নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমারি মত.................।

তাজ - সৈয়দাবাদী ।

শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এম পিও ভুক্ত কলেজ

তাজ - সৈয়দাবাদী । › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাহমুদুর রহমানের পক্ষ-বিপক্ষ

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫০

‘যে বয়সে পৌঁছে গেলে বয়স্কভাতা পাওয়া যায়, আমি সেই বয়স পার হয়ে এসেছি। জীবনের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সম্পূর্ণ সততার সাথে জীবনযাপনের চেষ্টা করেছি। সরকারি দায়িত্ব পালনকালে আপসহীনভাবে জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষা করেছি। কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করিনি। ব্যক্তিগত লোভ মনে জাগ্রত হয়নি। শিখেছি, প্রকৃত মানুষের ধর্মই হচ্ছে জুলুম ও অবিচারের প্রতিবাদ করা। এক নিকৃষ্ট স্বৈরশাসকের অপশাসনের ইতিহাস লিখে জেলে এসেছি। যদি কোনো দিন মুক্তি মেলে তাহলে আজীবন দখলদার স্বৈরশাসকের জুলুমের প্রতিবাদ করেই যাবো।’
ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত ৩-এর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গত ১২ মে ৩৪২ বিধিতে দেয়া জবানবন্দীতে এই কথাগুলো তুলে ধরেন দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের একটি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি এই জবানবন্দী দেন। জবানবন্দীতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি সুস্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে এবং যাবতীয় সমর্থিত প্রমাণসহকারে দাবি করছি যে, আমি সম্পূর্ণরূপে নির্দোষ। কোনো অপরাধ করে আমি আদালতে আসামি হইনি।’ মাহমুদুর রহমান তার বক্তব্যের সপক্ষে ফিরিস্তিসহকারে ১৫টি প্রমাণ আদালতের সদয় অবগতি এবং মামলার রেকর্ডরূপেও পেশ করেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের ব্যাপারে জানতে চেয়ে দুদক মাহমুদুর রহমানকে নোটিশ দিয়েছিল। সেই নোটিশের জবাব না দেয়ার কারণে দুদক তার বিরুদ্ধে এই মামলা করে। এ ব্যাপারে মাহমুুুদুর রহমানের বক্তব্য হচ্ছেÑ দুদুকের নোটিশটি ছিল বেআইনি। এই বিশেষ আদালতে মামলার বিচারিক কার্যক্রম প্রায় দুই বছর ধরে চলছে। মামলার শুনানিতে দুদকের আইনজীবী অর্থাৎ প্রসিকিউশন এবং মাহমুুদুর রহমানের আইনজীবীরা অংশ নেন। মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ, যুক্তিতর্ক, জেরা-পাল্টা জেরাসহ যাবতীয় কার্যক্রম গত ৩০ জুলাই শেষ হওয়ার পর বিজ্ঞ জেলা জজ মো: আবু আহমেদ জমাদার আগামী ১৩ আগস্ট ২০১৫ রায়ের দিন ধার্য করেছেন। আদেশ কী হবে তা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। তবে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীরা মামলাটি যে হয়রানির উদ্দেশ্যে ওপর মহলের চাপে করা হয়েছে, তা প্রমাণের চেষ্টা করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেছেন।
মামলার শুনানিতে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে তার মূল বক্তব্যে বলেন, ‘দুদক মাহমুদুর রহমানকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার নোটিশ করেছিল। সেই নোটিশ তিনি গ্রহণ করেছেন। যেহেতু তিনি নোটিশ এডমিট করেছেন এবং জবাব দেননি, সে কারণে তিনি অপরাধ করেছেন। এই মামলায় তার শাস্তি প্রাপ্য।’
