নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Understanding the Glorious Quran

তাহান

Understanding the Glorious Quran

তাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাফায়াত দ্বারা কবীরা গুনাহ বা দোযখ থেকে ‎মুক্তি পাওয়া যাবে কি?

০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:০৩

কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী

শাফায়াত দ্বারা কবীরা গুনাহ বা দোযখ থেকে ‎

মুক্তি পাওয়া যাবে কি? ‎


-প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান





মূল বিষয়

শাফায়াত ইসলামের একটি মূল বিষয়। কেউ, শাফায়াতে বিশ্বাস না করলে ‎তার ঈমান থাকবে না। বর্তমান মুসলিম সমাজে শাফায়াত সম্বন্ধে ‎ব্যাপকভাবে চালু থাকা তথ্যগুলো হল-‎

‎১. নবী-রাসূলগণসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষেরা পরকালে শাফায়াত ‎করবেন।‎

‎২. শাফায়াতের মাধ্যমে মু’মিনের কবীরা গুনাহও মাফ হয়ে যাবে।‎

‎৩. দোযখের শাস্তি ভোগ করছে এমন মুমিন ব্যক্তিদেরও শাফায়াতের ‎মাধ্যমে দোযখ থেকে বের করে এনে বেহেশতে পাঠিয়ে দেয়া ‎হবে।‎

‎৪. কাফির ব্যক্তিরা শাফায়াতের মাধ্যমে দোযখ হতে মুক্তি পাবেন ‎এমন ধারণা কেউ পোষণ করেন না।‎

শাফায়াত সম্বন্ধে ঐ সকল ধারণার বাস্তব যে কুফল মুসলিম সমাজে ‎বর্তমানে দেখা যায় তা হল-‎

‎১. শাফায়াতের মাধ্যমে মাফ পেয়ে যাবে মনে করে মুসলিমরা এমন ‎কাজ করছে বা এমন কাজ ছেড়ে দিচ্ছে যা না করলে বা করলে ‎কবীরা গুনাহ হবে বা দোযখে যেতে হবে বলে কুরআন বা সূন্নাহ ‎‎স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে। ‎

‎২. শাফায়াত করতে পারবে ধারণা করে লোকেরা জীবিত অনেক ‎মানুষকে, ইসলাম নিষেধ করেছে এমন উপায়ে খুশী করার চেষ্টা ‎করছে।‎

‎৩. কবরে শুয়ে থাকা ব্যক্তির শাফায়াত পাওয়ার আশায় কবর পূজা ‎করছে।‎

‎৪. কিছুলোক শাফায়াতের লোভ দেখিয়ে নানাভাবে মানুষকে প্রতারিত ‎করছে।‎

ঈমান ও আমলের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সকল মানুষ জীবিত ‎অবস্থায় এবং মৃত্যুর সময় যে সকল বিভাগে বিভক্ত থাকবে



মু’মিন হল সেই ব্যক্তি যে কালেমা তৈয়্যেবার ব্যাখ্যাসহ অর্থটি অন্তরে বিশ্বাস ‎করে এবং মুখে তার ঘোষণা দেয়। অন্তরের বিশ্বাসটাই আল্লাহ দেখেন। ‎মুখের ঘোষণাটি অন্য মানুষের বোঝার জন্যে যে, ব্যক্তিটি ঈমান এনেছে। ‎

কাফির বলে সেই ব্যক্তিকে যে কালেম তৈয়্যেবার ব্যাখ্যাসহ অর্থটি অন্তরে ‎বিশ্বাস করে না।‎

‎নেক্কার মু’মিন হল সেই ব্যক্তি যে গুনাহ করেনি বা তাওবার মাধ্যমে মাফ ‎করিয়ে নেয়ার কারণে যার আমলনামায় গুনাহ উপস্থিত নাই।‎

মুসলিম হল সর্বনিম্ন স্তরের নেক্কার মু’মিন।‎

মুত্তাকী হল মধ্যম স্তরের নেক্কার মু’মিন।‎

মুহসিন হল সর্বউচ্চ স্তরের নেক্কার মু’মিন‎

ছগীরা গুনাহগার মু’মিন হল সেই মু’মিন যে প্রায় সমান গুরুত্ব বা ‎পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ এক বা একাধিক ‎করণীয় কাজ ছেড়ে দেয় বা নিষিদ্ধ কাজ করে। ‎

মধ্যম (না ছগীরা না কবীরা) গুনাহগার মু’মিন হল সেই মু’মিন যে মধ্যম ‎‎(৫০%) গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার ‎‎চেষ্টাসহ এক বা একাধিক করণীয় কাজ ছেড়ে দেয় বা নিষিদ্ধ কাজ করে। ‎

সাধারণ কবীরা গুনাহগার মু’মিন বলে সেই মু’মিনকে যে প্রায় না থাকার ‎মত গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ ‎এক বা একাধিক বড় করণীয় আমল ছেড়ে দেয় বা নিষিদ্ধ কাজ করে।‎

কুফরীর কবীরা গুনাহগার মু’মিন হল সেই মু’মিন যে ইচ্ছা করে, খুশী ‎মনে, ঘৃণাসহকারে বা কোন ধরনের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার ‎‎চেষ্টা ব্যতীত এক বা একাধিক বড় বা ছোট করণীয় কাজ ছেড়ে দেয় বা ‎নিষিদ্ধ কাজ করে। ‎

প্রকাশ্য কাফির হল সেই কাফির যে কালেমা তাইয়্যেবার ব্যাখ্যাসহ অর্থটি ‎মনে বিশ্বাস করে না এবং প্রকাশ্যে তার ঘোষণাও দেয়।‎

‎গোপন কাফির বলে সেই কাফিরকে যে প্রকাশ্যে ঈমান আনার ঘোষণা ‎‎দেয় কিন্তু অন্তরে ঈমান আনে না। এরাই হল সবচেয়ে খারাপ ধরনের ‎কাফির। ‎

সাধারণ কাফির হল সেই প্রকাশ্য কাফিররা যারা অন্যরা ইসলাম পালন ‎করল কি করল না সে বিষয়ে কোন মাথা ঘামায় না।‎

তাগুত কাফির বলে সেই প্রকাশ্য কাফিরদের যারা অন্যদের ইসলাম ‎পালনে নানাভাবে বাধা দেয়।‎

‎(বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‘পবিত্র কুরআন হাদীস ও ‎বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী গুনাহের সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ’ নামক বইটিতে)‎



ইসলামে দুনিয়ায় গুনাহ মাফ হওয়ার উপায়সমূহ

ইসলামে দুনিয়ায় গুনাহ মাফ হওয়ার উপায় দুটি ‎

‎১. তাওবা‎

‎২. নেক আমল ‎

তাওবার মাধ্যমে মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ বাদে সকল ধরণের ‎‎গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু সে তাওবা হতে হবে মৃত্যু আসার মুক্তিসংগত ‎সময় পূর্বে। অর্থ্যৎ মৃত্যু ঘটার এমন সময় পূর্বে যখন ব্যক্তির একটি গুনাহ ‎করার সুযোগ আসলে স্বজ্ঞানে ও সমতায় তা হতে দূরে থাকার মত ‎অবস্থা থাকে। ‎

আর মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ সে হক ফেরত দেয়ার আগ ‎পর্যন্ত মাফ হয় না। তবে যার হক ফাঁকি দেয়া হয়েছে তাকে কোনভাবে ‎খুঁজে পাওয়া সম্ভব না হলে সে হক গুনাহ মাফের আশায় কোন ‎জনকল্যাণমূলক কাজে দান করে দিয়ে আল্লাহর নিকট মা চাইতে হবে। ‎

‎নেক আমলের মাধ্যমে শুধুমাত্র ছগীরা গুনাহ মাফ হয়।‎

‎(বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আছে ‘কুরআন হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ‎কবীরা গুনাহ সহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিন দোযখ থেকে মুক্তি পাবে কি?’ ‎নামক বইটিতে) ‎

শাফায়াত শব্দের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ‎

শাফায়াত শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে সুপারিশ, মাধ্যম বা দোয়া। আর ‎পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে পরকালে অপরের গুনাহ বা শাস্তি মুক্তির জন্যে ‎আল্লাহর নিকট করা সুপারিশ। ‎

মৃত্যুর পর তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফ পাওয়ার আর কোন সুযোগ ‎‎থাকবে না। কিন্তু দয়াময় আল্লাহ মৃত্যুর পরও মানুষের গুনাহ মাফ হওয়ার ‎ব্যবস্থা রেখেছেন। সে ব্যবস্থা হচ্ছে শাফায়াত।‎



‎যে সকল সত্তা শাফায়াত করবেন বা করতে পারবেন‎

ক. মহান আল্লাহ শাফায়াতকারী‎

মহান আল্লাহ যে শাফায়াতকারী হবেন এবং তাঁর শাফায়াতের কয়েকটি ‎দিক কুরআন হাদীসে এভাবে এসেছে-‎

আল-কুরআন

তথ্য-১‎

অর্থ: (হে নবী,) বলে দিন সকল শাফায়াত সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর ‎ইখতিয়ারে। (শাফায়াতসহ) আকাশ ও পৃথিবীর সকল বিষয়ের সার্বভৌম ‎কর্তৃত্ব শুধু তাঁরই। ‎‏ ‏‎(যুমার : ৪৪)‎

তথ্য-২‎

অর্থ: তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্যে না আছে কোন (স্বাধীন) সাহায্যকারী ‎এবং না আছে কোন (স্বাধীন) শাফায়াতকারী ‎ ‏ ‏‎(সাজদাহ : ৪)‎

তথ্য-৩‎‏.‏

অর্থ: তিনি (আল্লাহ) ছাড়া তাদের জন্যে কোন (স্বাধীন) অভিভাবক ও ‎সুপারিশকারী নেই। ‎ ‎(আনআম : ৫১)‎

তথ্য-৪‎

অর্থ: তবে কি তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে শাফায়াতকারী ‎হিসেবে গ্রহণ করেছে? ‎ ‏ ‏‎(যুমার : ৪৩) ‎



আল-হাদীস

অর্থ: হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা, আমার সম্পদ থেকে যা খুশি চাও ‎‎(পরকালে) আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করার ব্যাপারে তোমার কোন ‎উপকার করার মতা আমার নেই। (বুখারী, মুসলিম)‎

ব্যাখ্যা: হাদীসখানি থেকে সহজে বুঝা যায় পরকালে অন্য কারো তো ‎‎দূরের কথা, রাসূল (সা.) এরও শাফায়াতের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে কারো ‎‎গুনাহ মাফ করে নেয়ার মতা থাকবে না।‎

‎ কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত তথ্যসমূহের আলোকে পরিষ্কারভাবে ‎জানা ও বুঝা যায় পরকালে মূল শাফায়াতকারী অর্থাৎ-‎

‎ কাউকে শাফায়াতের অনুমতি দেয়া না দেয়ার স্বাধীন মতার ‎

‎ অধিকারী,‎

‎ কারো শাফায়াত কবুল করা না করার স্বাধীন মতার অধিকারী এবং

‎ নিজ ইচ্ছায় গুনাহ মাফ করার অধিকারী সত্তা হবেন মহান আল্লাহ। ‎

তাই দুনিয়ার কোন ব্যক্তিকে নজর-নিয়াজ দিয়ে খুশি করতে পারলে তিনি ‎‎জোর করে আল্লাহর নিকট থেকে শাফায়াত আদায় করে দিতে পারবেন, ‎এ ধারণা পোষণ করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করার অর্থ যে কুরআন ও ‎হাদীসের উল্লিখিত স্পষ্ট বক্তব্যগুলোকে অস্বীকার করার গুনাহ, তা বুঝা ‎‎মোটেই কঠিন নয়, যদি বুঝতে চাওয়া হয়। ‎

খ. কুরআন শাফায়াতকারী

তথ্য-১‎

অর্থ: আবু উমামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে ‎বলতে শুনেছি, তোমরা পবিত্র কুরআন পাঠ কর (জ্ঞান অর্জন কর) নিশ্চয়ই ‎তা কিয়ামতের ময়দানে তার সাথীদের জন্যে সুপারিশ করতে উপস্থিত ‎হবে। (মুসলিম) ‎

তথ্য-২‎

অর্থ: সাঈদ ইবনে সুলাইম (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‎কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নবী, ফেরেশতা বা অন্য কেউ কুরআন হতে ‎‎শ্রেষ্ঠ শাফায়াতকারী হতে পারবে না। ‎

তথ্য-৩‎ ‏. ‏

অর্থ: জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : কুরআন পাক এত ‎বড় সুপারিশকারী যে, তার আবেদন রা করা হবে। এত বড় একরোখা ‎‎জেদী যে, তার অভিযোগ মেনে নেয়া হবে। যে একে সম্মুখে রাখবে তাকে ‎‎সে বেহেশতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। আর যে একে পিছনে ফেলে রাখবে, ‎তাকে সে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে।‎

‎ এ তথ্যগুলো থেকে জানা ও বুঝা যায়, পরকালে আল-কুরআন ‎শাফায়াত করবে। আর আল-কুরআনের শাফায়াতের দু’টি বিশেষ দিক হবে-‎

‎ আল্লাহর অনুমতিসাপেে কুরআন শাফায়াত করবে।‎

‎ কুরআনের পরে বা বিরোধী শাফায়াতকে নবী-রাসূল (সা.) সহ ‎‎কোন মানুষ বা ফেরেশতা খণ্ডাতে পারবে না। আর ইচ্ছাকৃতভাবে ‎কুরআনের জ্ঞান অর্জন এবং সে জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করলে, ‎পরকালে কুরআন বিপে সাী দিবে তথা বিপে সুপারিশ করবে ‎একথা কুরআন ও রাসূল (সা.) স্পষ্টকরে জানিয়ে দিয়েছেন। ‎

গ. রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) শাফায়াতকারী‎

আল-কুরআন

অর্থ: হে নবী, সে ব্যক্তিকে (শাফায়াতের মাধ্যমে) কে বাঁচাতে পারে, যার ‎উপর আযাবের ফয়সালা হয়ে গেছে। তুমি কি তাকে (শাফায়াতের মাধ্যমে) ‎বাঁচাতে পারবে যাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে? (যুমার : ১৯)‎

ব্যাখ্যা: এখানে প্রথমে আল্লাহ বলেছেন যার উপর শাস্তির সিদ্ধান্ত হয়ে ‎‎গেছে তাকে কেউই শাফায়াতের মাধ্যমে বাঁচাতে পারবে না। তারপর ‎রাসূল (সা.) কে নির্দিষ্ট করে বলেছেন যাকে আল্লাহ দোযখে পাঠিয়ে ‎দিয়েছেন তাকে শাফায়াতের মাধ্যমে তিনিও বাঁচাতে পারবেন না। এখান ‎‎থেকে বোঝা যায় নবী-রাসূলগণ শাফায়াত করার অধিকারী হবেন।‎

‎ ‎

আল-হাদীস

তথ্য-১‎

অর্থ: আমিই (রাসূল সা.) প্রথম শাফায়াতকারী ও আমার শাফায়াতই ‎প্রথমে গ্রহণ করা হবে। ‎ ‎(বুখারী, মুসলিম)‎

তথ্য-২‎

পূর্বে উল্লিখিত (পৃষ্ঠা নং ২১) হাদীসখানি যেখানে রাসূল (সা.) তাঁর কন্যা ‎ফাতেমা (রা.) কে বলেছেন, কিয়ামতের দিন (স্বাধীনভাবে) তিনি ‎শাফায়াত বা অন্য কোনভাবে তাঁর কোন উপকারে আসতে পারবেন না।‎

‎ কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত তথ্যগুলো থেকে বুঝা যায়, রাসূল ‎মুহাম্মাদ (সা.) শাফায়াত করবেন এবং তিনিই প্রথম শাফায়াতকারী ‎হবেন। ‎

ঘ. অন্য নবী-রাসূলগণ ও সাধারণ মানুষ শাফায়াতকারী ‎

আল-কুরআন

পূর্বে উল্লিখিত সূরা যুমায়ের ১৯ নং আয়াতের আলোকে বোঝা যায় অন্য ‎নবী-রাসূলগণ ও অন্য কিছু মানুষ পরকালে শাফায়াত করতে পারবেন।‎



আল-হাদীস

অর্থ: তিন ধরনের লোক কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবেন (করার অনুমতি ‎পাবেন) নবীগণ, আলেমগণ ও শহীদগণ। (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী)‎

