নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমারি মত.................।

তাজ - সৈয়দাবাদী ।

শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এম পিও ভুক্ত কলেজ

তাজ - সৈয়দাবাদী । › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাঁদাবাজি কাঙালিভোজ ও ইতিহাসের অংশীদারিত্ব

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:২৪

সরকার ভুল বার্তা দিয়েই চলেছে। সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের গ্রেফতার একটা ঠুনকো অভিযোগের প্রতিক্রিয়া। যে আইনে তাকে হাতকড়া পরানো হয়েছে সেই আইন অগণতান্ত্রিক ও কালাকানুন। সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক একটি আইনে প্রবীর বাবুকে চোখে কালো কাপড় বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ অন্যায়। যে হাতে তিনি লিখতেন সেই হাতে হাতকড়া, যে চোখে দেখতেন সেই চোখে কালো কাপড়ের পট্টিবাঁধা। এটা যেন বর্তমান সময়ে মিডিয়া সাম্রাজ্যের সাথে সরকারের আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ- এমন বার্তাই পেল সাংবাদিক সমাজ ও মিডিয়া জগৎ।
শওকত মাহমুদের বিষয়টি আরো স্পষ্ট। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও জিঘাংসা কত নিষ্ঠুর ও অন্যায্য হতে পারে তার প্রমাণ সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদের গ্রেফতার। আদর্শ ঢাকা আন্দোলন সরকারের ভিত কাঁপাত না, জনগণের জানা তথ্য আরেকটু জানা হতো। অনেকের ধারণা, প্রেস ক্লাবকেন্দ্রিক নোংরা রাজনীতির পঙ্কিলতাই শওকত মাহমুদের গ্রেফতারের নেপথ্যে, অন্য মামলা বাহান। এম কে আনোয়ারের গ্রেফতারও রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক। এভাবে ভিন্নমতের বা বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদের হয়রানির নজির কম। এ ধরনের বাড়াবাড়ি ধ্বংসের রাজনীতির গর্ত থেকে সরকারকে মোটেও উদ্ধার করবে না।
প্রতিপক্ষহীন নিরুত্তাপ রাজনীতির মাঠে ক্ষমতাসীনদের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় চলতি বছরের এই ক’মাসে ৩১ জন নিহত হলো। আহত হয়েছে দুই সহস্রাধিক। সঙ্ঘাত হয়েছে প্রায় দুই শ’। এখন সরকার ইমেজ সঙ্কট কাটাতে নিজেদের ‘সোনার ছেলের’ বিরুদ্ধেও বন্দুকযুদ্ধের গল্প সাজাচ্ছে। অথচ বিচারবহির্ভূত এই হত্যা না গ্রহণযোগ্য, না সমাধানযোগ্য। বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার জামায়াত-শিবির হোক, বামপন্থী হোক, চরমপন্থী সন্ত্রাসী আর ছাত্রলীগ-যুবলীগ সদস্য হোক মানা যায় না। প্রধান বিচারপ্রতি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন, বিচার-আচারকে আড়ালে রেখে কিংবা বিচার বিভাগকে অসঙ্গত ব্যবহার করে সরকার কি কোনো বিশেষ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়! আর কত ভুল বার্তা দিলে জাতি ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটাবে- এটা দেখাই যদি সরকারের ইচ্ছে হয়, তাহলে বলব দোহাই, ভুলে যাবেন না, আপনারা প্রথম সরকার নন, শেষ সরকারও নন।
খ.
