নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
[প্রতি বছর হাজার হাজার শ্রমিক লাভজনক চাকরি পাওয়ার তীব্র আকাক্ষা নিয়ে নতুন কোনো দেশে পৌঁছায়। কিন্তু সেখানে পৌঁছার পর তাদের স্বপ্ন হয় চূর্ণবিচূর্ণ। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে যাওয়া বাংলাদেশী শ্রমিকদের করুণ কাহিনী উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। বিদেশি পত্রিকা থেকে ভাষান্তর করেছেন ইমামুল হক শামীম]
সফিউল্লাহ আমাদের একটি সরু সিঁড়িপথ দিয়ে তার শোবার ঘরে নিয়ে গেল। যে ঘরটিতে বাতাসও ঠিকমতো প্রবেশ করে না। এটা তার অস্থায়ী বাসস্থান। ৩৩ বছর বয়স্ক এই বাংলাদেশীর চোখেমুখে অসহায়ত্ব। ‘দয়া করে কাউকে বলবেন না, আমি যেখানে কাজ করি’ সে খুব বিনীতভাবে চোখের ইশারায় বলল। আমরা সম্মত হলাম এবং তাতে তাকে খানিকটা দুশ্চিন্তামুক্ত মনে হলো। এমনকি তার মুখে ছোট্ট একটি হাসিও ফুটে উঠল যখন সে আমাদের তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানের ছবি দেখায়। ‘আমি তাদের মাসের পর মাস দেখছি না।’ সফিউল্লাহ বলল, ‘আমি শঙ্কিত হয়তো আমি তাদের আর দেখতে পাবো না। আমার মনে হয় আমি মালয়েশিয়াতে ফাঁদে পড়েছি।’ সফিউল্লাহর অনেক কারণ রয়েছে ভীত হওয়ার। তার টাকা নেই, পাসপোর্ট নেই এবং সে এমন একটি দেশে আটকে গেছে যারা অবৈধ বিদেশীদের ব্যাপারে কোনো সহানুভূতি দেখায় না।
বৈপরীত্য?
সফিউল্লাহ মালয়েশিয়া আসার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করেছিল। বাংলাদেশের একটি ম্যানপাওয়ার এজেন্ট এই অর্থের বিনিময়ে মালয়েশিয়ার একটি ইলেকট্রনিকস ফ্যাক্টরিতে ভালো চাকরি দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল।
‘আমি ভেবেছিলাম পরিবারের জন্য অনেক টাকা উপার্জন করতে পারব’ সে বলল। কিন্তু সে পারছে না। এমনকি মালয়েশিয়া আসার পর থেকে সে এক দিনের জন্যও কোনো ইলেকট্রনিকস ফ্যাক্টরিতে কাজ করেনি। সফিউল্লাহকে আপনারা দেখছেন একজন রিক্রুটমেন্ট জালিয়াতের শিকার হিসেবে। এবং এমন জালিয়াতির শিকার সে একা নয়।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছে, হাজার হাজার সম্ভবত লাখ লাখ অভিবাসী প্রতি বছর প্রতারিত হচ্ছে। এর প্রধান শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের মতো দেশ থেকে আসা শ্রমিকরা।
মূল হোতা কারা?
বিবেকবর্জিত রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট, লোভী চাকরিদাতা এবং দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অধিক মুনাফা করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা প্রদানের নামে বেছে নিয়েছে এই অবৈধ লাভজনক ব্যবসা।
একটি লাভজনক ব্যবসা
‘স্বদেশত্যাগী শ্রমিকরা নামসর্বস্ব কোম্পানিতে কাজের জন্য নিয়োগ পেত’ বললেন মালয়েশিয়ার পেনিনসুলার কাব এমপ্লয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন্স অফিসার আবদুল আজিজ বিন ইসমাইল। তিনি এখন সফিউল্লাহকে তার মামলা নিয়ে সাহায্য করছেন। তিনি বলেন, এসব কোম্পানির বাহ্যত কোনো ফ্যাক্টরি নেই, নেই কোনো স্থাপনা, কোনো কিছুই নেই। তার পরও কেন তাদের এত শ্রমিক প্রয়োজন?