এই মামলায় মাহমুদুর রহমানের মূল আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট ফরহাদ হোসেন নিয়ন, অ্যাডভোকেট মো: সালেহউদ্দিন প্রমুখ। তাদের বক্তব্য হচ্ছেÑ ২০০৪ সালের দুদক আইনের ১৭ (গ) এবং ২৬ (১) ধারা ও দুদক বিধিমালা ২০০৭-এর ৩ (১) এবং ১৭ (১) এই মামলায় প্রাসঙ্গিক। এই আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী নোটিশ দিতে হয়। এই ধারা অনুযায়ী নোটিশ দেয়ার আগে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে, সে অভিযোগের তদন্ত ও অনুসন্ধান হতে হবে এবং এই অভিযোগ ও তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনকে সন্তুষ্ট হতে হবে। কমিশনকে সন্তুষ্ট হতে হবে এই মর্মে যে, মাহমুদুর রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অস্তিত্বের প্রমাণ অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। এই সন্তুষ্টির পরিপ্রেক্ষিতেই কেবল কমিশন নোটিশ দেয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দিতে পারে। কিন্তু এই মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো সম্পদ পাওয়া গেছে মর্মে কোনো সাক্ষী উপস্থাপিত হয়নি। আবার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক জহিরুল হুদা, যিনি এই অনুসন্ধান সম্পর্কিত একমাত্র সাক্ষী, তিনিও বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্য দেননি বা তাকে সাক্ষী হিসেবে দুদক আদালতে উপস্থাপন করেনি। সুতরাং মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো সম্পদের অস্তিত্বের প্রমাণ না পেয়েই কমিশন তার বিরুদ্ধে নোটিশ দিয়েছে। কমিশনের এই সিদ্ধান্তটি বা সন্তুষ্টি বেআইনি কালারেবল এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মর্মে মামলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সে কারণে এই মামলায় মাহমুদুর রহমানের বেকসুর খালাস প্রাপ্য। প্রসিকিউশন বা দুদক আদালতে এই মামলা প্রমাণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
মাহমুুদুর রহমানের প্রধান কৌঁসুলি বলেন, হয়রানির জন্যই মাহমুুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে। তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কী সম্পদ আছে তা দুদক বলতে পারেনি। দুদকের যে কর্মকর্তা অনুসন্ধান করেছে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। মামলা করেছেন যে বাদি, দুদকের উপপরিচালক মো: নূর আহাম্মদ নিজে কোনো অনুসন্ধান করেননি এবং কোনো অনুসন্ধান রিপোর্টও তৈরি করেননি। তিনি তার সাক্ষ্যে একাধিকবার বলেছেন, কোনো অভিযোগকারী তার কাছে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি এবং তিনি কোনো অভিযোগকারীকে খোঁজেননি বা সাক্ষী করেননি। মামলার প্রথম আইও জহিরুল হুদা, যার কাছ থেকে বাদি নূর আহাম্মদ অসমাপ্ত অনুসন্ধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন, প্রসিকিউশন তাকে রহস্যজনকভাবেই আদালতে সাক্ষ্যদানের জন্য উপস্থাপন থেকে বিরত রেখেছে। অথচ মামলার চার্জশিটে তাকে গুরুত্বপূর্ণ ২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। বাদির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, নূর আহাম্মদ মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি চলমান অনুসন্ধানের নথি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেন। নথি গ্রহণ করার সময় কোনো মামলা রুজুর নির্দেশনা ছিল না। তিনি কোনো অনুসন্ধান নিজে করেননি এবং কোনো অনুসন্ধান প্রতিবেদন দুদকে দাখিল করেননি। মাহমুদুর রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কী কী সম্পদ পাওয়া গেছে তিনি জানেন না এবং তার কী কী সম্পদ ছিল বা আছে তাও তিনি জানেন না। তিনি আরো বলেছেন, ২০১০ সালে শুরু হওয়া অনুসন্ধান ২০১৫ সালেও চলমান আছে। নূর আহাম্মদ যেখানে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, নথি গ্রহণের পর তিনি নিজে আর কোনো অনুসন্ধান করেননি, সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায় এখনো অনুসন্ধান কার্যক্রম কে চালিয়ে যাচ্ছে?