ব্যাখ্যা: নবী-রাসূলগণ বাদে অন্য যে সকল মানুষ শাফায়াত করার অনুমতি ‎পাবেন, তাদের নিশ্চয়ই সকল গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে অর্থাৎ নিষ্পাপ ‎‎(নেককার মু’মিন) হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে। কারণ, তা না হলে তাদের ‎নজেদেরই অন্য কারো শাফায়াতের মাধ্যমে শাস্তি থেকে রেহাই পেতে ‎হবে। সহজেই বুঝা যায় এ ধরনের মানুষের সংখ্যা খুবই নগণ্য হবে।‎

ঙ. ফেরেশতাগণ শাফায়াতকারী

‎ফেরেশতাগণ শাফায়াত করবেন তা জানা ও বুঝা যায় সূরা আম্বিয়ার ২৮ ‎নং, নজমের ২৬ নং আয়াত এবং কিছু হাদীসের (পরে আসছে) মাধ্যমে।‎

‎ ‎

শাফায়াত শেষ বিচারের দিন আল্লাহর রায় ঘোষণার আগে না ‎পরে অনুষ্ঠিত হবে?‎

প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সঠিক উত্তরের সঙ্গে পুস্তিকার আলোচ্য ‎বিষয়টি সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। তাই চলুন, বিবেক-বুদ্ধি, কুরআন ও ‎হাদীসের মাধ্যমে উত্তরটি ভালভাবে জেনে ও বুঝে নেয়া যাক-‎

বিবেক-বুদ্ধি‎

বিবেক-বুদ্ধি বলে পরকালে শাফায়াত তথা সুপারিশের মাধ্যমে গুনাহ মাফ ‎‎পেতে হলে, তা হতে হবে আল্লাহ বিচার-ফয়সালা করে শাস্তি ঘোষণা করা ‎তথা দোযখে পাঠিয়ে দেয়ার আগে। কারণ-‎

ক. আল্লাহর শাস্তি ঘোষণা করা বা দোযখে পাঠিয়ে দেয়ার পর ‎শাফায়াতের মাধ্যমে তা পরিবর্তন করার অর্থ হচ্ছে-‎

‎১. আল্লাহর বিচারে ভুল থাকা,‎

‎২. অন্য কারো দ্বারা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে পাল্টাতে বাধ্য করা।‎

‎ এরকম অবস্থার কথা চিন্তা করাও কুফরীর গুনাহ।‎

খ. একজন বিচারক বিচার করে ফায়সালা দিয়ে দিলে উচ্চতর ‎আদালতে আবেদন ও পুনর্বিবেচনার মাধ্যমেই শুধু সে রায় ‎পরিবর্তন হতে পারে। একই আদালতে একই বিচারকের মাধ্যমে ‎তা আর হয় না। পরকালের আদালতে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ‎একজনমাত্র বিচারক থাকবেন। তিনি হবেন মহান আল্লাহ। ‎

তাই শাফায়াত হতে হবে আল্লাহর বিচার-ফয়সালা করে রায় ঘোষণার ‎আগে।‎

আল-কুরআন

তথ্য-১‎

অর্থ: (হে নবী,) সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারবে, যার উপর শাস্তির ‎ফয়সালা হয়ে গিয়েছে? তুমি কি তাকে বাঁচাতে পারবে যাকে আগুনে ‎‎(দোযখে) পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে? অবশ্য যারা তাদের রবকে ভয় করে চলে ‎তাদের জন্যে তৈরি রয়েছে প্রাসাদের উপর প্রাসাদ, যার তলদেশ দিয়ে ‎ঝর্নাধারা প্রবাহিত। এটা আল্লাহর ওয়াদা। আর আল্লাহ কখনও নিজের ‎কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। (যুমার : ১৯, ২০)‎

ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন শেষবিচার ‎দিনে বিচারের রায় ঘোষণার পর নবী-রাসূল (সা.) গণ সহ কেউই শাস্তি‎প্রাপ্ত ব্যক্তিকে তার শাস্তি ভোগ করা থেকে বাঁচাতে পারবে না। ‎শাফায়াতের অনুষ্ঠান পরকালে হবে এটি কুরআন ও হাদীসের আলোকে ‎নিশ্চিত। তাই এ আয়াতের আলোকে সহজেই বলা যায় শাফায়াত হবে ‎‎শেষবিচারের দিন আল্লাহর রায় ঘোষণার আগে। ‎

তথ্য-২‎

পূর্বাল্লিখিত আল-কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের আলোকে আমরা ‎নিশ্চিতভাবে জেনেছি যে, আল্লাহ্ বিচার করে যাদের দোযখে পাঠিয়ে ‎দিবেন তাদের চিরকাল সেখানে থাকতে হবে। তাই শাফায়াতের মাধ্যমে ‎‎গুনাহ মাফ করাতে হলে সে শাফায়াত অবশ্যই আল্লাহর বিচারের রায় ‎‎ঘোষণার আগে হতে হবে।‎



আল-হাদীস

পূর্বে উল্লিখিত (পৃষ্ঠা নং ২১) হাদীসখানিতে রাসূল (সা.) জানিয়ে ‎দিয়েছেন, তাঁর কন্যা ফাতেমাসহ কোন মানুষকেই পরকালের বিচারের ‎সময় আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করার ব্যাপারে তিনি স্বাধীনভাবে কোন ‎উপকার করতে পারবেন না।‎

বিচার অনুষ্ঠানের সময় রাসূল (সা.) যদি কাউকে কোন উপকার ‎করতে না পারেন তবে বিচারের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে দোযখে ‎পাঠিয়ে দেয়ার পর আল্লাহর সিদ্ধান্তকে শাফায়াতের মাধ্যমে আবার ‎পরিবর্তন করাতে পারার প্রশ্নই আসে না।‎

‎ কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির এ সকল তথ্যের আলোকে ‎নিশ্চয়তাসহকারে বলা যায় শাফায়াত হবে শেষবিচারের দিন মহান ‎আল্লাহর বিচারের রায় ঘোষণার আগে। ‎

শাফায়াত করার অনুমতি পাওয়ার যোগ্যতা

বিবেক-বুদ্ধি‎

‎যে ব্যক্তি অন্যের গুনাহ মাফের জন্যে আল্লাহর নিকট শাফায়াত করবেন ‎তাকে অবশ্যই যোগ্য হতে হবে। সাধারণ বুদ্ধিতে সহজেই বোঝা যায় যার ‎নিজের জন্যে শাফায়াত লাগবে সে অন্যের জন্যে শাফায়াত করার যোগ্য ‎হতে পারে না। তাই শাফায়াত করার যিনি যোগ্য হবেন তার আমলনামায় ‎‎কোন গুনাহ থাকা চলবে না। অর্থাৎ তাদের নেক্কার মু’মিন হিসেবে ‎মৃত্যুবরণ করতে হবে। আবার এটিও সহজে বোঝা যায় নিম্নস্তরের ‎‎নেক্কার মু’মিনগণের (মুসলিম) চেয়ে সর্বোচ্চ স্তরের নেক্কার ‎মু’মিনগণের (মুহসিন) শাফায়াতের অনুমতি পাওয়া বেশি মুক্তিসংগত‎

আল-কুরআন

তথ্য-১.১‎‏.‏

অর্থ: কে আছে এমন যে (আল্লাহর) অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট শাফায়াত ‎করতে পারবে? (বাকারা : ২৫৫)‎

তথ্য-১.২‎

অর্থ: তাঁর (আল্লাহর) অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করার কেউ নেই। ‎

‎ (ইউনুস : ৩)‎

তথ্য-১.৩‎

অর্থ: এমন একদিন আসবে যে দিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা ‎বলতে পারবে না। (হুদ : ১০৫)‎

সম্মিলিত ব্যাখ্যা

আল-কুরআনের এই তথ্যগুলো থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, ‎পরকালে শাফায়াতকারীকে শাফায়াত করার জন্যে আল্লাহর নিকট থেকে ‎অনুমতি নিতে হবে। আর অনুমতি নেয়ার শর্ত রাখা থেকেই বুঝা যায়, ‎আল্লাহ সকলকে শাফায়াতের অনুমতি দিবেন না। ঈমান ও আমলের ‎ভিত্তিতে যাকে তিনি যোগ্য মনে করবেন, তাকেই শুধু তিনি শাফায়াত ‎করার অনুমতি দিবেন। কিন্তু কী হবে সেই যোগ্যতা তা এ আয়াতখানি ‎হতে বোঝা যায় না।‎

তথ্য-২‎

অর্থ: তাঁকে (আল্লাহকে) বাদ দিয়ে এই লোকেরা যাদের ডাকে তাদের ‎শাফায়াত করার কোন মতাই নেই। ঐ লোকেরা ব্যতীত যারা জ্ঞানের ‎ভিত্তিতে সত্যের স্যা দেয়। (যুখরুফ : ৮৬)‎

ব্যাখ্যা: আয়াতে কারীমায় আল্লাহ প্রথমে বলেছেন, পরকালে তিনি ব্যতীত ‎অন্য কারো শাফায়াত করার স্বাধীন মতা নেই। সবাইকে তাঁর অনুমতি ‎নিয়ে শাফায়াত করতে হবে। এরপর আল্লাহ্ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছেন যে, তিনি শাফায়াতের অনুমতি দিবেন তাদের যারা দুনিয়ায় ‎জ্ঞানের ভিত্তিতে সত্যের স্যা দিয়েছে। চিরসত্য জ্ঞান হচ্ছে কুরআন ও ‎সুন্নাহের জ্ঞান। তাই জ্ঞানের ভিত্তিতে সত্যের স্যা দেয়ার অর্থ হচ্ছে, ঐ ‎সত্যকে জেনে ও বুঝে নিয়ে (না জেনে না বুঝে নয়), বাস্তব কাজের ‎মাধ্যমে তার সত্যতার স্যা দেয়া।‎

তাহলে মহান আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, ‎পরকালে শাফায়াতের অনুমতি পাবে বা অনুমতি পাওয়ার যোগ্য হবে শুধু ‎‎সেই ব্যক্তিরা, যারা কুরআন ও সুন্নাহের বক্তব্যকে সকল দৃষ্টিকোণ থেকে ‎সঠিকভাবে জেনে ও বুঝে নিয়ে সে অনুযায়ী আমল করেছে। কারণ জানা ‎ও বুঝা না থাকলে অবশ্যই আমলে ভুল হবে বা আমল বাদ যাবে। এটা ‎নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন শর্ত। এখান থেকে বুঝা যায়, শাফায়াতের ‎অনুমতি খুব কম ব্যক্তি বা সত্তারাই পাবেন। আর সাধারণ জ্ঞানে বোঝা ‎যায় নবী-রাসূলগণ বাদে সেই ব্যক্তিরা হবে তারা যারা, ঈমান ও আমলের ‎ভিত্তিতে সর্বোচ্চ স্তরের নেককার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন।‎

‎ ‎

আল-হাদীস

‏. ‏অর্থ: উম্মুল আ’লা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কসম, ‎আল্লাহর কসম, (আখিরাতে) আমার সাথে কী আচরণ করা হবে, তা আমি ‎জানি না। আর এটাও আমি জানি না (সে দিন) তোমাদের সাথে কী ‎ব্যবহার করা হবে। অথচ আমি আল্লাহর রাসূল। (বুখারী)‎

ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) দু’বার আল্লাহর কসম খেয়ে অর্থাৎ অত্যন্ত গুরুত্ব ‎দিয়ে বলেছেন, পরকালে তাঁর সঙ্গে এবং সাহাবায়ে কিরামদের সঙ্গে কী ‎ধরনের আচরণ করা হবে তা রাসূল হওয়া সত্ত্বেও তিনি জানেন না। ‎

পরকালে আচরণ করার স্বাধীন মতা থাকবে শুধু মহান আল্লাহর। সে ‎দিন তিনি প্রধানত দু’ধরনের আচরণ বা কাজ করবেন। যথা-‎

ক. বিচার করে চূড়ান্ত পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া এবং ‎

খ. যোগ্য ব্যক্তিকে শাফায়াত করার অনুমতি দেয়া।‎

রাসূল (সা.) কে বিচার করে শাস্তি দেয়ার প্রশ্ন আসে না। তাই রাসূল ‎‎(সা.) যে বলেছেন, তাঁর সঙ্গে কী আচরণ করা হবে তা তিনি জানেন না এ ‎কথাটির একটিমাত্র অর্থ হবে। আর সে অর্থ হচ্ছে পরকালে শাফায়াতের ‎অনুমতি দেয়া না দেয়ার ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কী আচরণ করা হবে, তা ‎তিনি জানেন না। ‎

রাসূল (সা.) এর ন্যায় ব্যক্তি বলছেন, তিনি জানেন না তাঁকে ‎শাফায়াতের অনুমতি দেয়া হবে কিনা। এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় ‎নবী-রাসূল বাদে অন্য যারা শাফায়াতের অনুমতি পাবেন তাদের মুহসিন ‎মানের নেক্কার মু’মিন হতে হবে।‎

‎ কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির এ সকল তথ্যের আলোকে ‎‎স্পষ্টভাবে জানা যায় শাফায়াত করার জন্যে আল্লাহর নিকট থেকে অনুমতি ‎নিতে হবে। আর নবী-রাসূল বাদে শুধুমাত্র মুহসিন স্তরের নেক্কার ‎মু’মিনগণ শাফায়াত করার যোগ্য বলে বিবেচ্য হতে পারেন। ‎

শাফায়াতের মাধ্যমে যে ধরনের গুনাহ মাফ হবে না‎

বিবেক-বুদ্ধি‎

তথ্য-১‎

‎দয়াময় আল্লাহ কুরআন সুন্নাহের মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন ‎মৃত্যুর যুক্তিসঙ্গত সময় পূর্বে খালিস নিয়াতে তওবা করে পরিপূর্ণ ইসলামে ‎ফিরে আসলে তিনি মু’মিন ব্যক্তিদের (মানুষের হক ফাঁকি দেয়ার গুনাহ ‎ব্যতীত) সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। যে দুষ্ট মু’মিন আল্লাহর দেয়া এই ‎অপূর্ব সুযোগ গ্রহণ না করে কবীরা গুনাহসহ তথা সমাজে বড় অশান্তি ‎সৃষ্টিকারী অন্যায় কাজসহ মৃত্যুবরণ করল তার ঐ কবীরা গুনাহ পরকালে ‎শাফায়াতের মাধ্যমে মাফ হওয়ার মুক্তিসংগত (বিবেক-সম্মত) নয়। ‎

তথ্য-২‎

ইসলাম কবর পূজা, পীর পূজা ইত্যাদি বন্ধ করতে চায়। শাফায়াতের ‎মাধ্যমে পরকালে কবীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে তথ্যটি ঐ ধরনের কাজ ‎করার জন্যে মানুষকে দারুণভাবে উৎসাহিত করে। তাই শাফায়াতের ‎মাধ্যমে কবীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। এ ধরনের কথা ইসলামের তথ্য ‎হওয়ার কথা নয়। ‎

আল-কুরআন

তথ্য-১‎

অর্থ: অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা অজ্ঞতা বা ভুলের ‎কারণে গুনাহের কাজ করে বসে। অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে ‎‎নেয়। এরাই হল সে সব লোক, যাদের আল্লাহ মা করে দেন। আল্লাহ ‎সর্ববিষয় অভিজ্ঞ ও অতীব বুদ্ধিমান। আর এমন লোকদের জন্যে কোন ‎‎মা নেই, যারা অন্যায় কাজ করে যেতেই থাকে যতণ না তাদের মৃত্যু ‎উপস্থিত হয়। তখন তারা বলে, আমি এখন তওবা করছি। অনুরূপভাবে ‎তাদের জন্যেও কোন মা নেই যারা মৃত্যু পর্যন্ত কাফির থেকে যায়। ‎এদের জন্যে আমি কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। ‎

‎(নিসা : ১৭, ১৮)‎

ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এ আয়াত দু’খানির মাধ্যমে প্রথমে স্পষ্ট করে ‎জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি অবশ্যই সে ঈমানদারদের মা করে দিবেন ‎যারা অজ্ঞতা, ভুল বা ধোঁকায় পড়ে পাপ কাজ করে ফেলার সাথে সাথে ‎তওবা করবে অর্থাৎ খালিস নিয়াতে তাঁর নিকট মা চাইবে এবং ‎পরবর্তীতে সেই গুনাহের কাজ করা থেকে বিরত থাকবে।‎