এর মধ্যে একটা অবৈধ ব্যবসা আছে যা কোম্পানিগুলো ম্যানপাওয়ার এজেন্টদের কাছ থেকে পায়। তারা হয়তো মূল্যবান ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে।
‘এখানে একটি অদৃশ্য চুক্তির বিষয় আছে,’ বললেন বাংলাদেশী রেজিস্টার্ড ম্যানপাওয়ার এজেন্ট এ কে এম আসাদুজ্জামান। যার মালয়েশিয়ান কোম্পানিগুলোর সাথে রয়েছে ব্যাপক ব্যবসায়িক সম্পর্ক। তিনি বলেন, ভিসা এবং অনুমোদন পেতে প্রচুর টাকা মালয়েশিয়া যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃপ কঠোর সংগ্রাম করছে তাদের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে যা তাদের উঁচুপর্যায়ে কিছু ভুল কাজের অভিযোগে দূষিত হয়েছে। ২০০৮ সালে তৎকালীন ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক ওয়াহিদ ডন দুর্নীতি ও অবৈধভাবে ওয়ার্ক পারমিট প্রদান ও বাড়ানোর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিচার এখনো চলছে।
আইরিন ফার্নান্দেজ, যিনি মালয়েশিয়ার নেতৃস্থানীয় মানবাধিকার গ্র“প, ‘তেনাগানিতা’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বলেন, ‘দুর্নীতি’, যা প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পুরো প্রক্রিয়ার সাথে জড়িয়ে গেছে। অনেক মানুষ লাভবান হচ্ছে কিন্তু কেউ শ্রমিকদের দেখভাল করছে না।’
একমত প্রকাশ করে ইমিগ্রেশনের বর্তমান মহাপরিচালক আবদুল রহমান বিন ওসমান বলেন, পরিস্থিতি নাজুক এবং এ জন্য কিছু করা প্রয়োজন। ‘আমাদের ইমেজ বিপন্ন’, তিনি আলজাজিরা টেলিভিশনকে দেয়া এক সাাৎকারে এ কথা বলেন। আমরা চাকরিদাতাদের খোঁজ নেয়া শুরু করব। আমি আশা করছি এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারব।’
আচরণগত সমস্যা
সফিউল্লাহ তার এজেন্টকে ৩১০০ ডলার পরিশোধ করেছে। এই অর্থ জোগাড় করতে সে অনেক ধার করেছে এবং তার স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করেছে। তার এজেন্ট তাকে দুই বছরের চুক্তির ওয়াদা করেছে এবং বলেছে মাসে ১০০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (৩০০ ডলার) আয় করবে। কিন্তু ইলেকট্রনিকস চাকরি এবং মোটা অঙ্কের বেতন সব কিছুই বাস্তবে ব্যর্থ হয়েছে। ‘আমাদের সাবান ফ্যাক্টরি, ফার্নিচার ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করতে হয়েছে’ সফিউল্লাহ বলেন। আমরা মাসে প্রায় ৩৫০ রিঙ্গিত (১০০ ডলার) পেতাম। তা থেকে ১৫০ রিঙ্গিত (৪০ ডলার) লেভি বা সরকারি করের জন্য কেটে নিত। আমরা কিভাবে বেঁচে থাকব শুধু ২৬০ রিঙ্গিত দিয়ে?’
