নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
আমি খুব সহজে হতাশ হইনা, যদি কোন কারনে একবার হাতাশ হয়ে যায় তাখলে হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে দিন বা মাস এমনকি বছরও লেগে যায়। এমন হতাশা জীবনে একবার হয়েছিল, ২০০৯ সালে, কোম্পানিতে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গেল। ভাল হবে আশা করে কোম্পানি পরিবর্তন করলাম কিন্তু দেখা গেল এই কোম্পানিতে আসার পর নিজের পেট চালানোই দায় হয়ে গেল, তার উপর আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটা (ছোট কাকা) মারা গেছে। সব মিলিয়ে হতাশা দিন দিন বড়তেই থাকলো, কেমন যেন মনেহচ্ছে আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা আমি কিছুই পরাবনা।
এক দিকে নিজের পেটের চিন্তা অন্য দিকে সুদের মহাজনদের বাড়িতে তারা সব মিলিয়ে আমি এতটাই হতাশ হয়ে পরেছিলাম যে জীবন থেকে পালিয়ে বাচতে চাইলাম, মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে ডাকতে লাগলাম।
রাতে ঘুমাতে গেলে মনে হত যদি সকালের ভোরটা না দেখতাম তাখলে অনেক ভালহত, কিন্তু অভাগা ঠিকই সকালের ভোর দেখতে পেত।
একদিন জানতে পারলাম প্রজেক্টে যদি মারা যায় তাখলে ইন্সুরেন্সের একটা ভাল টাকা পাব যা দিয়ে সংসার দাড়িয়ে যাবে, সুদের মহাজনের চাপ থেকে সবাই বেচে যাবে। আমি স্থির করলাম ২৫ তলা বিল্ডিংএর উপরে গিয়েই কাজটা করতে হবে, সুযোগের সন্ধান করতে লাগলাম কখন কিভাবে জীবন থেকে বিদায় নেয়া যায়। একটা মানুষের চলে যাওয়াতে বেচে যাবে একটা পরিবার, এমন সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবেনা।
প্রতিরাতে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে নিজেকে বুঝাতে চাইতাম এই আমার শেষ কথা, কালকেই আমার পরিবারের সব ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু কোন এক অজানা কারনে আমি পারছিনা দূর্ঘটনার স্বীকার হতে, কোথায় যেন একটা বাধা। এমন করতে করতে প্রায় ১ বছর কেটে গেল, আমার সাথে পরিচয় হল এক মহা মানুষের যাকে বর্তমানে তরুন উদ্যোক্তাদের অনেকেই চিনে। যিনি একটাই স্লোগান বয়ে বেরাচ্ছেন "চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব" সেই মহা মানুষ আমার সবচেয়ে প্রিয় Munir Hasan মুনির হাসান স্যার।
ফেইসবুকে পরিচয়, দিনের পর দিন ঘন্টার পর ঘন্টা স্যার আমার সাথে কথা বলত। আমি আমার হতাশার কথা গুলি স্যারকে বল্লাম শুধু আত্নহত্যার বিষয়টা বাদে, স্যার নিজ থেকে অনেক প্রশ্ন করলেন অনেক উত্তর দিলেন। স্যারের প্রতিটি কথাতেই কেমন একটা বেচে থাকার নতুন আশা দেখতে পেলাম, নিজেকে প্রশ্ন করলাম "আমি কেন পারবনা?"
একজন মানুষ অন্য একজন মানুষকে এতটুকু অনুপ্রেরনা দিতেপারে মুনির স্যারের সাথে পরিচয় না হলে বুঝতেই পারতামনা।
মুনির স্যারের সাথে পরিচয়ের সূত্রে পরিচয় হল Sajjat Hossain সাজ্জাদ ভাইয়ের সাথে, এই একটা মানুষ যে কিনা দিনের পর দিন রাতের পর রাত আমাকে বেচে থাকার অক্সিজেন দিয়ে গেছে।
সাজ্জাত ভাইয়ের কাছেও লোকিয়ে রাখলাম আত্নহত্যার বিষয়টা, তবে হতাশার সব কথাই শেয়ার করলাম।
সাজ্জাত ভাই নিজ থেকেই একদিন আমাকে প্রশ্ন করলেন "সিঙ্গাপুরে নিজেকে আপগ্রেড করা জন্য ট্রাই করেন" পর দিন থেকে শুরু হল কিছু একটা করতে হবে এই চিন্তা। এই দুইটা মানুষের সাথে পরিচয়ের ১ বছর পরে হেরে যাওয়ার সব চিন্তা মাথা থেকে মুছে গেল, একটাই কথা কানের কাছে বাজতে থাকল "হেরে যাওয়ার জন্য আমার জন্ম হয়নি আমাকে জিততেই হবে, আমি জিতবই ইনশাল্লাহ"
কোম্পানির কাজ শেষ করে অপেক্ষায় আছি একজন বসের সাথে কথা বলার জন্য, উনার সাথে আমার কখনো ভাল সম্পর্ক ছিলনা। এই মানুষটা সব সময় কাজ আর কাজের কথা বলতো আর আমি ছিলাম এক নাম্বার কাম চোর, তাই সব সময় উনার চোখে আমি আর আমার চোখে উনি খারাপ মানুষ ছিলেন।
বস অফিসে আসলো রাত্রের প্রায় ৮টা বাজে, এই প্রথম আমাকে এত রাত্রে অফিসে দেখে হাসি দিয়ে বলে উঠল "কিরে আজকে তুই এত রাত্রে অফিসে?"