এরপর আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, যে সকল মু’মিন ব্যক্তি মৃত্যুর আগ ‎পর্যন্ত অব্যাহতভাবে গুনাহের কাজ করে যাবে এবং মৃত্যু উপস্থিত হলে ‎তওবা করবে, তাদের তিনি মা করবেন না। ‎

আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মু’মিন ব্যক্তি মৃত্যুর ‎যুক্তিসংগত পূর্বে তাওবা করে মাফ করিয়ে না নিয়ে গেলে তিনি আর ‎তাদের গুনাহ মাফ করবেন না। তাই এ দু’খানি আয়াতের আলোকে ‎এতটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, পরকালে শাফায়াতের মাধ্যমে গুনাহ ‎মাফ হলেও তাতে কবীরা গুনাহ মাফ হবে না। ‎

তথ্য-২‎‏.‏

অর্থ: যে সকল গুনাহ হতে তোমাদের (মু’মিনদের) বিরত থাকতে বলা ‎হয়েছে তার মধ্যকার বড় (কবীরা) গুলো হতে যদি বিরত থাকতে পার ‎তবে তোমাদের অন্য গুনাহসমূহ আমি নিজ থেকে রহিত (মাফ) করে দিব ‎এবং তোমাদের সম্মানের স্থানে (বেহেশতে) প্রবেশ করাব। (নিসা : ৩১)‎

ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ঈমানদার ব্যক্তিরা ‎কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত থাকতে বা মুক্ত হতে পারলে তাদের অন্য সকল ‎‎গুনাহ তিনি নিজ থেকে কোন না কোনভাবে মাফ করে দিয়ে বেহেশত ‎দিয়ে দিবেন।‎

কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা বা মুক্ত হওয়ার উপায় হচ্ছে কবীরা ‎‎গুনাহ না করা বা কবীরা গুনাহ হয়ে গেলে মৃত্যুর যুক্তিসঙ্গত সময় পূর্বে ‎খালিস নিয়তে তওবা করে মাফ করিয়ে নেয়া। আর মৃত্যুর পর গুনাহ ‎মাফের উপায় হচ্ছে শাফায়াত বা আল্লাহর নিজ ইচ্ছা। ‎

তাহলে এ আয়াতে কারীমার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ‎জানিয়ে দিয়েছেন তওবার মাধ্যমে কবীরা গুনাহ মাফ করিয়ে নিয়ে যে ‎মু’মিন মৃত্যুবরণ করবে তার অন্য ধরনের গুনাহ থাকলে তা শাফায়াত বা ‎নিজ ইচ্ছায় মাফ করে দিয়ে তিনি তাদের চিরকালের জন্যে বেহেশত দিয়ে ‎দিবেন। তাই এ আয়াত থেকে জানা যায় শাফায়াতের মাধ্যমে কবীরা ‎‎গুনাহ মাফ হবে না। ‎

তথ্য-৩‎

অর্থ: আর পৃথিবী ও মহাকাশের সকল কিছুর উপর মতাবান মহান ‎আল্লাহ। যেন তিনি গুনাহকারীদের তাদের আমলের প্রতিফল দেন এবং ‎‎নেক আমলকারীদের দেন ভাল ফল। যারা বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ ‎‎থেকে বেঁচে থাকে তারা (কোন কারণে) ছোট-খাট গুনাহ করে থাকলে ‎নিশ্চয়ই তোমার রবের মা সুদূর বিস্তৃত। (নাজম : ৩১, ৩২)‎

ব্যাখ্যা: এ আয়াত দু’খানির মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে সকল ‎মু’মিন কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত হতে বা মুক্ত থাকতে পারবে তাদের অন্য ‎‎গুনাহ তিনি মাফ করে দিবেন। অর্থাৎ এ আয়াতের মাধ্যমেও আল্লাহ ‎জানিয়ে দিয়েছেন শাফায়াতের মাধ্যমে কবীরা গুনাহ তিনি মাফ করবেন না। ‎

তথ্য-৪‎‏.‏

অর্থ: তোমাদের যা কিছু দেয়া হয়েছে তা শুধু দুনিয়ার কয়েক দিনের ‎জন্যে। আর আল্লাহর নিকট যা রয়েছে (বেহেশতের সামগ্রী) তা অতীব ‎উত্তম ও চিরস্থায়ী। সেগুলো হচ্ছে ঐ লোকদের জন্যে যারা ঈমান এনেছে ‎এবং নিজেদের রবের উপর ভরসা রাখে। আর যারা কবীরা (বড়) ‎‎গুনাহসমূহ ও নির্লজ্জ কাজ থেকে বিরত থাকে এবং রাগ হলে মা করে ‎‎দেয়। ‎ ‏ ‏‎(শুরা : ৩৬, ৩৭) ‎

ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে এবং পরের আয়াতে (৩৮ নং) কিছু বড় ‎সওয়াব ও কিছু বড় (কবীরা) গুনাহ নাম ধরে উল্লেখ করেছেন এবং ‎বলেছেন বেহেশতের অধিকারী হবে শুধু সে মু’মিনরা যারা নাম উল্লেখ ‎করাগুলোসহ অন্য সকল কবীরা গুনাহ হতে মুক্ত থাকবে। অর্থাৎ কবীরা ‎‎গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিন বেহেশত পাবে না। তাই এখান থেকেও ‎‎স্পষ্টভাবে বোঝা যায় পরকালে শাফায়াত বা অন্যকোনভাবে কবীরা গুনাহ ‎মাফ হবে না।‎

তথ্য-৫‎

অর্থ: এবং যে (মু’মিন বা কাফির) কোন মু’মিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা ‎করবে তার শাস্তি দোযখ। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। তার উপর ‎আল্লাহর গযব ও অভিশাপ এবং তার জন্যে কঠিন শাস্তি নির্দিষ্ট করে রাখা ‎হয়েছে। ‎ ‎(নিসা : ৯৩)‎

ব্যাখ্যা: কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা কবীরা গুনাহ। তাই আল্লাহ এ ‎আয়াতের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যে সকল মু’মিন একটি ‎মাত্র কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণ করবে তাদের চিরকাল দোযখে থাকতে হবে। ‎অর্থাৎ শাফায়াত বা অন্যকোনভাবে পরকালে কবীরা গুনাহ মাফ হবে না। ‎

আল-হাদীস

তথ্য-১‎

অর্থ: হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা, আমার সম্পদ থেকে যা কিছু খুশী ‎চাও। (পরকালে) আল্লাহ নিকট জবাবদিহি করার ব্যাপারে তোমার কোনই ‎উপকার করার মতা আমার নেই। ‎ ‏ ‏‎(বুখারী, মুসলিম)‎

ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন অন্যকারো ‎ব্যাপারে তো দূরের কথা তার প্রাণপ্রিয় কন্যার গুনাহও পরকালে ‎শাফায়াতের মাধ্যমে মাফ করিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তিনি কিছুই করতে ‎পারবেন না। তাই এ হাদীসের আলোকে সহজে বলা যায়, সকল ধরনের ‎‎গুনাহ না হলেও কারো কবীরা গুনাহ যে রাসূল (সা.) শাফায়াতের মাধ্যমে ‎মাফ করতে পারবেন না তা নিশ্চিত। আর রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) ‎শাফায়াতের মাধ্যমে যে ধরনের গুনাহ মাফ করতে পারবেন না, অন্য ‎‎কোন ব্যক্তিও যে তা পারবেন না সেটিও নিশ্চিত করেই বলা যায়। ‎

তথ্য-২‎

অর্থ: আমল কর এবং নিজের সাধ্য মত সর্বাধিক সংখ্যক সঠিক কাজ ‎করার চেষ্টা কর এবং সত্যের কাছাকাছি থেক। জেনে রেখ, কোন ব্যক্তিকে ‎শুধু তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। ‎

সাহাবায়ে কিরামগণ রাসূল (সা.) এর বক্তব্য শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, ‎‎হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার আমলও কি পারবে না? তিনি উত্তর ‎দিলেন-‎

অর্থ: না, আমিও না, যদি না আমার রব তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে ‎আচ্ছাদিত করেন। ‎ ‎ (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)‎

ব্যাখ্যা: আমলের ব্যাপারে অত্যন্ত বাস্তব যে কথাটি রাসূল (সা.) ‎হাদীসখানির শেষে উল্লেখ করেছেন, সে কথাটি দিয়ে ব্যাখ্যা শুরু করলে ‎পুরো হাদীসখানি বুঝতে সহজ হবে।‎

হাদীসখানির শেষে রাসূল (সা.) বলেছেন, নিখুঁতভাবে সকল আমলে ‎সালেহ পালন করে পৃথিবীর কেউই এমনকি তিনিও জান্নাতে যেতে ‎পারবেন না। কারণ, সকলের জীবনেই কোন না কোন আমল করার ‎ব্যাপারে কিছু না কিছু খুঁৎ থাকবেই। আর ঐ খুঁৎ দুনিয়া ও আখিরাতে ‎‎কোন না কোনভাবে আল্লাহ মাফ করে দিলেই শুধু জান্নাত পাওয়া সম্ভব ‎হবে। ‎

তাই হাদীসটির প্রথমে রাসূল (সা.) বলেছেন, যত বেশি সংখ্যক ‎আমল ঈমানের দাবি অনুযায়ী যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব তা করার ‎‎চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। আর কোন আমল বাধ্য হয়ে ছাড়তে হলে ‎সত্যের কাছাকাছি থাকতে হবে। অর্থাৎ গুনাহ না হওয়ার স্তরের কাছাকাছি ‎‎থাকতে হবে। আমল ছাড়ার পর গুনাহ না হওয়ার স্তরের কাছাকাছি স্তর ‎হিসেবে ছগীরা গুনাহগারের স্তরকে অবশ্যই ধরা যাবে। মধ্যম গুনাহগারের ‎‎স্তরকে ধরা যেতেও পারে। কিন্তু কবীরা গুনাহগারের স্তরকে অবশ্যই ধরা ‎যাবে না।‎

তাই এ হাদীসখানির আলোকে বলা যায় পরকালে শাফায়াতের ‎মাধ্যমে ছগীরা গুনাহ অবশ্যই মাফ হবে, মধ্যম গুনাহ মাফ হতেও পারে ‎কিন্তু কবীরা গুনাহ অবশ্যই মাফ হবে না। ‎

‎ কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির এ সকল তথ্যের আলোকে সহজেই ‎বলা যায় পরকালে শাফায়াতের মাধ্যমে কবীরা গুনাহ মাফ হবে না।‎



শাফায়াতের মাধ্যমে দোযখ থেকে মুক্তি পেয়ে বেহেশত পাওয়া ‎যাবে কিনা?‎

বিবেক-বুদ্ধি‎

তথ্য-১‎

ঈমান আনা আমলটির একটি সরল অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ইলাহিত্বকে তথা ‎আল্লাহর সরকারকে স্বীকার করা। আর কিছুদিন বা কিছুকাল, অনন্তকালের ‎তুলনায় অতি নগণ্য পরিমাণ সময়, চাই সে কিছুকাল যত বড়ই হোক না ‎‎কেন। তাই মানুষের দুনিয়ার জীবনে কিছুকাল ও অনন্তকালের কাছাকাছি ‎বর্ণনা হবে-এক সেকেন্ড বা তারও কম সময় এবং সারা জীবন। সুতরাং ‎বড় গুনাহ করলেও ঈমান থাকলে কিছুকাল দোযখের শাস্তি ভোগ করে ‎অনন্তকালের জন্যে বেহেশত পাওয়া বিষয়টিকে দুনিয়ার যে কোন দেশের ‎অপরাধের জন্যে জেল খাটা এবং সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া বিষয়টির ‎সঙ্গে মেলালে যে তথ্যটি দাঁড়ায় তা হচ্ছে- উপস্থিত সরকারকে স্বীকার ‎করলে বড় অপরাধ করলেও এক সেকেন্ড বা তার চেয়ে কম সময় জেল ‎খাটার পর মুক্তি পেয়ে বাকি জীবন মহা শান্তিতে মুক্তভাবে কাটানোর ‎ব্যবস্থা থাকা। ‎

পৃথিবীর কোন দেশের আইন-কানুনে যদি ঐ ধরনের একটি কথা বা ‎তথ্য সত্যিই উপস্থিত থাকে আর তা সকলের জানা থাকে, তবে ‎নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ঐ দেশে বড় বড় অপরাধীর সংখ্যা অগণিত ‎হবে এবং সেখানকার সমাজ জীবনে শান্তির লেশমাত্রও থাকবে না। তথা ‎‎সেখানকার সমাজ জীবন ব্যর্থ হবে। ‎

‘একজন ঈমানদার ব্যক্তি বড় গুনাহগার অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও ‎পরকালে কিছু দিন দোযখে থেকে শাফায়াতের মাধ্যমে চিরকালের জন্যে ‎‎বেহেশতে যেতে পারবে’ এমন একটি কথা ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় ‎উপস্থিত থাকলে বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী তার অবশ্যম্ভাবী ফল যা হবে তা ‎হচ্ছে অসংখ্য ঈমানের দাবিদার ব্যক্তি ছোট-খাট বা না থাকার ন্যায় ‎ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহকারে ইসলামের বড় বড় ‎আমল ছেড়ে দিবে-বিশেষ করে যে আমলগুলো পালন করতে ব্যক্তিগত ‎ত্যাগ স্বীকার বা য়-তির সম্মুখীন হতে হয়। আর এর চূড়ান্ত ফল ‎‎দাঁড়াবে ‎

‎১.‎ মহান আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে ‎‎রেখে কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায় কাজের বাস্তবায়ন ও অন্যায় ‎কাজের প্রতিরোধের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা) বাস্তবায়ন ‎করা কল্পনার বিষয় হিসেবে থেকে যাবে। কারণ, তা করতে হলে ‎অসংখ্য মু’মিনকে বিপদসংকুল, কষ্টসাধ্য ও কঠিন ত্যাগ স্বীকার ‎লাগে, এমন অনেক কাজ করতে হবে। ‎

‎২.‎ মুসলিম সমাজ বা দেশ অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, অশান্তি ‎ইত্যাদিতে ভরে যাবে। ‎

তাই বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী সহজে বলা যায় শাফায়াতের মাধ্যমে দোযখ ‎‎থেকে বের হয়ে চিরকালের জন্যে বেহেশত পাওয়া যাবে এ ধরনের কথা ‎ইসলামের কথা হতে পারে না। ‎

তথ্য-২‎

কবীরা গুনাহ হচ্ছে বড় অপরাধ। ইসলামী জীবন বিধানে দুনিয়াতে বড় ‎অপরাধ করা মু’মিনদের স্থায়ী শাস্তি তথা মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা আছে। যেমন ‎অন্যায়ভাবে হত্যার শাস্তিস্বরূপ মু’মিনকে হত্যা করা, জেনার জন্যে ‎মু’মিনকে সংগেসার করা। তাই কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিনের ‎পরকালে স্থায়ী শাস্তি তথা স্থায়ী দোযখের শাস্তির ব্যবস্থা, ইসলাম সম্মত ‎হওয়ার কথা। অর্থাৎ শাফায়াতের মাধ্যমে দোযখ থেকে মুক্তি পাওয়ার ‎কথা নয়। ‎