সফিউল্লাহর চাকরিদাতা ‘মানাক এসডিএন বিএইডি’ এটা অস্বীকার করল। পরিচালক মানিক্যাম পেরুমাল বলেন, সফিউল্লাহ যখন মালয়েশিয়ায় আসে সে সময় ইলেকট্রনিকস ফ্যাক্টরিতে চাকরি পর্যাপ্ত ছিল না। তার জন্য অন্য চাকরি ছিল। কিন্তু বাংলাদেশী প্রবাসীরা অন্য চাকরি করতে আগ্রহী ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।
মূল্য পরিশোধ
২০০৮ সালের জুন মাসে সফিউল্লাহ এবং তার অপর ২৯ জন সহযোগী অচিন্তনীয় কাজটি করে। তারা পালায়। ‘আমরা বেপরোয়া হয়ে যাই। আমরা বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছিলাম না। আমরা ভাবলাম আমাদের এটা ছাড়া উচিত এবং সাহায্য চাওয়া প্রয়োজন।’ তারা তাদের পাসপোর্ট ছাড়াই বের হয়েছিল। যখন তারা প্রথম মালয়েশিয়া পৌঁছায় তখনই মানাক তাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে। এটা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। ইমিগ্রেশন কর্তৃপকে ফাঁকি দিয়ে পালানো মানেই গ্রেফতার এবং জেল। ‘আমরা রাস্তায় ঘুমিয়েছি এবং বাজে চাকরি করেছি বেঁচে থাকার জন্য’ সফিউল্লাহ বললেন।
প্রবাসী অধিকার কর্মী এবং মালয়েশিয়ান সংসদ সদস্য চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, শ্রমিকদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার এ চর্চা অনৈতিক। এটা মালিকদেরকে শ্রমিকদের কাছ থেকে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিতে প্রভাবিত করবে।
সান্তিয়াগো আরো বলেন, ‘প্রচুর শ্রমিক অভিযোগ করেছেন, কোম্পানি তাদের পাসপোর্ট মালিকদের কাছে রাখার ফলে তারা ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে । তিনি মনে করেন পুরো মাইগ্রেন্ট ব্যবস্থাটা শোষণমূলক।
বিপজ্জনক জীবনযাত্রা
মাসের পর মাস সফিউল্লাহ বিপজ্জনক জীবন যাপন করেছে। সে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশী দূতাবাসে গিয়েছে। সেখানে সে আবিষ্কার করেছে সমস্যার স্তূপ। দূতাবাস পরিশ্রান্ত কখনো কখনো ক্ষুব্ধ বালাদেশীদের দ্বারা পরিবেষ্টিত। সবাই তার মতো দুঃখের গল্প শোনাতে চায়। দিনের বেলা তারা অপো করে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে। গোটা কয়েক ডকুমেন্টস দেখাতে পারে তাদের পরিচয় প্রমাণের জন্য। বেশির ভাগ বলছে, তারা বিমান থেকে নামার পরপরই তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নিয়েছে। তারা সবাই একটি অচেনা ভূমিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
সিঙ্গাপুর : একই চিত্র
সিঙ্গাপুরে আসাদ মাতবর, ইয়েজ উদ্দিন মাতবর একই রকম দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। ৩৮ বছর বয়স্ক এই যুবকও অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছে। তার এ দুরবস্থা অফিসিয়াল কাগজপত্রের অভাবে নয়। সে একটি কোম্পানিতে চাকরি করা অবস্থায় সরকারি তদন্তের জালে আটকে পড়েছে। পাঁচ বছর আগে বেতন নিয়ে সমস্যা হওয়ার কারণে সে কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল। সিঙ্গাপুরের জনশক্তি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছিল।
‘তারা খুঁজে পেল যে আমার বস অবৈধ কাজ করছিল।’ এর পর থেকে চলছে তার দুঃসহ জীবন।
সফিউল্লাহর মতো মাতবর তার চাকরির জন্য একজন ম্যানপাওয়ার এজেন্টকে মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করেছিল। এজেন্ট তাকে বলেছিল সে একটি কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করবে। কিন্তু ২০০১ সালে সিঙ্গাপুরে পৌঁছে সে দেখতে পায় এখানে তার জন্য কোনো কনস্ট্রাকশন চাকরি নেই। পরিবর্তে তাকে পাঠানো হলো একটি বিনোদন পার্কে। দুই বছর যাবৎ সে আরো অনেক খারাপ চাকরি করেছে।
