![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতকাল একবার, আজ আরেকবার কানে এলো এই গপ্পো। বাংলাদেশের কোনো এক মহিলা সাপ হয়ে গেছেন।
কেন?
তিনি নাকি তার হজফেরত স্বামীকে বলেছিলেন অতগুলো টাকা হজের পেছনে ব্যয় না করে ব্যাংকে রাখলেই বরং কাজে দিত। অর্থাৎ ইসলাম সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের অপরাধেই মহিলার এই করুণ পরিণতি।
এ ধরনের খবর শুনলে আগে রাগ হতো, এখন হয় না। এক ধরনের করুণামিশ্রিত ভোঁতা অনুভূতি নিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়াটাই সুবিধাজনক মনে হয়। তবে যেই দুই সূত্র থেকে এই গল্প কানে এলো দুটোই পীড়াদায়ক। দুজনই উচ্চশিক্ষিত। তাদের একজন শুনেছেন তার কলেজছাত্র ভাইয়ের কাছ থেকে, আরেকজন শুনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মুখে। এবং তারা এহেন তেলেসমাতিতে এতটাই আলোড়িত যে কোনো যুক্তিতর্ক বা কটাক্ষকেই গায়ে মাখলেন না। সেই সাপটি নাকি মিরপুর চিড়িয়াখানায় প্রদর্শির হয়েছে।সেই সাপের আওয়াজে আর অন্য কোনো প্রাণী খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে দেখে ২ দিন পরে তাকে ফেরৎও পাঠানো হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে এ বিষয়ে বলা হলে তিনি নাকি বলেছেন যে উনাকে আবার মক্কা শরীফে পাঠিয়ে দাও, ওখানে গিয়ে উনি মাফ চেয়ে আসুক। তা দেখতেও গিয়েছে অনেকে কিন্তু মহিলার স্বামী কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেনা.।পরিবারের অসম্মানের ভয়ে.।।।।
প্রায়শই সাপনির্ভর চলচিত্র খুব দর্শক টানে। সেখানে দেখানো হয় কিছু কিছু সাপ ইচ্ছাধারী হয়, তারা যেমন খুশি তেমন রূপধারণ করতে পারে। কখনো মানুষের রূপ ধরে এরা লোকালয়ে চলে আসে। এরপর মানুষের সাথে প্রেম, ঈর্ষা, সংঘাত আরো অনেক কিছু। যারা খুব আগ্রহ করে এসব দেখতেন তারাও জানেন এগুলো মিথ্যে। মজা লাগত বলেই দেখতাম। অথচ প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষিত মানুষেরা শোনামাত্র এ ধরনের খবর উড়িয়ে দিতে পারছেন না, বরং তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করছেন দেখে বিস্মিত হবো না হতাশ হবো বুঝে উঠতে পারি না। আমাকে আবার বললেন নেটেও নাকি আছে এ খবর। আমি যেন নিজেই খুঁজে নিয়ে সত্যমিথ্যা যাচাই করি। টেকিকানাদের এই প্রবণতা লক্ষণীয়। নেটের সবকিছুই চোখবুঁজে মেনে নিতে চান।
গুগলে একটা সার্চ দিতেই এক ফোরাম থেকে বেরিয়ে এলো প্রায় কাছাকাছি একটা খবর।
সেখানে বলা হচ্ছে:
" মুগদা পাড়া এলাকার জনৈক এক নও মুসলিম মহিলা এবছর পবিত্র হজব্রত পালন করে এসে নাকি আফসোস করে বলেছিলোঃ
“হজ উপলক্ষ্যে এতগুলি টাকা খরচ হয়েছে, ইশ! এগুলো যদি লাভে(সুদে) খাটানো যেত!"