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:১৪

তাহান বলেছেন: আল-কুরআন
তথ্য-১‎
অর্থ: তুমি কি তাদের অবস্থা দেখনি, যাদের কিতাবের কিয়দংশ দেয়া ‎হয়েছে? তাদেরকে যখন পরস্পরের মধ্যে (উপস্থিত থাকা দ্বন্দ্বের) ‎ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহর কিতাবের (আল-কুরআন) দিকে ডাকা হয়, ‎তখন একটি দল পাশ কেটে যায় এবং (কিতাবের ফয়সালা হতে) ‎অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা এরূপ করে এ কারণে যে, তারা বলে ‎‎(মনে করে) দোযখের আগুন আমাদের স্পর্শ করতে পারবে না। আর ‎করলেও তা অল্প কিছু দিনের বেশি হবে না। আসলে মনগড়া ধারণা-‎বিশ্বাস তাদেরকে তাদের দীন সম্বন্ধে বড়ই ভুলের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ‎
‏ ‏‎(আলে-ইমরান : ২৩-২৪)‎
ব্যাখ্যা: আয়াত দু’খানির ব্যাখ্যা বুঝতে হলে প্রথমে যে বিষয়টি বুঝে নিতে ‎হবে তা হচ্ছে-আল্লাহর পাঠানো কিতাবের সংখ্যা চারটি। যথা-তাওরাত, ‎যবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন। এ চারখানি কিতাবের মধ্যে পরিপূর্ণখানি হচ্ছে ‎আল-কুরআন। অর্থাৎ আল-কুরআনে ইসলামের সকল দিক ও বিষয় ‎জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পূর্বের তিনখানি কিতাবে ইসলাম পরিপূর্ণভাবে ‎উপস্থাপিত না হলেও সকল কিতাবে তিনটি বিষয়ে কোন পার্থক্য নেই। সে ‎তিনটি বিষয় হচ্ছে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত। অর্থাৎ আল্লাহর ‎একত্ববাদ, নবী-রাসূল ও পরকাল সম্বন্ধে সকল কিতাবের মূল বক্তব্য ‎একই। ইসলাম পালনের বিধি-বিধান অর্থাৎ শরীয়াতের বিধি-বিধান সম্বন্ধে ‎পূর্বের তিনটি কিতাব ও কুরআনের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে।‎
আলোচ্য আয়াত দু’খানিতে যাদেরকে আল্লাহর কিতাবের কিয়দংশ ‎‎দেয়া হয়েছে তাদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ কুরআন বাদে অন্য ‎কিতাবধারীদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ জানিয়েছেন ঐ ‎কিতাবধারীদের যখন তাদের মধ্যকার বিরোধের ফয়সালার জন্যে পরিপূর্ণ ‎কিতাব তথা আল-কুরআনের ফয়সালার দিকে ডাকা হয় তখন তাদের ‎একদল তা মেনে নেয় এবং এক দল অমান্য করে।‎
এরপর আল্লাহ জানিয়েছেন, যে দল কুরআনের ফয়সালা অমান্য করে ‎তারা কি ধারণা-বিশ্বাসের কারণে তা করে। আল্লাহ জানিয়েছেন যে, তারা ‎অমান্য করে এটি মনে করে যে, দোযখের আগুন তাদের স্পর্শ করতে ‎পারবে না। আর করলেও তা শুধু অল্প কিছু দিনের জন্যে হবে। ঐ ধারণা-‎বিশ্বাস সম্বন্ধে আল্লাহ ২৪ নং আয়াতের শেষে বলেছেন- ঐ ধারণা-বিশ্বাস ‎তাদের মনগড়া এবং সেটি তাদের দীন তথা ইসলাম সম্বন্ধে একটি চরম ‎ভুল ধারণা। ‎
একটু চিন্তা করলে সহজে বুঝা যায়, ঐ লোকদের ধারণা-বিশ্বাস ছিল, ‎‎যেহেতু তারা তৌহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস করে (অর্থাৎ তাদের ‎ঈমান আছে) এবং তারা পরিপূর্ণ ইসলাম তথা কুরআনিক ইসলামের কিছু ‎অনুসরণ করে, সেহেতু কুরআনের দু’একটি বিষয় বা ফয়সালা না মানলে ‎তাদের দোযখে যেতে হবে না। আর যেতে হলেও তা চিরস্থায়ী হবে না। ‎অল্প কিছু দিন শাস্তি ভোগ করে তারা ঈমান ও কিছু সৎ আমলের জন্যে ‎চিরকালের দরুন বেহেশত পেয়ে যাবে। ‎
কুরআনের ফয়সালা না মানা কবীরা গুনাহ। তাই আল্লাহ আয়াত ‎‎দু’খানির মাধ্যমে সকল মুসলমানকে জানিয়ে দিয়েছেন, ঈমান থাকলে ‎‎দু’একটি কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণ করলে কিছু দিন দোযখ ভোগ করে ‎শাফায়াত বা অন্য কোনভাবে চিরকালের জন্যে বেহেশত পাওয়া যাবে এ ‎তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। প্রকৃত তথ্যটি হচ্ছে (তওবার মাধ্যমে মাফ না করিয়ে) ‎একটিও কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণ করলে মু’মিনকে চিরকাল দোযখে ‎‎থাকতে হবে। ‎

তথ্য-২‎
অর্থ: এবং তারা বলে, দোযখের আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না। আর ‎করলেও তা অল্প কিছুদিনের বেশি হবে না। তাদের জিজ্ঞাসা কর, তোমরা ‎কি আল্লাহর নিকট থেকে (ঐরকম) কোন প্রতিশ্র“তি পেয়েছ যা তিনি ভঙ্গ ‎করবেন না? না তোমরা এমন কথা আল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দিচ্ছ, যা ‎‎(সত্য কিনা তা) তোমরা জান না? নিশ্চয়ই যারা গুনাহ করেছে এবং (মৃত্যু ‎পর্যন্ত) ঐ গুনাহ দ্বারা পরিবেষ্টিত থেকেছে তারা হবে দোযখের অধিবাসী ‎এবং চিরকাল তাদের সেখানে থাকতে হবে।‎‏ ‏‎(বাকার : ৮০, ৮১)‎
ব্যাখ্যা: ৬ নং তথ্যের আয়াত দু’খানির ন্যায় আলোচ্য ৮০ নং আয়াতের ‎প্রথমে কিতাবধারীরা পরকালে দোযখের শাস্তি ভোগ করার বিষয়ে একই ‎ধারণা-বিশ্বাসের ভিত্তিতে একই ধরনের কথা বলেছে। অর্থাৎ তারা বলেছে, ‎‎যেহেতু তাদের ঈমান তথা তৌহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস আছে ‎তাই আল-কুরআন তথা পরিপূর্ণ ইসলামের দু’একটি বিষয় পালন না ‎করলে তাদের দোযখে যেতে হবে না। আর যেতে হলেও তা হবে অল্প ‎কয়েক দিনের জন্যে। ‎
কিতাবধারীদের ঐ ধরনের বিশ্বাসের উত্তরে আল্লাহ এখানে প্রথমে ‎তাদের জিজ্ঞাসা করতে বলেছেন যে, তারা কি ঐ রকম কোন ওয়াদা তাঁর ‎নিকট থেকে পেয়েছে যা তিনি ভাঙবেন না নাকি তারা না জেনে একটি ‎ভুল বা মিথ্যা কথা আল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দিচ্ছে? অর্থাৎ আল্লাহ প্রশ্ন ‎করার মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, ঐ রকম কোন ওয়াদা তাঁর নাই। তাই ‎‎গুনাহের জন্যে কিছু দিন দোযখের শাস্তি ভোগ করে চিরন্তনভাবে ‎‎বেহেশতে যেতে পারার মত কোন ঘটনা পরকালে ঘটবে না।‎
এরপর ৮১ নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন ‎যারা গুনাহ করবে এবং গুনাহে পরিবেষ্টিত থেকে মৃত্যুবরণ করবে অর্থাৎ ‎মৃত্যুর যুক্তিসঙ্গত সময় পূর্বে তওবা করে ঐ গুনাহ মাফ করিয়ে না নিয়ে ‎মৃত্যুবরণ করবে, তাদের দোযখে যেতে হবে এবং চিরকাল সেখানে ‎‎থাকতে হবে। তাই পূর্বের তথ্যসমূহের আলোকে এ তথ্যখানি থেকেও ‎সহজে জানা ও বুঝা যায়, কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিন শাফায়াত ‎বা অন্য কোনভাবে দোযখ থেকে মুক্তি পাবে না। ‎
‎ কেউ কেউ বলতে চান বা বলে থাকেন যে আল-কুরআনের এ দু’টি ‎তথ্যের বক্তব্য অন্য নবীর উম্মতের জন্যে প্রযোজ্য, শেষ নবীর উম্মতের ‎জন্যে প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবী-রাসূল (সা.) গণের উম্মতরা ‎‎গুনাহগার মু’মিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তাদের চিরকাল দোযখে ‎‎থাকতে হবে। কিন্তু শেষ নবীর উম্মতের বেলায় তা হবে না। তারা ‎কিছুকাল দোযখে থেকে বের হয়ে এসে চিরকালের জন্যে বেহেশতে যেতে ‎পারবে। এ ব্যাখ্যা সত্য বলে ধরে নেয়ার অর্থ হচ্ছে- মহান আল্লাহর ‎বিচারের নীতিমালা ইনসাফভিত্তিক নয়। কারণ তিনি শুধু জন্মের সময়ের ‎ভিন্নতার জন্যে একই ধরনের অপরাধের জন্যে মানুষকে অপরিসীম ‎পার্থক্যসম্বলিত শাস্তি দিবেন (নাউযুবিল্লাহ)। ‎
তথ্য-৮‎
অর্থ: (হে নবী,) সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারে, যার উপর শাস্তির ‎ফয়সালা হয়ে গিয়েছে? তুমি কি তাকে বাঁচাতে পারবে যাকে আগুনে ‎‎(দোযখে) পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে? অবশ্য যারা তাদের রবকে ভয় করে চলে ‎তাদের জন্যে তৈরি রয়েছে প্রাসাদের উপর প্রাসাদ, যার তলদেশ দিয়ে ‎ঝর্নাধারা প্রবাহিত। এটা আল্লাহর ওয়াদা। আর আল্লাহ কখনও নিজের ‎কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। (যুমার : ১৯, ২০)‎
ব্যাখ্যা: কারো ওয়াদার (প্রতিশ্র“তির) একটি রূপ হচ্ছে তার দ্বারা নির্ধারিত ‎করা নীতিমালা। তাই কোন বিষয়ে আল্লাহর ওয়াদার একটি রূপ হচ্ছে ঐ ‎বিষয়ে আল্লাহর নির্ধারিত নীতিমালা। পূর্বে উল্লিখিত বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে ‎মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, মু’মিনদের পরকালে ‎‎দোযখ ও বেহেশতের শাস্তি ও পুরস্কার দেয়ার তার নির্ধারিত নীতিমালা ‎তথা ওয়াদা হচ্ছে যে মু’মিন (তওবার মাধ্যমে মাফ করিয়ে না নিয়ে) ‎একটিও কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণ করবে তাকে চিরকাল দোযখে থাকতে ‎হবে। আর যে মু’মিন কৃত কবীরা গুনাহ তওবার মাধ্যমে মাফ করিয়ে ‎নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে তিনি তাকে চিরকালের জন্যে বেহেশত দিয়ে ‎দিবেন। ‎
আলোচ্য প্রথম আয়াতখানিতে রাসূল (সা.)‎‏ ‏‎কে প্রশ্ন করার মাধ্যমে, ‎সকলকে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর নির্ধারিত নীতিমালা তথা ওয়াদা ‎অনুযায়ী বিচার করে যাকে তিনি দোযখে পাঠিয়ে দিয়েছেন তাকে রাসূল ‎‎(সা.) সহ কেউই উদ্ধার করতে পারবে না। ‎
সবশেষে ‘আল্লাহ কখনও নিজের কৃত ওয়াদা খেলাফ করেন না’ ‎কথাটির মাধ্যমে আল্লাহ পরিষ্কার করে দিয়েছেন, পরকালে শাস্তি ও ‎পুরস্কার দেয়ার ব্যাপারে তাঁর কৃত ওয়াদা অর্থাৎ তাঁর তৈরি করা ও জানিয়ে ‎‎দেয়া নীতিমালা তিনি ভঙ্গ করবেন না। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে এটি নিশ্চিত ‎করেছেন যে কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিন চিরকাল দোযখে এবং ‎কবীরা গুনাহ ছাড়া মৃত্যুবরণকারী মু’মিন চিরকাল বেহেশতে থাকবে। আর ‎তাঁর নির্ধারিত এই নীতিমালা বা তাঁর করা এ ওয়াদা কোনক্রমেই লংঘিত ‎বা পরিবর্তিত হবে না। ‎
তথ্য-৪‎
পূর্বে উল্লিখিত আল-কুরআনের বেশ কয়েকটি তথ্যের মধ্যে আমরা ‎‎স্পষ্টভাবে জেনেছি যে পরকালে মহান আল্লাহ কবীরা গুনাহসহ ‎মৃত্যুবরণকারী মু’মিনদের কোনভাবে মাফ করবেন না। তাই ঐ সকল ‎আয়াতের ভিত্তিতেও বলা যায় যে পরকালে কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী ‎মু’মিনদের দোযখে যেতে হবে এবং চিরকাল সেখানে থাকতে হবে। ‎শাফায়াত বা অন্য কোন উপায়ে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে না। ‎

আল-হাদীস
তথ্য-১‎
অর্থ: সাহল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)‎‏ ‏এর সঙ্গে থেকে যে ‎সমস্ত মুসলমান যুদ্ধ করেছেন, তাদের মাঝে একজন ছিল তীব্র ‎আক্রমণকারী। নবী করীম (সা.) তার দিকে নজর করে বললেন: যে ব্যক্তি ‎‎কোন জাহান্নামীকে দেখতে ইচ্ছা করে সে যেন এই লোকটার দিকে নজর ‎করে। উপস্থিত লোকদের ভিতর থেকে এক ব্যক্তি সেই লোকটির অনুসরণ ‎করল। আর সে তখন প্রচণ্ডভাবে মুশরিকদের সঙ্গে মুকাবিলা করছিল। ‎এক পর্যায়ে সে আহত হয়ে তাড়াতাড়ি মৃত্যুবরণ করতে চাইল। এ জন্যে ‎‎সে তরবারীর তীক্ষ্ম দিকটি তার বুকের উপর দাবিয়ে দিল। দু’কাঁধের মাঝ ‎দিয়ে তরবারীটি ব ভেদ করল। এটি দেখে লোকটি নবী (সা.) এর ‎কাছে দৌড়ে এসে বলল, আমি স্যা দিচ্ছি সত্যিই আপনি আল্লাহর ‎রাসূল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী হল? লোকটি বলল, আপনি অমুক ‎ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছিলেন: ‘যে ব্যক্তি কোন জাহান্নামী লোক দেখতে চায় ‎‎সে যেন এ লোকটাকে দেখে নেয়।’ অথচ লোকটি অন্যান্য মুসলমানের ‎তুলনায় অধিক আক্রমণকারী ছিল। সুতরাং আমার ধারণা হয়েছিল, এ ‎‎লোকটির মৃত্যু এহেন অবস্থায় হবে না। অতঃপর সে আঘাতপ্রাপ্ত হল, ‎তাড়াতাড়ি মৃত্যু কামনা করল এবং আত্মহত্যা করে বসল। নবী (সা.) এ ‎কথা শুনে বললেন, নিশ্চয় কোন বান্দা জাহান্নামীদের আমল করে মূলত সে ‎জান্নাতী। আর কোন বান্দা জান্নাতী লোকের আমল করে মূলত সে ‎জাহান্নামী। নিশ্চয়ই আমলের ভাল-মন্দ নির্ভর করে তার শেষ আমলের ‎উপর। ‎‏ ‏‎(বুখারী) ‎
ব্যাখ্যা: আত্মহত্যা করা একটি কবীরা গুনাহ। হাদীসখানিতে দেখা যায়, ‎রাসূল (সা.) এর একজন সাহাবী কাফির-মুশরিকদের সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে যুদ্ধ ‎করেছে এবং যুদ্ধে যখম হয়ে যন্ত্রণা থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়ার জন্যে ‎আত্মহত্যা করেছে অর্থাৎ একটি কবীরা গুনাহ করেছে। আর ঐ একটি ‎কবীরা গুনাহের জন্যে তার ঠিকানা জাহান্নাম বলে রাসূল (সা.) স্পষ্টভাবে ‎জানিয়ে দিয়েছেন। তাই হাদীসখানি থেকে প্রত্যভাবে জানা ও বুঝা যায়, ‎একটিও কবীরা গুনাহ করলে ঈমানদার ব্যক্তিকে দোযখে যেতে হবে (যদি ‎মৃত্যুর পূর্বে তওবা করে তা মাফ করিয়ে না নেয়)। ‎

