নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমারি মত.................।

তাজ - সৈয়দাবাদী ।

শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এম পিও ভুক্ত কলেজ

তাজ - সৈয়দাবাদী । › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা ও ধর্ম নিয়ে আলোচনা বনাম ফতোয়াবাজি

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৯


আবদুল গাফফার চৌধুরী

আগস্ট ১, ২০১৫

Abdul Gaffar Choudhuryরবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?”

অধুনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ধর্ম (ইসলাম) নিয়ে কোনো আলোচনা হলেই তাকে ধর্মদ্রোহিতা আখ্যা দেওয়া হয়। তাতে সমাজ এবং ধর্ম দুইয়েরই অগ্রগতি ব্যাহত হয়। এভাবে ধর্ম নিয়ে আলোচনার সব দ্বার বন্ধ করে সত্যানুসন্ধানের দ্বারই যে বন্ধ করে দেওয়া হয়, এই উপলব্ধি আমাদের রক্ষণশীল আলেম সমাজের একটা শ্রেণির মধ্যে নেই। তারা সহজেই একজন মুসলমানকেও ‘মুরতাদ’ ও ‘কাফের’ আখ্যা দেন। কিন্তু একজন মুসলমানকে ‘কাফের’ আখ্যা দেওয়ার আগে যে সব বিষয় বিবেচনা করতে হয়, যে সব শর্ত পূরণ করতে হয়, তার একটিও তারা করেন না। খবরের কাগজের উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট দেখে তারা কাউকে ‘কাফের’, ‘নাস্তিক’ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে ফতোয়া দেন।

অতীতে এই ফতোয়ার শিকার হয়েছেন কবি ইকবাল এবং কবি নজরুল ইসলামের মতো দুজন মনীষী কবিও। পরে তাঁরা উপমহাদেশের ‘মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত’ বলে সম্মানিত হয়েছেন। আমি মনীষী নই, একজন সামান্য মানুষ। সম্প্রতি নিউইয়র্কে একটি আলোচনা সভায় আরবি ভাষা ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে একাডেমিক আলোচনা করতে গিয়েই আমাকে এই ফতোয়াবাজির শিকার হতে হয়েছে। আমার ভাগ্য ভালো, প্রকৃত ওলামা-মাসায়েখরা আমার বিরুদ্ধে এই ফতোয়া দেননি। দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী এবং তাদের মিডিয়ার দ্বারা বিভ্রান্ত একশ্রেণির আলেম।

আমার বক্তব্য নিয়ে শোরগোল তুলেছে ঢাকা, নিউইয়র্ক ও লন্ডনের কয়েকটি বিএনপি ও জামায়াতপন্থী মিডিয়া। আমার বক্তব্য কাটছাঁট করে ছেপে তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি দ্বারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে চেয়েছে। সাধারণ মানুষ এই উদ্দেশ্য বুঝে ফেলায় তাদের প্রচারণা সফল হয়নি। তাদের মূল টার্গেট আমি ছিলাম না, ছিল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের সেক্যুলার পলিটিকস্। আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক একজন কলামিস্ট। আওয়ামী লীগই আমাকে রাষ্ট্রীয় খরচে নিউইয়র্কে পাঠিয়ে ধর্মের বিরুদ্ধে এ সব কথা বলিয়েছে এবং আওয়ামী লীগও ধর্মদ্রোহী দল এটা প্রমাণ করাই ছিল এই প্রচারণার উদ্দেশ্য। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আর কোনো ইস্যু না পেয়ে ধর্মের ঢাল ব্যবহার করাই ছিল এই অপপ্রচারের লক্ষ্য।

আমার নিউইয়র্কের বক্তব্য কাগজে প্রকাশিত হতে না হতেই কোনো ধর্মীয় ব্যক্তি বা ধর্মীয় সংগঠন নয়, বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের আমার বক্তব্যের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সংবাদ সম্মেলন ডাকা থেকেই এই অসৎ প্রচারণার আসল উদ্দেশ্য বোঝা যায়।

নিউইয়র্কে গত ৩ জুলাই শুক্রবারের আলোচনা সভায় আমি আল্লাহের অস্তিত্ব এবং মহানবীর (দ:) মর্যাদা নিয়ে কোনো কথাই বলিনি। আমি আলোচনা করেছি ভাষা ও ধর্মের সম্পর্ক বিষয়ে। পাকিস্তান আমলে প্রচারণা চালানো হত, বাংলা ভাষা হিন্দুদের ভাষা। এ প্রসঙ্গে আমি বলেছি, ভাষা কোনো বিশেষ ধর্মের বাহন নয়। আরবি ভাষা ইসলাম ধর্ম প্রচারিত হওয়ার বহু আগে থেকে প্রচলিত। পৌত্তলিকেরা এই ভাষার কথা বলত। সেই ভাষাতেই কোরান নাজেল হয়েছে এবং ইসলাম ধর্ম প্রচারিত হয়েছে।

