![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হয়। আমাদের দেশে সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অন্তর্ভুক্ত। এসব নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে যারা অংশ নেন তাদের সবাইকে নির্বাচন আচরণ বিধিমালা মেনে চলতে হয়। আমাদের দেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত না হওয়ার পেছনের যে কারণ তা হলো- আচরণ বিধিমালায় উল্লেখ রয়েছে যে, নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজ ছবি ও প্রতীক ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক দলের নাম বা প্রতীক বা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম বা ছবি ছাপাতে কিংবা ব্যবহার করতে পারবেন না। বাংলাদেশের অতীতের স্থানীয় নির্বাচনগুলো অবলোকনে দেখা যায়, সব ধরনের স্থানীয় নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। বিধিতে উল্লিখিত বিধানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এসব নির্বাচনে যদিও দলের নাম বা প্রতীক ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম বা ছবি ব্যবহার বিধির ব্যত্যয় অহরহ পরিলক্ষিত হয়।
আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে যেমন বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি অনুরূপভাবে আসন্ন ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে যেটি লক্ষ করা গেছে তা হলো, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তার সরকারি বাসভবন থেকে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক সব স্থানীয় নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করার ওপর গুরুত্বারোপ করে আইন বা বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের বিষয় উল্লেখ করেছেন। তাদের উভয়ের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা যায় অচিরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় সংশোধনী এনে এসব নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে। যেকোনো স্থানীয় নির্বাচন বিষয়ে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী আচরণ বিধিমালার যেকোনো বিধানের লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ ধরনের অপরাধের জন্য একজন প্রার্থীর অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। তা ছাড়া বিধিমালার যেকোনো বিধান লঙ্ঘনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমাদের প্রধান নির্বাচন কাউন্সিলর ও নির্বাচন কাউন্সিলররা রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে সদাসর্বদা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে বিধিমালার যেকোনো ধরনের লঙ্ঘন বা ব্যত্যয়কে উপেক্ষা করে চলেন। এ ধরনের উপেক্ষার কারণে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ক্ষুণœ হওয়া সত্ত্বেও সচরাচর আমাদের নির্বাচন কমিশনকে উদাসীন দেখা গেছে।
বর্তমানে পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের দিন ভোটাররা ভোট দিয়ে বের হয়ে আসা পরবর্তী যে জনমত জরিপ করা হয় তা প্রি-পোল ও এক্সিট-পোল নামে সুপরিচিত। উভয় জরিপের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক দৈবচয়ন নমুনায়ন (Random sampling) অনুসৃত হয়। উন্নত রাষ্ট্্র বিশেষত যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রি-পোল জরিপে অনধিক শতকরা ৫ শতাংশ তারতম্য হলেও এক্সিট-পোল জরিপ শতভাগ শুদ্ধ হয়। তবে উন্নত-অনুন্নত দেশ নির্বিভেদে একটি কথা জোর দিয়ে বলা যায়, যেকোনো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে জনমত জরিপে যে পূর্বাভাস পাওয়া যায় নির্বাচনে তারই প্রতিফলন ঘটে।
এ পর্যন্ত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে মেয়র পদে দুইবার ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ হানিফ বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে নির্বাচনটির স্বচ্ছতা বিষয়ে সে সময় কোনো পক্ষ থেকে অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে। এ সময়েও বিএনপি ক্ষমতাসীন ছিল। দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল বিএনপির অধীন সুষ্ঠু হবে না এ অভিযোগে আওয়ামী লীগ বর্জন করে। আর তাই অনেকটা একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকা মেয়র নির্বাচিত হন। উপরিউক্ত উভয় নির্বাচন একীভূত সিটি করপোরেশনের অধীন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এ যাবৎকাল পর্যন্ত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রথমোক্ত দু’টি বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম দু’টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীকে পরাভূত করে মেয়র নির্বাচিত হন। শেষোক্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মঞ্জুর আলম বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাভূত করে মেয়র নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এ তিনটি নির্বাচনে কোনো বড় ধরনের অনিয়ম বা কারচুপি হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দু’টি দলের পক্ষ থেকে এমন কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি।
