোনা এই কয়েকজন চিকিৎসক কিভাবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন আর কিভাবেই বা দিবেন, সেটি আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে ধরে না।
আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছে, এই লেখাটা আপনারা যেখানে পারুন শেয়ার করুন। সেটি ১৮+ গ্রুপে হোক, নারীদের গোপন গ্রুপেই হোক, নিজের ওয়ালেই হোক, যে কোন পেইজে হোক। দরকার হলে প্রিন্ট আউট করে আপনার মা, আপনার বোনকে পড়তে দিন। আপনার প্রেমিকাকে পড়তে বলুন। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ, সেই মানুষের আদি পিতা আদমেরও একজন হাওয়ার প্রয়োজন পড়েছিলো। আমাদের মায়েরা, আমাদের মেয়েরা বাঁচলে, বাঁচবো আমরা। স্তন আপনারও আছে, আমারও আছে। বিশ্বাস হয় না? Breast cancer in male লিখে সার্চ দিয়ে দেখুন। ১০০০ জন নারী স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের বিপরীতে ১জন পুরুষেরও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বিদ্যমান। তাই বিশ্বাস করুন, সুস্থ স্তন খুব ফ্যান্টাসির কিছু হলেও, ক্যান্সার আক্রান্ত স্তন শুধুই একটি মৃত্যু। একজন মানুষের মরে যাওয়া মানে তাকে দেখতে না পাওয়া, তাকে ডাকতে না পারা, তাকে ছুঁতে না পারা। মৃত্যুর পর তার জন্য হাঁক ছেড়ে না কেঁদে তাই সময় থাকতে লজ্জাটা ভাঙ্গুন। স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতন হোন, সোচ্চার হোন।
আমাদের মায়েরা, আমাদের মেয়েরা দীর্ঘজীবী হোন। কোন স্তন ক্যান্সার যেনো দাবাতে না পারে তাদের অগ্রযাত্রা।
ডাঃ নিশম সরকার
এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ)
২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২৪
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ধন্যবাদ আমার প্রিয় সোহানী সহ-যোদ্ধাকে
SAVE THE EARTH........
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৪
সোহানী বলেছেন: এতো ইম্পর্টেন্ট একটা পোস্ট অথচ পাঠকের চোখ এড়িয়ে গেল???
ব্রেস্ট ক্যান্সার এখন ঘরে ঘরে। এর সচেতনতা খুবই জরুরী। ধন্যবাদ চমৎকার এ পোস্টের জন্য।