আরবি ভাষা থেকেই আল্লাহর গুণবাচক বিশেষণগুলো এসেছে। যেমন রাহমান (দয়ালু), গাফফার (ক্ষমাশীল)। রাসুলুল্লাহর পিতার নাম ছিল আবদুল্লাহ্। অর্থাৎ আল্লাহর দাস। এই আল্লাহ শব্দও ইসলাম-পূর্ব যুগের। পৌত্তলিকরা তাদের দেবদেবীর নাম হিসেবে এগুলো ব্যবহার করত। মহানবী এ সব দেবদেবীর মূর্তি ভেঙে দেন। কিন্তু এই গুণবাচক শব্দগুলো আল্লাহর গুণবাচক বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

যেমন আমরা বলে থাকি, ‘আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান’। এই বিশেষণটি বাঙালি মুসলমানেরা আবিস্কার করেনি। তাদের বহু পূর্ব থেকে হিন্দু ও বৌদ্ধেরাও তাদের ভগবানের নামের সঙ্গে এই বিশেষণ ব্যবহার করে এসেছে। হিন্দুরা বলেন, ‘সর্বশক্তিমান পরম ব্রহ্ম’। এখন যদি কেউ বলেন, ‘সর্বশক্তিমান’ কথাটি হিন্দুদের দেবতার গুণবাচক বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং আমরা মুসলমানেরা তা পরে ব্যবহার করছি, তাহলে কি তিনি ‘কাফের’, ‘ধর্মদ্রোহী’ হয়ে যাবেন? হিন্দুদের ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’ (উপাস্য একজন, দ্বিতীয় কেহ নাই) কথাটির সঙ্গে মুসলমানের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ (আল্লাহ্ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই) কলেমার কি বিস্ময়কর মিল নেই?

এই মিলের একটাই অর্থ, সব ধর্মের সার সত্যই এক। আল্লাহকে গড, ভগবান, ঈশ্বর যে কোনো নামেই ডাকা হোক, তাতে কোনো ধর্মেরই অবমাননা হয় না। এই নাম এক ধর্ম আরেক ধর্ম থেকে সংগ্রহ করেছে এ কথা বলা হলে তাতে কি আল্লাহর অবমাননা করা হয়? যিনি সর্বশক্তিমান, তাঁর অবমাননা করা কি কোনো ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে সম্ভব? যারা এসব কথা বলেন, তাদের তওবা করা উচিত।

নিউইয়র্কের আলোচনা সভায় বলেছি, আমরা বাঙালি মুসলমানেরা অনেকে সময় আরবি নামের অর্থ না জেনে আরবিতে সন্তানের নাম রাখি। তাতে বড় ধরনের ভুলভ্রান্তি হয়। যেমন বাংলাদেশে অনেকের নাম আবু হোরায়রা। এই নামের অর্থ, ‘বিড়ালের বাবা’। রাসুলুল্লাহর (দ:) প্রিয় সাহাবা ছিলেন বিখ্যাত হাসিদবেত্তা। তিনি অনেক বিড়াল পুষতেন; সে জন্য রাসুলুল্লাহ্ (দ:) তাঁকে আদর করে ‘বিড়ালের বাবা’ ডাকতেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগের এই ঘটনার উল্লেখ করা হলে কি ওই হাদিসবেত্তা মনীষীর প্রতি কটাক্ষ করা হয়?

আমি বাংলাদেশের আবু হোরায়রা নামধারী এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করে দেখেছি, তিনি তার নামের অর্থ জানেন না। শুধু জানেন, এটা মহানবীর একজন সাহাবির নাম। আসলে আবু হোরায়রার নাম আবদুর রহমান ইবনে সাখর। তাঁর প্রতি ভক্তিবশত কেউ যদি সন্তানের নাম রাখতে চান, তাহলে এই আসল নামেই রাখবেন। বাংলাদেশে আরবি না-জানা অনেকে যে আবু হোয়াররা নাম রাখেন, তা ভক্তিবশত নয়, অজ্ঞতাবশত। আলোচনা সভায় আমি এই কথাই বলতে চেয়েছি।

এই প্রসঙ্গে একটি মজার কথা বলি, বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, তখন জেনারেল খলিলুর রহমান ছিলেন দেশের বর্ডারে স্মাগলিং বা চোরাচালান দমনের জন্য নিযুক্ত বাহিনীর প্রধান। বঙ্গবন্ধু তাঁকে ঠাট্টা করে ডাকতেন, ‘জেনারেল স্মাগলার’। এখন আমার প্রশ্ন, বঙ্গবন্ধু বা এই জেনারেলের প্রতি ভক্তিবশত কেউ কি জেনেশুনে নিজের সন্তানের নাম ‘জেনারেল স্মাগলার’ রাখবেন?