বঙ্গবন্ধুচর্চার নানা ধরন অনেকের চোখে পড়ার কথা। কেউ বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলেন। কেউ বা তার কাঁধে ভর করে নিজেও বঙ্গবন্ধু হয়ে যেতে চান বা স্বপ্ন দেখেন। একটা ব্যানারে কম করে দশজন নেতা-পাতিনেতার ইয়াবড় ছবি, এক কোনায় বঙ্গবন্ধুর ছবিটা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়, উপলক্ষ ১৫ আগস্ট, ‘শোক দিবস’- এই দৃশ্য কি হজম করা উচিত? একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে একজন জাসদ নেতা ‘নিখাদ মুসলিম’ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরলেন। ওই নেতার ‘৭৪-৭৫ সালের মিছিলে’ মিটিংয়ের ভূমিকা, বঙ্গবন্ধুর ম্ণ্ডুপাতের দৃশ্যটা স্মৃতিপটে ভেসে উঠল। মনে পড়ল বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের এই লড়াকু সৈনিকের আজকের ভূমিকার কথা। যারা কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুকে সিআইয়ের দালাল বলতেন, দোসর সাজাতেন পুঁজিবাদের- ভারতের দালাল বলে তৃপ্তি পেতেন, তারা এখন গলা ফাটিয়ে ভিন্ন সুরে কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে যারা ডুগডুগি বানিয়ে বাজানোর কথা বলতেন তারা এখন বঙ্গবন্ধুপ্রেমিক। প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর ভক্তরা অপাঙ্ক্তেয়।
বঙ্গবন্ধু কখনো ধর্মের নিশান বরদার ছিলেন না। ধর্মপ্রিয় মানুষ হিসেবে নিজেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের স্থপতি ভেবেছেন। বঙ্গবন্ধু কোনো যুগে সমাজতন্ত্রী ছিলেন না। একজন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবেই তার উত্থান। একসময় ছিলেন মুসলিম জাতীয়তাবাদের ধারক-বাহক। পরে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের শরিকদার, এরপর বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের নেতার আসনে থেকে দেশ পরিচালনা করেছেন। তার জীবদ্দশায় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণা অনুপস্থিত ছিল।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অর্জন বা কৃতিত্বের ফিরিস্তি কিভাবে তৈরি হবে সেটা ইতিহাসের হাতে ছেড়ে দেয়া ভালো। একটা নগদ অর্জনও যদি বিবেচনায় নিতে হয় তাহলে ধারণা করি, শেখ হাসিনা বামপন্থী মুজিব বিদ্বেষীদের ষোলো ঘাটের পানি খাইয়ে আনুগত্য আদায় করে ছাড়ার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা ভালো করে জানি, তারুণ্যের আবেগ পরিণত বয়সের উপলব্ধি যোগ করে ধারণা পাল্টে দেয়। অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাসও পাল্টে যায়। দেখে ও ঠেকে শেখার কোনো তুলনা হয় না। একটি বহুল প্রচলিত জার্মান প্রবাদ হচ্ছে- যৌবনে একবার বাম রোমান্টিক হওয়া এবং অবিশ্বাসী হওয়া যেমন স্বাভাবিক, তেমনি চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের ধর্মে বা বিশ্বাসে প্রত্যাবর্তনও স্বাভাবিক।
আমাদের দেশের বাম বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চিন্তার জগতে বিচ্যুতি ও দেউলে অবস্থা আর ঢেকে রাখার পর্যায়ে নেই। তাদের পচনটা মাছের মতো মগজ থেকেই শুরু হয়েছে। বাম রাজনীতি নিয়ে আমাদের আজকের প্রসঙ্গ নয়। বঙ্গবন্ধুচর্চার নানা দিক নিয়েই খানিকটা আলোচনা প্রাধান্য পাবে। আগরতলা মামলা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির বিষয়-আশয়গুলো আড়ালে আবডালে রাখার কোনো প্রসঙ্গ নেই। আগরতলা মামলাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলা হতো। মুজিবের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ মামলা করেছিল আইয়ুব সরকার। ঊনসত্তরে গণ-আন্দোলনের চাপে মওলানা ভাসানীর ‘খামোশ’ ধমকে পাকিস্তান সরকার সেই মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুসহ অনেক দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতর সেটা ষড়যন্ত্র হলেও আমাদের স্বাধীনতার পথে সেটাও ছিল একটি গোপন পরিকল্পনা। এখন এর নৈতিক প্রশ্ন তোলা অবান্তর। এসব বিষয় নিয়ে গবেষণার দুয়ার এখন খোলা। স্বাধীনতার ঘোষক ও ঘোষণা বিতর্কও রাজনৈতিক বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ যা দাবি করছে, ইতিহাস যা বলছে তার বাইরেও একটি আসল সত্য রয়েছে। সেটাও কোনো দলের দাবির বিষয় নয়, ইতিহাস অন্বেষা ও গবেষণার বিষয়।
একদল বঙ্গবন্ধুকে টেনে নিয়ে সমাজতন্ত্রের সিপাহসালার বানাতে চান। তার ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে ধর্মহীনতা পর্যন্ত টেনে নেন। কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সমর্থন জোগাতে আল্লাহর নবীকেও ধর্মনিরপেক্ষ বানিয়ে দেয়ার মতো মহাবিপজ্জনক মন্তব্য করেছেন- যা শুধু অজ্ঞতা নয়, ধর্মের অপব্যাখ্যাও। অপর দল বঙ্গবন্ধুকে দলীয় নেতার মতো দেখতে চায়। অন্য একটি লেখায় স্পষ্ট করে বলেছি, দোষে-গুণে বঙ্গবন্ধু অতিমানব নন। সময়ের এক অসাধারণ সাহসী নেতা। তিনি রাজনীতিতে সংসদীয় গণতন্ত্রের যোদ্ধা হয়েও কেন রাষ্ট্রপতি হলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পূজারি কেন একদলীয় হয়ে গেলেন তার জবাব আওয়ামী লীগ দেবে না। যেসব ভণ্ড ও নষ্ট চরিত্রের বুদ্ধিজীবী এখন বঙ্গবন্ধু-বন্দনায় নেমে সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছেন, ক্লান্তি তাদের ক্ষমা করবে- ইতিহাস ক্ষমা করবে না।
ব্যানার-বিলবোর্ড ঝুলিয়ে যারা শোক দিবস পালনের ভাবগম্ভীর পরিবেশের ভেতর নিজেদের প্রচারণায় মাতলেন, পোস্টার ছাপিয়ে নিজেদেরকে তুলে ধরলেন- তাতে হয়তো তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ফকফকা হবে। বঙ্গবন্ধুর আত্মা কিন্তু শান্তি পাবে তার জন্য দোয়ার হাত তুললে। ছবিতে ফুল, দেয়ালে ছবি সাঁটা রাজনৈতিক রেওয়াজ। আমরা নিজের বাবা-মা ও স্বজনদের স্মরণ করি যার যার ধর্মের রীতি অনুযায়ী। চাঁদাবাজি করে কাঙালিভোজে বাঙালি জাতীয়তাবাদের তরক্কি হলেও বঙ্গবন্ধুর রূহ কষ্ট পায়। চাঁদাবাজির শিকার মানুষগুলো বদদোয়া দিয়ে চাঁদাবাজদের মুণ্ডপাত করে।
একটা উপমা নিন। ১৫ আগস্ট শনিবার সকাল সাতটা। ঘটনাস্থল রমনা পার্কের অরুণোদয় গেইট। তখন রমনার সবুজ মাঠজুড়ে প্রাতভ্রমণকারীদের ভিড়। সবার বয়স ব্যতিক্রম ছাড়া চল্লিশোর্ধ্ব। পরনে ব্যায়ামের পোশাক। পুলিশ পথ আগলে দাঁড়াল। রমনার গেইট বন্ধ করে দিলো। বেইলি রোড, মিন্টু রোড হয়ে যারা রমনায় ঢুকবেন তাদের ঠেকিয়ে দিলো রাস্তার এ পাশে। সাফ জানিয়ে দিলো, এখন কেউ রমনায় ঢুকতেও পারবেন না, বেরোতেও পারবেন না, ভিভিআইপি যাবেন। সবাই ঠায় দাঁড়িয়ে। অনেকক্ষণ পর হেলেদুলে ধীর-তাল লয়ে সকালের ট্রাফিক জ্যামহীন রাস্তায় পতাকা লাগিয়ে চলে গেলেন প্রজাতন্ত্রের কোনো এক দিকপাল, সামনে-পেছনে নিরাপত্তার নিশ্চিদ্র পাহারা, সাথে পাইক পেয়াদা। শান্ত্রীরা গরম মেজাজে অস্ত্র তাক করে পথ চলছে। অপেক্ষমাণ প্রজা তথা জনতার ভিড় বাড়ল। এক কথা, দু’কথায় একসময় সরকারের নিরাপত্তার নামে বাড়াবাড়ির প্রসঙ্গ উঠল। জনগণের নেতা হলে জনগণকে এত ভয় কেন- সেই প্রশ্ন তুললেন