![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ করে গড়েছেন। তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্যও শ্রেষ্ঠ হবে, এই তো তাঁর ইচ্ছা। হজরত রাসূল করিম সা: বলেছেন, ‘আল্লাহর বৈশিষ্ট্যে নিজেকে ভূষিত করো।’ আর তা করতে গেলেই চাই জ্ঞান। জ্ঞানই মানুষকে ভালো-মন্দ, সুন্দর-অসুন্দর ও লাভ-লোকসানের পার্থক্য বুঝিয়ে দেয়। জ্ঞানই মানুষকে নিম্নস্তর থেকে ফেরেশতারও ওপরে মর্যাদা দান করে। জ্ঞানের সাহায্যে আমাদের প্রতিটি কাজ, আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি, চালচলন- সব কিছু নিয়ন্ত্রিত হলেই তা হবে মঙ্গলময় এবং কল্যাণময়। ধর্মীয় জীবনযাপনে মানুষকে মানুষ হিসেবে চলার আল্লাহর নির্দেশিত যে সোজা-সরল পথ, মনুষ্যত্ব বিকাশের যে সুন্দর পন্থা, তা চেনা একমাত্র জ্ঞানের সাহায্যেই সম্ভব। অজ্ঞানতা মানুষকে অন্ধ পশুজীবন-যাপনে বাধ্য করে। মানুষ জ্ঞানের অভাবে পশুত্বের নিম্নস্তরে নেমে যায়। মানুষ যে আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, তাও ভুলে যায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয়। তারপর তাকে উল্টো ফিরিয়ে নিচতমদেরও নিচে পৌঁছিয়ে দিয়েছি’ (সূরা আততীন : ৪-৫)।
জ্ঞানের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান রাখে আর যে জ্ঞান রাখে না, এ দুই ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? (কখনো না)’ (সূরা জুমার : ৯)। কুরআন-হাদিসের প্রকৃত জ্ঞানের বলেই মানুষ চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণাবলির অধিকারী হতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরিফের যে আয়াতটি প্রথম নাজিল করেন সেটি হলো : ‘পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে।’
অবোধ মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে পৃথক করার জন্য আল্লাহ তায়ালা পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানের অনুশীলনীর আদেশ দিলেন। সূরা আলাকে এর পরই আল্লাহ বলেন : ‘পাঠ করো তোমার প্রতিপালক সম্মানিত, যিনি কলম দিয়ে (লিখতে) শিক্ষা দিয়েছেন।’ এতেই বোঝা যাবে আল্লাহ মানুষকে মানুষ করার জন্য তার সুন্দর জীবন ইহকাল ও পরকালে সুন্দরতর করার জন্য লেখাপড়ার মাধ্যমে জ্ঞানের অনুশীলনীর প্রতি কত জোর দিয়েছেন।
হজরত রাসূলে করিম সা: বলেন : ‘নরনারীর ওপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ বা অবশ্যই কর্তব্য।’ হজরত রাসূলে করিম সা: বলেছেন : ‘সুদূর চীন দেশে গিয়ে হলেও জ্ঞান আহরণ বা জ্ঞান অর্জন করো।’ অর্থাৎ নিজ এলাকাতে জ্ঞান অর্জন করার কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকলে দূরে গিয়ে হলেও জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সা: জ্ঞানের অনুশীলনীর জন্য তাঁর প্রিয় উম্মতকে তাকিদ দিয়েছেন এবং উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন : ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ করো।’ তিনি আরো বলেন : ‘জ্ঞান সাধনার জন্য যে ঘরের বাহির হয়, সে আল্লাহর পথে চলে।’
ধর্ম ও ধর্মীয় জীবনের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও বুদ্ধির স্থান অতি উচ্চে। ইসলামের চোখে এই দুনিয়া আখেরাতের কর্মক্ষেত্র। তাই জীবন মানেই ধর্র্মীয় জীবন। সাধারণ জীবন বা আধুনিক জীবন আর ধর্মীয় জীবন বলে আলাদা কোনো কিছুর অস্তিত্বের স্বীকৃতি ইসলামে নেই। যারা এই বলে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে যে, ধর্র্মীয় জীবনের মানুষগুলো হবে সৎ, নিষ্ঠাবান, সত্যবাদী আর মুত্তাকি এবং ধর্মীয় যত রকম আচার-অনুষ্ঠান আছে সবগুলো করবে তারা। আর সামাজিক কাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, দেশ শাসন বা দেশ পরিচালনার মতো যত রকম কাজ আছে, এগুলো করবে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত লোকেরা, যাদের মধ্যে সৎ বা সততার তেমন প্রয়োজন নেই। এসব ধোঁকাবাজ আর শয়তানের দোসরদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এরা প্রতিনিয়ত মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে, আর আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি অসংখ্য বনি আদম এদের ধোঁকায় পড়ে জাহান্নামের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন বা ধর্ম ইসলাম। এই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামের জন্য মনোনীত আল্লাহ তায়ালার দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান আল কুরআনের জ্ঞান সঠিকভাবে অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর ওপর বিশেষভাবে ফরজ। সাথে সাথে হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর প্রদর্শিত পথকে সঠিকভাবে জানা এবং সঠিক হাদিসগুলোর ওপর জ্ঞান অর্জন করা ও আমল করা প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর ওপর ফরজ। পবিত্র কুরআনের বিধান বা আইন অনুযায়ী, হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর প্রদর্শিত নিয়মনীতি অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় তথা আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত পরিচালিত হওয়া ফরজ। ধর্মীয় নিয়মনীতি চলবে আল্লাহর আইনে আর সামাজিক, অর্থনীতি, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি চলবে মানুষের আইনে। ইসলামে দুই রকম নীতির স্থান নেই।
ইসলামের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হয়ে আমাদের মূল্যবান জীবনকে বরবাদ করে দিচ্ছি। কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান আমাদেরকে অবশ্যই অর্জন করতে হবে। অন্তত কুরআন-হাদিসের ততটুকু জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নরনারীর ওপর ফরজ, যতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে আমাদের ঈমান ঠিক রাখা যাবে, আল্লাহর হক এবং বান্দার হক জানা যাবে, হালাল-হারাম চেনা যাবে, ন্যায়-অন্যায় কোনটি, কোনটি সত্য এবং কোনটি মিথ্যা জানতে পারা যাবে এবং কোন পথে চললে এ দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আর পরকালে আল্লাহর কঠিন আজাব থেকে বাঁচতে পারা যাবে। একমাত্র কুরআন-হাদিসের মাধ্যমে এগুলো অর্জন করা সম্ভব। এ জন্য আপনাকে-আমাকে বড় আলেম বা জ্ঞানী হওয়ার জন্য অনুশীলন করার প্রয়োজন নেই। বড় আলেম বা জ্ঞানী হওয়ার জন্য এবং অন্য উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ইসলামে কোনো বাধা নেই। আজকাল অনেক জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ সম্মানিত তাফসিরকারকগণ অক্লান্ত পরিশ্রম করে কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ তাফসির বের করেছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আধুনিক শিক্ষিতদের কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বুঝতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। কুরআনের ওইসব সম্মানিত তাফসিরকারকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জাজা-স্বরূপ আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাত দান করুন। আপনি জানার জন্য এবং মানার জন্য যেকোনো তাফসির পড়তে পারেন, এতে কোনো বাধা বা নিষেধ নেই। যারা বলেন, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা কুরআনের তাফসির পড়তে পারবেন না, কুরআনের তাফসির করতে পারবেন না এবং আরো বলেন, অমুক অমুক তাফসিরকারকের তাফসির পড়া যাবে না। এসব জ্ঞানপাপী নিজেদের ব্যক্তিগত সুবিধাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কুরআন-হাদিসের সঠিক জ্ঞান অর্জন করা থেকে মানুষকে নানাভাবে ধোঁকা দিচ্ছেন। মুসলিম সমাজের এসব ধোঁকাবাজদের থেকে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।
