নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমারি মত.................।

তাজ - সৈয়দাবাদী ।

শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এম পিও ভুক্ত কলেজ

তাজ - সৈয়দাবাদী । › বিস্তারিত পোস্টঃ

তেলের দাম কমায় বিশ্বে ক্ষমতার অক্ষেও পরিবর্তন ঘটছে

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬

সৌদি আরব তার বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার শেষ করে ফেলছে নজিরবিহীনভাবে। তেলের দাম কমে যাওয়া এবং ব্যয়ের বোঝা অনেক বেড়ে যাওয়ার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে গিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
গত সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের নিচে নেমে যায়, যা ছয় বছরের মধ্য সর্বনিম্ন। এতে উপসাগরীয় দেশগুলোর ব্যয়ের সামর্থ্য কমে গেছে। তবে রাশিয়াসহ তেল উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের গায়ে লেগেছে আরো বড় ধাক্কা। ভেনিজুয়েলা ও নাইজেরিয়া দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। আশঙ্কা জেগেছে, তেলের মূল্যধসে বিশ্বে ক্ষমতার ভারসাম্যে বিরাট পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর এবং ২০১৫ সালের জুন মাসের মধ্যবর্তী সময়ে সৌদি আরব প্রতি সপ্তাহে তার বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার থেকে ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। সংশ্লিষ্ট সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছর সেপ্টেম্বরে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারে ছিল ৭৪৬ বিলিয়ন ডলার। তা কমতে কমতে গত জুন মাসে ৬৭২ বিলিয়নে নেমে এসেছে। এ দিকে বাদশাহ সালমান গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় এসে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীদের বির”দ্ধে প্রচণ্ড সামরিক অভিযান শুর” করেছেন। তিনি সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধীদের অস্ত্রশস্ত্রও সরবরাহ করছেন।
থিঙ্কট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউজের একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ডেভিড বাটার বলেছেন, সৌদি আরবের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্র”ত কমে আসছে। এর প্রমাণ, গত সপ্তাহে সৌদি সরকার সভরেন বন্ড মার্কেট থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গত আট বছরের মধ্যে এবারই প্রথম সৌদি আরবকে আবার এমন পদক্ষেপ নিতে হলো।
সৌদি আরব বিশ্বের সেরা তেল রফতানিকারী দেশ এবং তেল রফতানিকারক দেশগুলোর ১২ সদস্যের সংস্থা ওপেকের কার্যত নেতা। অতীতে সৌদি আরব দেখিয়েছে, তেলের আয়বাবদ প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সে সামাজিক অস্থিরতার অবসান ঘটাতে প্রস্তুত। বিক্ষোভকারীদের অর্থ প্রদান ছাড়াও বেতন বৃদ্ধির জন্য ১৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এবং সামাজিক ব্যয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে সৌদি আরবে আরব বসন্তের সূচনাতেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শান্ত করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই বিশ্বাস, তেল উৎপাদন কমাতে অস্বীকৃতি জানানোর দর”ন সৌদি আরব নিজে সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৫০ ডলারেরও নিচে নেমে গেছে। এর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে- কারাকাসের বস্তি থেকে সিরিয়া ও ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্র, রাশিয়ার উত্তর মের” অঞ্চল থেকে চীনে পার্ল রিভার বদ্বীপ পর্যন্ত।
অপর দিকে ইতিবাচক দিক হলো- জ্বালানির পেছনে ভোক্তাদের যে ব্যয় হতো, তা অন্য দিকে হচ্ছে বলে বিশ্ব অর্থনীতি হয়েছে উজ্জীবিত। লন্ডনের কিংস কলেজের লিয়েফ ওয়েনার (‘ব্লাড অয়েল’ গ্রন্থের প্রণেতা) বলেছেন, এখন বিশ্বের ভোক্তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটবে- বিশেষ করে গরিবদের। কারণ, জ্বালানির জন্য আনুপাতিক হারে তাদের ব্যয় করতে হয় বেশি। ভারত, চীন, জাপান এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশ, যারা তেলের বড় আমদানিকারক, তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘বিজয়ী’ হবে। এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধিসহায়ক হওয়া এবং মানুষের মৌলিক প্রয়োজনীয় পণ্যের খরচ কমে আসা উচিত।
