নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমারি মত.................।

তাজ - সৈয়দাবাদী ।

শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এম পিও ভুক্ত কলেজ

তাজ - সৈয়দাবাদী । › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘রাজনীতি’ ছাড়া আমাদের চলেই না

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮



প্রচ্ছদ
মতামত
রাজনীতি

সমসাময়িক

এ কে এম জাকারিয়া | আপডেট: ১৩:৩৫, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৫ |




গত ডিসেম্বরে (২০১৪) মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপের ফল প্রকাশিত হয়েছিল। বিষয়, কোন দেশের মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কেমন। এই খবর ও তথ্য অনেকেরই জানা। পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। সেই জরিপের ফলাফল বলছে, রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থান এক নম্বরে। রাজনৈতিক ‘অংশগ্রহণ’ বলতে সেই জরিপে যা বোঝানো হয়েছে, সেগুলো অনেকটা এ রকম: প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া, সংগঠিত প্রতিবাদ জানানো, রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় সদস্য হওয়া, শ্রমিক ধর্মঘটে অংশ নেওয়া, মতামত দিতে রেডিও বা টিভিতে ফোন করা, অনলাইনে রাজনৈতিক খবরে মতামত দেওয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনৈতিক সংবাদ বা মতামত পোস্ট করা।

৩৩টি দেশের ওপর এ জরিপ চালানো হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রায় রাজনীতিতে অংশ নেয়। ৩৩টি দেশের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি। আর রাজনীতিতে মধ্যম পর্যায়ের অংশগ্রহণ ২৯ শতাংশের ও নিম্ন পর্যায়ের অংশগ্রহণ ৫ শতাংশের। হিসাবটি তাহলে দাঁড়াল কী? উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন—এসব নানা পর্যায় মিলিয়ে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষেরই রাজনীতিতে অংশগ্রহণ রয়েছে! এমন দেশে কিনা এখন বিরোধী দল খুঁজে পাওয়া কঠিন। সংসদ আছে, কিন্তু সেখানে আমরা বিরোধী দলের খোঁজ পাই না (গত মঙ্গলবার অবশ্য গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সংসদ থেকে ‘বিরোধী দল’ জাতীয় পার্টির ওয়াকআউটের একটি খবর আমাদের চোখে পড়েছে)। তা না থাক, ঐতিহ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে বিরোধী দল বা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে সংসদের চেয়ে আমরা সব সময় রাজপথেই বেশি তৎপর দেখতে অভ্যস্ত। এখন সংসদ বা রাস্তা—কোথাও তাদের অস্তিত্ব নেই। রাজনীতি ছাড়া বাংলাদেশের মানুষ বাঁচে কীভাবে?
সংসদে বা রাস্তায় না থাকলেও ‘রাজনীতি’ মরে যায়নি। নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতি, পত্রপত্রিকার লেখালেখি, টিভি টক শো বা সামাজিক গণমাধ্যম—এসব মিলিয়ে ভালোভাবেই বেঁচে-বর্তে আছে আমাদের ‘রাজনীতি’। একেক সময় একেক বিষয় সামনে চলে আসে। বিষয়ের কোনো অভাব হয় না। একটার রেশ শেষ না হতেই আরেকটা। এই যেমন কয়েক দিন ধরে ‘রাজনীতির’ একটি বিষয় হচ্ছে জাসদ। বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় এই দলটি কী ভূমিকা পালন করেছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যায় এই দলটির দায় কী বা বর্তমান সরকারের মন্ত্রী জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুর ভূমিকা কী—এসব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক।
হঠাৎ এই পুরোনো বিতর্ক সামনে আসার কারণ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্য। তাঁর দল সরকার চালাচ্ছে, আর সেই সরকারের তথ্যমন্ত্রী হচ্ছেন হাসানুল হক ইনু। সেলিমের অভিযোগ, ‘স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনো বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত।’
এসব অভিযোগে নতুন কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুর আমলে কীভাবে জাসদ গড়ে উঠেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে তখন তারা কী করেছে বা ৭ নভেম্বরে তাদের ভূমিকা—এসব গোপন কোনো বিষয় নয়। এসব ঘটনার সঙ্গে বা সে সময়ের রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা সরাসরি জড়িত ছিলেন বা এসব ঘটনার যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁরা এখনো বেঁচে-বর্তে আছেন। তাঁরা তাঁদের স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে ফেলেননি। ইনুকে বুঝেশুনেই মন্ত্রী করেছে আওয়ামী লীগ। প্রশ্ন হলো সেই দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কেন হঠাৎ এই প্রসঙ্গ তুললেন? শেখ সেলিমই তা ভালো জানবেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্য সফলভাবেই এই পুরোনো প্রসঙ্গকে আবার ‘ইস্যু’ বানিয়ে ফেলতে পেরেছে। যে দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষের রাজনীতিতে ‘উচ্চমাত্রায়’ অংশগ্রহণ রয়েছে, তাদের ‘সক্রিয়’ হয়ে ওঠার জন্য এটা একটা সুযোগও বটে।
রাজনীতিতে পুরোনো প্রসঙ্গ অনেক সময় সামনে আসে যদি নতুন কোনো তথ্য বা কোনো ঘটনার নতুন ব্যাখ্যা বা পর্যবেক্ষণ পাওয়া যায়। শেখ সেলিমের বক্তব্যে নতুন কিছুই নেই, কিন্তু এ নিয়ে মাতামাতি হলো ঠিকই। গত কয়েক দিনের টিভি টক শোগুলোতে অন্তত তারই প্রমাণ পাওয়া গেল। পত্রপত্রিকায়ও লেখালেখি হয়েছে, হচ্ছে। কোনো একটা ইস্যু কোনোভাবে সামনে চলে এলেই হলো। যাঁদের প্রতিদিন টক শো আয়োজন করতে হয়, সেখানে কথা বলেন বা পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেন, তাঁদের জন্যও তো বিষয় লাগবে। আর আমাদের সবচেয়ে প্রিয় বিষয় তো সব সময়ই ‘রাজনীতি’।
জনগণের রাজনৈতিক সক্রিয়তা এখন মতামত দিতে রেডিও বা টিভিতে ফোন করা, অনলাইনে রাজনৈতিক খবরে মতামত দেওয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনৈতিক সংবাদ ও মতামত পোস্ট করায় এসে ঠেকেছে

রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য পুরোনো প্রসঙ্গ আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যদি কোনো দল তাদের অতীতের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করে। তবে আমাদের দেশে এমন সংস্কৃতির নজির নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরোধিতা করে যে জাসদের জন্ম, তারা এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারে। তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তারা তাদের সেই সময়ে ভূমিকাকে এখন কীভাবে মূল্যায়ন করে, কোনো ভুল ছিল কি না বা কোনো কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুশোচনা আছে কি না—এসব ব্যাপারে কোনো দলীয় বা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য কিন্তু আমরা কখনো পাইনি। একাডেমিক আলোচনা বা গবেষণায় পুরোনো রাজনৈতিক প্রসঙ্গ সব সময়েই থাকতে পারে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাসদের ভূমিকা বা অবস্থান নিয়েও তা হতে পারে। কিন্তু গত কিছুদিন এ নিয়ে অর্থহীন কিছু আলাপ-আলোচনাই শোনা গেল, আরও কিছুদিনও হয়তো তা-ই চলবে। আমরা তো কোনো না কোনোভাবে ‘রাজনীতি’ নিয়েই থাকতে চাই।
গত জানুয়ারি মাসে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির সময় বাস-ট্রাকে আগুন দেওয়া আর মানুষ পুড়িয়ে মারার যে বর্বরতা ঘটেছে, তা আপাতত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজপথের ‘রাজনীতির’ ইতি টেনেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকারের কঠোর অবস্থান। ফলে কোনো ধরনের ‘প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া’ বা ‘সংগঠিত প্রতিবাদ জানানো’—এমন কিছুর মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পথ এখন আর কার্যকর নেই। জনগণের রাজনৈতিক সক্রিয়তা এখন মতামত দিতে রেডিও বা টিভিতে ফোন করা, অনলাইনে রাজনৈতিক খবরে মতামত দেওয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাজনৈতিক সংবাদ ও মতামত পোস্ট করায় এসে ঠেকেছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা অনেকের মনে কিছুটা ভয় ধরিয়ে দিয়েছে ঠিক, কিন্তু এরপরও নানা ইস্যুতে লোকজন তাদের মতামত দিচ্ছে। দেশের রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি বা বিরোধী দলের অবস্থা যা-ই হোক, কোনো কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। সবকিছুতেই রাজনীতি আছে, এ নিয়ে ভাগাভাগি ও বিভক্তি আছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক সক্রিয়তা এখন অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দিয়ে ফুঁড়ে বের হচ্ছে। এসব মতামত বা মতামত প্রকাশের ভাষা ও কায়দায় সৃজনশীলতারও অভাব নেই।
রাজনীতি ও আমাদের দেশের নাগরিকদের রাজনীতিতে সক্রিয়তা সম্ভবত এক ভিন্ন মাত্রা পেতে যাচ্ছে। এভাবে কোথায় গিয়ে ঠেকবে কে জানে! আগামী নির্বাচনের আরও প্রায় সাড়ে তিন বছর বাকি আছে। এর আগে ‘রাজপথের রাজনীতি’ খুব সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। ফলে এখন যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে বলে মনে হয়। একের পর এক ইস্যু আমাদের সামনে আসতে থাকবে আর আমরাও তা নিয়ে টক শো, অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাতামাতি করেই যাব। এই দেখছেন না ‘জাসদ ইস্যু’ তাজা থাকতে থাকতেই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যু চলে এসেছে। ইস্যু বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানকার ভিসি ও শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ কিন্তু আলোচনা বা তর্ক-বিতর্কটা পুরোপুরি রাজনীতির। ‘রাজনীতি’ ছাড়া যে আমাদের চলেই না!
এ কে এম জাকারিয়া: সাংবাদিক।
[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.