এ কথা বলার পরই নাকি ঐ মহিলা আস্তে আস্তে সাপে রূপান্তরিত হয়, এবং সে নাকি তার নিজ ছেলেকেও কামড়েছে।
তার স্বামী ও এলাকার লোকজন ঢাকা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা এরকম ভয়ংকর দর্শন কাউকে রাখতে রাজি হয় নি।”
এ খবর কেউ শুনেছেন সহকর্মীর কাছে, কেউ স্ত্রীর মুখে, কেউবা বাসে। এ নিয়ে নাকি পুস্তিকা বের হয়েছে, এমএমএস ছড়ানো হয়েছে দিকে দিকে। প্রমাণ হিসেবে আবার সেই ফোরামে একটা ভিডিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ভীতিপ্রদ মিউজিক।
ভিডিও দেখে সন্দেহ হওয়ায় ইংলিশে সার্চ দিলাম ইউটিউবে। যা পেলাম তা আরো চমকপ্রদ। ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, ইন্দোনেশিয়ায় ধারণকৃত। কথাবার্তা আড়াল করতেই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
যে প্রাণীটি(!) দেখা যাচ্ছে তা আদৌ কোনোকালে প্রাণী ছিলো বলে মনে হয় না। মাথাজুড়ে ঝলমলে বার্বি ধাঁচের চুল দেখলে বরং খেলনা মনে হতে পারে। নেটে এর সন্ধান পেয়ে এর গায়ে গল্প চড়িয়ে ছড়ানো হয়েছে।
তথ্যের গতিপথ এমনিতেই বন্ধুর। চলার পথে কিছু রঙ ঝরে যায়, নতুন রঙের প্রলেপ পড়ে খানিকটা। রঙের প্রকরণ নির্ভর করে তথ্যদাতা ও গ্রহীতা দুইয়েরই রুচি, মেজাজ ও মনস্তত্ত্বের উপর। এই খবরটির বিকৃতি ও প্রচার উদ্দেশ্যমূলক তা বলা বাহুল্য। অনেকেই বিশ্বাস করেননি। শোনামাত্র উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেকে সেটা বিশ্বাস করতেও চাইছে। তা না হলে আলাদা আলাদা সূত্র থেকে এ খবর আমার কানে পৌঁছাত না। আমরা সাক্ষরতার হার নিয়ে উদ্বিগ্ন হই, শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলি। কিন্তু পড়ালেখা জানা মানুষেদের অন্ধত্ব দেখলে আমাদের শিক্ষাদীক্ষার মূল্য নিয়েও সংশয় হয়। ধর্ম আর অন্ধবিশ্বাসের বিভেদরেখা টানতে জানি না বলেই আজো এদেশে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা চলে। প্রযুক্তিবিচ্ছিন্ন বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা ইন্টারনেটের সব তথ্যকেই বেদবাক্যজ্ঞান করে তাদের মাঝে বিকৃত তথ্য ছড়ানো কত সহজ ভাবলে আতংকিত হই।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিন্তাভাবনার চর্চা আমাদের উপমহাদেশে কম। ইন্ডিয়ান পাকিস্তানিদের সাথে মিশে দেখেছি, ওদের মধ্যেও এই জিনিস আছে। পড়ছে ফিজিক্স কিন্তু ইওরোপিয়ান বন্ধুকে জ্বীনের অস্তিত্ব প্রমানের জন্য কোরানের রেফারেন্স দিচ্ছে, দুধের অবিরাম প্রবাহ আছে এরকম দেবদেবির মুর্তি এখনও পাওয়া যায় ইত্যাদি বাকোয়াজি এঞ্জিনিয়ারিং পড়া লোকেরা বলছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ আসলে পরীক্ষায় পাশ করতে শেখে। শিক্ষা তাদের মনকে আলোকিত করে এমনটা মনে হয় না। ইউরোপিয়ানদের মধ্যে এই জিনিস নেই তা নয়, এ্যামেরিকানদের একটা বিশাল অংশ ভুদাই এটাও সত্য। তবে এই হার আমাদের মধ্যকার অবৈজ্ঞানিকদের মতো এতো বেশি নয়।
বাংলাদেশী ভিডিও
আমাদের এখানে জন্মের পর থেকেই প্রশ্নাতীত বিশ্বাসের শিক্ষা পায় শিশুরা। প্রশ্ন ছাড়া বিজ্ঞান হয় না। তাই গোড়া থেকেই বিশ্বাস আর বিজ্ঞানের ব্যবধান তৈরি হয়। এই ব্যবধান কমাতে অনেকে আবার ধর্ম থেকে কুসংস্কার বিতাড়িত করার পরিবর্তে কুসংস্কারের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ জাকির নায়েক।
আরোও কিছু কাহিনী শুনেছিলাম। হজ্বের টাকা জলে দেয়ার জন্য না; বরং সুদ খাওয়ার জন্যই মেয়েটি সাপ হয়ে গেছে। কিছু ব্লগে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছিলো। কয়েকজন তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন:
১।
অবশ্যই সত্য।
আমি নিজেও কিছুদিন সুদের ভেতর ছিলাম। যখন কিছুদিন পর দেখলাম যে আমি দ্রুত সাপ হয়ে যাচ্ছি তখন তওবা করে সুদ দেওয়া ছেড়ে দিলাম বলে বেঁচে যাই। সে আধা সাপ অবস্থায় বুকে হেঁটে চলাচল শুরু করেছিলাম। বুকে হেঁটে অফিস যাওয়া আসা করতাম। কথা বলতে গেলে দেখতাম যে প্রায়ই কথা বের হচ্ছে না, ফিস ফিস আওয়াজ বেরুচ্ছে। সে এক অভিজ্ঞতা বটে।
বিশ্বাস না করলে নাই, আমার টেম্পারেচার এখনো নরমাল হয় নাই, বেশ কম থাকে। বিদেশী বড় বড় ডাক্তারও কিছু বলতে পারে না। ওনারা সবাই রায় দিছেন যে এইটা কোন গায়েবী শাস্তি ছাড়া আর কিছুই হইতে পারে না।
-- আপনাকে দেখেই আমার প্রথমেই কেন যেন সন্দেহ হয়েছিলো। এখন ঘটনাটা বুঝতে পারছি। সাবধানে থাকতে হবে।
এই তো চাক্ষুস স্বাক্ষী পাওয়া গেছে। আপনার বাসায় কত কি খাইতে দিলেন, কিছুই মন ভরে খাইতে পারি না। কেমনে বলি যে পোলাউ কোর্মা তখন আমার মুখে রোচে না, আমি খুজি ব্যাং, তেলাপোকা, ঝিঝি পোকা এইসব। আপনারে ইংগিতও দিলাম, ধরতে পারলেন না। পরে ক্ষিধা পেটে বাসায় ফিরা আবার ঝোপের ভিতরে ব্যাং ধইয়া খাইতে গেলাম।
তবে এখন মাশাল্লাহ সুদের কারবার ছাড়ার পর ব্যাংক তেলাপোকা আর লাগে না।
আর বইলেন না, আপনাদের কাছে হাসি লাগতে পারে। আর আমি যে কিয়ের ভিতরে পড়ছিলাম। না মানুষ, না সাপ; কোনটাই না। দেখতে শুনতে মানুষের মতন লাগে, হঠাত হঠাত সাপের মতন আচরন করি।
একদিন অফিসে মিটিং এর রুমে ঢুকতেছি, হঠাত সবার সামনে বুকে হাঁটা শুরু করলাম। পাবলিকে এ ওর দিকে তাকায়। ঘটনা কি? এইটার কি মাথা মুথা গেল গা নাকি?
আমি অনেক কষ্টে জোড়াতালি দিয়া বুঝাইলাম যে আমারে ডাক্তার ওয়েট কমাইতে কইছে, তাই সব সময় চেষ্টা করি বেশী বেশী ব্যায়াম করতে। কথাও কি আর কইতে পারি? খালি হিস হিস ফিস ফিস আওয়াজ বাইর হয়।
২।
ইউনুস সাহেবের শরীরেও নাকি চামড়ার বদলে আইশ তৈরী হইছে, এইজন্য উনি সবসমর শরীর ঢাইক্যা রাখেন।
৩।
এই ভিডিও সম্পর্কে আবার কেউ কেউ বলেন " যে মহিলা সাপ হয়েছে। আমার শুনা কথা আমি যতদুর জেনেছি। এই মহিলা নাকি ইন্দোনেশিয়ার হজ্জ করতে এসেছিল। কি কারনে এমনটি হয়েছে জানা নাই। তবে ঐ মহিলার আশপাশে যারা আছে তাদের ভাষা ইন্দোনেশিয়ান। মহিলাটি ৬০ এরউপরে বয়স হবে। সেখান বলা আছে ।"
ইন্দোনেশিয়ায় কি হজ্জ্ব হয়???
৪।
আমি নিজেই ৩ বছর সাপ হয়ে ছিলাম সুদ খাওয়ার কারণে। এরপর ৩৩ লাখ বার দোয়ায়ে কুব্বত পড়ে সেই অবস্থা থেকে মুক্তু পাই। সাপ হওয়া মেয়েটির সাথে আপনার আবার দেখা হলে তাকে দোয়ায়ে কুব্বত আমল করতে বলবেন। আল্লাহ চাহে ত সে আবার মানুষ হয়ে যাবে।
৫।
আমি এখনও ১৯ % সুদ দিয়ে ক্রেডিট কার্ডের উপর বেছে আছি। আল্লাহর অশেষ ইচ্ছায় সামনের মাসে আরও ১০-১৫ হাজার ডলারের একটা সুদ নেওয়ার ধান্ধা করতেছি। তাইলে আমারও সাপ হওয়ার চান্স আছে??
কেউ কি কোনও পবিত্র ধর্মগ্রন্থে লেখা দেখেছেন যে সুদ খেলে বা কোনও অপকর্ম করলে মানুষ সাপ হয়ে যাবে এরকম কথা লেখা আছে! হায়রে সচেতনতা। আরও অবাক হই যখন দেখি শিক্ষিত মানুষজন এইসব গুজব মাথায় তুলে নাচেন। বিজ্ঞান পড়া মানুষজনও অলৌকিক পীরের দরবারে মাথা ঠোকেন। শুনেছিলাম হুমায়ুন আহমদও নাকি একটা ছেলের বাসনায় মাজারে মাজারে দৌড়েছেন। আর ঢাকায় দেখেছি এক বাবা হেঁটে চলেছেন আর তার পিছনে বিরাট লাইন ধরে স্যুট-টাই-জামদানী পরা সাগরেদরা বাবাকে অনুসরন করছেন। টংগী রুটে ল্যাংটা বাবা পরিবহনে ছয়লাপ। অনেকেই বলেন, হুশিয়ার, সামলে কথা বলো, বাবার সাথে অনেক কিছু আছে। তবে এপ্রসঙ্গে এক সেলুনে বসে শোনা বদের বদ দেহো-সাইদীর একটা অশ্লীল বক্তব্যের সামান্য উদ্ধৃত করি-
সবাই বলে ল্যাংটা বাবার সাথে অনেক কিছু আছে। সেগুলোর অনেক পাওয়ার। কিন্তু আমিতো দেখি ল্যাংটা বাবার সাথে একটাই জিনিস আছে যা আপনার আমার সাথেও আছে। আর বাবার ওই জিনিসের যা পাওয়ার সে পাওয়ার আপনার আমার জিনিসেও আছে।
©somewhere in net ltd.