আসন্ন ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী যথাক্রমে আনিসুল হক, সাঈদ খোকন ও আ জ ম নাছির উদ্দীন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, মির্জা আব্বাস ও মঞ্জুর আলমের চেয়ে প্রচারণার দিক থেকে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়রের মতো কাউন্সিলররাও দলীয় সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে তাদের মেয়র ও কাউন্সিলরদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা সেভাবে তাদের দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের জন্য প্রচারণা চালাতে পারছেন না। ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে বিএনপির যে প্রার্থী ছিল সে প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র তুচ্ছ কারণে বাতিল হয়ে গেলে দুঃখজনকভাবে তিনি সব পর্যায় থেকে প্রতিকার প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হন। অগত্যা অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় বিএনপি তার ছেলে তাবিথ আউয়ালের পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করে।
ঢাকা দক্ষিণে রাজনৈতিক মামলা সংশ্লেষে বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল থাকায় তার অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। উভয় প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যেখানেই যাচ্ছেন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে তারা বিমোহিত ও অভিভূত হচ্ছেন। ভোটের দিন জনগণের এ সমর্থনের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটলে ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে বিজয়ের হাসি কার মুখে ফুটবে তা অনুধাবন করতে দেশের সচেতন জনমানুষ সক্ষম।
১৯৮২ সালে যখন ঢাকা সিটি করপোরেশন গঠন করা হয় তখন তিনটি পৌরসভা যথা ঢাকা, গুলশান ও মিরপুরকে একীভূত করা হয়। এ একীভূত সিটি করপোরেশনটি তার নিজস্ব দৃষ্টিনন্দন সুপরিসর ভবন থেকে কার্যক্রম চালিয়ে জনগণকে নাগরিক সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে সচেষ্ট ছিল। ২০১১ সালে অধিক নাগরিক সুবিধা দেয়ার মানসে যদিও ঢাকা সিটি করপোরেশনকে বিভাজিত করা হয়; কিন্তু এ বিভাজনের পেছনে নাগরিক সুবিধার চেয়ে রাজনৈতিক অভিলাষই অধিক বিবেচ্য ছিল। বিভাজন পরবর্তী উভয় সিটি করপোরেশনের স্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও নাগরিক সেবার পরিধি বিস্তৃত হয়েছে অদ্যাবধি নগরবাসীর তা অবলোকনের অবকাশ ঘটেনি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকারসংক্রান্ত সব নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তার এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সহায়তা লাভ করে থাকে। আমাদের বিভিন্ন নির্বাচনী আইনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলতে পুলিশ বাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র্যাব, আনসার বাহিনী, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিডিআর (বিজিবি), কোস্টগার্ড বাহিনী এবং প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগগুলোকে বোঝানো হয়েছে। আমাদের সংবিধানে শৃঙ্খলা বাহিনীর যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে শৃঙ্খলাবাহিনী হলো স্থল, নৌ বা বিমানবাহিনী, পুলিশবাহিনী এবং আইনের দ্বারা এই সংজ্ঞার অর্থের অন্তর্গত বলে ঘোষিত যেকোনো শৃঙ্খলাবাহিনী। উভয় সংজ্ঞা হতে স্পষ্টত প্রতিভাত যে, সেনাবাহিনী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা শৃঙ্খলাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত। জাতীয় বা যেকোনো স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যথাযথ বিবেচনা করলে সেনাবাহিনী নিয়োগের বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিষয়ে সরকারি দলবহির্ভূত প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক প্রার্থীর পক্ষ থেকেই নির্বাচন কমিশনের সাথে মতবিনিময়কালে সেনাবাহিনী নিয়োগের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দেশের সচেতন জনমানুষের অভিমত হলো সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হলে তা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত করবে।
একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা যে, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ করার ক্ষেত্রে তাদের সংবিধান ও বিভিন্ন আইনের অধীন যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তারা সন্তোষজনকভাবে সে ক্ষমতাগুলো প্রয়োগ করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ প্রশস্ত করবেন।
