![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিদ্দিকুর রহমান খান | 04-09-2015
10
উপাচার্যের গোয়ালঘর ও আহমদ ছফার ‘গাভী বিত্তান্ত’ উপন্যাস মনীষী লেখক আহমদ ছফার ‘গাভী বিত্তান্ত’ উপন্যাসের মূল কেন্দ্র একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মূল চরিত্র সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত উপাচার্য মিঞা মোহাম্মদ আবু জুনায়েদ। নিখুঁত বর্ণনার মাধ্যমে তিনি পাঠকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচয় প্রকাশ করেছেন অত্যন্ত কৌশলে,
কোনও নাম উল্লেখ ছাড়াই। দার্শনিক ছফা লিখেছেন, ‘আমাদের দেশের সবচাইতে প্রাচীন এবং সম্ভ্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়’।
উপাচার্য পদে আবু জুনায়েদের আরোহন এবং এর সামান্য পূবর্র্বতী এবং পরবর্তী ঘটনাচক্র উপন্যাসটির বিষয়বস্তু। ‘গাভী বিত্তান্ত’ উপন্যাসটি তেমনই এক বিষয়ের ওপর লেখা, যা নিয়ে সচরাচর সাহিত্য হয় না।
আবু জুনায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ব্যক্তি হলেও নিজের ঘরে বেগম নুরুন্নাহার বানুর কাছে তিনি বড় অসহায়। বাসি পাউরুটির সঙ্গে তুলনা করেছেন নুরুন্নাহারের শরীর। শ্বশুরের টাকায় আবু জুনায়েদ লেখাপড়া করেছেন, এই খোটা নুরুন্নাহার বানু উঠতে বসতে তাঁকে দেন। আবু জুনায়েদ রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক। একমাত্র বাজারের তরকারি এবং মাছওয়ালা ছাড়া আর কারো সঙ্গে কোনোদিন হম্বিতম্বি করেননি তিনি। নিতান্ত গোবেচারা এবং সহজ-সরল মানুষ।
এই মানুষটিকে উপাচার্য প্যানেলের নির্বাচনে নিয়ে আসেন তাঁর ডিপার্টমেন্টের অনুজ শিক্ষক দিলরুবা খানম। পূবর্র্বতী উপাচার্যের প্রতি ক্ষোভ থেকেই তিনি শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং ডোরাকাটা দলের হয়ে উপাচার্য প্যানেল ঘোষণা করেন। এই প্যানেলের তিন শিক্ষকের মধ্যে ভাগ্যক্রমে আবু জুনায়েদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া তিন শিক্ষকের মধ্যে থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি আবু জুনায়েদকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিলে শুরু হয় তাঁর নতুন জীবন, উপাচার্য জীবন।
উপাচার্য ভবনে উঠে আসেন তিনি। বেগম নুরুন্নাহার বানুও বুঝতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট লেডি হিসেবে তাঁর কী করা উচিত, কীভাবে চলা উচিত। এরই মধ্যে ঘটনাচক্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকাদার শেখ তবারক আলীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে আবু জুনায়েদের।
বর্তমান উপাচার্য সাহেব যে শ্বশুরের পয়সায় লেখাপড়া করেছেন সেটি খুব ভালোমতো জানতেন তবারক আলী। কারণ আবু জুনায়েদের শ্বশুর ছিলেন একজন ঠিকাদার আর তাঁর হাত ধরেই তবারক আলীর সব উন্নতি। সে কারণে তিনি আজও কৃতজ্ঞ।
কৃষক পরিবারের সন্তান আবু জুনায়েদের জমির প্রতি প্রচণ্ড লোভ। তিনি ঢাকা শহরের আশপাশে জমির দালালের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান স্বস্তায় বিপুল পরিমাণ জমিলাভের সুযোগের আশায়। আরেকটা শখ অবশ্য আবু জুনায়েদ মনে মনে পোষণ করেন, বলা যায় তাঁর আজন্ম লালিত সাধ। সেটি হলো একটি গাভী পুষবেন তিনি। আগে যেসব কোয়ার্টারে থেকেছেন তিনি, সেখানে গরু রাখার জায়গা ছিল না। কিন্তু উপাচার্য ভবনের বিশাল আঙিনায় সে সমস্যা নেই।
ঘটনাক্রমে শেখ তবারক আলীর বাড়িতে সপরিবারে দাওয়াতে যান আবু জুনায়েদ। সেখানে তিনি তবারক আলীর অঢেল সম্পদের নমুনা দেখতে পান এবং সুযোগ পেয়ে নিজের আজন্ম লালিত সাধের কথা চাচাশ্বশুরকে জানান।