তথ্য-২‎
অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) রাসূল (সা.)‎‏ ‏এর নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেন, ‎জান্নাতবাসীরা জান্নাতে এবং দোযখবাসীরা দোযখে প্রবেশ করবে। তখন ‎একজন ঘোষক উভয়ের প্রতি ঘোষণা করবেন, হে জাহান্নামবাসী, ‎‎তোমাদের আর মৃত্যু হবে না। হে জান্নাতবাসী, তোমাদেরও আর মৃত্যু ‎হবে না। যে যেখানে আছ চিরদিন সেখানে থাকবে। ‎
‎(বুখারী, মুসলিম, তাফসীরে মাযহারী সূরা হুদের ১০৭ নং আয়াতের ‎তাফসীর)‎
তথ্য-৩‎‏.‏
অর্থ: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‎‎(মানুষকে বেহেশত ও দোযখে প্রবেশ করানোর পর) ঘোষণা করা হবে, ‎‎হে জান্নাতবাসী, চিরদিন থাক মৃত্যুহীনভাবে। হে জাহান্নামবাসী, চিরদিন ‎‎থাক মৃত্যুহীনভাবে। ‎
‎(বুখারী, তাফসীরে মাযহারী সূরা হুদের ১০৭ নং আয়াতের তাফসীর) ‎
তথ্য-৪‎
অর্থ: ছাগলের সুরতে মৃত্যুকে হাজির করা হবে। অতঃপর দোযখ ও ‎‎বেহেশতের মধ্যবর্তী স্থানে তাকে জবাই করা হবে। তখন ঘোষণা করা ‎হবে, হে বেহেশতবাসী, চিরদিন এখানে থাকবে, তোমাদের আর মৃত্যু হবে ‎না এবং হে দোযখবাসী, চিরদিন এখানে থাকবে, তোমাদের আর মৃত্যু ‎হবে না। ‎
‎(বুখারী, মুসলিম, তাফসীরে ইবনে কাসীর সূরা হুদের ১০৮ নং আয়াতের ‎তাফসীর) ‎
তথ্য-৫‎
অর্থ: মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) তাঁকে ইয়েমেনে ‎‎প্রেরণ করলে তিনি সেখানে পৌঁছে জনতাকে বলেন, হে লোকেরা, আমি ‎‎তোমাদের কাছে রাসূল (সা.) এর দূত হিসেবে এসেছি। তিনি তোমাদের ‎এ খবর জানাতে বলেছেন যে, সকলকে আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে ‎হবে। গন্তব্যস্থান হবে জান্নাত বা জাহান্নাম। উভয়টিতে অবস্থান হবে ‎চিরস্থায়ী। মৃত্যু নেই সেখানে। নেই স্থানান্তর। সেখানকার অবস্থান হবে ‎দৈহিক ও মৃত্যুহীন। ‎
‎(তিবরানী, হাকেম, তাফসীরে মাযহারী সূরা হুদের ১০৭ নং আয়াতের ‎তাফসীর)‎
তথ্য-৬‎
অর্থ: হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‎‎দোযখবাসীদের যদি বলা হয়, গুনাহের অংশ পরিমাণ সময় তোমরা ‎‎দোযখে থাকবে তবে তারা খুব খুশি হবে। আবার জান্নাতবাসীদের যদি ‎বলা হয় সওয়াবের অংশ পরিমাণ সময় তোমরা জান্নাতে থাকবে তবে ‎তারা ভয়ানক দুঃখিত হবে। কিন্তু তাদের অবস্থান হবে চিরস্থায়ী। ‎‎(তিবরানী, আবু নাঈম, মারদুইয়া)‎
‎ এ সকল হাদীস থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় মু’মিন ও কাফির ‎যাকেই আল্লাহ শাস্তি দিয়ে দোযখে পাঠিয়ে দিবেন তাকে চিরকাল সেখানে ‎‎থাকতে হবে। শাফায়াত বা অন্যকোন উপায়ে সেখান থেকে বের হয়ে ‎আসা যাবে না। ‎
হাদীসকখানির বক্তব্য আর এ বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য একই। তাই ‎হাদীসকখানি অত্যন্ত শক্তিশালী হাদীস। অর্থাৎ উসূলে হাদীস অনুযায়ী এ ‎হাদীসকটির বিপরীত বক্তব্যধারী যেকোন হাদীসকে এ হাদীসকখানি রহিত ‎করে দিবে। ‎
শাফায়াত ব্যতীত কেউ বেহেশতে যেতে পারবে কিনা
পূর্বেই কুরআন ও হাদীসের তথ্যের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিতভাবে জেনেছি ‎পরকালে নবী-রাসূল (সা.) গণসহ কিছু মানুষ শাফায়াতের অনুমতি পাবেন ‎তথা শাফায়াত করতে পারবেন। ‎
যারা শাফায়াত করতে পারার মর্যাদা পাবেন তারা প্রথমে অন্য কারো ‎শাফায়াতের মাধ্যমে গুনাহ মুক্ত হয়েছেন এটি একটি অযৌক্তিক কথা। ‎তাই বিবেক-বুদ্ধির আলোকে যে ব্যক্তিরা পরকালে শাফায়াত করার ‎অনুমতি পাবেন, তারা অবশ্যই শাফায়াত ছাড়া বেহেশতে যাবেন। ঐ ‎ব্যক্তিরা হলেন মুহসিন স্তরের নেক্কার মু’মিনগণ। তবে যে সকল মু’মিন ‎সকল গুনাহ জীবিত অবস্থায় মাফ করিয়ে নিয়ে নেক্কার মু’মিন হিসেবে ‎মৃত্যুবরণ করতে পারবেন তারা সকলেই শাফায়াত ছাড়া বেহেশতে যাবেন ‎সাধারণ বিবেক তাই বলে। ‎
বাকি থাকে ঐ হাদীসখানির কথা (পৃষ্ঠা নং ১ যেখানে রাসূল (সা.) ‎বলেছেন, অন্য কেউ তো দূরের কথা তিনি নিজেও আল্লাহর রহমত ছাড়া ‎‎বেহেশতে যেতে পারবেন না। এ কথাটির অর্থ এই নয় যে, পরকালে ‎শাফায়াতের মাধ্যমে গুনাহ মাফ করিয়ে নিয়ে কেউ বেহেশতে যেতে ‎পারবে না। বরং এ কথার অর্থ হবে দয়াময় আল্লাহ গুনাহ মাফের যে ‎নীতিমালা জানিয়ে দিয়েছেন সে নীতিমালার বাইরে কেউ বেহেশতে যেতে ‎পারবে না। অর্থাৎ পরকালে বেহেশত পেতে হলে তাওবার মাধ্যমে কবীরা ‎‎গুনাহ মাফ করিয়ে নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে। ‎
শাফায়াতের ব্যবস্থা রাখার দুনিয়ার কল্যাণ
এ পর্যন্তকার আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, শাফায়াতের ‎একটি ব্যবস্থা পরকালে থাকবে। ঐ শাফায়াত ব্যবস্থা সম্বন্ধে আমরা আরো ‎যা জেনেছি তা হচ্ছে-‎
‎১. শাফায়াতকারীকে প্রথমে আল্লাহর অনুমতি পেতে হবে।‎
‎২. শাফায়াত কবুল করে কারো গুনাহ বা শাস্তি মাফ করা না করা ‎সম্পূর্ণ আল্লাহর ইখতিয়ারে থাকবে।‎
‎৩. কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিনদের শাফায়াতের মাধ্যমে ‎আল্লাহ মাফ করবেন না। ‎
শাফায়াত সম্বন্ধে কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত তথ্যসমূহ থেকে জানা ‎ও বুঝা যায় যে, শাফায়াতের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হওয়ার সকল বিষয় তথা ‎শাফায়াত কে করতে পারবে, শাফায়াত কবুল হওয়া না হওয়া ইত্যাদি ‎সবই মহান আল্লাহর ইখতিয়ারাধীন বা নিয়ন্ত্রণে। তাহলে তিনি নিজেই ‎‎তো ঐ গুনাহগুলো মাফ করে দিতে পারতেন কিন্তু তা না করে তিনি ‎শাফায়াতের মাধ্যমে পরকালে গুনাহ মাফ করানোর একটি ব্যবস্থা ‎‎রেখেছেন। অন্য কথায় বলা যায়, মাফ করে দেয়া মতাটার সামান্য কিছু ‎অংশ মানুষ, কুরআন ও ফেরেশতাদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। কেন তিনি ‎এমন করলেন, তা সত্যই একটি চিন্তার বিষয়, তাই না?‎
আল্লাহর করা বা আল্লাহর দেয়া কোন নিয়ম-কানুন বা ব্যবস্থা তিনি ‎‎কেন করেছেন এ কথাটা বুঝতে হলে সব সময় মনে রাখতে হবে, আল্লাহ ‎‎যেখানেই যে ব্যবস্থা করেছেন, তার সবই মানুষের দুনিয়ার জীবনকে সুখী, ‎সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল করার জন্যে তথা তাঁর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ‎হওয়ার সুবিধার কথা সামনে রেখেই করেছেন। এ কথাটি সামনে রেখে ‎শাফায়াতের ব্যাপারে মানুষকে কিছু নিয়ন্ত্রিত মতা দেয়ার পেছনে যে ‎প্রধান কারণ বিদ্যমান বলে মনে হয়, তা হচ্ছে তাঁর প্রিয় বান্দাদের ‎শাফায়াত করার অধিকার দেয়ার মাধ্যমে পরকালেও তাদের মর্যাদা, ‎সম্মান বা কিছু নিয়ন্ত্রিত মতা দেয়া। সম্মান, মর্যাদা বা মতা সকল ‎মানুষই পেতে চায়। তাই পরকালে মুহসিন পর্যায়ের নেককার মু’মিনদের ‎শাফায়াতের অধিকার দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ সকল মানুষকে উৎসাহ ‎দিয়েছেন যেন তারা সকলে ঐ সম্মান, মর্যাদা ও মতা পাওয়ার জন্যে ঐ ‎ধরনের নেককার মু’মিন হওয়ার চেষ্টা করে বা প্রতিযোগিতা করে। আর ‎তা হলে মানুষের দুনিয়ার জীবন সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল হবে। অর্থাৎ ‎আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে বা বাস্তবায়ন করা সহজ ‎হবে। ‎
শাফায়াতের দ্বারা আখিরাতের কল্যাণ
আমরা জেনেছি যে ইসলামে গুনাহ তিন ধরনের কবীরা, মধ্যম ও ‎সগীরা। আমরা আরো জেনেছি যে কবীরা গুনাহ মৃত্যুর যুক্তিসংগত সময় ‎পূর্বে কৃত তাওবা ব্যতীত মাফ হয় না। আর ছগীরা গুনাহ যেহেতু তাওবা ‎এবং নেক আমল তথা নামাজ, রোজা, ওজু, গোসল, সত্যকথা বলা, ‎সুবহানাল্লাহ বলা ইত্যাদি দ্বারা মাফ হয় তাই একজন মু’মিনের আমল ‎নামায় ছগীরা গুনাহ থাকার সম্ভাবনা কম। অতএব পরকালে শাফায়াত ‎দ্বারা ছগীরা গুনাহ মাফ হলেও তা প্রধানত মধ্যম গুনাহ মাফ হওয়ার কাজে ‎আসবে। অর্থাৎ শাফায়াতের পরকালীন প্রধান কল্যাণ হবে মু’মিনের মধ্যম ‎ধরনের গুনাহ মাফ হওয়া। ‎
হাদীস থেকে শাফায়াতের মাধ্যমে পরকালে মানুষের আর যে উপকার ‎হবে বলে জানা যায় তা হচ্ছে-‎
ক. বেহেশত পাওয়া ব্যক্তিদের স্তরের পরিবর্তন হওয়া। অর্থাৎ নিম্ন ‎‎স্তরের বেহেশত থেকে শাফায়াতের মাধ্যমে উচ্চ স্তরের বেহেশত ‎পাওয়া সম্ভব হবে।‎
খ. বেশি আযাবের দোযখ হতে মানুষের জন্যে কল্যাণমূলক কাজ ‎করেছে এমন দোযখীদের শাফায়াতের মাধ্যমে অপোকৃত কম ‎আযাবের দোযখে নেয়া সম্ভব হবে। যেমন একটি হাদীস থেকে ‎জানা যায়, রাসূল (সা.) এর শাফায়াত কবুল করে আল্লাহ তাঁর ‎চাচা তালিবকে বেশি শাস্তির দোযখ থেকে কম শাস্তির দোযখে ‎নিয়ে আসার অনুমতি দিবেন।‎
শাফায়াত সম্বন্ধে ব্যাপকভাবে ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার কারণসমূহ ‎এবং তার পর্যালোচনা‎
বর্তমান মুসলিম বিশ্বে শাফায়াত সম্বন্ধে ভুল তথা কুরআন, সুন্নাহ ও ‎বিবেক-বিরুদ্ধ যে ধারণা ব্যাপকভাবে সৃষ্টি ও চালু হয়েছে তার প্রধান ‎তিনটি কারণ হচ্ছে-‎
ক. দুনিয়ার বিচারের মেয়াদি শাস্তির ব্যবস্থা,‎
খ. আল-কুরআনের কয়েকটি আয়াতের অসতর্ক ব্যাখ্যা এবং‎
গ. কিছু বর্ণনা যা রাসূল (সা.) এর বক্তব্য বলে চালু থাকা।‎
চলুন, এখন এ তিনটি বিষয় পর্যালোচনা করা যাক‎