সিটি করপোরেশন মেয়র ও কাউন্সিলর সমন্বয়ে গঠিত। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর হিসেবে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তারা দলীয় সমর্থন নিয়েই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। একটি সিটি করপোরেশনে একজন মেয়রের নির্বাচনী এলাকার তুলনায় একজন কাউন্সিলরের নির্বাচনী এলাকা অনেক ছোট। দলীয় সমর্থনের ভিত্তিতে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হওয়ার কারণে একই দলের মেয়র ও কাউন্সিলররা যদি সমন্বিতভাবে নির্বাচনী প্রচারণা করেন সে ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ রোধসহ মেয়রের পক্ষে প্রতিটি ভোটারের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব। তা ছাড়া এ পদ্ধতিতে নির্বাচনী প্রচারণায় গতিশীলতা আসে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখন পর্যন্ত প্রধান দলের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা দলীয় সমর্থিত কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বিতভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন এমনটি পরিলক্ষিত হয়নি।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একজন মেয়র বা কাউন্সিলর একজন ব্যক্তিকে নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন। ওই নির্বাচনী এজেন্ট ভোট চলাকালীন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটদান পর্যবেক্ষণসহ ভোট গণনা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তা ছাড়া প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রত্যেকটি ভোটকক্ষের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেন। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের আগেই প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের নাম উল্লেখপূর্বক পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হয়। পোলিং এজেন্টরা প্রত্যেক প্রার্থীর অনুকূলে প্রদত্ত বৈধ ভোট গণনা পরবর্তী পৃথক প্যাকেটে রাখার পর তাতে দস্তখত ও সিল দিলে ফলাফল বিষয়ে বিতর্ক পরিহার অনেকাংশে সম্ভব। একটি ভোটকেন্দ্রে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রাপ্ত বৈধ ভোটের গণনা পরবর্তী যে ফলাফল বিবরণী প্রস্তুত করা হয় নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টকে ওই বিবরণী অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে এবং তাদের অবশ্যই বিবরণীতে দস্তখত ও সিল দিতে হবে। প্রত্যেক নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্ট যদি প্রিজাইডিং অফিসার ও স্বীয় স্বাক্ষরযুক্ত ভোট গণনার বিবরণী সংগ্রহপূর্বক তা সংরক্ষণ করেন সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে জালিয়াতি বা কারচুপিবিষয়ক যেকোনো ধরনের জটিলতা পরিহার সম্ভব। আমাদের দেশে বেশির ভাগ নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্ট নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকায় তারা ভোটগ্রহণ পরবর্তী ভোট গণনা বিবরণী সংগ্রহ করেন না। তবে এ কথাটিও ঠিক, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চাইলে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অন্তর্ভুক্ত যেকোনো বাহিনীর সহায়তায় ভোটকেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনপূর্বক প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টদের ভোটকক্ষে অবস্থানের ক্ষেত্রে জটিলতা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেন। বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ভোটকক্ষ হতে বলপূর্বক বের করে দেয়ার ঘটনা বিরল নয়। এ ধরনের ঘটনা ক্ষমতাসীন দলবহির্ভূত প্রভাবশালী প্রার্থী বা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হলেও তা কদাচিৎ পরিলক্ষিত হয়।
যেকোনো নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশে ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী দল সব সময় সচেষ্ট। জনমত সপক্ষে বলে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ দল ও প্রার্থীরা হাতগুটিয়ে বসে না। তারা সুষ্ঠু ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণায় অবতীর্ণ হয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জনসমর্থন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যায়। এ পরিশ্রম তখনই সার্থক হয় যখন জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এবং নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন না। সুতরাং আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় আনীত মামলার কারণে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেখানে তাদের নির্বাচনী এজেন্ট ও পোলিং এজেন্টরা রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়রানি থেকে মুক্ত থাকবেন এ বিষয়ে আশঙ্কা থেকে থাকলে জনমতের প্রতিফলনে বিজয় নির্ধারিত হবে কি না সে সংশয় থেকেই যায়।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
- See more at: Click This Link
©somewhere in net ltd.