উপাচার্য জামাইয়ের এই সাধ পূরণ করা শেখ তবারক আলীর জন্য কোনো বিষয়ই ছিল না। তাই তিনি সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন এবং উপাচার্য ভবনের আঙিনায় একটি সুদৃশ্য গোয়ালঘর তৈরি করে দেন। সেই গোয়ালে ঠাঁই হয় ‘তরণী’ নামে একটি গাভীর।
উপাচার্যের এই গাভীর বংশপরিচয় সম্পর্কে আহমদ ছফা লিখেছেন, ‘সুইডিশ গাভী এবং অস্ট্রেলিয়ান ষাঁড়ের মধ্যে ক্রস ঘটিয়ে এই বাচ্চা জন্মানো হয়েছে’।
সাভার ডেইরি ফার্ম থেকে নগদ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন শেখ তবারক আলী। ছিপ নৌকোর মতো আকৃতি বলে এই প্রজাতির গরুর নামকরণ করা হয়েছে ‘তরণী’।
উপাচার্য আবু জুনায়েদের জীবনে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এলো তরণী। তাঁর মন এখন পড়ে থাকে গোয়ালঘরে। দিনরাত সেখানেই কাটান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মিটিং বা কাগজপত্র সই করেন সেখানে বসে। তাঁর কাছে যেসব শিক্ষক আসেন, তাঁদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপও তিনি সারেন গোয়ালঘরে।
এই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ঔপন্যাসিক আহমদ ছফা লিখেছেন, ‘মোগল সম্রাটেরা যেমন যেখানে যেতেন রাজধানী দিল্লিকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন, তেমনি আবু জুনায়েদও দিনে একবেলার জন্য গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়ালঘরে ঢুকিয়ে ফেলতেন। দিনে দিনে গোয়ালঘরটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃৎপিণ্ড হয়ে উঠল। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এটাই পৃথিবীর একমাত্র গোয়ালঘর, যেখান থেকে আস্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপদ্ধতি পরিচালিত হয়’।
উপাচার্য আবু জুনায়েদের জীবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ সবটাই হয়ে পড়ে গোয়ালঘরকেন্দ্রিক। এই গোয়ালঘরকে রঙ্গমঞ্চ বানিয়ে আহমদ ছফা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দৈন্যদশা এবং শিক্ষক রাজনীতির নোংরা দিকটি তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের অনেক চরিত্রই পাঠকদের তাই চেনা-পরিচিত মনে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়টিও সবার কাছে জীবন্ত হয়ে উঠেছে আহমদ ছফার প্রাণবন্ত লেখনীর কারণে।
উপন্যাসের রচনাকাল ডিসেম্বর ৯৪ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ। প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে শাহরিয়ার রাসেলের নাম থাকলেও পরিকল্পনাটা ছফারই। বাজারে এখন যে সংস্করণ পাওয়া যায় তার সঙ্গে প্রথম প্রচ্ছদের মিল নেই। প্রকাশকও ভিন্ন। প্রথম প্রকাশের একটি কপি আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়েছে। ছফা ভাই আমাকে দিয়েছিলেন খুব সম্ভবত ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে।
শাহজালাল ইউনিভার্সিটিতে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের প্রধান নেতা ছফার বন্ধু অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে ছফাবন্ধ জাফর ইকবালের উপন্যাস ‘মহব্বত আলীর একদিন’ প্রকাশের আগ পর্যন্ত আহমদ ছফার গাভী বিত্তান্তই ছিল বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে একমাত্র উপন্যাস।
২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৫
কালীদাস বলেছেন: এখনকার জমানার ভাষায় বললে বলতে হবে অস্হির একটা বই।
আর আমার জমানার ভাষায় বললে, এরকম মাপের বই কমই পড়েছি। আপনার লেখাটাও ভাল হয়েছে
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৫
জারাহ বলেছেন: খুব মজার পোস্ট । অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আসলে এটাই চরিত্র।
আহমদ ছফার বইটি পড়ার আগ্রহ রইলো