বেতন সমস্যার কারণে এ ধরনের অবৈধ নিয়োগের খবর প্রকাশ পেতে থাকল। মাতবর আশা করছিল খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে যাতে সে বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে যেতে পারে। পরিবর্তে তাকে বলা হয়েছে সিঙ্গাপুরে থাকতে তদন্তে সহায়তা করার জন্য।
‘তারা আমার পাসের মেয়াদ দুই সপ্তাহের জন্য বাড়াল। পরে আরো দু’সপ্তাহ এবং আরো দু’সপ্তাহ।’ মাতব্বর বিভিন্ন ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্পসহ একটি ছেঁড়া ডকুমেন্ট দেখাল। ‘এখানে থাকার জন্য কোনো কাজ নেই, ভালো কোনো জায়গা নেই’ সে বলল।
জনশক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, ‘আসাদ মাতবর, ইয়েজউদ্দিন মাতবরের জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের তদন্তের সাী হিসেবে সিঙ্গাপুরে থাকা প্রয়োজন। মামলা শেষ হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের অস্থায়ী চাকরি স্কিমের আওতায় সে চাকরি খুঁজতে সমর্থ হয়েছে। তবে সেখানে তার জন্য কোনো সম্ভাবনাময় চাকরি নেই অথবা নেই কোনো চাকরিদাতা।’
মাতবর শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর ছেড়েছে। সে বলল, সে শুধু বেঁচে থাকার জন্য আইন ভঙ্গ করে কিছু কাজের ব্যবস্থা করেছিল এবং আরো কিছু অবৈধ নিম্নমানের কাজ করেছিল।
অস্তিত্বহীন চাকরি
সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত অন্য প্রবাসী শ্রমিকরা দেশটি ত্যাগ করতে চাচ্ছে না। তারা সেখানে থাকার জন্য কঠোর সংগ্রাম করছে।
সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী মালিকপক্ষ তাদের অধীনে যেসব বিদেশী শ্রমিক কাজ করছে তাদের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করতে পারে। এ ধরনের ছাঁটাই অনুমোদনের কারণে অসাধু কোম্পানিগুলো শত শত কখনো হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমিককে ভিসা পাইয়ে দেয়ার নাম করে অবৈধ লেনদেন করে থাকে। তাদের কাছ থেকে আদায় করে রিক্রুটমেন্ট ফি। এবং তারপর চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়।
‘এ ধরনের নিয়োগদাতা কোম্পানিগুলোর বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই’ বললেন জন গি। তিনি সিঙ্গাপুর অ্যাডভোকেসি গ্র“প ‘ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু’-এর প্রেসিডেন্ট।
‘দীর্ঘদিন যাবৎ এ ধরনের সমস্যা চলছে, কিন্তু এটা চরম আকার ধারণ করে ২০০৮ সালের শেষের দিকে। যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল।’
জনশক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, তারা অনেকগুলো মামলার তদন্ত করছে। দোষীদের জরিমানা করা হতে পারে এবং বাজে মালিকদের জেলেও প্রেরণ করা হতে পারে। যেসব শ্রমিক জালিয়াতের শিকার হয়েছে তারা স্বস্তি পেতে পারে। তবে যারা সিঙ্গাপুরের বাইরে এজেন্টদের রিক্রুটমেন্ট ফি প্রদান করেছে তাদের ফি আদায়ের জন্য মন্ত্রণালয় কোনো অবস্থান নেবে না।
এত বড় অঙ্কের অর্থের তি অনেকের জন্য হতে পারে বিপর্যয়কর এবং হৃদয়বিদারক। কিছু শ্রমিক কখনোই এ থেকে উদ্ধার পাবে না।
আবদুল ওয়াহাবের গল্প
