![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক | 07-09-2015
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু কথা: নিয়াজ আহম্মেদ প্রতিষ্ঠানটি বড়, জায়গাটিও বড় এবং জ্ঞানীগুণীদের মিলনমেলা। এখানকার মানুষগুলো বেশ স্বাধীন এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণও সর্বোচ্চ স্বাধীনতার পর্যায়ভুক্ত। তবে এই স্বাধীনতা ও তাদের স্বায়ত্তশাসনকে সব সময় না হলেও মাঝেমধ্যে অপব্যবহার করা হয়।
সমাজের অপরাপর মানুষ এখানকার লোকদের খুব ভালো জানত, আমার বিশ্বাস এখনো জানে এবং ভবিষ্যতেও জানবে। জ্ঞানীগুণীবেষ্টিত এ মানুষগুলোর প্রতিষ্ঠানটি মাঝেমধ্যে পত্রিকা, টিভি, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন শিরোনাম হয়ে ধরা দেয়, তখন এখানকার মানুষগুলোর মুখ দেখানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। ধরা এমনিতেই দেয় না। শিরোনাম ও লেখাগুলো পড়ে আপনার, আমার, সবার নিন্দার পরে যদি কিছু থাকে তা-ই জানাতে হবে। এখানকার ঘটনাগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত ও আকস্মিক এমনটি বলা অযৌক্তিক ও মানানসই নয়। ঘটনাগুলো পরিকল্পিত এবং কারো না কারো দ্বারা সৃষ্ট। মুদ্রার অপর পৃষ্ঠায় শুধু নেতিবাচক ঘটনাই এখানে ঘটে তা নয়। অনেক ভালো ভালো কাজ হয় এখানকার মানুষ দ্বারা। দেশ-বিদেশে তাদের সুনাম ও পরিশ্রমের ফলাফলও প্রকাশিত হয়। আমরা তখন গর্ব অনুভব করি। গর্বে বুক ফেটে যেতে চায়। এখানকার উৎপাদন দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের নীতিনির্ধারণে অবদান রাখে। এত কিছুর পেছনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যেক সদস্যের শ্রম, সাধনা ও ভালোবাসা। কিন্তু এত সব ভালো কাজ ম্লান হতে সময় লাগে না। আবার ম্লানের জন্য এখানকার মানুষগুলোও কম দায়ী নয়। এর দায় আমরা এড়াতে পারি না। কেউ কম আর কেউ বা বেশি।
যাদের জন্য আমরা, আমাদের অবস্থান, আমাদের শ্রম ও সাধনা, আবার আমাদের খাওয়াদাওয়া ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি ও যাদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি, বড় বড় ভবন, নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আরো কত কী, তারা কী রকম? তাদের মধ্যে সবাই নয়, কেউ কেউ বা কিছুসংখ্যক মাঝেমধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী আচরণ করে বসে। তারা নিজেরা একান্ত নিজেদের উদ্যোগে কাজটি করে তা নয়। কারো না কারো পছন্দে কাজটি করছে। আজকে একজনের পক্ষ হয়ে এবং কালকে অন্যজনের। আজকে একজনের নামে স্লোগান দিচ্ছে, কালকে হয়তো অন্যজনের নামে একই কাজ করবে। আবার এমনও হতে পারে, পরশু আবার প্রথমজনের দিকে ঝুঁকবে। অন্যদিকে এক পক্ষের বিপরীতে বিরুদ্ধপক্ষ তৈরি হবে না- এমন নিশ্চয়তাও নেই। সব কিছু আনুগত্যের ওপর নির্ভরশীল। আনুগত্য শেষ তো অন্যদিকে যাওয়া। এটাই এখানে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য বাইরের উদ্দীপক যতটা দায়ী, তার চেয়ে ঢের বেশি দায়ী ভেতরের। আমরাই নির্ধারণ করে দিই কার অবস্থান কখন, কোথায়, কিভাবে হবে। ধারণাগুলোর সঙ্গে হয়তো বাইরের লোকগুলো বেশি মাত্রায় জ্ঞাত এবং অভ্যস্ত নয়, তবে ফেসবুক ও অবাধ গণমাধ্যমের বদৌলতে ঘটনাগুলো ও সত্য জানার মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। আমরা নিজেরাও চাই, সবাই জানুক আসল সত্যটি। তবে এখানেও সমস্যা রয়েছে। একেকজন একেকভাবে জানছে ও বুঝছে। কেউ সত্যকে মিথ্যা বলে জানছে, আবার কেউ বা মিথ্যাকে সত্য। আবার আমরা যেটি সত্য সেটিকে মিথ্যা বলে মনে করছি, আবার মিথ্যাকে সত্য।
