নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মনের মাঝে শঙ্খচিল ডানা মেলে প্রতিদিন,ভুলতে পারিনি সেই অভিমান আবার ফিরে আসা তোমার কাছে !
এই তো মাত্র কয়েক দিন আগেরই কথা।
আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলাম। মাষ্টার আপা
সেদিন ক্লাসে এসেই মেয়েদের উদ্দেশ্য করে
বললেন তোমরা এখনো কেন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ'চ্ছ না।
সহপাঠীরা যার যার মতো করেই উত্তর দিতে লাগল।
কেউ কেউ বলল এই তো কথা বার্তা চলছে।
কেউ কেউ আবার বলল তাদের তো বিবাহের কথা ফাইনাল, শুধুমাত্র সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
মাস্টার আপা সবার মধ্যেই আমাকে দাঁড় করিয়ে
দিলো।কি রেহ্। তুমি কিছু বললে না যে?
কোথাও ঠিক করে রেখেছ না কি আগেই নিজের থেকে।
আমি কিছুই বলতে পারি নি সেই মুহূর্তে।
কিন্তু নিজেকে মেনে নিতে পারেনি কিছু তেই এই কথার সাথে।
মাস্টার আপার এই কোথায় সেই দিন রাগ, ঘৃণা
লজ্জা, অপমান কি না বোধ হয়ে ছিলো আমার।
বাড়িতে এসে খুব কেঁদে ছিলাম একা একা।
মা হারা মেয়ে আমি। চারটা বোন আমার ছোট।
ছোট বোনটাকে ভাইয়ের আশায় মাকে হারাতে হয়।
আশা ছিল নিজে যদি একটু পথ খুঁজে পাই তবে
হয় তো ছোট্ট বোন গুলোকে একটু আলোর পথ
দেখাতে পারব। কয়েক দিন ধরে আমার আর কলেজে যাওয়া হয় নি।
তারপর থেকে বেশ কিছু দিন ধরেই খুব অসুস্থ অবস্থায় ছিলাম।
সেই কথা খানা এখন বাপজানের ও কানে গেছে।
বাপজান কইলো,মা,রে চিন্তা করিসনা না রে।
আমরা গরীব। লোকে আমাদের নানান কথাই
তো কইবে।তাই বলে কি আমাদের মতো মানুষের
মন খারাপ করলে চলবে? আমাদের জীবনতো
জলে ভাসা খড়কুটোর মতো। যাকে জড়িয়ে ধরে
বাঁচতে চাই সেই তো সরে দাঁড়ায়।
কয়েক দিন বাদেই বাপজান আমার বিবাহ ঠিক
করলেন। বিদায় বেলায় খুব কেঁদে ছিলাম।জামাই
খুব বয়সী ছিলো। ছোট ছোট বোন গুলো কে ও
ছেড়ে যেতে মনে চাইছিল না। বাপজান ছাড়া যে
ওদের পাশে আর কেউ রইলো না।
স্বামীর বাড়ির নতুন জীবন কেমন হবে জানা নাই।
শ্বাশুড়ি,ননদ,দেবর সবার সাথে কেমন করে মিলব আমি।
স্বামী, শ্বাশুড়ি,ননদ,এমন কি পাশের বাড়ির লোকজন ও এখন নানান রকমের কথা বলে।
বাপজান কে সে সব কথা বলেই বা এখন কি আর লাভ হবে।
আমাদের যে নুন আনতে পান্তার অভাব।
এখন তো দিন বাদে দিন জামাই আমার গায়ে হাত তোলে।
বছর ঘুরতে আমি মাও হলাম। বাচ্চাটা সব সময় অনাদরেই ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে।
ঠিক মতো দুধ ও খেতে পারেনা।বাড়তি খাবার নাইবা হোক।
নিজের শরীরটাও এখন বেশ দুর্বল।স্বামীর একটা ভালো ডাক্তার দেখানোর অভাবে
কয়েক মাস ধরে শয্যাশায়ী হয়ে আছে। হার্ট ব্লক হয়ে গেছে।
কোন রকম আয় নাই তার উপর ঔষধ আবার সংসার।
