![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রিয় মা ও বাবা,
প্রবাসের মাটিতে আজ আমার পাঁচ বছর অতিক্রম হলো।আগামী মাসে আমি দেশে আসছি, এই পাঁচ বছরের উপার্জন খরচ হয়েছে আমার ভিসা বাবদ তোমরা যা ধার দেনা করেছিলে তা শোধ করতে এবং গত বছর দেশে গিয়েছিলাম তার খরচ মেটাতে,এখন আমার হাত খালি, আমি হয়তো আর বিদেশে ফিরবো না,দেশেই কিছু একটা করার চেষ্টা করবো।
তোমাদের সুচিন্তত মতামত জানাবে।
ইতি
তোমাদেরই স্নেহধন্য
জামাল।
বাবা লিখছেন,
প্রিয় জামাল, তোমার চিঠি পেয়ে খুব খুশি হয়েছি যে তুমি দেশে আসবে,বাকি তোমার মা তোমাকে বিস্তারিত লিখবে।
মা লিখছেন,
বাবা জামাল, আমি অনেক খুশি হয়েছি যে তুই দেশে আসছিস,কতো দিন আমার বুকের ধনকে দেখিনা,কিন্তু বাবা তুই কি জানিস আমাদের ঘরের অবস্থা?বর্ষাকালে ঘরের ভিতর পানি পড়ে,আমাদের থাকা দায় পড়ে যায়।
বর্তমানে গাছ এবং টিনের যা দাম, আত্মীয় স্বজন সবাই পরামর্শ দিচ্ছে পাকা ঘর তোলার জন্য। তুই কি ভেবেছিস দেশের সীমিত আয় রোজগার দিয়ে পাকা ঘর তুলতে পারবি? আমি শুধু তোকে পরিস্থিতিটা বললাম, বাকি তোর ইচ্ছা, ভালো থাকিস।
ইতি,
তোর মা।
প্রিয় মা বাবা,
আজ আমার ১০ বছর অতিক্রম হলো প্রবাস জীবনের, এরই ভেতর আমাদের নতুন পাকা ঘর তৈরি হয়েছে এবং যা ধার দেনা হয়েছিলো তা শোধ করেছি। আগামী মাসে দেশে আসছি পাকাপাকি ভাবে কেননা আমি তোমাদের অনেক মিস করি, দেশেই কিছু একটা করে সংসার চালাবো বলে স্থির করেছি, তোমাদের মতামতের অপেক্ষায়,
ইতি
তোমাদেরই স্নেহধন্য
জামাল।
মা লিখছেন
প্রিয় জামাল,তুই পাকাপাকি ভাবে দেশে আসছিস শুনে ভালো লাগছে কেননা আমাদের জন্য, এই সংসারের জন্য তুই অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিস।
তবে তোর ছোট বোন সালেহার বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভেবেছিস কি? তার তো বিয়ের বয়েস হলো বলে,আমার এই বুড়ো বয়েসে মেয়েটার বিয়েটা দেখে যেতে পারলে মড়েও আমার আত্মা শান্তি পাবে,তুই আমার কথা গুলা খারাপ ভাবে নিস না। ভালো থাকিস।
ইতি,
তোর মা।
প্রিয় মা ও জোহরা (স্ত্রী)
আগামী মাসে আমার ১৪ বছর হবে এই মরুভুমির দেশে, আমি এখন চরম হতাশ ও বিরক্ত, এবং এই হতাশা তা আমার নিজের প্রতি। যাইহোক আমি আগামী মাসে ভিসা কেন্সেল করে চলে আসবো তারপর যা হয় দেখা যাবে।ইতিমদে্্য্য বিয়ের সব ধার দেনা শোধ হয়েছে এবং মহান আল্লাহর কাছে হাজার কৃতজ্ঞতা যে বিয়ে আমরা যেমনটা আশা করেছিলাম তার চেয়ে ভালো ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
দেশেই ছোটোখাটো একটা মুদি দোকান দিয়ে সংসার চালাতে পারবো এই বিশ্বাস আমার আছে, কেননা শারীরিক কোন পরিশ্রামিক কাজ হয়তো আমাকে দিয়ে হবে না কারন আমার হাই ব্লাড প্রেসার ও সুগারের সমস্যা আছে। যদি আমাকে এখানে থাকতে হয় তবে আমার বেতনের সিংহ ভাগই খরচ হবে ডাক্তার ও ঔষধের জন্য।
ইতি,
জামাল।
স্ত্রী লিখছেন
প্রিয়তম জামাল,আমাদের বিয়ের এতগুলি বছর গত হয়ে গেল তোমার কাছে কিছু চাইবার মতো পরিস্থতি সৃষ্টি হয়নি,আজ চাইতে হচ্ছে।
তোমার ছোট ভাই কামালের বিয়ের পর তোমার মা এখন আমাকে সহ্যই করতে পারেনা,সবকিছুতে এখন কামালের বউ।
তাছাড়া আমি শুনেছি এই পাকা ঘর নাকি তোমার ভাইয়ের নামে লিখে দেয়ার পায়তারা চলছে, তেমনটা যদি হয় তাহলে আমি আমার একমাত্র ছেলেটাকে কোথায় যাবো?