হযরত আবু বকরের (রা:) আসল নাম ছিল আবদুল্লাহ্ ইবনে আবু কুহাফোহ্। তাঁর পিতা আবু কুহাকাহ ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী। কিন্তু ছেলে পোষা ছাগল খুবই পছন্দ করতেন বলে তাঁকে আদর করে ডাকতেন, ‘আবু বকর’– ‘ছাগলের বাবা’। এসব কথা বলা কি ধর্মের অবমাননা? তাহলে তো ইসলামের ইতিহাস লেখা যাবে না।

আরেকটি কথা, বাঙালিদের ভাষা দন্ত্যমূলীয়। আরবি ভাষা কণ্ঠমূলীয়। কণ্ঠমূলীয় ভাষায় একটা অসুবিধা এই যে, কণ্ঠমূল থেকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করা না গেলে তার অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেমন, ‘ক্বুল’ শব্দের অর্থ, ‘তুমি বল’। কিন্তু আমরা অধিকাংশ বাঙালি মুসলমান উচ্চারণ করি, ‘কুল’; অর্থ, ‘তুমি খাও’। আমার নাম গাফফার বলা হয় এবং লেখাও হয়। কিন্তু কণ্ঠমূল থেকে ‘ঘাফফার’ (Ghaffar) উচ্চারণ করা না হলে আল্লাহর গুণবাচক এই শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয় এবং তাতেই বরং পাপ হয়। আল্লাহর নামগুলোও সঠিকভাবে উচ্চারণ না করে এবং ছহি উচ্চারণে কোরান পাঠ করতে না পেয়ে আমরা অনেকে এই পাপ এবং ধর্মের অবমাননা অনবরত করে চলেছি।

এ সব অসুবিধার কথা জেনেই আরবি ভাষাভাষী নন এমন জাতিগুলোর জন্য নিজস্ব ভাষার কোরান পাঠ, এমনকি নামাজ পড়ারও নির্দেশ দিয়েছেন পরবর্তীকালের কোনো কোনো ইসলামি শাস্ত্রবিদ। নব্য তুর্কির প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্ক যখন তুরস্কে আরবি ভাষায় নামাজ পড়া, কোরান পাঠ, এমনকি আজান দেওয়া বন্ধ করে তুর্কি ভাষায় তা করার বাধ্যতামূলক আইন করেছিলেন, তখন একশ্রেণির আলেম কামাল আতুতুর্কের সিদ্ধান্ত বেদাত ঘোষণা করে তিনি আর মুসলমান নন বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন।

এই সময় কামাল-সমর্থক আরেক দল আলেম সুন্নি মুসলমানদের ইমাম আবু হানিফার (রা:) ফতোয়ার উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন। তিনি ফতোয়া দিয়েছিলেন, “সবাই নিজের মাতৃভাষায় নামাজ পড়তে পারে্।”

[প্রিন্সিপালস অব ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স, শরিয়াবিদ ড. হাশিম কামালী, পৃষ্ঠা-৩৫]

পাকিস্তান ও আফগান্তিানের তালেবানেরা এবং বাংলাদেশের হেফাজতিরা নারীদের ক্লাস ফাইভের বেশি পড়তে দেওয়া যাবে না, নারীরা দেশের নেতৃত্বে আসতে পারবে না, নারীদের ঘরে বন্দি থাকতে হবে এবং তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না বলে ফতোয়া দেয়। এই ফতোয়া কি ইসলামসম্মত?

ইউরোপিয়ান ইতিহাসবিদদের লেখা আরব জাতির ইহিতাস পড়লেও দেখা যায়, প্রাক-ইসলাম এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগেও আরব নারীরা যে স্বাধীনতা ভোগ করেছে, সে স্বাধীনতা অর্জনে ইউরোপীয় নারীদের সময় লেগেছে আধুনিক কালের দু’শ বছর। রাসুলুল্লাহর প্রথম পত্মী বিবি খাদিজা নিজে স্বাধীনভাবে তাঁর ব্যবসা পরিচালনা করতেন এবং যুবক মোহাম্মদের (দ:) সততায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে তাঁর ব্যবসায়ের ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করেছিলেন।

খন্দকের যুদ্ধে হযরতের (দ:) আরেক পত্মী বিবি আয়েশা এবং মেয়ে বিবি ফাতিমা অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা কখনও উট এবং কখনও ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁরা মাথার চুল ঢেকে রেখে যুদ্ধের পোশাক পরে যুদ্ধ করেছেন। সর্বাঙ্গ-ঢাকা বোরকা পরে যুদ্ধ করেননি। ইসলামের সেই প্রাথমিক যুগে যেখানে রাসুলুল্লাহর (দ:) পরিবারের মহিলা সদস্যদের উট অথবা ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেখানে এই যুগে সউদি আরবে নারীদের মোটরগাড়ি ড্রাইভ করা ধর্মের নামে নিষিদ্ধ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা না মানায় কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত মহিলাকে দশটি বেত্রাঘাত খেতে হয়েছে।