অ্যাডভোকেট মিজান আদালতে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে দেখান যে, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদক যে দ্রুতগতিতে মামলাটি করেছে তা আলাদিনের দৈত্যের পক্ষেও সম্ভব নয়। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনের মঞ্জুরি প্রদান, গুলশান থানায় এফআইআর রেকর্ড করা, চার্জশিট তৈরি করা এবং পুরনো ঢাকার জজ কোর্টে গিয়ে মামলা রুজু করে সেগুনবাগিচায় কমিশন অফিসে গিয়ে রিপোর্ট প্রদান করার বিশাল কাজ কি এই অল্প সময়ে কোনো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব? আসলে সব কিছু আগে থেকেই তৈরি বা সাজানো ছিল। মামলায় ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবীদের জেরায় তারা সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

মাহমুদুর রহমান কেন সরকারের রোষানলে
২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল সরকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দ্বিতীয় দফায় দৈনিক আমার দেশ কার্যালয় থেকে বর্বর কায়দায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাকে প্রথমে ১৩ দিন ও পরে আরো দু’দফায় তিন দিন করে মোট ১৯ দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তার সম্পাদিত জনপ্রিয় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা ডিসি অফিসের একটি ‘সার্চ’ ওয়ারেন্ট দেখিয়ে সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূতভাবে বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় প্রকাশনা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আইন মেনেই বিকল্প প্রেসে আমার দেশ অস্থায়ীভাবে ছাপার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দু’দিনের মাথায় সরকার অভিযান চালিয়ে পত্রিকার ছাপা বন্ধ করে দেয় এবং ১৯ জন প্রেস কর্মচারীকে ধরে নিয়ে যায়। মামলা দায়ের করা হয় মাহমুদুর রহমানের মা, পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম ও সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে রিমান্ডে থাকাবস্থায় মাহমুদুর রহমান টানা ১১ দিন অনশন করেন। তার জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়লে তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করতে হয়।
দৈনিক আমার দেশ-এর ছাপা বন্ধ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের প্রায় আড়াই বছর হতে চলল। এরই মধ্যে আমার দেশ-এর সাংবাদিক-কর্মচারীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি এবং আইনমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী এবং ঢাকার ডিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রেস খুলে দেয়া এবং মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আমার দেশ-এর বেকার সাংবাদিক-কর্মচারীরা দাবি আদায়ে অসংখ্য সভা-সমাবেশ করেছেন। কিন্তু কোথাও সুবিচার পাওয়া যায়নি। আজ পর্যন্ত আমার দেশ-এর মামলাটি শুনানি পর্যন্ত হয়নি।
দৈনিক আমার দেশ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের অপরাধ কী? সরকার কেন আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমানকে সহ্য করতে পারছে না? কেন এত জুলুম-নির্যাতন? উত্তরটা সহজ। মাহমুদুর রহমান লেখালেখি করেন। তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে জানেন না। শাসকদের দুর্নীতি-লুটপাট, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ অপশাসনের বস্তুনিষ্ঠ ফিরিস্তি তিনি আমার দেশে সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে তিনি কোনো আপস করেননি। সীমান্তে বিএসএফের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে আমার দেশ বরাবরই ছিল উচ্চকণ্ঠ। বিচারপতির স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দিয়ে তিনি দেশ-বিদেশে হৈ চৈ ফেলে দেন। এই অনুসন্ধানী রিপোর্টের জন্য তিনি পুরস্কৃত হওয়ার কথা। এটি ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি ফাঁস করার মতোই একটি অসাধারণ অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছিল। এভাবেই মাহমুদুর রহমান সম্পাদিত জনপ্রিয় এ পত্রিকা সব সময় কালোকে কালো এবং সাদাকে সাদা বলেছে, এটাই অপরাধ। আলোড়ন সৃষ্টিকারী সাহসী অনুসন্ধানী রিপোর্ট করাই অপরাধ।