ক. দুনিয়ার বিচারের মেয়াদি শাস্তির ব্যবস্থা ‎
ইসলামে দুনিয়ার বিচারের অপরাধের জন্যে মেয়াদি তথা ১, ২, ৫, ১০ ‎ইত্যাদি দিন, মাস বা বছরের শাস্তি আছে। তাই মনে করা হয় পরকালের ‎বিচারেও মেয়াদি শাস্তি থাকবে। অর্থাৎ পরকালে মানুষ কৃত গুনাহের শাস্তি ‎‎ভোগ করার পর কৃত সওয়াবের পুরস্কার স্বরূপ অনন্তকালের জন্যে ‎শাফায়াত বা অন্য কোন উপায়ে বেহেশত পেয়ে যাবে। ‎
এ দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃত বিষয়টি হচ্ছে-দুনিয়ার মু’মিন অপরাধীদের ‎জন্যে মেয়াদি ও স্থায়ী উভয় শাস্তিই ইসলামী আইনে আছে। যেমন কোন ‎মুমিন কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে তাকেও হত্যা করতে হবে। জেনা ‎কারীকে প্রস্তর নিপে করে হত্যা করতে হবে। তাই পরকালেও মু’মিনের ‎জন্যে স্থায়ী শাস্তি তথা স্থায়ী দোযখের শাস্তি হবে সেটাই স্বাভাবিক। দুনিয়ার ‎‎ছোট অপরাধের জন্যে অস্থায়ী শাস্তি হয় এবং অতিবড় অপরাধের জন্যে ‎‎স্থায়ী শাস্তি হয়। মহান আল্লাহ্ অতীব দয়ালু, তাই তিনি পরকালে শুধুমাত্র ‎অতিবড় (কবীরা) গুনাহের জন্যে স্থায়ীভাবে দোযখের শাস্তি দিবেন। আর ‎অন্য গুনাহের জন্যে তিনি কাউকে দোযখের শাস্তিই দিবেন না। ‎
খ. আল-কুরআনের কয়েকটি আয়াতের অসতর্ক ব্যাখ্যা ‎
আল-কুরআনের যে কোন আয়াতের ব্যাখ্যা (তাফসীর) করার একটি ‎মূল নীতি হচ্ছে- প্রতিটি আয়াতের ব্যাখ্যা একই বিষয় বর্ণনাকারী অন্য ‎সকল আয়াতের ব্যাখ্যার সম্পূরক বা পরিপূরক হওয়া, বিরোধী না হওয়া। ‎এবং অস্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা স্পষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যার সাথে সামঞ্জস্যশীল ‎হতে হবে। কারণ, সূরা নিসার ৮২ নং আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ ‎পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন আল-কুরআনে পরস্পর বিরোধী কোন ‎বক্তব্য নেই। তাফসীরের এ গুরুত্বপূর্ণ নীতিটি সামনে রেখে চলুন এখন ‎‎সেই ক’টি আয়াতকে পর্যালোচনা করা যাক যার অসতর্ক ব্যাখ্যা শাফায়াত ‎সম্বন্ধে মুসলমান সমাজে ভুল ধারণা সৃষ্টি ও চালু হওয়ার পেছনে যথেষ্ট ‎ভূমিকা রেখেছে-‎
তথ্য-১‎
অর্থ: (হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের আত্মার ‎ওপর যুলুম (অত্যাচার) করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো ‎না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন বা করবেন। তিনি তো ‎‎মাশীল ও দয়ালু। ফিরে এস তোমাদের রবের দিকে এবং পরিপূর্ণরূপে ‎তাঁর অনুগত হয়ে যাও তোমাদের উপর আযাব আসার পূর্বে। তখন ‎‎তোমরা কোন দিক থেকে সাহায্য পাবে না। (যুমার : ৫৩, ৫৪)‎
ব্যাখ্যা: আল-কুরআনে নিজের আত্মার উপর যুলুম করা বান্দাদের বুঝাতে ‎আল্লাহ গুনাহ্গার মু’মিন বান্দাদের বুঝিয়েছেন। কারণ, তারা কোন ‎‎গুনাহের কাজ করতে বাধ্য হলে মনে অনুশোচনা বা দুঃখ নিয়ে অর্থাৎ ‎মনের উপর যুলুম করে তা করে। কেউ কেউ ৫৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ‎করে তাই বলেছেন বা বলেন যে, আল্লাহ্ এখানে গুনাহগার মু’মিনদের ‎রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন এবং তাদের সকল গুনাহ মাফ ‎করে দিবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ্ গুনাহগার মু’মিন ‎হিসেবে মৃত্যুবরণকারী প্রত্যেককে শাফায়াতের মাধ্যমে বা নিজ ইচ্ছায় ‎সকল গুনাহ মাফ করে দিয়ে প্রথমেই বেহেশতে পাঠিয়ে দিবেন অথবা ‎‎গুনাহের জন্যে কিছুকাল দোযখের শাস্তি দিয়ে তারপর চিরকালের জন্যে ‎‎বেহেশতে পাঠিয়ে দিবেন। কিন্তু ৫৩ নং আয়াতের এ ব্যাখ্যা মোটেই ‎গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, কারণ‎
‎ পরের আয়াতে (৫৪ নং আয়াত) আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ঐ ব্যক্তিদের ‎আল্লাহর দিকে ফিরে এসে পরিপূর্ণরূপে তাঁর অনুগত হয়ে যেতে ‎বলেছেন এবং তা করতে বলেছেন তাদের উপর শাস্তি আসার পূর্বে। ‎তাই সহজেই বুঝা যায়, ৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ যে গুনাহ মাফের ‎আশা থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন, সেখানে তিনি তওবার ‎মাধ্যমে গুনাহ মাফ হওয়ার কথা বলেছেন, শাফায়াতের মাধ্যমে নয়। ‎অর্থাৎ দুনিয়ায় গুনাহ মাফের কথা বলেছেন, পরকালের নয়। আর ‎আল-কুরআনের অন্য অনেক জায়গায় (নিসা : ১৭, ১৮) আল্লাহ ‎পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন-তওবার মাধ্যমে, মানুষের হক নষ্ট ‎করার গুনাহ ছাড়া অন্য সকল গুনাহ (কুফরী ও শিরকসহ) আল্লাহ ‎মাফ করে দেন। সবশেষে আল্লাহ বলেছেন, শাস্তি এসে গেলে তারা ‎আর কোন দিক থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পাবে না। অর্থাৎ দুনিয়ায় ‎বা পরকালে আল্লাহর শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেলে সেখান ‎‎থেকে তওবা বা শাফায়াত কোনটি দ্বারাই তারা বাঁচতে পারবে না। ‎
‎ কবীরা গুনাহগার মু’মিন হিসেবে মৃত্যুবরণকারীদের চিরকালের জন্যে ‎‎দোযখের শাস্তি দেয়া হবে, এ কথা কুরআনের অনেক জায়গায় (পূর্বে ‎উল্লেখ করা হয়েছে) আল্লাহ প্রত্য বা পরোভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছেন। ‎
তাই সকল গুনাহগার মু’মিন পরকালে শাফায়াতের মাধ্যমে গুনাহ থেকে ‎মাফ পেয়ে যাবেন এ ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ, তা অন্য ‎আয়াতের বক্তব্যের বিরোধী হবে।‎
তথ্য-২‎
অর্থ: অতঃপর অণু পরিমাণ সৎ কাজও যে করেছে, সে তা দেখে নেবে ‎এবং অণু পরিমাণ গুনাহের কাজও যে করেছে, সে তা দেখে নেবে। ‎
‎(যিলযাল : ৭,৮)‎
অসতর্ক ব্যাখ্যা: কিছু কিছু তাফসীরকারক এ আয়াত দু’খানির অর্থ ‎লিখেছেন, অণু পরিমাণ সৎ কাজ কেউ করে থাকলে পরকালে সে তার ‎ফল পাবে এবং অণু পরিমাণ অসৎ কাজ কেউ করলে সেও পরকালে তার ‎ফল পাবে। আর এ ব্যাখ্যা থেকে অনেকে বুঝে নিয়েছেন যার ঈমান আছে ‎তার কিছু সৎ কাজ এবং কিছু গুনাহের কাজ করা থাকলে গুনাহের জন্যে ‎কিছুকাল দোযখের শাস্তি ভোগ করে শাফায়াত বা আল্লাহর নিজ ইচ্ছায় ‎অনন্তকালের জন্যে বেহেশত পেয়ে যাবে।‎
আয়াত দু’খানির এ ধরনের ব্যাখ্যা গ্রহণ করলে কোন মানুষই ‎কিছুকাল দোযখের শাস্তি ভোগ না করে বেহেশতে যেতে পারবে না। ‎কারণ, জীবনে বিন্দু পরিমাণ গুনাহ করেনি এমন লোক (নবী-রাসূল বাদে) ‎খুঁজে পাওয়া যাবে কি? ‎
প্রকৃত ব্যাখ্যা: আয়াতদুখানিতে বিন্দু পরিমাণ সৎকাজ এবং বিন্দু পরিমাণ ‎‎গুনাহের কাজ দেখানোর কথা বলা হয়েছে পুরস্কার বা শাস্তির কথা বলা ‎হয়নি। ভিডিও ক্যামেরা আবিষ্কার হওয়ার পূর্বপর্যন্ত কাজ রেকর্ড করে ‎‎রেখে পরে আবার দেখান (জব-ঢ়ষধু)‎‏ ‏যায় এ জ্ঞান মানুষের ছিল না। তাই ‎পূর্বের তাফসীরকারকগণ ঐধরনের ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু আজ আমরা ‎সহজে বুঝতে পারি আল্লাহ এখানে বলেছেন পরকালে মানুষকে তাদের ‎কৃতকর্মের ভিডিও রের্কড দেখান হবে। ‎
তথ্য-৩‎‏.‏
অর্থ: সে দিন যখন আসবে তখন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলতে ‎পারবে না। অতঃপর কিছু লোক হবে হতভাগ্য এবং কিছু লোক হবে ‎‎সৌভাগ্যবান। যারা হতভাগ্য হবে তারা দোযখে যাবে, সেখানে তারা ‎আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে। তারা সেখানে অবস্থান করবে যতদিন ‎আসমান ও জমিন বর্তমান থাকবে। অবশ্য তোমার রব (কারো ব্যাপারে) ‎অন্যরকম চাইলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই তোমার রব যা ইচ্ছা তা করবার ‎অধিকার রাখেন। ‎
আর যারা সৌভাগ্যবান তারা বেহেশতে যাবে এবং সেখানেই তারা ‎অবস্থান করবে, যতদিন পর্যন্ত আসমান ও জমিন বর্তমান থাকবে। তবে ‎‎তোমার রব (কারো ব্যাপারে) অন্যরকম চাইলে ভিন্ন কথা। তারা এমন ‎প্রতিদান লাভ করবে, যার ধারাবাহিকতা ছিন্ন হবে না। (হুদ : ১০৫-১০৮)‎
অসতর্ক ব্যাখ্যা এ আয়াতে কারীমা ক’টি বিশেষ করে ১০৭ ও ১০৮ নং ‎আয়াত দু’খানির অসতর্ক ব্যাখ্যাও মুসলমান সমাজে, গুনাহগার মু’মিনরা ‎কিছু দিন দোযখের শাস্তি ভোগ করে চিরকালের জন্যে বেহেশতে যেতে ‎পারবে- বর্ণনাসম্বলিত কথাটি চালু হওয়ার পেছনে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। ‎তাই চলুন এ আয়াত ক’খানির ব্যাখ্যা ভালভাবে পর্যালোচনা করা যাক-‎
আয়াত ক’খানির ব্যাখ্যা করতে যেয়ে সর্বণ মনে রাখতে হবে, ১০৫ ‎নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আয়াত ‎ক’খানিতে উপস্থাপিত বিষয়টি বাস্তবে সংঘটিত হবে কিয়ামতে বিচার-‎ফয়সালা হওয়া দিনটির সময়ের মধ্যে।‎
‎১০৫ নং আয়াতখানিতে মহান আল্লাহ শেষ বিচারের দিন সকল মানুষ ‎নিম্নের দু’ভাগে ভাগ হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন ‎
ক. হতভাগ্য মানুষ এবং ‎
খ. সৌভাগ্যবান মানুষ।‎
তারপর ৬ ও ৭ নং আয়াতে বলেছেন, যারা হতভাগ্য তারা দোযখে ‎যাবে এবং চিরকাল তথায় থাকবে। তবে আল্লাহ কারো ব্যাপারে অন্য ‎রকম ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। আবার ৮ নং আয়াতে বলেছেন, যারা ‎‎সৌভাগ্যবান হবে তারা বেহেশতে যাবে এবং চিরকাল তথায় থাকবে। ‎তবে আল্লাহ কারো ব্যাপারে অন্যরকম ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। ‎
‎কোন কোন তাফসীরকারক ৬ ও ৭ নং আয়াত দু’খানির ‎إِلاَّ مَا شَاءَ رَبُّكَ ‏‏ ‏‘আল্লাহ কারো ব্যাপারে অন্য রকম চাইলে ভিন্ন কথা’ তথ্যটির যে ব্যাখ্যা ‎করেছেন এবং যা ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে, তা হচ্ছে-যারা হতভাগ্য হবে ‎তাদের মধ্য থেকে কিছু কিছু ব্যক্তিকে তথা গুনাহগার মু’মিনদের কিছুকাল ‎‎দোযখ ভোগ করার পর আল্লাহ শাফায়াতের মাধ্যমে বা নিজ ইচ্ছায় বের ‎করে এনে চিরকালের জন্যে বেহেশতে পাঠিয়ে দিবেন।‎
পূর্বেই বলেছি, আল-কুরআনের আয়াতের তাফসীর করার স্বতঃসিদ্ধ ‎নিয়ম হচ্ছে তা যেন আগের, পরের বা অন্য সকল আয়াতের সম্পূরক বা ‎পরিপূরক হয়, বিরোধী না হয়। তাই ৬ ও ৭ নং আয়াত দু’খানির ঐ ‎ব্যাখ্যা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ তা হলে-‎
ক. ৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলতে হবে, সৌভাগ্যবানরা বেহেশতে ‎যাবে এবং তাদের মধ্য থেকে কিছু কিছু ব্যক্তিকে কিছুকাল পর ‎আল্লাহ নিজ ইচ্ছায় দোযখে পাঠিয়ে দিবেন। এটি কুরআনের ‎আয়াত ও অসংখ্য হাদীসের স্পষ্ট বিরুদ্ধ ব্যাখ্যা হবে।‎
খ. কুরআনের ঐ সকল আয়াত এবং ঐ সকল সহীহ হাদীস যেখান ‎‎থেকে প্রত্য বা পরোভাবে বুঝা যায় দোযখে যাওয়া গুনাহগার ‎মু’মিনরা চিরকাল দোযখে থাকবে, তার স্পষ্ট বিরুদ্ধ ব্যাখ্যা হবে। ‎
গ. ঐ সকল আয়াতের বিরুদ্ধ ব্যাখ্যা হবে যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‎তিনি বিচার করে রায় ঘোষণার পর বা দোযখে পাঠিয়ে দেয়ার ‎পর ঐ ব্যক্তিদের আর কোনভাবে মাফ করা হবে না। ‎
ঘ. আল-কুরআনের কোথাও না কোথাও কিছু কালের জন্যে দোযখের ‎শাস্তি খেটে বা বেহেশতের শান্তি ভোগ করে স্থান পরিবর্তনের ‎কথা আল্লাহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতেন। কিন্তু এর উল্টো তিনি ‎আল-কুরআনের মাধ্যমে মেয়াদভিত্তিক বেহেশত বা দোযখে ‎যাওয়ার ন্যায় কোন ঘটনা ঘটবে না এবং যারা বেহেশতে যাবে ‎তারা চিরকাল সেখানে থাকবে, আর যারা দোযখে যাবে, তারাও ‎চিরকাল সেখানে থাকবে বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।‎
এ সকল কিছুকে সামনে রেখে আয়াত ক’খানির যে তরজমা ও ব্যাখ্যা ‎গ্রহণযোগ্য হবে তা হচ্ছে- সে দিন অর্থাৎ শেষ বিচারের দিন যখন আসবে ‎তখন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলতে পারবে না। আর পৃথিবীর ‎সকল মানুষ সে দিন বিচার-ফয়সালার মাধ্যমে হতভাগ্য ও সৌভাগ্যবান এ ‎‎দু’ভাগে বিভক্ত হবে। হতভাগ্যদের দোযখে পাঠানো হবে। সেখানে তারা ‎আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে। চিরকাল তারা সেখানে থাকবে। ঐ ‎হতভাগ্যদের মধ্যে শুধু বিভিন্ন ধরনের (সাধারণ, তাণ্ডত, মুশরিক ও ‎মুনাফিক) কাফিরদের থাকার কথা কিন্তু আল্লাহ নিজ অতাৎণিক ইচ্ছায় ‎তথা নিজ তৈরী করা এবং কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া ‎নীতিমালা অনুযায়ী, কবীরা গুনাসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিনদেরও চিরকালের ‎জন্যে দোযখে থাকার শাস্তি দিবেন। নিশ্চয়ই তোমার রব নীতিমালা তৈরীর ‎‎স্বাধীন মতা রাখেন। ‎
আর যারা বিচারে সৌভাগ্যবান বলে প্রতীয়মান হবে তাদের তিনি ‎চিরকালের জন্যে বেহেশতে পাঠিয়ে দিবেন। তাদের মধ্যে শুধু নেককার ‎মু’মিনরাই থাকার কথা কিন্তু তোমার রব নিজ তৈরী করা এবং কুরআন ও ‎সূন্নাহের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া নীতিমালা অনুযায়ী কবীরা গুনাহ বাদে অন্য ‎‎গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিনদেরও ঐ পুরস্কার দিবেন। তাদের ‎পুরস্কারও চিরস্থায়ী হবে।

