নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
'আমি আমার ফাঁসি চাই... আমি আমার মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাচ্ছি... বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাইবার এবং তা অর্জনের জন্য সংগীতযোদ্ধা হয়ে যে অপরাধ আমি করেছিলাম, আমি সেসব অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমার... হে মহান, মহামানব, ...আমি বিব্রতবোধ করছি। অন্তত এই বিব্রতবোধ করার অপরাধে আমাকে ফাঁসি দিন।' গোলাম আযমের মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে কারাদণ্ডের রায় আসায় এভাবেই ক্ষোভ ব্যক্ত করেন সংগীতশিল্পী লাকী আখন্দ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে। গতকাল দুপুরে রায় ঘোষণার পর ফেসবুক, টুইটারসহ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে এভাবেই ক্ষোভ ব্যক্ত করে অসংখ্য স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। একাত্তরের শহীদ সিরাজুদ্দিন হোসেনের ছেলে সাংবাদিক জাহিদ রেজা নূর রায় ঘোষণার পরপর ফেসুবক এই বলে স্ট্যাটাস দেন, 'মুক্তির মন্দির সোপানতলে/ কত প্রাণ হলো বলীদান/ লেখা আছে অশ্রুজলে।' সাহিত্যিক মইনুল আহসান সাবের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, 'গোলাম আযমের এই রায় যদি কার্যকর হয়, তার পেছনে যে খরচ হবে, সে খরচের কোনো অংশই আমি বহন করতে রাজি না।' কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল প্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে উদ্ধৃত করে লেখেন, 'বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে/রাজনীতিবিদের ধমনি-শিরায় সুবিধাবাদের পাপ।'
গোলাম মাওলা রনি এমপি তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, 'আমরা ৭০-এর দশক থেকেই গোলাম আযমের ফাঁসির দাবি শুনে আসছি আর তখন দেশবাসী সাঈদী বা কাদের মোল্লার নামও জানত না। এই রায়ের পর নিশ্চিন্তে বলা যায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কী হবে, কারণ সাফাই সাক্ষ্য দেবেন সালমান এফ. রহমান। ...আজ বাঙালি জাতির কতিপয় দুর্বৃত্তদের জুলুম, অবিচার ও নাফরমানি দেখে স্বয়ং ইবলিস শয়তান এ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে আর যাওয়ার সময় অবাক বিস্ময়ে বলে গেছে- হায় আল্লাহ! ওরা এসব শয়তানি শেখাল কী করে?'
'মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী চেতনার দোকান দেউলিয়া ঘোষিত হইল। বহুত হইছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসা এবার গুটিয়ে ফেলতে হবে। নব্য রাজাকার হয়ে, দেশের সম্পদ লুটপাট করবেন, রাজাকার-আলবদরের সঙ্গে আপস-আঁতাত করবেন আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আড়তদারিও করবেন- এ দুইটা একসঙ্গে আর চলবে না। যান ফুটেন।' এভাবেই ক্ষোভ ব্যক্ত করেন কল্লোল মোস্তফা। প্রয়াত কবি হুমায়ূন আজাদকে উদ্ধৃত করে বিপ্লব রহমান লেখেন, 'সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।'
সাংবাদিক শরীফুল হাসান লেখেন, 'গোলাম আযমের রায় ঘোষণার পরপরই হাসতে দেখা যায় তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে। সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া গোলাম আযমের এই সন্তান রায়ে অভিযোগ পড়া শুরু হওয়ার পর এজলাসের দিকে পুরো মনোযোগ দেন। দণ্ড ঘোষণার পর ফাঁসি না হওয়ায় হেসে ওঠেন তিনি। হাতল চাপড়ান চেয়ারের। এরপর বাবার কাছে গিয়ে আযমীকে বলতে শোনা যায়, সব ঠিক আছে, ফাঁসি হয়নি। আসলেই সব ঠিক আছে। কাজেই আযমীদের হাসারই কথা। তোমরা হাসো। রায় শুনেই কেঁদে ফেলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তুরিনের মতোই কাঁদছে বাংলাদেশ। জানি এই কান্না কখনোই থামবে না। কাঁদো বাংলাদেশ তুমি কাঁদো!'
