![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রচ্ছদ
মতামত
আন্তর্জাতিক
মালয়েশিয়া
মাইকেল পিল | আপডেট: ০০:১১, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৫ | প্রিন্ট সংস্করণ
০ Like
.মালয়েশিয়ায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন থেকে ৩৪ ঘণ্টা ধরে যে মিছিল হয়েছে, তাতে লাখো মানুষ যোগ দিয়েছিল। দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরের রাস্তায় মানুষ বিক্ষোভ করেছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক নানা কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত, বিক্ষোভকারীরা তাঁর পদত্যাগ চেয়েছে। ওদিকে নাজিব রাজাক গত রোববার বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তিনি দেশটির জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে বিক্ষোভ করার জন্য বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাদের ‘জাতীয় চেতনা দুর্বল’। মালয় ভাষায় এই বিক্ষোভকে বেরিশ বলা হয়, যার অর্থ হলো ‘পরিষ্কার’। দেশটিতে যে নানা সমস্যা বিরাজ করছে, এই আন্দোলনের কারণে তা পরিষ্কার হলো। সরকারি কাজে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সেখানকার আকাশে-বাতাসে ঘূর্ণিবায়ুর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। এই সংকটের পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা যায়।
প্রথমত, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তাঁর ব্যাংক হিসাবে গত মার্চ মাসে ৬৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানান্তর করা হয়েছে। গত জুলাই মাসে এই রহস্যময় লেনদেনের খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে হটানোর আন্দোলন শুরু হয়। দেশটির অ্যান্টি-করাপশন কমিশনের কাছে নাজিব বলেছেন, তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি, আর টাকাটা মধ্যপ্রাচ্যের এক অজানা উৎস থেকে এসেছে। কমিশন তাঁর ভাষ্য মেনে নিয়েছে। কিন্তু সমালোচকদের অভিযোগ হচ্ছে, এই টাকার সঙ্গে ১ মালয়েশিয়ান ডেভেলপমেন্ট বারহাডের (১ এমডিবি) সম্পর্ক আছে, এটি সে দেশের একটি জাতীয় বিনিয়োগ তহবিল, যার দেনার পরিমাণ ১১ বিলিয়ন ডলারের ওপর, আর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগও আছে। নাজিবের বিরোধীরা বলছেন, এই টাকা কোথা থেকে আর কেনই-বা তাঁর হিসাবে এল, সেটা তাঁর খোলাসা করা উচিত, যেহেতু এই টাকা বিদেশ থেকে এসেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
এই সংকটের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ৫৮ বছর ধরে ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের অবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। সমালোচকদের কথা হচ্ছে, ব্রিটিশদের কাছ থেকে ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই এই সংগঠনের নিরবচ্ছিন্ন একক কর্তৃত্বের কারণে তাদের মধ্যে ঔদ্ধত্য ও অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত জুলাই মাসে এই ব্যাংক লেনদেনের খবর ফাঁস হওয়ার পর নাজিব দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন, ভগ্নস্বাস্থ্যের অভিযোগে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সরিয়েছেন, আর যে কমিটি বিষয়টি তদন্ত করছিল, তার সদস্যদের অন্য কাজে নিয়োজিত করেছেন।
তৃতীয় কারণ হচ্ছে ২০১৩ সালের নির্বাচনে ইউএমএনওর নেতৃত্বাধীন জোটের ৪৭ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি। মতামত জরিপে বিরোধীদের কাছে হারার পরও বারিসান ন্যাশনাল গোষ্ঠী সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু এ কারণে ইউএমএনওর ভেতরের কিছু মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে পার্টির কর্তৃত্ব ও দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয় জনগোষ্ঠীর আনুগত্য কমে যেতে পারে। বিরোধীরা ব্যালট কারচুপির অভিযোগ আনলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি।
মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন ধর্ম ও জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস, দেশটির রাজনীতি সব সময়ই বিভক্ত। সেখানে চীনা ও দক্ষিণ এশীয়রা সংখ্যালঘু হলেও তাদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এ বছরের শুরুর দিকে বিরোধী জোটও ভেঙে পড়েছে, দেশটির কেলান্তান প্রদেশে শরিয়া আইন প্রবর্তনের প্রচারণাকে কেন্দ্র করে ইসলামপন্থী ও অ-ইসলামপন্থীদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে। বারসিহ্দের মিছিলে মালয়দের স্বল্প উপস্থিতি দেখে বোঝা যায়, সরকার একদম গয়রহভাবে সমর্থন হারায়নি। কিন্তু নাজিবের সমর্থকেরা আগামী অক্টোবরে পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ায় অনেকেই এই ভেবে শঙ্কিত হচ্ছে যে এই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হবে, এমনকি অপ্রীতিকরও হতে পারে।
চতুর্থ কারণ হলো ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মাহাথির মোহাম্মদের শাসনামলে তিনি ক্রমবর্ধমান হারে তাঁর সাবেক অনুগ্রহভাজনদের ওপর হামলে পড়েছিলেন। মাহাথিরের সমালোচনা প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিশেষ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এর ফলে ইউএমএনওর মতৈক্যে ফাটল দেখা যাচ্ছে। এই সমালোচনার সঙ্গে আছে নাজিবকে হটাতে রোববার ‘জনগণের রাজের’ আহ্বান। এই ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ সাবেক রাষ্ট্রনায়ক বলেছেন, তিনি জাতীয় স্বার্থে কাজ করছেন। আর এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন, নিজের রেখে যাওয়া হাই প্রোফাইল ও প্রবল গতিতে ধাবমান—কিন্তু ত্রুটিযুক্ত—মালয়েশিয়ার ‘ব্যাঘ্র’ অর্থনীতিকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সংশয়বাদীদের কথা হচ্ছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা জনপ্রিয় আন্দোলনের মুখপাত্র হবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, তাঁর শাসনামল কর্তৃত্বপরায়ণতা ও দলবাজির জন্য চিহ্নিত। এই মাহাথিরের শাসনামলেই তাঁর সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে প্রথমবারের মতো সমকামের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। আনোয়ারের সমর্থকদের অভিযোগ, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। এই ফেব্রুয়ারিতে এক আপিল আদালত একই অভিযোগে আনোয়ারের বিরুদ্ধে দেওয়া রায় পুনর্বহাল করেছেন, আনোয়ার এখন বিরোধীদলীয় নেতা।
পঞ্চমত, বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর ডলারের বিপক্ষে রিঙ্গিতের মান সবচেয়ে কমে গেছে, এটিও এই সংকটের এক কারণ। ১ এমডিবির আগে থেকেই মালয়েশীয় অর্থনীতি চাপের মুখে ছিল, আর পরিস্থিতিও জটিল হয়ে উঠছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মালয়েশিয়ার ব্যাপারটা ভিন্ন। তারা তেল-গ্যাসের নেট রপ্তানিকারক হয়েও জ্বালানি তেলের পড়তি দামের কারণে সে লাভবান না হয়ে ভুক্তভোগী হয়েছে। দেশটিতে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ সে অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ, যেটা তাদের গত বছরের মোট দেশজ উৎপাদনের ৮৮ শতাংশ। জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ছে, বিশেষ করে এ বছর পণ্য ও পরিষেবার ওপর ৬ শতাংশ কর আরোপের পর তা আরও বেড়েছে। ওদিকে চীনা স্টক বাজারের টালমাটাল অবস্থার কারণেও কুয়ালালামপুরের মানুষের স্নায়ুর চাপ কমেনি, শেয়ারের দামও বাড়েনি।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; এফটি.কম থেকে নেওয়া
মাইকেল পিল: ব্রিটিশ সাংবাদিক।
©somewhere in net ltd.