২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:১৭

তাহান বলেছেন: তথ্য-৩‎
অর্থ: যে দিন (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ এইসব লোককে একত্রিত করবেন ‎‎সে দিন তিনি (শয়তান) জিনদের বলবেন, হে জিনসমাজ, তোমরা তো ‎মানুষদের মধ্যে অনেককে অনুগামী করে নিয়েছিলে। তাদের মানব বন্ধুরা ‎বলবে, হে আল্লাহ, আমরা পরস্পরের দ্বারা ফায়দা লুটেছি এবং এখন ‎আমরা সে সময়ে পৌঁছে গেছি যা আপনি আমাদের জন্যে নির্দিষ্ট করে ‎‎রেখেছিলেন। আল্লাহ বলবেন, এখন তোমাদের পরিণাম জাহান্নাম। ‎‎সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ (কারো ব্যাপারে) অন্য রকম ‎ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই তোমাদের রব সর্বজ্ঞ ও বিজ্ঞ। ‎এমনিভাবে আমি (পরকালে) যালিমদের বিভিন্ন দলকে (উরারংরড়হ) ‎পরস্পরের সঙ্গী বানিয়ে দিব, তাদের কৃত কর্মের কারণে। ‎
‎(আন-আম : ১২৮, ১২৯) ‎
ব্যাখ্যা: প্রথম আয়াতখানি‎‏ إِلاَّ مَا شَاءَ رَبُّكَ ‏‘আল্লাহ কারো ব্যাপারে ‎অন্যরকম ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা’ অংশটুকুর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেছেন, ‎যারা দোযখে যাবে তাদের মধ্যে যারা মু’মিন হবে, কিছুকাল দোযখের ‎শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহ তাদের শাফায়াতের মাধ্যমে বা নিজ ইচ্ছায় ‎‎বের করে এনে চিরকালের জন্যে বেহেশতে পাঠিয়ে দিবেন। আর ২ নং ‎তথ্যের ন্যায় কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য বক্তব্য বিরুদ্ধ এ ব্যাখ্যাটি ‎ব্যাপক প্রচারও পেয়েছে। ‎
প্রকৃত ব্যাখ্যা: প্রথম আয়াতখানির প্রকৃত ব্যাখ্যা বুঝতে হলে মনে রাখতে ‎হবে-‎
ক. শয়তান জিনদের বন্ধুরা অর্থাৎ শয়তান জিনদের খুশি মনে বন্ধু ‎হিসেবে গ্রহণ করে নেয়া ব্যক্তিরা, অবশ্যই কাফির হবে। মু’মিন ‎হবে না।‎
খ. শয়তানের মানুষ বন্ধুরা দুনিয়ায় অপরকে ঠকিয়ে নিজেরা ফায়দা ‎লুটত অর্থাৎ তারা যালিম পর্যায়ের কাফির। ‎
গ. বড় গুনাহগার মু’মিন হিসেবে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদেরও পরকালে ‎আল্লাহ যালিম ধরে বিচার-ফয়সালা করবেন। এটি আল্লাহ ‎জানিয়ে দিয়েছেন অন্য আয়াত ছাড়াও নিম্নের আয়াতখানির ‎মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে-‎
অর্থ: ঈমান আনার পর গুনাহগার নামে আখ্যায়িত হওয়া (গুনাহের ‎কাজ করা) অত্যন্ত বড় গুনাহ। (এরূপ বড় গুনাহকারীদের মধ্যে) ‎যারা তওবা করবে না তারা যালিম বলে গণ্য হবে। (হুজরাত:১১)‎
ব্যাখ্যা: আয়াতখানির অনুল্লিখিত অংশে আল্লাহ কিছু বড় গুনাহ ‎উল্লেখ করে তা না করার জন্যে বলেছেন। তাই এখানে মহান ‎আল্লাহ সরাসরিভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মু’মিনদের মধ্যে যারা ‎তওবা না করে বড় গুনাহগার হিসেবে মৃত্যুবরণ করবে তাদের ‎পরকালে যালিম হিসেবে গণ্য করা হবে তথা যালিম হিসেবে গণ্য ‎করে বিচার-ফায়সালা করা হবে। ‎
আর এর পেছনে যুক্তি হচ্ছে একজন কাফির ইসলাম সিদ্ধ ‎কাজ না করলে বা ইসলাম নিষিদ্ধ কাজ করলে যেমন মানুষের ‎‎তি হয়, একজন মু’মিন না থাকার মতো ওজর, অনুশোচনা ও ‎উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ এ রকম আচরণ করলেও মানুষের একই ‎ধরনের তি হয়। ‎
উপরের তথ্য ক’টি সামনে রাখলে ১২৮ নং আয়াতের প্রকৃত ব্যাখ্যাটি ‎হবে‘আল্লাহ কিয়ামতের দিন শয়তানের বন্ধু যালিম কাফিরদের ‎চিরকালের জন্যে দোযখের শাস্তির ঘোষণা দিবেন। আর ঐ সঙ্গে তাঁর ‎অত্যৎণিক ইচ্ছা তথা নিজ তৈরী করা এবং কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে ‎জানিয়ে দেয়া নীতিমালা অনুযায়ী কিছু যালিম গুনাহগার মু’মিনকেও ‎‎(কবীরাগুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিন) তিনি চিরকাল দোযখের শাস্তি ‎দিবেন।’
আয়াতের এই ব্যাখ্যাটি যে সঠিক হবে, তার প্রমাণ‎
ক. দ্বিতীয় (১২৯ নং) আয়াত। কারণ, আল্লাহ সেখানে বলে দিয়েছেন ‎ঐ শাস্তির মাধ্যমে তিনি দুই বিভাগের যালিম অর্থাৎ কাফির ও ‎মু’মিন বিভাগের যালিমদের একত্রিত করে দিবেন।‎
খ. কুরআনের কোথাও কিছুকালের জন্যে দোযখের শাস্তির ঘোষণা ‎নাই বরং ঐ রকম হবে না বলে স্পষ্টভাবে বলা আছে। ‎
গ. কবীরা গুনাহগার মু’মিনরা চিরকাল দোযখে থাকবে বলে অন্য ‎আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা আছে। ‎
কিছু বর্ণনা রাসূল (সা.) এর বক্তব্য বলে চালু আছে ‎
চলুন এখন উল্লেখ ও পর্যালোচনা করা যাক সে বর্ণনাগুলো যা রাসূল (সা.) ‎এর বক্তব্য বলে ব্যাপকভাবে চালু আছে এবং সেগুলো ‘কিছু দিন দোযখে ‎‎থেকে শাফায়াতের মাধ্যমে চিরকালের জন্যে বেহেশত পাওয়া যাবে’ এ ‎ধারণা মুসলমান সমাজে চালু হওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ‎‎রেখেছে। বড় তথ্যগুলোর শুধুমাত্র আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ‎অংশটুকু উল্লেখ করা হল‎
তথ্য-১‎
অর্থ: হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের ‎দিন ঈমানদারদের (হাশরের ময়দানে) আটক করে রাখা হবে। এমন কি ‎এতে তারা অত্যন্ত চিন্তাযুক্ত ও অস্থির হয়ে পড়বে এবং বলবে, যদি আমরা ‎আমাদের রবের কাছে কারো দ্বারা সুপারিশ করাই তা হলে হয়তো ‎আমাদের বর্তমান অবস্থা হতে মুক্তি লাভ করে আরাম পেতে পারি। তাই ‎তারা হযরত আদম (আ.) এর কাছে যাবে এবং বলবে[এরপর ‎হাদীসখানির অনেকাংশ জুড়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ঈমানদারগণ পর পর ‎আদম (আ.), নূহ (আ.), ইব্রাহীম (আ.), মূসা (আ.) ও ঈসা (আ.) এর ‎নিকট যাবেন। তাঁরা সকলেই তাঁদের দুর্বলতা উল্লেখ করে শাফায়াতের ‎ব্যাপারে তাঁদের অপারগতা প্রকাশ করবেন। শেষে ঈসা (আ.) তাঁদের ‎মুহাম্মাদ (সা.) এর নিকট যেতে বলবেন। মুহাম্মাদ (সা.) এর নিকট ‎‎গেলে তিনি যা বলেছেন বা বলবেন, সে কথাগুলো হল]‎
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তারা আমার কাছে আসবে, তখন আমি আমার ‎রবের কাছে তাঁর দরবারে হাজির হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করব, আমাকে ‎তাঁর কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি যখন তাঁকে দেখব, তখনই ‎তাঁর উদ্দেশে সিজদায় পড়ে যাব, আল্লাহ আমাকে যতণ চাইবেন এই ‎অবস্থায় রাখবেন। তারপর বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও এবং বল, ‎‎তোমার কথা শোনা হবে। তুমি সুপারিশ কর, তা কবুল করা হবে। প্রার্থনা ‎কর, যা চাইবে দেয়া হবে। রাসূলূল্লাহ (সা.) বলেন, তখন আমি মাথা ‎উঠাব এবং আমার রবের এমনভাবে প্রশংসা-স্তুতি বর্ণনা করব, যা তিনি ‎‎সে সময় আমাকে শিখিয়ে দিবেন। অতঃপর আমি শাফায়াত করব কিন্তু ‎এই ব্যাপারে আমার জন্যে একটি সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। তখন ‎আমি আল্লাহর দরবার হতে উঠে আসব এবং ঐ নির্দিষ্ট সীমার ‎‎লোকদেরকে জাহান্নাম হতে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।‎
‎[এরপর হাদীসখানির অনেকটি অংশ জুড়ে একই বর্ণনাসহকারে ‎উল্লেখ করা হয়েছে রাসূল (সা.) মোট ৩ বার আল্লাহর অনুমতি নিয়ে ‎‎দোযখে যাবেন এবং প্রত্যেক বারই বেশ কিছু দোযখীকে বের করে ‎আনবেন] তারপর হাদীসখানিতে বলা হয়েছে-‎
অবশেষে কুরআন যাদেরকে আটকিয়ে রাখবে (যাদের জন্যে ‎কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী চিরস্থায়ী দোযখবাস নির্ধারিত হয়ে গেছে,) ‎তারা ব্যতীত আর কেউ দোযখে থাকবে না। ... ... ... (বুখারী, মুসলিম)‎
তথ্য-২‎
অর্থ: হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যখন কিয়ামত ‎সংঘটিত হবে, তখন মানুষ সমবেত অবস্থায় উদ্বেলিত ও উৎকণ্ঠিত হয়ে ‎পড়বে। তাই তারা সকলে হযরত আদম আ. এর কাছে যেয়ে বলবে, ‎আমাদের জন্যে আপনার রবের কাছে শাফায়াত করুন।‎
‎(এরপর হাদীসখানির কিছু অংশ জুড়ে বলা হয়েছে, লোকেরা আদম আ. ‎এর পর ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসা আ. এর নিকট শাফায়াতের জন্যে অনুরোধ ‎করবে। কিন্তু তাঁদের সকলে নিজেদের দুর্বলতা দেখিয়ে সে ব্যাপারে ‎অপারগতা প্রকাশ করবেন। শেষে ঈসা আ. তাদেরকে মুহাম্মাদ সা. এর ‎নিকট যেতে বলবেন। মুহাম্মদ সা. এর নিকট গেলে তিনি বলবেন)। তখন ‎তারা সকলে আমার কাছে আসবে। আমি বলব, আমিই এই কাজের ‎জন্যে। এবার আমি আমার রবের কাছে অনুমতির প্রার্থনা করব। আমাকে ‎অনুমতি দেয়া হবে। এ সময় আমাকে প্রশংসা ও স্তুতির এমন সব বাণী ‎ইলহাম করা হবে, যা এখন আমার জানা নেই। আমি ঐ সব প্রশংসা দ্বারা ‎আল্লাহর প্রশংসা করব এবং তাঁর উদ্দেশে সেজদায় পড়ে যাব। তখন বলা ‎হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, তোমার বক্তব্য শোনা হবে। প্রার্থনা ‎কর, যা চাইবে তা দেয়া হবে। আর শাফায়াত কর, কবুল করা হবে। ‎তখন আমি বলব, হে রব! আমার উম্মত, আমার উম্মত! (অর্থাৎ আমার ‎উম্মতের উপর রহম করুন, আমার উম্মতকে মা করুন) বলা হবে, যাও, ‎যাদের অন্তরে যবের দানা পরিমাণ ঈমান আছে, তাদেরকে দোযখ হতে ‎‎বের করে আন। তখন আমি গিয়ে তাই করব। ‎
‎(এরপর হাদীসখানিতে একই বর্ণনা ভঙ্গিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসূল ‎সা. মোট ৪ বার সেজদায় যেয়ে আল্লাহর নিকট উম্মতের জন্যে দোয়া ‎করবেন। ২য় বারে আল্লাহর অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে যে সকল মানুষের অন্তরে ‎অণু বা সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে তাদের তিনি দোযখ থেকে বের করে ‎আনবেন। ৩য় বার অনুমতি পেয়ে তিনি যাদের অন্তরে ুদ্রাণুুদ্র পরিমাণ ‎ঈমান আছে তাদেরকে দোযখ থেকে বের করে আনবেন। আর ৪র্থ বার ‎অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে তিনি বলবেন‏(‏‎ হে রব! যারা শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ‎বলেছে, আমাকে তাদের জন্যও শাফায়াত করার অনুমতি দিন। তখন ‎আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আমার ইজ্জত ও জালাল এবং আমার শ্রেষ্ঠত্ব ও ‎মহত্ত্বের কসম করে বলছি, যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, আমি ‎নিজেই তাদেরকে দোযখ হতে বের করব। (বুখারী, মুসলিম)‎
তথ্য-৩‎
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‎আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু গোশত আনা হল এবং তাঁর খেদমতে ‎বাজুর গোশতটিই পেশ করা হল। মূলত তিনি এই গোশত খেতে বেশি ‎পছন্দ করতেন। কাজেই তিনি তা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেলেন। তারপর ‎বললেন, কিয়ামতের দিন আমি হব সমস্ত মানুষের সর্দার। যে দিন ‎মানবমণ্ডলী রাব্বুল আলামীনের সম্মুখে দণ্ডায়মান হবে এবং সূর্য থাকবে ‎খুব কাছে। পেরেশানি ও দুশ্চিন্তায় মানুষ এমন এক করুণ অবস্থায় ‎‎পৌঁছবে, যা সহ্য করার শক্তি তাদের থাকবে না। তখন তারা (অস্থির হয়ে ‎পরস্পরে) বলাবলি করবে, তোমরা কি এমন কোন ব্যক্তিকে খোঁজ করে ‎পাও না, যিনি তোমাদের রবের কাছে তোমাদের জন্যে সুপারিশ করবেন? ‎তখন তারা হযরত আদম (আ.) এর কাছে আসবে। এর পর বর্ণনাকারী ‎হযরত আবু হোরায়রা (রা.) ২ নং তথ্যের হাদীসখানির ন্যায় শাফায়াত ‎সম্বন্ধে রাসূল (সা.) এর বক্তব্য বর্ণনা করেন।‎‏ ‏‎ (বুখারী ও মুসলিম)‎
‎ ‎
তথ্য-৪‎
অর্থ: হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, লোকেরা জিজ্ঞাসা করল ‎ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে ‎পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ‎অবশেষে যখন আল্লাহ বান্দাদের বিচার-ফয়সালা শেষ করবেন এবং ‎‎(নিজের দয়া অনুগ্রহে) কিছু সংখ্যক ঐ ধরনের দোযখবাসীকে নাজাত ‎‎দেয়ার ইচ্ছা করবেন, যারা স্যা দিয়েছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া আর ‎‎কোন মা’বুদ নেই, তখন ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ করবেন, যারা একমাত্র ‎আল্লাহর এবাদত করেছে, তাদেরকে জাহান্নাম হতে বের করে আন। তখন ‎তারা ঐ সব লোকের কপালে সেজদার চিহ্ন দেখে শনাক্ত করবেন এবং ‎‎দোযখ হতে বের করে আনবেন। আর আল্লাহ তায়ালা সেজদার চিহ্নসমূহ ‎‎পোড়ানো আগুনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। ফলে দোযখে নিপ্তি ‎প্রতিটি আদম সন্তানের সেজদার স্থানটি ব্যতীত গোটা দেহটি আগুন ‎জ্বালিয়ে ফেলবে। তাই তাদেরকে এমন অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দোযখ হতে বের ‎করা হবে যে, তারা একেবারে কাল কয়লা হয়ে গিয়েছে। তখন তাদের ‎উপর সঞ্জীবনী পানি ঢেলে দেয়া হবে। এর ফলে তারা এমনভাবে ‎তরতাজা ও সজীব হযে উঠবে, যেমন কোন বীজ প্রবহমান পানির ধারে ‎অঙ্কুরিত হয়ে ওঠে। ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... (বুখারী, মুসলিম) ‎


তথ্য-৫‎‏.‏
অর্থ: হযরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ‎বলেছেন, একদল মানুষকে মুহাম্মাদ (সা.) এর শাফায়াতে জাহান্নাম হতে ‎‎বের করা হবে। অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের নাম ‎রাখা হবে জাহান্নামী। ‎ ‎ (আবু দাউদ)‎
অপর এক বর্ণনায় আছে- রাসূল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের একদল ‎‎লোক আমার সুপারিশে জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ করবে। তাদেরকে ‎জাহান্নামী নামে ডাকা হবে। ‎