উপায় না দেখে আমি লোকের বাড়িতে বাড়িতে
একটা কাজ নিলাম।থালা বাসন মাজা ঘসার।ঘরোয়া সব ধরনের কাজ।
ওদের পঁচা বাসি খাবার আমি নিয়ে আসতাম। কখনো পরিমাণ এ
একটু বেশি রান্নার জন্য ওদের মাইরও খেতাম।
তাতেইবা কি বাড়তি একটু খাবার তো আনতে
পারতাম।সবাই মিলে একবেলা খেয়ে নিতাম।
কিন্তু তাতেও যেন কাউকে খুশি করাতে পারছি না।
হঠাতই একদিন বাপজান আসলো আমার শ্বশুর
বাড়িতে। আমি বাপজানের বুকের সাথে ধাক্কা খাই।
আমাকে তো ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে দেয়।
শুধু বাপজানের অনুরোধে বহুকষ্টে যেন আমি
আবার এই বাড়িতে থাকতে অনুমতি পেলাম।
আমার বাড়িতে বাপজান এক দুপুর ছিলো। আমি
বলে ছিলাম বাপজান ছোট বোন টা কে তোমার
সাথে করে নিয়ে আসলে না কেন। কয়েক টা দিন
আমার কাছে থেকে যেতো। খুব ইচ্ছে করে বাবা,
ছোট বোন গুলো কে দেখতে। বাপজান রে ওরা কি আমারে ভুলে গেছে না কি!
বাপজান কইলো নারে মা, তোকে ভোলে নি।
তোকে সামনের ফাগুন মাসে নিতে আইবো।
তখন তোর সংসারের সব অভিযোগ মেনে নিব।
তোর আর কোনো জিনিসের জন্য কারো খুটা
শুনতে হবে না মা। তখন কয়েক দিন থেকে আসবি ওদের কাছে।
বাপজান রে কইলাম তোমার জামাই বাজারে যেতে পারে নাই তাই তোমার জন্যে একটু ভালো
কিছু রান্না করতে পারলাম না। বাপজান কইলো
মারে আমি তোর হাতের রান্না কতো দিন ধরে খাই না।
তোর হাতের রান্না শাক ভাতও যে আমার
গোশ ভাত খাওয়ার হার মানায়।
কয়েক ফোঁটা চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি এক
হয়ে বাবার খাওয়ার থালায় মিশে গেল কারণ
ঘরে তো আর ভালো ছাউনি ছিল না। বাবা আর
মেয়ে অনেক কেঁদে ছিলাম তখন।
আমার বাড়ি থেকে বাপজানের আসার সময়
অনেক বলে ছিলাম আমারে নিয়া যাও বাপজান।
আমারে এই খানে থুইয়া যাইয়ো না। আমারে নিয়া
যাও।আমারে থুইয়া যাইয়ো না। থুইয়া যাইয়ো না।
আমারে নিয়া যাও।কবে আইবা আবার। বাপজান
রে কবে আইবা আবার! বাপজান একটা কথা ও
কইলো না। বাপজান চলে গেল আমারে রেখে।
চলে গেলো তো গেলোই।
বাপজান আর কোনো দিন ও এলো না আমার
বাড়িতে।এলো না আর আমারে নিতে ফাগুন মাসে।
কি করে বুঝবো এটাই ছিলো আমার বাপজানের শেষ আসা।
বাপজানের মৃত্যুর খবর টা দু বছর পরেই জানতে
পারি। বাপজানের শুয়ে থাকা মাটির স্তম্ভটা
দেখতে আসলাম। সেদিন আর আরো কথা কারো বাঁধা মানিনি।
তারপর থেকেই বাপজানের বাড়ি থেকে আমার
শশুর বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি।কেউ কোনো
দিন খোঁজ খবর ও নিতে আসে নাই।
এখন আর মাস্টার আপার কথা মনে পড়েনা।
মনে পড়েনা কোনো সহপাঠীর কথা যারা খুব
অপমান করত আমায়।
সুখে আছি কি দুঃখে আছি আমি জানি না।
শুধু মনে হয় এটাই কি জীবন!