২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আবদুল ওয়াহাবকে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশগামী একটি বিমানে তোলা হলো তাকে বাড়ি পাঠানোর জন্য। তার পকেটে ছিল মাত্র ৬০০ ডলার। ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া। এটাই ছিল তার একমাত্র অর্থ যা সে তার চার মাসের অভাবের সময় অর্জন করেছে। সিঙ্গাপুরে আসার আগে, ওয়াহাবের রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট তাকে আশ্বস্ত করেছিল ওভারটাইমসহ একটি ভালো চাকরির। কিন্তু পৌঁছার পর অন্যদের মতোই সে দেখতে পেল তার কোম্পানিতে তার জন্য কোনো চাকরি নেই। সে তার রিক্রুটমেন্ট এজেন্টকে ফি হিসেবে ৬০০০ ডলার পরিশোধ করেছিল।
ওয়াহাবের কোনো ধারণা ছিল না তার দেশে ফেরার বিষয়ে সে তার স্ত্রী ও সন্তানদের কী বলবে। শেষ পর্যন্ত কোনো ব্যাখ্যারই প্রয়োজন পড়েনি। ২৬ দিন পর ওয়াহাব মারা যান। তার স্ত্রী নাসরিন জানান, সে ছিল বিষন্ন ও হতাশ। ‘সে ঘুমাতে ও খেতে পারত না এবং খুব বেশি কথাও বলত না। তার হার্টের সমস্যাও দেখা দিয়েছিল।’
নাসরিন এখন সংগ্রাম করছে তার দুটো শিশু সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার। তার স্বামী সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে তারা ছিল একটি মধ্যবিত্ত পরিবার। এখন সে কোনোভাবে জীবন ধারণ করতে পারছে।
এগিয়ে যাওয়ার পথ
দারিদ্র্য ও অভাব। ভাগ্যর লিখন । সফিউল্লাহ চেষ্টা করছে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার। ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী আবদুল আজিজ কুয়ালালামপুর থেকে কিছু দূরে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
সফিউল্লাহর বর্তমান বস তাকে পছন্দ করে এবং তার প্রতিশ্র“তির বিষয়ে সচেতন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সফিউল্লাহ জানে তার সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান করতে হবে অথবা সে তার চাকরি টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হবে না। ‘আমরা আমাদের পাসপোর্টের বিষয়ে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। আমরা আশা করছি শিগগিরই তা ফেরত পাবো।’
সে এখন মাসে ৬০০ রিঙ্গিত (১৮০ ডলার) উপার্জন করে। ‘আমি অবশেষে কিছু টাকা বাড়িতে পাঠাতে সমর্থ হচ্ছি’ সফিউল্লাহ বলল।
এখন সফিউল্লাহ তার মাথা নিচু করে রাখছে। প্রার্থনা করছে একটি ভালো সময়ের জন্য। তার স্ত্রী ও সন্তানের ফটো তাকে মনে করে দিচ্ছে কেন সে বাংলাদেশ ছেড়েছে। একটি ভালো জীবনের আশায় মানুষ এভাবে দেশ ছাড়ছে।
[অভিবাসী সম্পর্কিত কিছু তথ্য
দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায়, সিঙ্গাপুরেই সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক শ্রমিক রয়েছে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন, যেখানে মালয়েশিয়ায় রয়েছে ১.৬ মিলিয়ন।
দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (২০০৬) এর মতে, ২০০৫-২০১৫ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড (হংকং ও তাইওয়ানসহ) এমন একটি অবস্থার মোকাবেলা করবে যখন শ্রম চাহিদা প্রবৃদ্ধি অতিক্রম করবে কর্মম বয়স্ক মানুষের প্রবৃদ্ধি।
ফিলিপাইন ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, ২০০৬ সালের শেষে সেখানে ফিলিপিনো প্রবাসী শ্রমিক ছিল ৮.২ মিলিয়ন।
পাঁচ মিলিয়ন ভারতীয় শ্রমিক রয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলে। যার মধ্যে দুই মিলিয়ন কেরালা রাজ্যের।]
এখান থেকে সরাসরি কপি করা
৩১ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:১০
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ভয়াবহ পোস্ট! ++++