![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ড. আনিসুজ্জামান
ডিসেম্বর ৯, ২০০৯
anisuzzaman_1বেগম রোকেয়া (১৮৮০ – ১৯৩২) জন্মেছিলেন এক রক্ষণশীল পরিবারে। উনিশ শতকের বাংলাদেশে নারীমুক্তির জন্যে যেসব আন্দোলন হয়েছিল, তার কিছুই তাঁদের পরিবারকে স্পর্শ করেনি।
এ কারণেই উত্তরকালে যে-মনোবল নিয়ে তিনি স্ত্রী শিক্ষার জন্যে কাজ এবং নারীমুক্তির জন্যে লেখনী ধারণ করেছিলেন, তা তিনি কেমন ভাবে অর্জন করেছিলেন, ভাবতে অবাক লাগে। পাঁচ বছর বয়স হতেই তাঁকে স্ত্রীলোকদের কাছ থেকেও পর্দা করতে হতো, এ-কথা তিনি নিজেই লিখে গেছেন।
পরিবারের বেশির ভাগই তার বিদ্যাচর্চার সমর্থন করেননি, বাংলা শেখায় তো তাঁদের ঘোরতর আপত্তি ছিল। বিদ্যোৎসাহী ও উদারহৃদয় ভ্রাতার প্রভাবে এবং ভগ্নীর উৎসাহে তিনি ঘরে বসে বাংলা -ইংরেজি-উর্দু -ফারসি শিখেছিলেন।
ষোলো বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় উর্দুভাষী ও বিপত্নীক সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে – যিনি প্রায় তাঁর পিতার বয়সী ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে রোকেয়া সুখী হননি, তবে বিদ্যাচর্চায় ও সাহিত্য চর্চায় স্বামীর আনুকূল্য লাভ করেছিলেন।
লেখিকা হিসেবে তিনি যখন সবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন এবং ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় তাঁর বইপত্র প্রকাশিত হয়েছে, তখন তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। কিছুকাল পরে রোকেয়া ভাগলপুর ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন। তাঁর সাধনা হয়ে ওঠে সাহিত্য চর্চা এবং স্বামীর স্মৃতিতে স্কুল স্থাপন করে স্ত্রীশিক্ষার বিস্তার ঘটানো। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি সফল হন।
সমকালে তাঁর রচনা প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। বেশির ভাগ সমালোচক বলেছিলেন, তিনি যেভাবে ক্রমাগত সমাজকে আঘাত করে চলেছেন, তার পরিণাম ভালো হবে না। অল্পসংখ্যক সমালোচক বলেছিলেন যে, রোকেয়া যেভাবে সমাজের দোষত্রুটি তুলে ধরছেন, তাতে তা দূর করার চেষ্টা আমাদের মধ্যে জাগবে এবং নারীরা অন্ধ পাতিব্রত্যের বদলে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভালোবাসা দিয়ে দাম্পত্যজীবনকে মাধুর্যময় করবে, নিজেদের জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেকের অনুসরণ করতে শেখাবে।
তাঁর বিদ্যালয়ও সকলের সহানুভুতি লাভ করেনি। এটি টিকিয়ে রাখতে তাঁকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল। কলম চালিয়ে সমাজের সঙ্গে যিনি সংঘর্ষে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন, স্কুলকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে তিনি অনেক আপোসও করেছিলেন। বন্ধ ঘোড়ার গাড়ি কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা তার একটি; তিনি যে কিছুটা অবরোধের মধ্যে বাস করেছেন, তাও আরেকটি। এসবই তিনি করেছিলেন নারী শিক্ষা যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, তার জন্য। অন্যথায় তিনি যথার্থই বিপ্লবী ছিলেন। তিনি ধর্মগ্রন্থে নারীপুরুষের বৈষম্যের সমালোচনা করেছেন, ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদের ধারণা প্রচার করেছেন!