এই পরিণতির জন্য কার দোষ
ভাগ্যের না কি আমার?
"কবে আইবা আবার"
এক অসহায় ছাত্রীর ব্যাকুলতা / সংকলিত
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৫
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: অংকের হিসাবে ভালো নেই তবে
অবস্হান গত বিচারে
মহান আল্লাহতালা ভালো রেখেছেন ।
২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০৫
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: লেখা পড়া শিখানো উচিত ছিল।এই কবিতা থেকে সমাজ কি শিক্ষা পেল,আপনিই বা কি শিক্ষা দিতে চাইলেন।
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২২
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: এই লেখাটা এক ছাত্রীর বাস্তব জীবনের চিত্র
......................................................................
এখান থেকে আমাদের সমাজ চিত্র,
নারীর প্রতিসহিংসতা,
আমাদের কুসংস্কার, আহায়ত্ব তীব্র ভাবে
যন্ত্রনা দিচ্ছে ।
৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪০
নেওয়াজ আলি বলেছেন: মাস্টার আপা ক্লাসে এমন বলে ?
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৪
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আজকাল,
বিভিন্ন ভিডিওতে যেসব চিত্র দেখি
তা এই ঘটনার থেকেও ভয়াবহ ।
৪| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:০৭
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি মোবাইলে লিখেছেন?
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:১৩
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: অত্যন্ত ব্যস্ততার কারনে নিজ ল্যাপটপে বসাই হয় না ।
...............................................................................
এই আকুতিটা এতই মর্মশ্পর্শী যে,
তাই পোষ্ট করলাম, দেখতে চাইছি বাস্তবে
আমাদের আবস্হান কোথায় ।
না মোবাইল বা নিজ ল্যাপটপ থেকে নয় ।
৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমি ভেবেছিলাম, আপনার নিজের জীবনকথা লিখছছেন!
১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:০৯
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আমার জীবন কথা কোন অংশে রহস্যপূর্ণ , কষ্টকর এবং চাণ্চল্য কম নয় ।
........................................................................................................
সিদ্বান্ত নিয়েছি একটু একটু করে লিখতে শুরু করব।
তবে কিছু অপ্রিয় কথা, সমাজ ও ব্যাক্তির অসুবিধা হবে
আমার নিজেরও সমস্যা হতে পারে তাই দেরী করছি
উপযুক্ত সময়ের জন্য ।
৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: কবিতার মত করে লেখা পরে বুঝলাম একটা কারণ ঘটনা। এমন যেন আর কারো জীবনে না ঘটে।
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:২১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ধন্যবাদ, বাস্তবতা অনুধাবন করার জন্য ।
........................................................
বহমান জীবনের চিত্র কি হতে পারে,
তা আমরা দুর থেকে দেখি , কিন্ত
শ্পর্শ করতে চাইনা ।
৭| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:২৫
সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন: সংকলিত?
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:১৫
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: হ্যাঁ, সংকলিত
৮| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:০২
সোনালি কাবিন বলেছেন: দুঃখই হয়তোবা জীবনের লায়ন শেয়ার ।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৭:৩৮
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: দু:খর মাঝে যুদ্ধ করে বাচঁতে শিখতে হবে
তবেই সুখ আসবে ।
.........................................................
কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রীরা মানতে চায় না ।
৯| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:১৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আফসোস।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৫৯
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: পৃথীরির মানুষ এখনও স্বার্থপর
..............................................................
কেউ সকালের নাস্তা করে শেরাটনে
ঐ টাকা দিয়ে গ্রামে একটি সংসার দিব্যি একমাস শান্তিতে চলতে পারে ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১৬
নূর আলম হিরণ বলেছেন: অনেকদিন পর আপনাকে ব্লগে দেখলাম। অবশ্য আমিও নিয়মিত নয়। কেমন আছেন?