নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মনের মাঝে শঙ্খচিল ডানা মেলে প্রতিদিন,ভুলতে পারিনি সেই অভিমান আবার ফিরে আসা তোমার কাছে !
সূর্যকুমার সেন, ডাকনাম কালু, যিনি মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত। ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং নিজ জীবন বলিদান করেন।
সূর্যসেনের বাহিনী কয়েকদিনের জন্যে ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায় "কে জানতো যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপি অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ! কে জানতো সেই শীর্ন বাহু ও ততোধিক শীর্ন পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে - তার সমস্ত ক্ষমতাকে উপহাস করে বৎসরের পর বৎসর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?"[
১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি রাতে সেখানে এক বৈঠকে ছিলেন কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, মণি দত্ত, ব্রজেন সেন আর সুশীল দাসগুপ্ত। ব্রজেন সেনের সহোদর নেত্র সেন সূর্য সেনের উপস্থিতির খবর পুলিশকে জানিয়ে দেয়।[৫৫] রাত প্রায় ১০টার দিকে পুলিশ আর সেনাবাহিনী ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। রাতের অন্ধকারে গুলি বিনিময় করে কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, মণি দত্ত আর সুশীল দাসগুপ্ত পালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু রাত ২টার দিকে অস্ত্রসহ সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেন ধরা পড়েন।[৫৬] তারপর ঐ বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সূর্য সেনের নিজের হাতে লেখা অর্ধসমাপ্ত আত্মজীবনীর খাতা উদ্ধার করে। সেই খাতার উপর লেখা ছিল “বিজয়া”। বিচারের সময় “বিজয়াতে” লেখা তাঁর কথাগুলো বিপ্লব এবং প্রশাশনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমান হিসাবে অনেকবার ব্যবহার করা হয়।[৫৭] ১৭ই ফেব্রুয়ারি রাতে সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেনকে প্রথমে জেলা গোয়েন্দা সদর দপ্তরে, পরে কোর্ট হয়ে চট্টগ্রাম জেলে নেয়া হয়। সূর্য সেন গ্রেপ্তার হবার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।
সূর্য সেন রয়েছেন কড়া পাহারায় কনডেম্ড সেলে নির্জন কুঠুরীতে।
একজন কয়েদি মেথর সূর্য সেনের লেখা চিঠি ময়লার টুকরিতে নিয়ে জেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বন্দী বিপ্লবীদের দিয়ে আসতো। মৃত্যুর আগে জেলে আটক বিপ্লবী কালীকিঙ্কর দে’র কাছে সূর্য সেন পেন্সিলে লেখা একটি বার্তা পাঠান। সে বার্তায় তিনি লেখেন “আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা”। তিনি স্মরণ করেন তাঁর স্বপ্নের কথা--স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন যার জন্য জীবনভর উৎসাহ ভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মত তিনি ছুটেছেন। তাঁর ভাষায় “ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যে সব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো”। তিনি সংগঠনে বিভেদ না আসার জন্য একান্তভাবে আবেদন করেন। শেষ দিনগুলোতে জেলে থাকার সময় তাঁর একদিন গান শোনার খুব ইচ্ছা হল। সেই সময় জেলের অন্য এক সেলে ছিলেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। রাত ১১টা/১২টার দিকে কল্পনা দত্ত তাঁকে চিৎকার করে বলেন “এই বিনোদ, এই বিনোদ, দরজার কাছে আয়। মাষ্টারদা গান শুনতে চেয়েছেন”। বিনোদ বিহারী গান জানতেন না। তবুও সূর্য সেনের জন্য রবিঠাকুরের “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে” গানটা গেয়ে শোনালেন। ১৯৩৪ সালের ১২ই জানুয়ারি মধ্যরাতে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসী কার্যকর হবার কথা উল্লেখ করা হয়।
-------------------------------------
সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মম ভাবে অত্যাচার করে। ব্রিটিশরা হাতুড়ী দিয়ে তাঁর দাঁত ভেঙ্গে দেয় এবং তাঁর হাড় ও ভেঙ্গে দেয়। হাতুড়ী দিয়ে নির্মম ভাবে পিটিয়ে অত্যাচার করা হয়। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। অর্ধমৃতদেহ দুটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের লাশ আত্মীয়দের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি এবং হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী পোড়ানো হয়নি। ফাঁসীর পর লাশদুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টীমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজার “The Renown” এ তুলে নিয়ে বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।
২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:৫৯
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২৭
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: মাষ্টারদার হাতঘড়ি
- শামসুর রাহমান
-------------------------
মাস্টারদা, আপনি কি হাতঘড়ি পরতেন কখনো?