প্রথম দফায় ২০১০ সালের ১ জুন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার ও আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই সময় তাকে ১০ মাসেরও বেশি সময় জেলে বন্দী থাকতে হয়, রিমান্ডে চরম নির্যাতন সইতে হয়। তার বিরুদ্ধে দেয়া হয় একের পর এক মামলা। বর্তমানে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রয়েছে ৭০টি মামলা। শুধু সরকারের নির্যাতনই নয়। সরকার সমর্থক একটি মহলও গোয়েবলসীয় কায়দায় তার বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ ও সুপরিকল্পিত অপপ্রচারে নেমেছে। বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ২০১০ সালে মাহমুদুর রহমানকে ‘চান্স সম্পাদক’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। আর দ্বিতীয়বার মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর সরকার সমর্থক কয়েকজন সাংবাদিক ও কলাম লেখক নেমেছেন তার বিরুদ্ধে। তিনি নাকি ধর্মীয় উন্মাদনার সৃষ্টি করেছেন, উসকানি দিয়েছেন। আমার দেশ নাকি সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরণ করেনি।
শাহবাগ থেকে যখন উচ্চারিত হলো ‘ফাঁসি চাই, জবাই করো’, যখন ঘোষিত হলো আমার দেশ, নয়া দিগন্ত, সংগ্রাম, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করতে হবে, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে হবে, যখন বলা হলো ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে তখনই এর বিরুদ্ধে কলম ধরলেন মাহমুদুর রহমান, সোচ্চার হলো আমার দেশ। কারণ সেটা ছিল নগ্ন ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড। তাই আমার দেশ যথার্থভাবেই প্রতিবেদন প্রকাশ করল ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’। শাহবাগের চিহ্নিত কিছু নাস্তিক ব্লগার আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ সা:, পবিত্র কুরআন, হাদিস, নামাজ, রোজা নিয়ে কটাক্ষ করে ব্লগে লেখালেখি করে। এর বিরুদ্ধে যথার্থভাবেই অবস্থান নেয় আমার দেশ। সেদিন শাহবাগীদের ওইসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যদি আমার দেশ ও মাহমুদুর রহমান সোচ্চার না হতেন, তাহলে শাহবাগীরা আজ সারা দেশে ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব হয়ে দেশের শান্তি, স্বস্তি, গণতন্ত্র খুবলে খুবলে খেত। এদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠত।

মাহমুদুর রহমান সম্পাদক হওয়ায় ঈর্ষা কেন
বহুবারই টিভি টকশোতে আলোচ্য বিষয় হিসেবে এসেছে মাহমুদুর রহমানের সম্পাদক সত্তার প্রসঙ্গটি। একটি বিশেষ মহলের কাছে তিনি ভয়ানক মাথাব্যথার কারণ। তাদের অপপ্রচার ‘মাহমুদুর রহমান প্রফেশনাল সম্পাদক নন, উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন’ ইত্যাদি। এক টিভি শোতে দুই সম্পাদক অংশ নিচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মতিউর রহমান চৌধুরী, আলোচক নাঈমুল ইসলাম খান। আলোচকের কাছে উপস্থাপক জানতে চাইলেন মাহমুদুর রহমান সম্পর্কে। কোনোরূপ কুণ্ঠিত না হয়ে নাঈমুল ইসলাম খান বললেন, মাহমুদুর রহমান যে সাহস দেখিয়েছেন, সে জন্য তাকে আমি স্যালুট করি। মতিউর রহমান চৌধুরী জানতে চাইলেন, এই সম্পাদককে নিয়ে এত সমালোচনা কেন? একটি মাত্র শব্দে নাঈমুল ইসলাম খান উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি বললেন, ‘জেলাসি’। এটাই আসল কথা।
