নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মনের মাঝে শঙ্খচিল ডানা মেলে প্রতিদিন,ভুলতে পারিনি সেই অভিমান আবার ফিরে আসা তোমার কাছে !
দেশে ছিলো এক নিবেদিত উৎপাদন কর্মী। সে প্রতিদিন ঠিক সকাল ৯টায় অফিসে ঢুকতো। তারপর সহকর্মীদের সঙ্গে গল্পগুজবে একটুও সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে কাজে বসে যেত। সে যে পরিমাণ কাজ করত, তাতে কোম্পানির উৎপাদন হতো প্রচুর এবং এর ফলে সে আনন্দের সঙ্গেই জীবন নির্বাহ করত। ওই অফিসের সিইও অবাক হয়ে দেখত, এই কর্মীটি কোনো ধরনের সুপারভিশন ছাড়াই প্রচুর কাজ করছে। সিইও ভাবল,কর্মীকে যদি কারও সুপারভিশনে দেওয়া হয়, তাহলে সে আরও বেশি কাজ করতে পারবে।
কয়েক দিনের মধ্যেই সিইও একজন দক্ষ ম্যানেজার কে কর্মীর সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ করলো। সুপারভাইজার হিসেবে এই দক্ষ ম্যানেজার এর ছিল দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আর সে দুর্দান্ত রিপোর্ট লিখতে পারত।
-
দক্ষ ম্যানেজারটি প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিল, এই অফিসে একটি অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম থাকা উচিত।কয়েক দিনের মধ্যেই ম্যানেজার এর মনে হলো, তার একজন সেক্রেটারি দরকার, যে তাকে রিপোর্ট লিখতে সাহায্য করবে। …সে একজন মহিলা অফিস সেক্রেটারী কে নিয়োগ করলো এই কাজে যে সব ফোনকল মনিটর করবে, আর নথিপত্র ঠিকঠাক রাখবে।
-
সিইও খুব আনন্দ নিয়ে দেখল যে দক্ষ ম্যানেজার তাকে প্রতিদিনের কাজের হিসাব দিচ্ছে আর সেগুলো বিশ্লেষণ করছে গ্রাফের মাধ্যমে। ফলে খুব সহজেই উৎপাদনের ধারা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাচ্ছে এবং সিইও সেগুলো বোর্ড মিটিংয়ে ‘প্রেজেন্টেশন’ আকারে পেশ করে বাহবা পাচ্ছে।
-
কিছুদিনের মধ্যেই দক্ষ ম্যানেজার এর একটি কম্পিউটার ও লেজার প্রিন্টার প্রয়োজন হলো এবং এগুলো দেখভালের জন্য আইটি ডিপার্টমেন্ট গঠন করল। আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেল টেক প্রো।
-
আমাদের সেই কর্মী , যে প্রতিদিন অফিসে এসে প্রচুর কাজ করে মনের সুখে গান গাইতে গাইতে বাসায় ফিরত, তাকে এখন প্রচুর পেপার ওয়ার্ক করতে হয়, সপ্তাহের চার দিনই নানা মিটিংয়ে হাজিরা দিতে হয়। নিত্যদিন এসব ঝামেলার কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটায় উৎপাদন কমতে লাগল, আর সে বিরক্ত হতে লাগল।
-
সিইও সিদ্ধান্ত নিল, কর্মী যে বিভাগে কাজ করে, সেটাকে একটা আলাদা ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করে সেটার একজন ডিপার্টমেন্ট প্রধান নিয়োগ করার এটাই উপযুক্ত সময়।
-
সিইও জেনারেল ম্যানেজারকে ওই ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করল। জেনারেল ম্যানেজার প্রথম দিন এসেই তার রুমের জন্য একটা আরামদায়ক কার্পেট ও চেয়ারের অর্ডার দিল।কয়েক দিনের মধ্যেই অফিসের জন্য স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান তৈরি করতে জেনারেল ম্যানেজার একটি কম্পিউটার ও ব্যক্তিগত সহকারীর প্রয়োজন হলো। কম্পিউটার নতুন কেনা হলেও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে জেনারেল ম্যানেজার নিয়োগ করল তার পুরোনো অফিসের একজনকে।
-
উৎপাদন কর্মী যেখানে কাজ করে, সেখানে আগে ছিল চমৎকার একটা পরিবেশ। এখন সেখানে কেউ কথা বলে না, হাসে না। সবাই খুব মনমরা হয়ে কাজ করে। জেনারেল ম্যানেজার পরিস্থিতি উন্নয়নে সিইওকে বোঝাল, ‘অফিসে কাজের পরিবেশ’ শীর্ষক একটা স্টাডি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
-
পর্যালোচনা করে সিইও দেখতে পেল,কর্মীর বিভাগে উৎপাদন আগে,কাজেই সিইও কয়েক দিনের মধ্যেই স্বনামখ্যাত কনসালট্যান্ট সি.এ ফার্মকে অডিট রিপোর্ট এবং উৎপাদন বাড়ানোর উপায় বাতলে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করল।
-
সি.এ ফার্ম তিন মাস কর্মীর ডিপার্টমেন্ট মনিটর করল, সবার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলল। তারপর বেশ মোটাসোটা একটা রিপোর্ট পেশ করল সিইও র কাছে। ওই রিপোর্টের সারমর্ম হলো, এই অফিসে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মী বেশি। কর্মী ছাঁটাই করা হোক।
-
পরের সপ্তাহেই বেশ কয়েকজন কর্মী ছাঁটাই করা হলো। বলুন তো, কে সর্বপ্রথম চাকরি হারাল?
-
ওই হতভাগ্য উৎপাদন কর্মী। কারণ, সি.এ ফার্ম রিপোর্টে লেখা ছিল, ‘এই কর্মীর মোটিভেশনের ব্যাপক অভাব রয়েছে এবং সর্বদাই নেতিবাচক আচরণ করছে, যা অফিসের কর্মপরিবেশ নষ্ট করছে।
©somewhere in net ltd.