এই প্রশ্ন আমাকে ঠোকর মেরেছে
অনেকবার। মাস্টারদা, আপনার বিষয়ে
অনেক কিছুই জানা আছে আমার।
আপনার শরীরের গড়ন, মূল্যবান রত্নের মতো
চোখের দীপ্তি, জীবন-যপনের
ধরন- এরকম
বহুবিধ খুঁটিনাটির আলো আমি পেয়েছি
গন্থের কালো অক্ষরের মধ্যে ভ্রমণ করতে করতে।
কিন্ত মাস্টারদা, আপনি কখনো
হাতঘড়ি পরতেন কিনা আজ অব্দি আমার জানা হয়নি।
তবে আপনি যে মাঝে-মধ্যে ঘড়ির দিকে
তাকাতেন, তা ধরে নেয়া যেতে পারে।
যিনি নিজে সময়কে শাসন করেন,
সময়ের শাসনও তাকে মেনে নিতে হয়
কখনো সখনো। যখন আপনি পিস্তলের
ট্রিগার টিপেছেন কিংবা মেতেছেন
গোরা সোনাদের অস্ত্রাগার লুন্ঠনে
অথবা পায়চারি করেছেন চট্টগ্রাম জেলের
নিরন্ধ সেলের ভেতর,
তখন সময়ের ধ্বনির প্রতি আপনি কি
উদাসীন ছিলেন?
মাস্টারদা, সেই যে মাঝে-মাঝে
আপনার কন্ঠে উচ্চারিত হতো একগুচ্ছ শব্দ,
সেই অনুসারে আপনি নিজে
চোখেও শুনতেন, কানেও দেখতেন।
ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, বীর আশফাকউল্লাহ, অপরূপ
অগ্নিবলয়ের মতো এক মহামাল্যের মণিরত্ন,
ওদের ঝলকানিতে গান গেছে উঠতো
আপনার চেতনা, যখন আপনি বসে থাকতেন
চুপচাপ, নীল নকশা আঁকতেন প্রতিরোধের
কিংবা সহযাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতেন
সামনে পা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে।
মাস্টারদা, যখন আপনার মাথার ওপর
ঝুলছিলো ফাঁসির দড়ি, তখন
আপনার ঋজু মেরুদণ্ড কি শিরশিরিয়ে উলেছিলো
শীতার্ত ডালের মতো? আপনার হৃৎপিন্ডের
স্পন্দন কি থেমে গিয়েছিলো
ক্ষণিকের জন্যে? মাস্টারদা, আপনার
ব্যক্তিগত মৃত্যু এক লহমায়
হয়ে উঠেছিলো বিপুল জনগোষ্ঠীর যুগপৎ
মৃত্যু এবং জীবন।
মাস্টারদা, আপনি কখনো
হাতঘড়ি পরতেন কিনা জানি না; জানবার
প্রয়োজনও নেই তেমন। অমরতা
জ্যোতির্বলয়ের মতো রাখী পরিয়ে দিয়েছে
আপনার কব্জিতে
আপনার হাত সুর্যোদয়ের প্রসন্নতা নিয়ে
প্রসারিত হয়ে আছে সেই বিশাল ভূখণ্ডের দিকে,
ভাবীকাল যার ডাকনাম।
এবং একটি অলৌকিক হাতঘড়ি, যা আপনি
হয়তো পরেননি, অথচ আপনারই নামাঙ্কিত
ক্রমাগত বেজে চলেছে
আমাদের হৃৎপিণ্ডে রৌদ্র-নিঃসীম ঝালরে।