কর্মজীবী এক মহিলা। দেরি করিয়ে দেয়ার ঝক্কিটা কত বেশি তার ফিরিস্তি দিলেন অন্য মহিলা। তার সাফ কথা, প্রাতভ্রমণ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করে পরিবার-স্বজনের দেখভাল করে অফিসে যান। আজ রক্ষে, ১৫ তারিখ শোক দিবসের ছুটি। হর হপ্তায় দু-চারবার এ ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। লাখো মানুষের ভোগান্তি নিয়ে এ কেমন ভিভিআইপি নিরাপত্তা দেয়ার ব্যবস্থা! জনগণের ভিড়ের মধ্যে দেশের সামগ্রিক রাজনীতি, শিশুহত্যা, শোক দিবসের চাঁদাবাজি, আদালতের নির্বাচন ফর্মুলা দেয়াসহ সব বিষয় উঠল। সরব জনতা ৫ জানুয়ারির ভুয়া নির্বাচন, তিন সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিজ্ঞতা বলছিল। দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে করা একই ধরনের মামলায় দুই ধরনের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বেশ ক’জন। গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যা, অপহরণ, সালাউদ্দিনকে ভারতে উদ্ধারসহ পচা গম- কোনো প্রসঙ্গ বাদ পড়ল না। ছদ্মবেশে কোনো গোয়েন্দা কর্মকর্তাও হয়তো ছিলেন, কোনো শাসক যদি জনগণের ক্ষোভ ও নিন্দাবাদের ভাষা শুনতেন তাহলে বুঝতেন তারা কোন চেয়ারে নির্লিপ্ত বসে, জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় জনগণের সম্মতি ছাড়া দেশ চালাচ্ছেন। কোন ক্ষোভের আগুন দমন করে তারা তুষ্টির ঢেঁকুর তুলছেন। মাহমুদুর রহমানের মামলার রায় ও জনকণ্ঠের আতিকুল্লাহ খানের মামলার রায় তুলনা করে ইনসাফের প্রশ্ন তুললেন একজন ষাটোর্ধ্ব প্রাতভ্রমণে আসা মানুষ। প্রসঙ্গ থেকে বাদ পড়ল না গ্যাটকো মামলার দুই নেত্রীর জন্য দুই ধরনের ফয়সালা। একজন চিৎকার করে পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলেন- নিরাপত্তা আল্লাহ দেবেন, না আপনারা দেবেন? ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড থেকে ইন্দিরা-রাজিব হত্যা, সৌদি আরবের বাদশা খুন হওয়া থেকে মিসরের শাসকের পরিণতি কোনো প্রসঙ্গ বাদ পড়ল না। একজন প্রবীণ নাগরিক ১৫ আগস্ট ’৭৫ সালের পর ইত্তেফাকের ভূমিকা ও আজকের ভূমিকা তুলনা করে এ ধরনের সাংবাদিকতাকে ভ্রষ্টা নারীর সাথে মিলিয়ে কঠোর এক মন্তব্য করে বসলেন। একসময় জড়ো হওয়া ভ্রাতভ্রমণপিপাসু মানুষগুলোর ভিড় কমলো। কানে বাজতে থাকল শত মুখে উচ্চারিত রূঢ় ও তির্যক মন্তব্যগুলো। হায়! শাসকেরা যদি শাসিতের মন ও চোখের চাহনির ভাষা পড়তে ও বুঝতে পারতেন তাহলে এ ধরনের সাধারণ জনতার আদালত হতে পারত সুশাসন নিশ্চিত করার একটা অপ্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ। ভাঙাহাটের মতো সংসদকে তখন জনগণ অত্যাচার মনে করত না। শাসকদের কথাবার্তাকে ভাঁড়ের সাথে তুলনা করে ধিক্কার জানাত না। দলীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুচর্চার এই ধারাকে রাজনৈতিক ‘উৎপাত’ ভাবাও কারো পক্ষে সম্ভব হতো না।
বারবার অনুনয়-বিনয় করে অনুরোধ করছি- বঙ্গবন্ধুর যে ছবি এ দেশের জনগণের মনে আঁকা আছে সেটা লালন করতে দিন। কোনো বাড়াবাড়িমূলক মন্তব্য ও বক্তব্য চাপাতে যাবেন না। দলীয় ব্যানার-পোস্টার আর ছবি ঝোলানোর বাজে মতলববাজি বন্ধ করুন। চাঁদাবাজির অত্যাচারে জর্জরিত মানুষকে আওয়ামী লীগ ভুল বার্তা দিচ্ছে বলেই দলীয় আনুষ্ঠানিকতার ‘শোকের উৎপাতে’ জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারছে না। দলীয় ক্যাডাররা আধিপত্যের লড়াইয়ে খুনোখুনি করে মরার ব্যবস্থা দলই করেছে।
গ.