বিশ্বের যে ক’টি দেশে তেলের মজুদ বৃহত্তম, সেগুলোর একটি হচ্ছে ভেনিজুয়েলা। সেখানে কিন্তু বিপরীত চিত্র। দেশটি অত্যধিক মূল্যস্ফীতির আবর্তে নিপতিত; বাড়ছে অপরাধ। দেশটি ঋণ শোধে ব্যর্থ হতে পারে- এমন শঙ্কা বাড়ছে। এসব কিছু মিলিয়ে ডিসেম্বর মাসেই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর পতন ঘটতে পারে। তখন পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা।
রাশিয়ার রফতানির ৭৫ শতাংশ এবং বাজেটের রাজস্ব আয়ের অর্ধেকের বেশি নির্ভর করে তেল ও গ্যাসের ওপর। সেখানে অর্থনীতির দ্র”ত অবনতি ঠেকাতে দস্তুরমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ফলে জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা হয়তো সম্ভব হবে না। এই প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনে পাশ্চাত্যের বির”দ্ধে যুদ্ধের উন্মাদনা বাড়ানোর মদদ পাচ্ছে র”শ জাতীয়তাবাদী ও অন্যরা।
তেলের দাম এক ডলার কমলেই রাশিয়া হারায় ২ বিলিয়ন ডলার। প্রফেসর ওয়েনারের মতে, তেলের দাম কম থাকলেও রাশিয়ার জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে সব দোষ পাশ্চাত্যের ঘাড়ে চাপাতে বাগাড়ম্বর এবং ইউক্রেন যুদ্ধের উন্মাদনা বাড়ানো হবে বলে মনে হচ্ছে। রুশ অর্থনীতি সম্প্রতি যতটা সঙ্কুচিত হয়েছে, ২০০৯ সালের পর আর এমনটি ঘটেনি।
মধ্যপ্রাচ্যের ছোট দেশগুলো আর আফ্রিকার তেল রফতানিকারক দেশগুলোর অর্থভাণ্ডার সৌদি আরবের চেয়ে অনেক কম। এসব দেশই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। যেমন- আলজেরিয়ার রফতানি আয়ের ৯৭ শতাংশই আসে তেল-গ্যাস থেকে। দেশটির সরকার আগে থেকেই ‘ইসলামপন্থী’ বিদ্রোহীদের সাথে লড়ছে। এখন যদি এর ভঙ্গুর অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়ে, তাহলে প্রতিবেশী লিবিয়ার মতো পরিস্থিতির শিকার হতে পারে আলজেরিয়াও।
উপসাগরীয় দেশ বাহরাইন এবং ওমান সৌদি অর্থ সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। দেশ দুটোর আশঙ্কা, তেলের দামের সঙ্কট অব্যাহত থাকলে ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে জন-অসন্তোষ আবার দেখা দিতে পারে। মনে হচ্ছে, বাইরের সাহায্য নিয়ে এ দুটো দেশ আর চলতে পারবে না।
চাপ টের পাচ্ছে ইরানও। এবার পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে চুক্তি করার জন্য তার আগ্রহের পেছনে এটাও ছিল একটা কারণ। মুম্বাইর একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক বলেছে, তেলের দাম পড়ে যাওয়ার মতো কারণও ইরানকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে গেছে।
এ দিকে ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস) বাহিনী ইরাকে মসুলের মতো গুর”ত্বপূর্ণ নগর এবং উত্তরাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে রেখেছে। আইএস মোকাবেলা করতে নেমে ইরাক সরকার হিমশিম খাচ্ছে। অবশ্য তার সান্ত্বনা, আইএসও চাপ অনুভব করবে। কারণ, তাদের বেশির ভাগ আয়ের উৎস চুরি করা অপরিশোধিত তেল।
অ্যাঙ্গোলা ও নাইজেরিয়ার মতো ওপেক সদস্যদেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট হয়ে উঠছে তীব্র। এতে বোকো হারামের মতো বিদ্রোহীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে।
যা হোক, সৌদি আরবের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ত্রিশের নিচে। যদি অর্থনৈতিক সঙ্কটে তরুণসমাজের কর্মসংস্থানসহ সুযোগ সুবিধা কমে যায়, তাহলে নিকট ভবিষ্যতে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে জঙ্গিরা মদদ পাবে।

(দি টাইমস, লন্ডনের সৌজন্যে)
ভাষান্তর : মীযানুল করীম
- See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.