নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমারি মত.................।

তাজ - সৈয়দাবাদী ।

শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এম পিও ভুক্ত কলেজ

তাজ - সৈয়দাবাদী । › বিস্তারিত পোস্টঃ

কতটুকু পেলাম কতটুকু দিলাম

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৩০

বাংলাদেশ তিন দিক স্থল আর এক দিকে জলবেষ্টিত। বাংলাদেশের স্থলসীমানার ব্যাপ্তি চার হাজার ২৯৪ কিলোমিটার। এ বিস্তৃত স্থলসীমানার ১০ ভাগের সাড়ে ৮ ভাগের কাছাকাছি ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত। দক্ষিণ-পূর্ব দিকের ১ দশমিক ৫ ভাগের সামান্য অধিক বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত। দক্ষিণের সম্পূর্ণটুকু জলভাগের মধ্যে উন্মুক্ত বঙ্গোপসাগর।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি সৃষ্টির পেছনে ভারতের অনন্য অবদান ছিল; তবে সে অবদান নিঃস্বার্থ ছিল না। ভারতবর্ষ বিভাজন-পরবর্তী ভারত ও পাকিস্তান সব সময় বৈরী ভাবাপন্ন ছিল। বাংলাদেশের মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামকে কেন্দ্র করে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ভারত-পাকিস্তান যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ সংঘটিত হয়, সে যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ভারত-পাকিস্তান সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম দীর্ঘায়িত হতো।
বাংলাদেশ একসময় পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল। তখন ভারতের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো ধরনের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ছিল না। সে সময় পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভারতের বৈরী ভাবাপন্ন হওয়ার কারণে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয় সীমান্তে সামরিক বাহিনীর পেছনে ভারতের বিপুল অর্থ ব্যয় হতো। বাংলাদেশ রাষ্ট্্রটির জন্মের পর আগেকার পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের সামরিক ব্যয় অনেকাংশে কমে যায়।
বাংলাদেশ ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত অবদান রাখায় স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রতি বছর বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য বাড়তে থাকে, তা আজো অব্যাহত। গেল অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার পণ্য। অপর দিকে রফতানি ছিল তিন হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার পণ্য। ভারতের সাথে বাংলাদেশের এ বিপুল বাণিজ্য বৈষম্য দূরীভূত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রায়ই আন্তরিক প্রয়াস নেয়া হলেও তা ভারতের রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে সফল হয়নি। ভারতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, বাংলাদেশের এ ধরনের বেশ কিছু শিল্পজাত পণ্য রয়েছে। কিন্তু যখনই বাংলাদেশের যেকোনো শিল্পজাত পণ্য ভারতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার উপক্রম হয় তখনই দেখা যায় অশুল্ক বাধা, অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক ও তথাকার মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ- এসব কারণ দেখিয়ে রফতানিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। তা ছাড়া বাংলাদেশের রফতানি পণ্য বিষয়ে অসংবেদনশীল পণ্যের যে তালিকা রয়েছে তার পরিধি আরো বিস্তৃত করার সুযোগ থাকলেও এ ব্যাপারে ভারত বরাবরই অনমনীয়।
ভারতের ৫৪টি অভিন্ন নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় শুষ্ক মওসুমে এসব নদীর পানির প্রবাহ অব্যাহত থাকা খুবই জরুরি। তা ছাড়া শুষ্ক মওসুমে পানির প্রবাহ না থাকলে নাব্যতা কমানোর কারণে নৌ চলাচল ব্যাপকভাবে বিঘিœত হয়। ভারত অভিন্ন নদীগুলোর মধ্যে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও কৃষিতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়ায় এসব অভিন্ন নদীর বাংলাদেশ প্রান্তে শুষ্ক মওসুমে পানির প্রাপ্যতা ব্যাপকভাবে কমে যায়। ভারতে গঙ্গা নদী বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত। ভারত এ নদীটির ফারাক্কা নামক স্থানে বাঁধ দিয়ে পদ্মা নদীতে পানির প্রবাহ সীমিত করে ফেলেছে। যদিও এ নদীটির পানির প্রাপ্যতা বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, কিন্তু চুক্তির কার্যকারিতা দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক নিয়মিত না হওয়ায় বাংলাদেশ চুক্তি অনুযায়ী পানির হিস্যা পাচ্ছে কি না, এ বিষয়টি নিশ্চিত নয়। তিস্তা নদীর পানির হিস্যা নিয়েও ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিরোধ রয়েছে। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা নদীর পানিবণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষরিত বিষয়টি চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু শেষ দিকে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁকে বসায় সে সময় আর চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হতে পারেনি।