জ্ঞানীগুণীদের এ চারণভূমিতে আমাদের কখনো কখনো আন্দোলন-সংগ্রামে যেতে হয়। অবশ্য আমরা প্রয়োজন বোধ করি বিধায় কাজটি করছি। কাউকে কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া, কাজ না করতে দেওয়া কিংবা জোর করে কার্যালয়ে ঢুকতে যাওয়া ইত্যাদি। প্রয়োজন বিধায় কাজটি আমাদের কাছে অন্যায় নয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়েও পড়ে না। আবার অনেক সময় বিকল্প নেই বিধায় আমরা কাজটি করছি। গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিক, ন্যায়-অন্যায়, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও লঙ্ঘন নয়- তা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয় না। না হওয়াই স্বাভাবিক। আবার এমনও ভাবি যে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য যেটি ন্যায়, অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য তেমনটি ন্যায় নয়। ন্যায়-অন্যায় বিচার বাদ দিয়ে আমরা কাজটি করছি। কেননা বিকল্প তো নেই। আমার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য চেষ্টা করতেই হবে। তা না হলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। আবার লক্ষ্যে পৌঁছানো না গেলে পরিবর্তন আসবে কোথা থেকে। আর পরিবর্তন না হলে বিকাশ অবধারিত নয়। আর বিকাশ না হলে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ভালো মানুষ তৈরি হবে কোথা থেকে, যা প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য। মান নিচে নামার ভয় রয়েছে। এমনটিই আমরা ভাবছি।
আজ যখন আমরা আমাদের কথা, আমাদের পরিবর্তন, বিকাশ ও আগামী দিনের নেতৃত্বের কথা খুব ভাবি এবং বলি ও তা ঘটাতে চাই, তখনই তৈরি হয় দ্বন্দ্ব, সংঘাত, অপমান ও লাঞ্ছনার ঘটনা। তবে এখানকার চরিত্র বিচিত্র ও মিশ্র। একদল যখন লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয় তখন অন্য সবাই সমবেদনা জানায় না। আবার অন্যরা যখন লাঞ্ছিত হয় তখন আবার প্রথম দল নিশ্চুপ। এখানে আমরা এক জায়গায় দাঁড়াতে পারি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতার দায়ভার আমাদের সবার। কেননা আমরা নিশ্চিত নই, আমাদের মান সঠিক ও সবার লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। আমরা মনেপ্রাণে এক নই। আমাদের সবার মধ্যে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দল, উপদল এবং এদের মধ্যে আবার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত। পদের ক্ষেত্রে আমরা সবাই সমান; কিন্তু আমাদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চেতনা ও আদর্শ এবং আমি যা সঠিক বলে মনে করি, অন্যে তা করে না। আবার অন্যে যেটিকে সঠিক বলে মনে করে, আমি তা করি না। অবশ্য এটিই গণতন্ত্র। এ কারণে কোনো ঘটনা ও কোনো দাবির প্রতি আমাদের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনা। এখানে কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ কাজ করতে পারে। তবে আমাদের ভাবতে শেখায় না আমরা আমরাই। এটি যত দিন, যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করবে, ধিক্কার জানাবে ও মন্দ বলবে। আমাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমরা শঙ্কিত, দেশবাসী শঙ্কিত। শঙ্কিত অনেক বিবেকবান ও বিবেকহীন মানুষও। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ভালো করতে হলে, ভালো রাখতে হলে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে আমাদেরই। আমরা কি পারব আমাদের প্রতিষ্ঠানটির সুনাম রক্ষা করতে এবং আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে?
ড. নিয়াজ আহম্মেদ: অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
©somewhere in net ltd.