এবারো ১৪ ও ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ মুক্তির দিনটি আমরা ভুলে থাকলাম। আমাদের অর্জনটা ইজারা দিলাম ভারত-পাকিস্তানের কাছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে পৌনে দুই শত বছরের ব্রিটিশের আরোপিত গোলামির শৃঙ্খল ভাঙার গৌরবটা নতুন প্রজন্মকে জানতে দিলাম না। অথচ এই অর্জনে পূর্ববাংলার মানুষের ভূমিকা এতটাই মুখ্য যার তুলনা হয় না। জানি না, বঙ্গবন্ধুসহ আমাদের সব ডান-বাম জাতীয় নেতাদের এই অর্জন থেকে আড়ালে রাখা হচ্ছে কোন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য। আপনারাই বলুন, নজরুল জাতীয় কবি- কোন দ্রোহের, কোন কারার লৌহকপাট ভাঙতে শিকল ভাঙার গান গেয়েছেন। সিরাজির অনল প্রবাহ কিসের। শেরে বাংলার লাহোর প্রস্তাব কার জন্য। নবাব সিরাজ কোন প্রেরণা। মীরজাফর কেন গাদ্দার। তিতুমীর, হাবিলদার রজব আলী, মেহেরুল্লাহ, দুদু মিয়া, আবুল হাশিম, আকরম খাঁ, আবুল মনসুর আহমদরা কেন স্মরণীয়। সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, সুকান্তকে কেন স্মরণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর যৌবনের দ্রোহ, রাজনীতির সূতিকাগার, যুব নেতার ভূমিকা, সোহরাওয়ার্দীর সাথে অনুজের মতো রাজনীতি করার ইতিহাস, মওলানা ভাসানীকে নিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ করার অভিজ্ঞতা কিভাবে উপেক্ষার বিষয় হতে পারে। পৌনে দুই শত বছরের গোলামির জিঞ্জির ভেঙে আমাদের সব জাতীয় নেতা কি অপরাধ করেছিলেন? পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে আমাদের ঘৃণার কারণে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অংশীদারিত্বের ইতিহাসকেও কি আমরা মুছে ফেলব? বাহাদুর শাহ পার্কে দাঁড়িয়ে ইতিহাস তস্করেরা কি বলতে পারবেন- এটা আমাদের ইতিহাস নয়। অলি আল্লাহর বাংলাদেশ, শহীদ গাজীর বাংলাদেশ, ফকির-মুনি-ঋষির বাংলাদেশ কি ’৭১-এর আগে পাকিস্তানের অংশ ছিল না! আমাদের স্বাধীনতার লড়াইটা যে প্রেক্ষপটে, যাদের বিরুদ্ধে- তাদের সেই ইতিহাসও অস্বীকার করব। আইয়ুব গেট কেন আসাদ গেট হলো। ইকবাল ও জিন্নাহ হলের নাম কেন পাল্টে গেল- তা কি নতুন প্রজন্মকে জানাবেন না। জিন্নাহ এভিনিউ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হতে ২৩ বছর লাগল। সেই ২৩ বছর কি আমাদের ইতিহাস নয়।
আমাদের অনুরোধ, ইতিহাসের বৃন্তচ্যুত হয়ে অতীতের গৌরবজনক অর্জনগুলো ভারত কিংবা পাকিস্তানের কাছে ইজারা দেবেন না। ১৪ আগস্ট পালনে তীব্র ঘৃণা থাকলে ১৫ আগস্টকে ব্রিটিশ শাসনমুক্তির আন্দোলন ও আজাদি লাভের লড়াইয়ের অধ্যায়টি সামনে আনুন। ইতিহাসকে বিনাসুতোর মালার মতো গেঁথে দিন। ১৯৭১, ১৯৪৭ হয়ে ১৮৫৭, ১৭৫৭ সালের সাথে মেলবন্ধন করে দিন। তার সাথে জুড়ে দিন আরো পেছনের ইতিহাস। তা হলে আমরা সমৃদ্ধ হবো। আমাদের অস্তিত্ব গৌরবময় হবে। মা-বাবার জায়নামাজতুল্য এই মানচিত্রের ওপর যেকোনো হায়েনার লোলুপ দৃষ্টি রুখে দেয়ার সাহস সঞ্চয়ের প্রেরণা পাবো। -

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.