ভারতের ষোড়শ সংসদ নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি দুই-তৃতীয়াংশের অধিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হলে তিনি প্রতিবেশী দেশসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেন। তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানোকে এ অঞ্চলের জনগণ সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখে। মোদির শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান ছাড়া সার্কের অপর ছয়টি দেশের সরকারপ্রধান উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের পূর্বনির্ধারিত জাপান সফর থাকায় তিনি এ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়া পরবর্তী বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়নে একান্তভাবে আন্তরিক ছিল এবং এরই বহিঃপ্রকাশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে তার বিদেশ সফরের তালিকায় বাংলাদেশকে প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন। সে অনুরোধ উপেক্ষিত হলেও গত ৬ জুন ২০১৫ দুই দিনের সফরে মোদি ঢাকায় আসেন।
মোদির ঢাকা সফর সময়ে বাংলাদেশের সাথে ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এগুলো হলো ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তি ও ২০১১ সালের প্রটোকলের অনুসমর্থন দলিল হস্তান্তর, ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তি ও ২০১১ সালের প্রটোকল বাস্তবায়ন বিষয়ের চিঠি বিনিময়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকলের নবায়ন, পণ্যের মান নির্ধারণে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) ও ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডসের (বিআইএস) মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, ঢাকা-শিলং-গোহাটি বাস চলাচল চুক্তি ও প্রটোকল, কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস চলাচল চুক্তি ও প্রটোকল, ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানির জন্য বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) ও ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের (বিএসএনএল) মধ্যকার চুক্তি, দুই দেশের উপকূল রক্ষীবাহিনীর (কোস্টগার্ড) মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, মানবপাচার প্রতিরোধসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, জাল নোট পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, সার্কের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত তহবিল গঠনে সমঝোতা স্মারক, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে ব্লুু ইকোনমি ও মেরিটাইম সহযোগিতা, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার, মংলা ও ভেড়ামারায় ভারতের ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ২০১৫-১৭ সালের জন্য সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিসংক্রান্ত চুক্তি। তা ছাড়া বাংলাদেশের বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ থেকে ভারতের লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশনকে (এলআইসি) বাংলাদেশে বীমা ব্যবসায় করার জন্য অনুমতিপত্র দেয়া হয়েছে।
মোদির সফর সময়ে ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ার লিমিটেড ও আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সাথে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী এ দু’টি কোম্পানি বাংলাদেশের দু’টি স্থানে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার হাজার ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দু’টি পৃথক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। ভারতীয় কোম্পানি দু’টিকে বিশেষ আইনের আওতায় কোনো ধরনের প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের যেসব সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাপক বাণিজ্য বৈষম্য ও অভিন্ন নদীর পানির সুষম হিস্যা, বিশেষত তিস্তা নদীর পানির সুষম হিস্যা। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি সম্পাদন থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু এবার তিস্তাচুক্তি স্বাক্ষরিত না হলেও বাংলাদেশ দুঃখজনকভাবে আগেকার সে দৃঢ়তা দেখাতে পারেনি।
বাণিজ্য বৈষম্য দূরীকরণের ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য যে দু’টি পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্য বৈষম্য অনেকাংশে লাঘব হবে। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের অভিমত, ভারতীয়দের জন্য পৃথক দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশীদের জন্য কিছু কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং সরকারের জন্য কিছু কর আহরণের ব্যবস্থা করবে। আর তা দিয়ে ব্যাপক বাণিজ্য বৈষম্যের শুধু কিয়দংশ লাঘব হবে, এমনই আশা করা যায়। এখানে বলা বাহুল্য, ভারতের ভূমিতে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য ইপিজেড প্রতিষ্ঠায় অনুরূপ সুবিধা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা চাইলে তাদের দেয়া হবে কি না, এ বিষয়ে এ দেশের ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত হতে চান।
