নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
১৭/১৮ বছরের ছেলেটা কাঁদছে, বড্ড বেমানান লাগছে তার কান্নাটা।
দেশে ফেরার পথে সবাই যেখানে হাসিখুশি থাকে সেখানে সদ্য কিশোরে পা রাখা এই ছেলেটা কাদছে কেন?
গত ৬ই আগষ্ট ২দিনের ছুটিতে দেশে যাচ্ছিলাম, এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছি এমন সময় চোখে পরে বড্ড বেমানান এই দৃশ্যটা।
এতদিন জানতাম বাংলাদশ বিমাল সিডিউল মিস করে কিন্তু এখন দেখছি, মালিন্দো এয়ার বিমানের চেয়েও খারাপ সার্ভিস দিচ্ছে। ৫টার ফ্লাইট ৯টা করা হয়েছে, জানিনা আর পিছানো হবে কিনা। সেই ২টার সময় এয়ারপোর্টে এসে বসে আছি, বিরক্তির মাত্রা যেন ১০০ ডিগ্রীর উপরে পৌছে গেছে।
দেশে যাওয়ার পথে কিংবা সিঙ্গাপুর আসাতে আমার আনন্দ কিংবা আবেগ কোনটাই নাই, প্রতি বছরেই দুই একবার যাওয়া হয় ছোট্ট ছুটিতে। তাছাড়া ১০ বছর পরবাসে থাকার পর সব আবেগ আনন্দ নিশ্চিত করেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, আমারও তাই হয়েছে।
নতুন ছেলেগুলি বিমানে উঠার সাথে সাথেই জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাবে, ৩৫ হাজার ফুট উপর থেকে দেশটাকে দেখতে চাইবে। আমিও প্রথম দুইবার এমন করেছি, জানালার পাশে সিট দেয়ার জন্য কাউন্টারে হাজার রিকুয়েষ্ট করেছি। আহা কি শান্তি লাগত, ৪ঘন্টা জার্নি ১ মিনিটের জন্যও চোখ বন্ধ করিনি। এখন যাওয়া আসার মাঝে কেবল খাবারের সময়টাই একটু সজাগ থাকি বাকি সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেই, প্রথম প্রথম ৩৫ হাজার ফুট উপরে ঘুম না হলেও এখন অনেক ভাল ঘুম হয়। নতুন ছেলেগুলি জানালার পাশে সিট না পেলে কেমন উকি ঝুকি দেয়ার চেষ্টা করে একটু আকাশ দেখার জন্য, আমি অবশ্যক নতুন কোন ছেলেকে এমন করতে দেখলে জানালার পাশের সিট ছেড়ে দেই। ছেলেটা দেখুক মনের মত করে আকাশ, জানতে শিখুক তার আকাশটা কত বড়।
প্রথমবার যখন আমি বিমানে উঠি তখন জানালার পাশের ছিটের জন্য খুব চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কাউন্টার থেকে দিতে পারেনি, আবার ভিতরে সবাই নতুন তাই পাশের জনও ছাড়তে চাইনি। আমি উকিঝুকি দিয়ে আকাশ দেখার চেষ্টা করেছিলাম। আবেগ আর কষ্ট কাকে বলে সেইদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম, বুকের ভিতরে যে একট হৃদয় থাকে সেইদিন প্রথম অনুভব করলাম। বাবার সাথে আমার সব সময় কথা কাটাকাটি চলত অথচ বাবাকে জড়ায়ে ধরে কেঁদে ফেল্লাম, চোখের পানি লোকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করতে কত কিছুর অভিনয় করতে হল। কথা বলা বন্ধ করে দিলাম, শুধু হাতের ইশারায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। বাড়ির বাহিরে আসার পর ইচ্ছে হল নিজের আড্ডা দেয়ার ঘড়টা একটু দেখতে কিন্তু ফুফাতো ভাই আটকিয়ে দিল, বিদায় মূহুর্তে নাকি পিছনে ফিরতে নেই। সেইদিন বুঝতে পারলাম দেশ মাটি এবং মানুষগুলিকে আমি কত ভালবাসি।
এয়ারপোর্টে গেইটে যখন বাবাকে আটকিয়ে দিল তখন আমি একা বড্ড একা এক পৃথিবীতে অবস্থান করছি, হাতে পাসপোর্ট কাধে ব্যাগ। কেও সাহায্য করার নেই, নিজের পৃথিবীতে নিজেই নিজের সাহায্য কারি হতে হল। এক মাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করেই শুরু করলাম পথচলা। গ্লাসের ফাক দিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে মলিন সেই হাসিটা দিয়ে হাত নেরে বিদায় নিলাম। পা রাখলাম আমার নিজের ভূবনে।
ঠিক ১৬মাস পর আমি প্রথম দেশে আসি, ঐ মূহুর্তের আনন্দ কাওকে বলে বুঝানো যাবেনা। চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে বাবা মা ভাই বোন সব আত্নীয় স্বজনদের ছবি। কখন আসবে সেই মূহুর্ত, কবে পৌছাব আমার প্রিয় মাতৃভূমিতে।
আমি নিজে জানি কতটুকু আনন্দ দেশে ফেরার পথে, কিন্তু আজ ছেলেটির কান্না দেখে আমি বড় হতাশ হলাম। কিছুটা কৌতুহল নিয়ে ছেলেটার পাশে গিয়ে বসলাম, আস্তে করে জানতে চাইলাম "ভাই তুমি কাদঁছ কেন?"