মাহমুদুর রহমান উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো সম্পাদক নন। প্রখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদের নেতৃত্বে একদল প্রফেশনাল সাংবাদিক তাকে অনুরোধ করেই সাংবাদিকতা পেশায় নিয়ে আসেন। কারণ ওয়ান-ইলেভেনের সময় থেকে মাহমুদুর রহমান একজন জনপ্রিয় কলাম লেখক হিসেবে সারা দেশে পরিচিতি লাভ করেন। দৈনিক নয়া দিগন্তে তার কলামটি খুবই পাঠকপ্রিয়তা পায়। তাই আমার দেশ-এর দুর্দিনে তিনি এ পত্রিকার হাল ধরতে পারবেন বলে ওই পত্রিকার সাংবাদিকেরা মনে করেন। তারা তাকে পত্রিকায় নিয়ে আসেন। যে সাংবাদিক-কর্মচারীরা টানা ১১ মাস বেতন পাচ্ছিলেন না, তারা বেতন-ভাতা পান। সাংবাদিকদের সাথে থেকে থেকে তিনি হাতে-কলমে সাংবাদিকতা রপ্ত করেন।
এ দেশে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান যখন নড়বড়ে ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ঐতিহ্যের নিভু নিভু আলো নিয়ে কোনোমতে টিকে ছিল, সে সময় সংবাদপত্র জগতে মজলুম সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের আগমন। তিনি সাংবাদিকতা পুরোপুরি রপ্ত করেই সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব নেন। এরপর সম্পাদক হিসেবে তিনি এই পেশায় নিজেকে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে নিয়োজিত করেন। সিরামিক ব্যবসার পাট চুকিয়ে দিয়ে এই সাংবাদিকতাকে তিনি একক পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। সম্পাদক দুই ধরনের আছেন রাইটিং ও নন রাইটিং। যারা লেখেন না, তাদের প্রজ্ঞা, মেধা, দূরদর্শিতা, রাজনীতি, সমাজনীতির ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ কী ধরনের হতে পারে, সে সম্পর্কে পাঠকের ধারণা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দুর্ভাগ্যজনক সত্য এই যে, বাংলাদেশের বর্তমান সংবাদপত্র জগতে নন রাইটিং এডিটরের সংখ্যাই বেশি। সঙ্গত কারণেই যিনি বা যারা রাইটিং এডিটর তারা অন্যপক্ষের ঈর্ষার শিকার হবেন। অ্যান্টি এস্টাবলিশমেন্ট সম্পাদকের ঝুঁকি তো মারাত্মক। দেশে কথিত ‘গণতান্ত্রিক’ শাসন চলছে বটে, কিন্তু আমরা জানি নির্বাচিত হলেই কোনো সরকার গণতান্ত্রিক হয় না। আর বর্তমানে শেখ হাসিনা তো একটি দখলদার সরকার। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনই হয়নি। নির্বাচনের নামে হয়েছে তামাশা। আজ পরমতসহিষ্ণুতার অভাব সমাজে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে, মিডিয়া দলন, সাংবাদিক হত্যার ব্যাপকতা-তীব্রতা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ইমেজ কালিমালিপ্ত করে দিচ্ছে।
মাহমুদুর রহমান সম্পাদক হিসেবে কোন মাপকাঠিতে অযোগ্য এটার কোনো সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বিরুদ্ধবাদীরা আজ পর্যন্ত দিতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে সরকার সমর্থক দু’জন সম্পাদক ও একজন সাবেক আমলার লেখা অনেকেরই দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ দেশের মানুষ তাদের ভালোভাবেই চেনে। একজন সম্পাদককে প্রেস কাউন্সিল হলুদ সাংবাদিকতা করার জন্য তিরস্কার করেছিল। অন্য সম্পাদক বিএনপি আমলে কী কী সুবিধা ভোগ করেছেন, তা অনেকেরই জানা। আর ওই সাবেক আমলাকেও মানুষ চেনে। বউ পেটানোর দায়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের চাকরিটি তিনি হারিয়েছিলেন। তারা এমন সময়ে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন, যখন তিনি জেলে বন্দী।
সত্যের জন্য, মানবাধিকারের জন্য, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য মাহমুদুর রহমানের যে লড়াই, সেটি এদেশের সাংবাদিকতা পেশাকে মহত্ত্ব ও মর্যাদা দিয়েছে। একচোখা বিরুদ্ধবাদীরা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যত আস্ফালনই করুন না কেন, তারা কখনো জয়ী হবেন না। সেটাই ইতিহাসের শিক্ষা।
লেখক : জাতীয় প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক,
নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ
- See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.