তুমি দেশে চলে আসতে চাইছ সেটা ভালো কথা,আমারও তো মন চায় তোমাকে কাছে পেতে,কিন্তু একবার ভেবে দেখো মুদি দোকানের আয় দিয়ে কি আর একটা ঘর তোলা সম্ভব? সিমেন্ট লোহা আর লেবারের যা দাম।
এখন তুমি নিজে নিজে চিন্তা করে যা ভালো মনে হয় একটা সিদ্ধান্ত নাও।
ইতি
তোমারই
জোহরা।
প্রিয়তমা জোহরা,
গতকাল আমার ১৯ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে এই গালফে,গত ৪ বছরে আমাদের নতুন পাকাঘর হয়েছে এবং যেমনটা তুমি চেয়েছিলে তার চেয়ে ভালো হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।এখন আমার হাতে জমানো কোন টাকা নাই শুধু মাত্র কোম্পানিতে সার্ভিস বেনিফিট ছাড়া।
গত ১৯ বছরে ফ্যামিলি লাইফ কি আমি তা দেখিনি,দেখতে পারিনি,তারপরেও সান্তনা আছে এইটুকু আমি আমার পরিবারের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি জীবনের বাকি সময়টুকু ছেলে ও তোমাকে নিয়ে কাটিয়ে দেবো।
এই মাসে আমি চাকুরি থেকে রিজাইন করছি,ইনশাল্লাহ আগামী মাসে দেখা হবে।
ইতি
তোমারই
জামাল।
প্রিয়তম জামাল,
খুশি হয়েছি তোমার সিদ্ধান্ত জানতে পেরে যে তুমি দেশে চলে আসছ।
কিন্তু খোকা বলছে সে ইঞ্জিনিয়ারি পড়তে চায় এবং সে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ভাবে পাসও করেছে,সকল প্রবাসীর ছেলে মেয়েরা ঐ ইউনিভার্সিটিতেই লেখা পড়া করে।
এখন দরকার প্রথমে এককালীন ৪ লাখ ও প্রতি বছর ২ লাখ টাকা করে দিতে হবে,এক সাথে সব দিতে হবে না কিস্তি কিস্তি করে দিলেও হবে এমনটাই বলছে ইউনিভার্সিটি অথোরিটি।
এই মাসের ৩০ তারিখ প্রথম কিস্তির দেওয়ার শেষ সময়।
তোমার উত্তরের অপেক্ষা করছি।
ইতি
তোমারই
জোহরা।
তারপর
তারপরও জামালকে বেশ কয়েক বছর থাকতে হয়েছে এই প্রবাসে যতদিন না ছেলের লেখাপড়া শেষ না হয়।
একদিন কোন এক মায়াবী সন্ধায় জামালকে নিয়ে ছুটে চলেছে তার ট্যাক্সি, গন্তব্যে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।
দীর্ঘ ২৭ বছর প্রবাসে কাটিয়ে আজ সে ফিরে যাচ্ছে দেশে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে,হাই ব্লাড প্রেসার,সুগার, ব্যাক পেইন্ট ও আরো কিছু নাম না জানা অন্যান্য উপসর্গ।
কেনো যেন বার বার চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছে,কোথাও উকি ঝুকি মারছে হাশিখুশি পঁচিশ বছরের টগবগে এক জামালের মুখ,যে সোনার হরিণ ধরার
স্বপ্ন বুকে নিয়ে পা রেখেছিল মরুভুমির এই দেশে।
ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে ট্যাক্সি থেমে দাঁড়ালো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল ভবনের সামনে,ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফেরে জামাল।
পকেটে থেকে টাকা নিয়ে ভাড়া দেয় ট্যাক্সি চালককে,তখনই হাতে ওঠে আসে সাদা সবুজ ডোরাকাটা সেই পরিচিত ইনভেলাপ যা গত ২৭ বছর ধরে সে পেয়ে আসছে দেশ থেকে, এটাও তেমন একটি চিঠি যা গত দুই দিন আগে এসেছে এবং হাজারো কাজের ফাঁকে পকেটে রয়ে গেছে।খোলা হয়নি।
জামাল কি মনে চিঠিটা আবার পকেটে রেখে দিল।
২৭ বছরে এই প্রথম সে েকানো চিঠি পড়া থেকে বিরত রইলো।
কারন এখন যে আর চিঠি পড়ার সময় নাই।
স্পিকারে ঘোষণা করছে যাত্রীদের চেক ইন করার জন্য।
২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৯
মুহামমদল হািবব বলেছেন: ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য। ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৩
এমদাদ হোসেন জাবেদ বলেছেন: হ্যা লেখাটি সত্যিই আমার মতো প্রবাসীদের জন্য।
এটাই হলো প্রবাসীদের বাস্তবতা।
খুব শীঘ্রই ফিরে আসছি দেশে।