এই রায়ে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে হাবিব বাবুল লেখেন, 'এটাই রাজনীতির খেলা, রাজনীতি এখন আর আদর্শ চর্চার জায়গা নয়, ভোটের হিসাব করে রাজনীতিকরা দাবার ঘুঁটির চাল দেন। আওয়ামী লীগও রাজনীতি করে, তাদের ক্ষমতায় যেতে হবে আবার, ক্ষমতা টার্গেট করেই আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের বাসায় জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাক এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভীর বৈঠক হয়, আর এই রায় সেই বৈঠকের ফল।'
'তারপর কত চন্দ্রভুক অমাবস্যা কেটে গেল, আমরা আর কোনো দিন বিচার পেলাম না... হাসু আপা, এটা কোন খেল দেখালে তুমি আমাদের...' প্রয়াত কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার প্যারোডি করে লেখেন সাংবাদিক সুপ্রীতি ধর।
রাজীব নন্দী এক স্ট্যাটাসে বলেন, "এই রায় 'বয়স কোটা'র, এই রায় মানি না!"
সিডাটিভ হিপনোটিকস নামের আইডি থেকে জানানো হয়, কেউ একজন তাঁকে লিখেছেন, 'কতই না কিছু করলি, সব চেষ্টাই বিফলে গেল। ..., একটা পথ তোমাদের জন্য খোলা আছে তা হলো, তোমরা সবাই তোমাদের ভুল স্বীকার করে প্রফেসর গোলাম আযম সাহেবের পা ধরে ক্ষমা চাওয়া।' এর প্রতিক্রিয়ায় সিভাটিভ লেখেন, 'অন্য কোনো দিন হলে তর্ক করতাম, ব্লগ দিতাম। আজ ক্লান্ত লাগতেছে, গোলাম আযমের পা ধরে মাফ বোধ হয় চাইতেও হতে পারে। রাজাকার মানে গোলাম আযমের চেহারা ভেসে উঠত, তার আজ যাবজ্জীবন (পড়ুন আরামে টেনশনহীন কিছুদিন) দিল। গোলাম আযমের শাস্তি হয়েছে, সরকার সন্তুষ্ট। সেই হিসেবে ৯০ বছর পর তিনি নির্দোষ হয়ে যাবেন। তারপর তার নামে সড়ক-এয়ারপোর্ট হবে। সেই হিসেবে তাঁর পা ধরে ক্ষমা চাওয়া যায়ই।'
এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, 'যেহেতু কুকুরের লেজ কখনোই সোজা হয় না, তাই যতই ইশতেহারে বলুক- অপরাধীদের বিচার করব, আসলে তা কখনোই হবে না...এটা আমার মতো আম-পাবলিককে বুঝতে হবে।' কবি সরকার আমিন লেখেন, 'কেউ যখন শত্রু ও বন্ধু- দুই দলের কাছ থেকেই ঘৃণা পেতে শুরু করে, বুঝতে হবে সামনে তার বিপদ!'
গণজাগরণ মঞ্চের লাকী আক্তারের এক স্ট্যাটাসে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করে বলা হয়, 'মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় বসে জামায়াতের সাথে মিটিং করবেন আর প্রহসনের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জনগণকে নয়ছয় বুঝ দেবেন- এর নাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?...শাহবাগে আইসা তরুণদের সাথে গলা মিলাইতে পারেন, ইসলামী ব্যাংকের পক্ষে বিজ্ঞাপনও দিতে পারেন। মনে রাইখেন, ভালো কইরা শুইনা রাইখেন- মুক্তিযুদ্ধ কোনো দলের কাছে লিজ দিই নাই।' লাকী আক্তারের এ বক্তব্যকে আক্রমণ করে মাহমুদা খাঁ নামের একজন লেখেন, 'কই গেলায় রে অতি ভক্ত আওয়ামী লীগপ্রেমীরা? তোমরা তো চেতনার ব্যবসা কর না, তাই না?'