এটা কি ইসলাম, না ইসলামের বিকৃতি ঘটিয়ে জন্ম নেওয়া কট্টর ওয়াহাবিতন্ত্র? বাংলাদেশের জামায়াতি ও হেফাজতিরা এই যে তন্ত্রের তান্ত্রিক। অথচ তারাই প্রকৃত ইসলামের হেফাজতকারী বলে নিজেদের দাবি করে।

নারী-নেতৃত্ব কি এ যুগেও হারাম? তাহলে হযরতের (দ:) মহাপ্রয়াণের বেশ কিছুকাল পর খেলাফতের উত্তরাধিকারীত্বের প্রশ্নে বিবি আয়েশার নেতৃত্ব মেনে নিয়ে একদন মুসলমান কী করে হযরত আলী (রা:) এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন আরেক দল মুসলমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন? মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নি বিভক্তি এবং দ্বন্দ্বের সূত্রপাত তো তখন থেকেই।

নিউইয়র্কের আলোচনা সভায় আমি আরবি ভাষা ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যে সব কথা বলেছি তা আমার বানানো কথা নয়। আরব ও ইসলামের ইতিহাস পাঠ করেই তা জেনেছি। তবে আমার জানার মধ্যে ভুল থাকতে পারে। অতীতের ইতিহাস লেখার ব্যাপারে অনেক ইতিহাসবিদের লেখাতেই তথ্য ও তার বিশ্লেষণে অমিল থাকে। আমি যদি ভুল ইতিহাস পাঠ করে থাকি, তাহলে কেউ তথ্য ও যুক্তির সাহায্যে আমার ভুল ধরিয়ে দিলে আমি তা সংশোধনে অবশ্যই রাজি আছি।

ভুল ধরিয়ে না দিয়ে একশ্রেণির মিডিয়ায় আমার বক্তব্যের বিকৃত বিবরণ পাঠ করে যারা আমাকে ‘কাফের’, ‘নাস্তিক’, ‘মুরতাদ’ ইত্যাদি বলে ফতোয়া দিয়েছেন, তারা কি সত্যই ইসলামের জন্য দরদের জন্য এই কাজ করেছেন, না ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে জামায়াতি ও হেফাজতিদের অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাধানের কাজে সাহায্য জোগাতে চেয়েছেন এই প্রশ্নটির জবাব একমাত্র তারাই জানেন।

রাসুলুল্লাহ্ (দ:) বার বার বলে গেছেন, “ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কর না। অতীতে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।”

দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাংলাদেশে হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি চলছে। এই বাড়াবাড়ি থেকে ধর্মান্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, যা আজ হিংস্র মৌলবাদের চেহারা ধারণ করে বাংলাদেশেও বিভীষিকার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

যখন যাকে খুশি ‘মুরতাদ’ আখ্যা দেওয়া সম্পর্কে কানাডায় বসবাসকারী ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য, মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেসের ডিরেক্টর অব শরিয়া ল’ হাসান মাহমুদ তার এক সাম্প্রতিক নিবন্ধে লিখেছেন:

“সবচেয়ে মারাত্মক হল, মতভেদ হলেই ইসলাম থেকে ‘খারিজ’, ‘মুরতাদ’ ইত্যাদি ফতোয়াবাজি করা। বিশ্ব মুসলিমের সবচেয়ে ক্ষতি করেছে এই অভ্যাস। বিশ্ব মুসলিমের অগ্রগতি তাতে ব্যাহত হয়েছে। যারা ‘মুরতাদ’ ফতোয়া জারি করেন তারা খেয়াল করেন না যে, তাদেরও ‘মুরতাদ’ বলার ইমাম আছেন। এতে ফিতনা বাড়ে। এ জন্যেই রাসুলুল্লাহ (দ:) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যেন অন্য মুসলমানকে মুরতাদ না বলে। ও রকম বললে, তাদের মধ্যে একজন সত্যিই মুরতাদ।’’’

[বুখারি, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২৫]

আলেম সমাজের কাজ মানুষকে পথ দেখানো, হেদায়েত করা। বাংলাদেশে তারাই যদি জাগতিক স্বার্থ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন এবং কায়েমী স্বার্থ গড়ে তোলেন, তাহলে কয়েক শতাব্দী আগে ধর্মব্যবসায়ী ভ্যাটিকান পুরোহিততন্ত্রের যে পরিণতি ঘটিয়েছিল, মধ্যযুগীয় মুসলিম পুরোহিততন্ত্র তথা ধর্মব্যবসায়ীদে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.