আল্লাহ তায়ালাও এদের ব্যাপারে বলেন : ‘যারা আমার অবতীর্ণ উজ্জ্বল শিক্ষাবলি ও বিধানগুলো গোপন করে, অথচ সমগ্র মানবতাকে পথের সন্ধান দেয়ার জন্য আমি সেগুলো আমার কিতাবে বর্ণনা করে দিয়েছি; নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন এবং সব অভিশাপ বর্ষণকারীরাও তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করে।’ (সূরা বাকারা : ১৫৯)।
কুরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জন করার জন্য যেহেতু কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি, আমরা যারা শিক্ষার শুরুতে বা যুবক বয়সে জ্ঞান অর্জন করতে বা কুরআন পড়তে পারিনি, বৃদ্ধ বয়সে হলেও আমাদের কুরআন শিক্ষার চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ পাকের দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত আমাদের জ্ঞান ও আকল আল্লাহ তায়ালার ওহি জ্ঞানের মাধ্যমে পরিচালিত করার জন্যই মানুষকে এ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। এই শ্রেষ্ঠ নিয়ামত জ্ঞান ও আকল জিন ও ইনসান ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী বা সৃষ্টিকে দেয়া হয়নি। তাই আল্লাহ পাক কিয়ামতের কঠিন দিনে এই জ্ঞান ও আকলের হিসাব অবশ্যই নেবেন। আরো জিজ্ঞাসা করবেন, এই জ্ঞান ও আকল আল্লাহর দেয়া বিধান মতো পরিচালিত হয়েছে কি না? সেই কঠিন দিনে আমরা যদি সঠিক জবাব না দিতে পারি, তাহলে জাহান্নাম ছাড়া আমাদের ভাগ্যে আর কিছুই জুটবে কি না মহান আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
সম্মানিত পাঠক ভাই-বোনদের উদ্দেশে সূরা আনফালের ২২ নম্বর আয়াতটি তুলে ধরছি।
আল্লাহ বলেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম জন্তু হচ্ছে সেইসব বধির ও বোবা লোক, যারা নিজেদের জ্ঞানবুদ্ধিকে কাজে লাগায় না।’
আল্লাহ পাক আরো বলেন : ‘আর এটি একটি অকাট্য সত্য যে, বহু জিন ও মানুষ এমন আছে যাদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না। তাদের চোখ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না। তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা পশুর মতো, বরং তাদের চেয়েও অধম। তারা চরম গাফিলতির মধ্যে হারিয়ে গেছে।’ (সূরা -আল আরাফ : ১৭৯)।
কুরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে হবে। আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন।’ (আল হুজুরাত : ১৩)।
সব ঈমানদার নারী-পুরুষ ও পাঠকদের প্রতি বিশেষ আবেদন- আলকুরআন আমরা পড়ি এবং বুঝতে চেষ্টা করি। শুধু আরবি পড়লে আল্লাহ পাক কর্তৃক অঙ্গীকার করা সওয়াব পাওয়া যাবে সত্য। তার সাথে যদি অর্থ পড়ি তাহলে আংশিকভাবে বুঝতে পারব, তবে মর্ম বা প্রেক্ষাপট বুঝব না। কিন্তু ব্যাখ্যাসহ যদি কুরআন পড়ি তাহলে আমরা মর্ম অনুধাবন করতে পারব এবং অপরকে বোঝাতেও পারব। কুরআন বোঝার আগেই যদি এই মূল্যবান জীবনের অবসান ঘটে, তাহলে জীবনটা কি ষোলোআনাই মাটি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না?
আসুন, আমরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা কুরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জন করে নিজেদের জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে কুরআনের আলোকে সাজাতে চেষ্টা করি এবং আল্লাহ পাকের কাছে তৌফিক কামনা করি।
লেখক : প্রবন্ধকার
- See more at: Click This Link
©somewhere in net ltd.