'বোঝার বাকি নেই যে আওয়ামী লীগ এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছে! এ রায়ে লালা ঝরানোরা খুশি হয়েছে, বিএনপিও খুশি হয়েছে। অন্যদিকে প্রগতিশীল-মুক্তমনা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিরা জেগে উঠেছে। নেতিয়ে পড়া ধর্মান্ধদের যেমন দরকার, তেমন করে তেতে ওঠা তরুণদেরও দরকার ভোটের রাজনীতিতে। গোলাম আযমকে ইতিহাস ক্ষমা করেনি, করবেও না। আওয়ামী লীগকেও এই নোংরা রাজনীতি করার জন্য ইতিহাস ক্ষমা করবে না! তার পরও আজকের এই দিনে মনে পড়ছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে। মা, আমাদের ক্ষমা করুন!' ফেসবুকে লিখেছেন কবি-সাংবাদিক নওশাদ জামিল।
কুলদা রায় লেখেন, 'গোলাম আযম হাসছে। খুনে দাঁত বেরিয়ে পড়েছে। তুরিন কাঁদছেন। চোখ মুছতে মুছতে আদালতের সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। ৯০ বছর বয়সটা তাহলে একটু বড় বেশিই- কি বলেন! তুরিন ছোট হয়ে যাচ্ছেন। এ সময় রাস্তায় ছয় বছরের এক ছেলে মাকে প্রশ্ন করছে- সাপের বয়স বেশি হয়ে গেলে কি তার বিষ-ধার কমে যায়, মা?' সাংবাদিক শাহেদ মোহাম্মদ আলী 'কী চমৎকার দেখা গেল!' বলে এক বাক্যে শ্লেষ মেশানো ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।
সাংবাদিক লুৎফুর রহমান হিমেল ফেসবুকে লেখেন, 'মুলা শাহবাগে ঝোলানো ছিল, মতিঝিলেও ঝোলানো হইয়াছিল।
কিন্তু আজি এই ক্ষণে মুলার জায়গা দখলে নিয়াছে আপেল (আপিল)। কেহ কেহ ইহাকে আপিলও বলিয়া থাকেন।
আদালতে কোনো রায় হইলে পরে ইহা ঝুলানো হয়। ইহা ঝুলাইয়াও মুলার ন্যায় ফল মিলে।
মুলানুসারীরা দিনে দিনে আপেলানুসারী হইয়া উঠিয়াছেন। দেশ আগাইয়া চলিতেছে। খুব ভালো বোধ করিতেছি।'
গণমাধ্যমকর্মী পরিমল মজুমদার মামলার দুই পক্ষের আইনজীবীদের প্রতি ইঙ্গিত করে লেখেন, 'আজকে কেনো কোনো নেতাকে দেখলাম, চুরি করার পর বমাল ধরা পড়লে যেমন মুখ-চোখ হয় ঠিক তেমন। আবার কাউরে দেখলাম ক্লোজআপ হাসি মুখে।'
সাংবাদিক হায়দার আলী লেখেন, 'বাবা, তুমি বলছ গোলাম আযম বড় রাজাকার, কিন্তু তাঁর তো ফাঁসি হলো না। ছোট রাজাকারদের ফাঁসি হয়, বড় রাজাকারের ফাঁসি হয় না কেন? আদালতের রায়ের কথা শুনে আমার ছেলে ঋদ্ধির এমন প্রশ্ন শুনে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। ঋদ্ধির প্রশ্নের কী উত্তর দেব আপনারা কেউ কি বলতে পারেন?'
এদিকে শিবিরের ফেসবুক গ্রুপ নিউ বাঁশের কেল্লা রায়ের পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সহিংস কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে এক স্ট্যাটাসে। এতে বলা হয়, 'বিতর্কিত রায়ের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে করণীয় বাংলাদেশের প্রত্যেক পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ক্যাম্পাস দখল, টানা অবরোধ, যেখানেই ছাত্রলীগ, সেখানেই প্রতিরোধ। সব আওয়ামী লীগের অফিস গুঁড়িয়ে দেওয়া, ভুয়া রায় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ।'
Click This Link
©somewhere in net ltd.