বসকে খুলেই বল্লাম আমি কাজ করতে চাই, অনেক কাজ। রাত্র দিনে ২৪ ঘন্টাই কাজ করব, শুধু বস নিজের হাতে আমাকে কাজ দিতে হবে।
বস একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে অফিসের সব চাবি আমার হাতে দিয়ে বল্ল প্রতিদিন রাত্রের ১০ পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবি? আমি বিনা বাক্যে মেনে নিলাম।
শুরু করে দিলাম সিরিউরিটির মত, মনির স্যার আর সাজ্জাত ভাই দুই জনই বল্ল কাজের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে দিতে তাই একটা কাজ নিলাম লম্বা সময় নিয়ে করার জন্য।
দেখতে দেখতে বস নিজ থেকে অনেক দরনের কাজ আমার হাতে দিলেন, এমনকি বসের ব্যাক্তিগত সব কাজও আমার হাতে দিলেন।
দীর্ঘ এক বছর বসের সাথে কাজ করলাম, মনে হল মানুষটাকে তুলনা করার মত কোন উপমা নেই এই পৃথিবীতে।
বস হাসি মুখে আমাকে বল্ল, "শরিফ কাজ শিখ, জীবনে অনকে কিছুই পাবি"
আমার বন্ধুরা যখন নিজেদের কাজ শেষ করে আরামছে আড্ডা দিত আমি তখন বসের সাথে রাত জেগে টেন্ডার তৈরী করতাম।
যেখানে এক ঘন্টা কাজ করলে সহকর্মীরা ওভার টাইম চাইতো সেখানে আমি রাতদিন পরে থাকতাম অফিসে, কোন প্রকার ওভারটাইম ক্লেইম করা ছাড়া। এমনো সময় গেছে সারা দিন কাজ করে শেষ করতে পারিনি আবার সারা রাত্র জেগে জেগে কাজ শেষ করে ভোরে বসের হাতে কাজ সাবমিট করে বাসায় ফিরেছি।
আমার কাজের বাহিরে আলাদা কোন জীবন ছিলনা, আমি প্রেয়সি কাল তিল দেখার চেয়ে বেশি ভালবাসতাম আমার কাজকে। দেখতে দেখতে কোম্পানিতে একটা মাল্টি টাচ ওয়ার্কার হয়ে গেলাম, একাউন্ট, এডমিন, টেন্ডার, সেফটি, মডেলিং, সেক্রেটারিয়াল সহ একটা কোম্পানির যত কাজ আছে সবই আমার হাত দিতে হত।
এই রকম কাজ করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছি অনেক বন্ধু যারা আমার সিঙ্গাপুরের শুরুতে ভাল বন্ধু হিসাবে পাশে ছিল, সময় দিতে পারিনি বলে সবাই চলে গেছে। কখনো কখনো বড্ড একা লাগতো, হাপিয়ে উঠতাম একটু বিশ্রাম চাইতাম। তখনি সাজ্জাত ভাই আর মুনির স্যারের সাথে আড্ডা দিতাম।
এত হারানো আর পাওয়ার সব হিসাব শেষে যখন দেখি, মিলিয়ান ডলারের প্রজেক্ট আমার কাধে দিয়ে বস শান্তিতে ঘুমাতে পারে তখন নিজের অজান্তেই নিজে বলে উঠি "আমি পেরেছি, আমি জিতে গেছি"
কাজের শেষে সবাই বাসায় ফিরে যাওয়ার সময় বস যখন একটা টিকেট হাতে দিয়ে বলে "আমার ওভারসিসের প্রজেক্টে পাঠানোর জন্য কাওকে বিশ্বাস করতে পারছিনা তুই কি একটু দেখে আসবি"
বুকে হাত দিয়ে তখন বলতে পারি, এই বিশ্বাস আমি অর্জন করতে পেরেছি। হ্যা আমি পারব।
কোন একদিন বাবার সাথে ব্যবসা করতে গিয়ে, এই বাজার ঐ বাজার ঘুরে বেড়াতাম। আর আজকে চাকরির জন্য যখন এই দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে ফিরি তখন মনে পরে ছোট্ট সময় গাড়িতে চড়তে পারতামনা বলে বাড়ির বাহিরে খুব বেশি একটা যাওয়া হতনা কিন্তু আজ হাজার হাজার মাইল এমনকি এক মহাদেশ দেশে অন্য মহাদেশ ছুটে চলি কোন প্রকার ঝিমুনি ছাড়াই।
জীবন তোমাকে হেরে যাওয়ার জন্য শত কারন দেখাবে, তুমি বুকে হাত দিয়ে জীবনকে হাজারো কারন দেখিয়ে দাও কেন তোমাকে জিততে হবে, কেন তোমাকে বাচতেই হবে। আত্নহত্যা সব কিছুর সমাধান করেনা, বেচে থেকে নিজের হাতে সমাধান করার মাঝে একটা অন্য রকম মজা আছে
(ধূলি জমে থাকা ডাইরির পাতাটা উল্টাতেই জীবনের এই গল্পটা পেলাম, সংক্ষিপ্ত করে সবার সাথে শেয়ার করলা। আশা করি ভুল গুলি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
২| ২২ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৩:০১
মোঃ ফখরুল ইসলাম ফখরুল বলেছেন: সুন্দর
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:২৩
হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: চমৎকার ভাই, ভাল লাগল...................