ভারতকে কানেক্টিভিটি প্রদান সংশ্লেষে সমুদ্রবন্দর, নৌবন্দর, সড়ক ও রেল অবকাঠামো নির্মাণে যে সুদসহ শর্তযুক্ত দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা শুধু নির্ধারিত খাতে ব্যবহার করা যাবে। এ ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও সেবা ভারত থেকে আনতে হবে। এ ঋণ বিষয়ে ইতোমধ্যে ভারতের পত্রপত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, ঋণের কারণে ভারতে ৫০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যদিও সুদসহ ঋণ দেয়ার সম্পূর্ণ দায় বাংলাদেশের। সুতরাং ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, এ ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকাশের জন্য সহায়ক নাকি গলার কাঁটা। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান সরকারপ্রধান থাকাকালীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হিসেবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো বিনির্মাণের জন্য বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা উভয়ে দেশের স্বার্থহানিকর সুদসহ শর্তযুক্ত ঋণ নিতে অনীহ ছিলেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ভূমিকাও প্রশংসনীয় ছিল। এ কথাটি অনস্বীকার্য, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর হয়ে সড়ক ও রেলপথে ভারতের পণ্য পরিবহন করা হলে অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ যে ব্যয় হবে, এর বিনিময়ে প্রাপ্ত শুল্ক বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল কি না, সে বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন।
বঙ্গোপসাগর য্ক্তুরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের কাছে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সমগুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জাহাজগুলোকে সে দেশের অভ্যন্তরে পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ায় সে ব্যবহার যে বাণিজ্যকে ছাড়িয়ে সামরিক দিক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে না, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উৎকণ্ঠা রয়েছে।
ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানির বিষয়ে এ দেশের মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তা যেন তাদের কাছে যে দামে বিক্রি করা হয়, এর চেয়ে কম না হয়। এ বিষয়ে দেশবাসীকে আজো কোনো ধারণা দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশে দেশীয় যেসব জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে, এ কোম্পানিগুলো ব্যবসার স্বল্পতার কারণে নিজেদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে। সে ক্ষেত্রে ভারতের এলআইসি বৃহৎ পুঁজির কোম্পানি হওয়ায় স্থানীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসাকে যে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, এ বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া অত্যাবশ্যক ছিল।
ভারতীয় দু’টি কোম্পানিকে বিশেষ আইনে প্রতিযোগিতা ছাড়াই যে দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়েছে, এ কেন্দ্র দু’টির স্থাপন ব্যয় বিষয়ে এ দেশের সচেতন জনমানুষের অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। এ দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবসায়ের সাথে জড়িত এমন একাধিক ব্যক্তির অভিমত, এ ধরনের উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সক্ষমতা তাদের রয়েছে। আর উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’টি স্থাপনের প্রস্তাব আহ্বান করা হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দরপত্রদাতাদের প্রস্তাব ভারতীয় কোম্পানিদ্বয়ের প্রস্তাবের চেয়ে অনেক কম হতো।
ভারত থেকে প্রতি বছর অবৈধ পথে বাংলাদেশে যে পরিমাণ ফেনসিডিল আসে, এর মূল্যমান দুই হাজার কোটি টাকার অধিক। তা ছাড়া চোরাচালানের মাধ্যমেও বিপুল পণ্য প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ভারত বাংলাদেশের সাথে তার স্থলসীমানায় যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করেছে, এ ধরনের বেড়া বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর। উপরউল্লিখিত সমস্যাগুলো নিরসনসহ বাণিজ্য বৈষম্য দূর করা না হলে এবং অভিন্ন নদীগুলোর পানির সুষম হিস্যা প্রদান না করা হলে ভারতের সাথে সম্পাদিত কোনো চুক্তিই বাংলাদেশের জন্য তেমন সুফল বয়ে আনবে না। আর তাই ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের জন্য যতই ইতিবাচক ভাবা হোক না কেন, উপরিউক্ত সমস্যাগুলোর সমাধান ব্যতিরেকে তা বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতিকূল এবং ভারতের স্বার্থের অনুকূল- বিশ্লেষকেরা এমনই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। তাই মোদির সফরের মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের প্রাপ্তি কতটুকু, বোধকরি এটুকু বোঝার বোধশক্তি বুদ্ধি-বিবেকসম্পন্ন যেকোনো মানুষের রয়েছে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক - See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.