তথ্য-৬‎

অর্থ: হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, একদা কতিপয় লোক ‎জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের ‎রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ।... ... ... ... ... ... ... ... ‎অতঃপর জাহান্নামের ওপর দিয়ে পুলসিরাত পাতা হবে এবং শাফায়াতের ‎অনুমতি দেয়া হবে। তখন নবী-রাসূলগণ (স্ব স্ব উম্মতের জন্যে) এই ‎ফরিয়াদ করবেন, হে আল্লাহ! নিরাপদে রাখ। মু’মিনগণ পুলসিরাতের ‎ওপর দিয়ে কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বাতাসের ‎গতিতে, কেউ পাখির গতিতে এবং কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে আবার ‎‎কেউ উটের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ সহীহ-সালামতে বেঁচে যাবে। ‎আবার কেউ এমনভাবে পার হয়ে আসবে যে, তার দেহ ত-বিত হবে ‎এবং কেউ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে জাহান্নামে পড়বে। অবশেষে মু’মিনগণ ‎জাহান্নাম হতে নিষ্কৃতি লাভ করবে। সে মহান সত্তার শপথ যাঁর হাতে ‎আমার প্রাণ! তোমাদের প্রত্যেকে নিজের হক বা অধিকারের দাবিতে কত ‎কঠোর, তা তো তোমাদের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু কিয়ামতের দিন মু’মিনগণ ‎তাদের সেই সমস্ত ভাইকে মুক্তির জন্যে আল্লাহর সাথে আরও অধিক ‎ঝগড়া করবে, যারা তখনও দোযখে পড়ে রয়েছে। তারা বলবে, হে ‎আমাদের রব! এই সমস্ত লোক আমাদের সাথে রোজা রাখত, নামাজ ‎পড়ত এবং হজ আদায় করত। (সুতরাং তুমি তাদেরকে নাজাত দাও)। ‎তখন আল্লাহ বলবেন, যাও, তোমরা যাদেরকে চিন তাদেরকে দোযখ হতে ‎মুক্ত করে আন। তাদের চেহারা-আকৃতি পরিবর্তন করা দোযখের আগুনের ‎ওপর হারাম করা হয়েছে। (তাই জান্নাতে প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্ত লোকেরা ‎তাদের জাহান্নামবাসী ভাইদেরকে দেখে চিনতে পারবে)। তখন তারা ‎‎দোযখ হতে বহু সংখ্যক লোককে বের করে আনবে। অতঃপর বলবে, হে ‎আমাদের রব! এখন সেখানে এমন আর একজন লোকও অবশিষ্ট নেই ‎যাদেরকে বের করার জন্যে আপনি নির্দেশ দিয়েছেন। তখন আল্লাহ ‎বলবেন, আবার যাও, যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, ‎তাদের সকলকে বের করে আন। এতেও তারা বহু সংখ্যক লোককে বের ‎করে আনবে। তারপর আল্লাহ বলবেন, পুনরায় যাও, যাদের অন্তরে অর্ধ ‎‎দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদের সবাইকে বের করে আন! সুতরাং ‎এতেও তারা বহু সংখ্যককে বের করে আনবে। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, ‎আবার যাও, যাদের অন্তরে এক বিন্দু পরিমাণ ঈমান পাবে তাদের ‎সকলকেও বের করে আন। এবারও তারা বহু সংখ্যককে বের করে আনবে ‎এবং বলবে, হে আমাদের পরওয়ারদিগার! ঈমানদার কোন ব্যক্তিকেই ‎আমরা আর জাহান্নামে রেখে আসিনি। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, ‎‎ফেরেশতাগণ, নবীগণ এবং মু’মিনীন সকলেই শাফায়াত করেছে, এখন ‎এক ‘আরহামুর রাহেমীন’ তথা আমি পরম দয়ালু ব্যতীত আর কেউই ‎অবশিষ্ট নেই। এই বলে তিনি মুষ্টিভরে এমন একদল লোককে দোযখ ‎হতে বের করবেন যারা কখনও কোন নেক কাজ করেনি। যারা জ্বলে-পুড়ে ‎কাল কয়লা হয়ে গেছে। অতঃপর তাদেরকে জান্নাতের সম্মুখ ভাগের ‎একটি নহরে ঠেলে দেয়া হবে, যার নাম ‘নহরে হায়াত’। এতে স্রোতের ‎ধারে যেমনিভাবে ঘাসের বীজ গজায়, তেমনিভাবে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ‎গজাবে। তারা তা হতে বের হয়ে আসবে মুক্তার মত (চকচকে অবস্থায়)। ‎তাদের ঘাড়ে সীলমোহর থাকবে। জান্নাতবাসীগণ তাদেরকে দেখে বলবে, ‎এরা পরম দয়ালু আল্লাহর আযাদকৃত। আল্লাহ তায়ালা এদেরকে জান্নাতে ‎প্রবেশ করিয়েছেন। অথচ পূর্বে এরা কোন নেক আমল করেনি। অতঃপর ‎তাদেরকে বলা হবে, এই জান্নাতে তোমরা যা দেখছ, তা তোমাদেরকে ‎‎দেয়া হল এবং এতদসঙ্গে অনুরূপ পরিমাণ আরও দেয়া হল। ‎ ‎ ‎‏ ‏‎(বুখারী, মুসলিম) ‎
তথ্য-৭‎
অর্থ: হযরত আবু যর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি এমন ‎এক ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত আছি, যে জান্নাতীদের মধ্যে সর্বশেষ জান্নাতে ‎প্রবেশ করবে এবং সর্বশেষ জাহান্নামী, যে তা হতে বের হয়ে আসবে। ‎কিয়ামতের দিন তাকে আল্লাহ তায়ালার সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। তখন ‎‎ফেরেশতাদেরকে বলা হবে, তার ছোট ছোট গুনাহ তার সম্মুখে উপস্থিত ‎কর এবং বড় বড় গোনাহ দূরে রাখ। তখন তার ছোট ছোট গুনাহ তার ‎সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, আচ্ছা বল তো, ‎অমুক অমুক দিন অমুক অমুক কাজটি তুমি করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ, ‎করেছি। বস্তুত তা সে অস্বীকার করতে পারবে না। তবে তার বড় বড় ‎‎গোনাহ উপস্থিত করা সম্পর্কে সে অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। তখন ‎তাকে বলা হবে, যাও! তোমার প্রতিটি গুনাহের স্থলে এক একটি নেকী ‎‎দেয়া হল। তখন সে বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি তো এমন ‎কিছু (বড় বড়) গুনাহও করেছিলাম, যেগুলোকে আমি এখানে দেখতে ‎পাচ্ছি না। বর্ণনাকারী হযরত আবু যর (রা.) বলেন, এ সময় আমি ‎রাসূলুল্লাহ (সা.) কে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত ‎প্রকাশ হয়ে পড়েছিল। (মুসলিম) ‎

তথ্য-৮‎
অর্থ: হযরত আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের ‎কবীরা গুনাহকারীগণই বিশেষভাবে আমার শাফায়াত লাভ করবে। ‎‎(তিরমিযী ও আবু দাউদ। আর ইবনে মাজাহ হযরত জাবের রা. হতে ‎হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)‎
‎ এ ধরনের আরো কিছু বর্ণনা হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ থাকতে পারে।‎


হাদীস বলে চালু হওয়া এ বর্ণনাগুলোর পর্যালোচনা
হাদীস গ্রন্থের নীতিমালা (উসূলে হাদীস) অনুযায়ী একটি বর্ণনা হাদীস ‎হিসেবে অগ্রহণযোগ্য ধরতে হবে যদি সেটি‎
ক. কুরআনের এক বা একাধিক স্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধী হয় এবং
খ. কোন অধিক শক্তিশালী হাদীসের বক্তব্যের স্পষ্ট বিরোধী হয়। ‎
উসূলে হাদীসের ঐ নীতিমালার আলোকে চলুন এখন বর্ণনাসমূহকে ‎পর্যালোচনা করা যাক। উল্লিখিত হাদীস বলে চালু হয়ে যাওয়া ‎বর্ণনাসমূহকে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা‎
ক. যে সকল বর্ণনায় বলা হয়েছে যাদের সামান্য পরিমাণও ঈমান ‎আছে গুনাহের জন্যে কিছুকাল দোযখে শাস্তি ভোগ করার পর ‎তাদের রাসূল (সা.) এর শাফায়াত বা আল্লাহর নিজ ইচ্ছায় ‎‎দোযখ থেকে বের করে এনে চিরকালের জন্যে বেহেশতে পাঠিয়ে ‎‎দেয়া হবে।‎
খ. যে সকল বর্ণনায় বলা হয়েছে কবীরা গুনাহকারী ঈমানদার ‎‎দোযখীরাও শাফায়ত বা আল্লাহর নিজ ইচ্ছায় দোযখ থেকে বের ‎হয়ে এসে চিরকালের জন্যে বেহেশতে যেতে পারবে। ‎
গ. যে সকল বর্ণনায় বলা হয়েছে এমন লোকদেরও দোযখ থেকে বের ‎করে এনে চিরকালের জন্যে বেহেশত দিয়ে দেয়া হবে যারা ‎জীবনে কোন নেক আমল তথা সৎ কাজ করেনি।‎
‎ ‎
সামান্য পরিমাণ ঈমান থাকা গুনাহগার ব্যক্তিরাও কিছু দিন দোযখের শাস্তি ‎‎ভোগ করে শাফায়াতের মাধ্যমে চিরকালের জন্যে বেহেশত পাবে-এ ‎ধরনের তথ্যসম্বলিত বর্ণনাসমূহের পর্যালোচনা
এ ধরনের তথ্যসম্বলিত বর্ণনাসমূহ কুরআন হাদীসের বক্তব্যের প্রত্য বা ‎পরো বিরুদ্ধ। কারণ‎
ক. আল-কুরআনের‎
‎১. সূরা বাকারার ৮০ এবং আলে-ইমরানের ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ ‎প্রত্যভাবে জানিয়ে দিয়েছেন কিছুকাল দোযখের শাস্তি ভোগ ‎করে বেহেশতে যাওয়ার ন্যায় কোন ঘটনা পরকালে ঘটবে না।‎
‎২. অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ‎যারা দোযখে যাবে তারা চিরকালের জন্যে সেখানে থাকবে।‎
‎৩. সূরা যুমায়ের ১৯ নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ স্পষ্ট করে জানিয়ে ‎দিয়েছেন, বিচার করে তিনি যাদের দোযখে পাঠিয়ে দিবেন ‎তাদের অন্য কেউ তো দূরের কথা স্বয়ং রাসূল (সা.) শাফায়াত ‎করে সেখান থেকে উদ্ধার করতে পারবেন না।‎
‎৪. আল-কুরআনের কোথাও বলা নাই যে, শেষ বিচারের দিন ‎কিছুকাল দোযখ ভোগ করে চিরকালের জন্যে বেহেশতে যাওয়ার ‎‎ঘোষণা দিয়ে কোন রায় আল্লাহ দিবেন।‎
খ. যে সকল সহীহ হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যারা ঈমানের ঘোষণা ‎দিবে তারা বেহেশতে যাবে’ সেখানে আসলে তিনি বলেছেন, ‘যারা ‎ঈমানের ঘোষণা দিবে এবং ঈমানের দাবি অনুযায়ী আমল করবে তারা ‎‎বেহেশতে যাবে।’ বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করেছি ‘পবিত্র ‎কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ঈমান থাকলেই বেহেশত ‎পাওয়া যাবে বর্ণনাসম্বলিত হাদীসসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা’ নামক ‎বইটিতে।‎
গ. বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ থাকা কয়েকটি সর্বোচ্চ ‎শক্তিশালী হাদীস থেকে প্রত্যভাবে জানা যায় যে-‎
‎১. যারা দোযখে যাবে তারা চিরকাল সেখানে থাকবে।‎
‎২. যে গুনাহগার মু’মিন দোযখে যাবে তাকে চিরকাল সেখানে ‎
‎ থাকতে হবে। ‎
‎ তাই এ বর্ণনাসমূহ সংজ্ঞা অনুযায়ী সহীহ হাদীস হতে পারে তবে ‎রাসূল (সা.) এর বক্তব্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ হাদীসকে ‎সহীহ বলা হয় সনদের ত্র“টিহীনতার ভিত্তিতে। বক্তব্য বিষয়ের নির্ভুলতার ‎ভিত্তিতে নয়। ‎
ঈমানদার কবীরা গুনাহকারীরাও রাসূল (সা.) এর শাফায়াত বা আল্লাহর ‎নিজ ইচ্ছার মাধ্যমে কিছুকাল দোযখ ভোগ করে চিরকালের জন্যে ‎‎বেহেশত পাবে-এ তথ্যসম্বলিত বর্ণনাগুলোর পর্যালোচনা
এ ধরনের বর্ণনাসমূহের ব্যাপারে বলা যায়-‎
ক. প্রথম ধরনের বর্ণনার পর্যালোচনায় উল্লিখিত কুরআন, হাদীস ও ‎বিবেক-বুদ্ধির সকল তথ্য এ তথ্যের অগ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারেও ‎প্রযোজ্য হবে।‎
খ. কবীরা গুনাহসহ মৃত্যুবরণকারী মু’মিনরা চিরকাল দোযখে থাকবে বলে ‎কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির অনেক স্পষ্ট বক্তব্য আছে যা পূর্বে ‎উল্লেখ করা হয়েছে। ‎
গ. সূরা শুরা ৩৬ ও ৩৭ নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ প্রত্যভাবে জানিয়ে ‎দিয়েছেন, কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত মু’মিন ব্যক্তিরাই শুধু পরকালে ‎‎বেহেশত পাবে।‎
‎ তাই এ বর্ণনাগুলো ও রাসূল (সা.) এর বক্তব্য হিসেবে কোন মতেই ‎গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ‎
যারা জীবনে কোন নেক আমল করেনি, তাদেরকেও আল্লাহ দোযখ থেকে ‎‎বের করে বেহেশতে পাঠিয়ে দিবেন- এ তথ্যসম্বলিত বর্ণনাসমূহের ‎পর্যালোচনা
এ ধরনের বর্ণনা সহীহ হাদীস হলে সওয়াব-গুনাহ, বেহেশত-দোযখ, ‎ন্যায় কাজে উৎসাহ দেয়া ও অন্যায় কাজ নিরুৎসাহিত করা তথা কুরআন; ‎সুন্নাহ ও বিবেক বলে কোন বিষয়ের অস্তিত্ব থাকে না। তাই এ বর্ণনা ‎‎কোনমতেই রাসূল (সা.) এর বক্তব্য হতে পরে না।‎

পরকালে শাফায়াত পাওয়ার জন্যে সকলকে যা করতে হবে
এ পর্যায়ে এসে বলা যায়, আমরা কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির তথ্যের ‎আলোকে নিশ্চয়তাসহকারে জানতে পেরেছি-‎
‎ পরকালে শাফায়াতের ব্যবস্থা থাকবে,‎
‎ শাফায়াত সম্পূর্ণভাবে মহান আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন থাকবে,‎
‎ মানুষের মধ্যে রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) ই প্রধান শাফায়াতকারী ‎হবেন,‎
‎ শাফায়াত পাওয়ার জন্যে যোগ্য হতে হবে, ‎
‎ প্রায় সব মু’মিনের পরকালে শাফায়াতের প্রয়োজন হবে। ‎
তাই পরকালে শাফায়ত পাওয়ার জন্যে আমাদের যা করতে হবে, তা ‎হচ্ছে‎
‎১. ঈমান ও আমলের মাধ্যমে নিজেকে শাফায়াত পাওয়ার যোগ্য ‎করে গড়তে হবে। অর্থাৎ অন্ততপে একজন মধ্যম ‎‎গুনাহগার মু’মিন হিসেবে গণ্য হওয়ার মত আমল থাকতে ‎হবে। ‎
‎২. শাফায়াত পাওয়ার জন্যে মহান আল্লাহর নিকট নিম্নের যে ‎‎কোন এক বা একাধিক উপায়ে ঘন ঘন, মনে-প্রাণে দোয়া ‎করতে হবে-‎
ক. ‎
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নবীকে আমার জন্যে সুপারিশকারী ‎বানিয়ে দেন।‎
খ. ‎
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নবীর শাফায়াত দান করুন। ‎

‎শেষ কথা‎
সুধী পাঠক, আশা করি পুস্তিকার উল্লিখিত তথ্যসমূহ শাফায়াত সম্বন্ধে ‎ব্যাপকভাবে চালু থাকা কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির প্রত্য ও ‎পরো বিরুদ্ধ কথাগুলো উচ্ছেদ করতে যথেষ্ট সাহায্য করবে। আর এর ‎ফলস্বরূপ যে সকল ঈমানদার ইসলামের কিছু অনুসরণ করছেন আর কিছু ‎অনুসরণ করছেন না এটি ভেবে যে, দোযখে যেতে হলেও কিছুকাল ‎‎সেখানে থাকার পর চিরকালের জন্যে বেহেশত পাওয়া যাবে, তাদের ভুল ‎ভাঙ্গবে। তাই তারা সকলে ইসলাম পালন করার সময় নেক্কার ছগীরা ‎‎গুনাহগার মধ্যম গুনাহগার মু’মিনের স্তরে থাকার চেষ্টা করবে। আর তা ‎হতে পারলে আশা করা যায়, তারা সকলে পরকালে শাফায়াতের মাধ্যমে ‎বা সরাসরিভাবে চিরকালের জন্যে বেহেশত পাওয়ার যোগ্য হবে। ‎
সবার নিকট দোয়া চেয়ে এবং ভুল-ত্র“টি গঠনমূলকভাবে ধরিয়ে দেয়ার ‎অনুরোধ রেখে শেষ করছি। আল্লাহ হাফিজ! ‎

সমাপ্ত
‎ ‎

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.