উত্তরে ছেলেটি যা বল্ল সব শুনে নিজেই থ হয়ে বসে থাকলাম। ছেলেটির ভিসার মেয়াদ শেষ এবং কোম্পানি ভিসা নবায়ন না করাতে দেশ ফিরে যেতে হচ্ছে, কিন্তু আসার সময় যে ঋণ করে আসছে তার কিছুই শেষ করতে পারেনি। এখন পরিবারের প্রতিটা মানুষ তার উপর খুব রাগ, এমনকি দেশে গেলেও বাড়িতে না ফেরার জন্য বলছে।
আমি পাশে থাকতেই ছেলেটি তার বোনের সাথে কথা বল্ল, অনেক অনুরোধ করছে বোনকে বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলার জন্য।
কথাটা ছিল কিছুটা এমন "আপা তর দুইটা পায়ে দরি, আব্বারে একটু বুঝাইয়া কও। আমি ইচ্ছা কইরা আইতাছিনা, কোম্পানির ভিসার মেয়াদ শেষ তাই পাঠাইয়া দিতাছে"
কিন্তু বোন তার কর্কশ কন্ঠে উত্তর দিচ্ছিল "আগে বাড়িতে আস, পরে বোঝামু ঠেলা"
অনেকের সাথে কথা বলে ছেলেটা হতাশ হয়ে বসে বসে কাঁদছে, আমি অসহায়ের মত পাশে বসে থাকলাম। অনেকটা সময় পর, শুধু বল্লাম তোমার পাসপোর্টের একটা কপি দিয়ে যাও তোমার জন্য কিছু করার চেষ্টা করব। সাথে সাথেই ছেলেটা আমার হাতে একটা পাসপোর্টের ফটোকপি দড়িয়ে দিল, কেমন জানি ছেলেটার চোখে আশার আলো দেখিয়ে দিয়েছি। আমি শুধু ভাবছি ছেলেটার জন্য কিছু একটা করতেই হবে, যে করেই হোক।
ছেলেটি আমাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিল, আমি এই পরিস্থিতিতে বেশিক্ষন থাকতে পারিনা তাই চলে এলাম।
পাউডার মুখে কাদঁতে নেই, জামায় দাগ লেগে যেতে পারে...........
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:২৫
এরশাদ বাদশা বলেছেন: এর চেয়েও ঘৃণ্য বিষয় আছে, জেনে থাকবেন হয়তো। প্রবাসে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে, সুখ-শান্তি জলাঞ্জলি দিয়ে পরিবারের মুখে, স্ত্রীর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যে মানুষটি নিরলস ত্যাগ করে যাচ্ছে, দেখা যায় তারই পাঠানো টাকায় পরকীয়ায় লিপ্ত হয় তার স্ত্রী। নিজই প্রত্যক্ষদর্শী এরকম ঘটনার। এর চে ঘৃণ্য আর কি হতে পারে বলুন?
৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৮
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এটা বেশীর ভাগ প্রবাসীর ক্ষেত্রে হয়। অবশ্য দেশে কিছু করা যায় না বলেই এভাবে বাধা আসে পরিবার থেকে। আমাকেও সবসময় পরিবার থেকে দেশে একেবারে আসতে নিরুৎসাহী করা হতো। কারণ, দেশে চাকুরির অভাব, ব্যবসা সবার দ্বারা হয় না। আর বিদেশে মাস ঘুরলেই টাকা...
৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৪৮
নোমান প্রধান বলেছেন: মানুষ তো আর এটিএম না
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫
গেম চেঞ্জার বলেছেন: হায়রে মানুষ!!
পরিবার থেকে এই আচরণ!!
কত লোভী না হলে এই আচরণ কি করে? নিরাশ করার মতো একটা ঘটনা!! না জানি আরো কতো পরিবারে এইসব চলছে!!