নিজের জীবনকে ব্যর্থ বলে বার বার রোকেয়া অভিহিত করেছিলেন, তবে তাঁর অভিযান যে বৃথা যায়নি, তা আমরা এখন বুঝতে পারি। তাঁর রচনাবলি এখন দেশ বিদেশে অনেক সমাদৃত, তাঁর সাহসের প্রশংসা প্রায় সর্বত্র ধ্বনিত। বঙ্গে নারীমুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান সর্বস্বীকৃত। বিশেষ করে, বাংলাদেশে মেয়েদের যে-বিস্ময়কর অগ্রগতি আমরা লক্ষ করি, তার পেছনে তাঁর প্রেরণা ছিল সর্বাধিক কার্যকর।
বস্তুত গত ষাট বছরে আমাদের দেশে সব চেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে নারীর অবস্থায়। নারী শিক্ষার অগ্রগতি ঘটেছে। অবরোধের কঠোরতা থেকে বের হয়ে এসে নারী নানাধরনের কাজ করতে শিখেছে।
জীবনের এমন ক্ষেত্র নেই যেখানে আপন যোগ্যতায় নারী স্থান করে নেয়নি। এককালে গণিত ভিত্তিক বিদ্যা নারীর উপযোগী বলে বিবেচিত হতো না। পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে নারী চাকরি করবে, উড়োজাহাজ চালাবে – একথা ভাবা যেতো না, রাষ্ট্রপরিচালনা তো দূরের কথা।
যাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী হলেই নারীমুক্ত ঘটে না, তাঁরা যে মিথ্যে বলেন, তা নয়। কিন্তু আমাদের মতো পুরুষপ্রধান সমাজে নারীনেতৃত্ব এভাবে যে সবাই মেনে নিলো, তাতে নারীমুক্তির ক্ষেত্রে একট বড় পদক্ষেপ নেওয়া গেছে, একথা স্বীকার না করলে অন্যায় হবে।
অন্য ধরনের বাস্তবতাও অস্বীকার করা যায় না। আজ আমাদের দেশে ফতোয়াবাজির যে-প্রতাপ, যৌতুকের যে-আপোসহীন চাহিদা, নারীর স্বোপার্জনের উপর পুরুষের কর্তৃত্বস্থাপনের যে প্রচলন, ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে অবরুদ্ধ রাখার যে ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা – এসবই নারীর অগ্রগতি, তার মুক্তি ও তার ক্ষমতায়ণের পথে বড় অন্তরায়। কিন্তু এসবই যে নিন্দনীয় ও প্রতিরোধযোগ্য, এ-বিষয়েও দ্বিমত নেই। এটাই লাভ ও আশার কথা, কালের অগ্রগতির সঙ্গে সমাজ পরিবর্তনের দ্যোতক।
আমাদের আরও অনেক পথ চলতে হবে। নারীর ক্ষমাতায়ণ সহজ কোনো ব্যাপার নয়। কেবল নিজের প্রচেষ্টায় নারীই তা অর্জন করবে, এমন কথাও অশ্রদ্বেয়। পুরুষকে – সচেতন পুরুষ মাত্রকেই – এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের আইন ও সংবিধান নারী পুরুষের বৈষম্য স্বীকার করে না, বরঞ্চ তা উচ্ছেদ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে আইন ও প্রচলন এক নয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ও সামাজিক এলাকা একই ধাতুতে গড়া নয়। তাই সত্যিকার অর্থে নারীপুরুষের বৈষম্য দূর করতে হলে আমাদের সামাজিক ধ্যানধারণা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। যে-দায়িত্ব নারীপুরুষ উভয়ের। একুশ শতক আমাদের সে-দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছে।
0 0
Tags: বেগম রোকেয়া
This entry was posted on ডিসেম্বর ৯, ২০০৯ at ১২:৪২ পুর্বাহ্ন and is filed under নারী. You can follow any responses to this entry through the RSS 2.0 feed.
WARNING: Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
Share on email
Share on favorites
Share on print
|
Share on twitter
Share on gmail
|
More Sharing ServicesMore
-------------------------------------------------------------------------
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর নিজস্ব। bdnews24.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে bdnews24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)
©somewhere in net ltd.