নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
স্বাধীনতার ইসলামী স্বরূপ হচ্ছে- মানুষ মানুষের গোলামি করবে না। মানুষ একমাত্র তার সৃষ্টিকর্তার গোলামি করবে। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু, দিতে হয়েছে লাখো প্রাণের তাজা রক্ত। আল্লাহপাকের জমিনে তিনি পরাধীনতা পছন্দ করেন না। যেখানে স্বাধীন ভূখণ্ড নেই সেখানে ধর্ম নেই- আর যেখানে ধর্ম নেই সেখানে কিছুই নেই। তাই ইসলামে স্বাধীনতার গুরুত্ব অতি ব্যাপক। সৃষ্টির প্রতিটি জীব স্বাধীনতা পছন্দ করে। পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি বা জীব পাওয়া যাবে না যারা পরাধীন থাকতে চায়। তাই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সবাই কতই না চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে থাকে। আর এই স্বাধীনতার জন্যই মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে মক্কাকে করেছিলেন স্বাধীন।
স্বাধীনতা মানুষের নিকট সর্বাধিক প্রিয় বস্তু। বিশ্বমানবতা স্বাধীনতার জন্যই সর্বাধিক সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে ও অকাতরে জীবন উত্সর্গ করেছে। ‘স্বাধীনতা’ নিশ্চয়ই একটি পবিত্র ভাবধারাসম্পন্ন শব্দ। এজন্য ব্যক্তি যেমন পাগলপারা, তেমনি পাগলপারা গোষ্ঠী ও জাতি। বিশেষ করে পরাধীন বা দুর্বল জনসমষ্টি তো স্বাধীনতার জন্য এতই উদগ্রীব যে, তা না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বস্তির নিঃশ্বাসও ছাড়তে প্রস্তুত নয়। যে কোনো উপায়েই হোক স্বাধীনতা লাভের জন্য তারা সর্বক্ষণ চেষ্টায় নিয়োজিত থাকে। তবে দুনিয়ার স্বাধীনতার লাভের জন্য লোকেরা যত কোরবানি দিয়েছে, রক্তের বন্যা বয়েছে, সেই অনুপাতে স্বাধীনতা খুব কমই অর্জিত হয়েছে। আর স্বাধীনতা অর্জিত হলেও তার সুফল লাভ করা কম সংখ্যক লোকের ভাগ্যেই সম্ভবপর হয়েছে। ফলে যুগ যুগ ও শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে দুনিয়ায় স্বাধীনতার সংগ্রাম চলা সত্ত্বেও আজও দুনিয়ার মানুষের অধিকাংশই প্রকৃত স্বাধীনতা হতে বঞ্চি, স্বৈরশাসন বা সাম্রাজ্যবাদী শাসনের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত।
মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে মুক্ত ও স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু তারা নিজেরাই সে স্বাধীনতা পরিহার করে নিজেদের তাদেরই মতো মানুষের দাসত্ব-শৃঙ্খলে বন্দি করে দিয়েছে। মানুষের জন্য এর চাইতে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে। অথচ আল্লাহর ইচ্ছা এই ছিল যে, মানষের ওপর তাদেরই মতো মানুষের কোনো কর্তৃত্ব হবে না। কর্তৃত্ব হবে একমাত্র আল্লাহর। কুরআন মানুষের স্বাধীনতা রক্ষার এবং তাদের মধ্যে স্বাধীন মর্যাদার প্রাণশক্তি জাগিয়ে তোলার আদর্শ নীতি ঘোষণা করে দিয়েছিল এই বলে, ‘ইজ্জত-মর্যাদা ও শক্তি-দাপট রয়েছে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য। তার রাসূলের জন্য এবং মুমিন লোকদের জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।’ কুরআন এই উভয় বাণীও শুনিয়েছে ‘তোমরা সাহসহীন হয়ো না, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ো না, তোমারাই তো সর্বোচ্চ মর্যাদাভিষিক্ত, যদি তোমরা বাস্তবিকই ইমানদার হও।’
কুরআন মানুষকে যে ইমানের আহ্বান জানিয়েছে, সেই ইমানই হচ্ছে তাদের প্রকৃত স্বাধীনতা রক্ষার একমাত্র অবলম্বন। সেই ইমান যদি থাকে, তাহলে মানুষ কখনই নিজেকে তারই মতো অন্য মানুষের দাসত্ব শৃঙ্খলে বন্দি করে— তারই মতো মানুষকে ভয় করে নিজেকে অপমানিত, লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত করতে পারে না। হজরত উমর (রা.) মানুষকে মানুষের নিকট লাঞ্ছিত, নির্যাতিত ও অপমানিত হতে দেখে অত্যন্ত ক্রোধসহকারে বলেছিলেন, ‘তোমরা মানুষকে কবে থেকে দাস বানাতে শুরু করলে, তাদের মায়েরা তো তাদের স্বাধীন মুক্ত অবস্থায়ই প্রসব করেছিল।’ হজরত আলী (রা.) এ ব্যাপারে বলেন, ‘মহান আল্লাহ তো মুমিনদের সব কিছুই সোপর্দ করে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের নিজেদের অপমানিত করার কোনো অধিকার দেননি।’
ইসলামের বাহক বিশ্বনবী হজরত মুহম্মদ (সা.) দুনিয়ার এসেছিলেন বিশ্বমানবতাকে মানুষের দাসত্ব শৃঙ্খল হতে মুক্ত করার লক্ষ্যে। মানবতাকে মানুষের দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার ব্যাপারটি কুরআন মাজিদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি এ মহান উদ্দেশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা না করার জন্য কুরআন মুসলিম জনশক্তিকে তিরস্কার করেছে। প্রশ্ন তুলেছে, ‘তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছে না কেন? অথচ অবস্থা হচ্ছে এই যে, পুরুষ-নারী-শিশু এই দুর্বল শ্রেণির লোকেরা ফরিয়াদ করছে যে, হে আমাদের পরওয়ারদিগার, এই জালিমের দেশ থেকে আমাদের মুক্তি দাও।’ অন্য কথায় মজলুম মানবতার মুক্তির জন্য যুদ্ধ ঘোষণা আল্লাহর পথে কৃত যুদ্ধ এবং তা করা প্রত্যেক মুসলিম শক্তিরই কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন না করলে আল্লাহর নিকট তিরস্কৃত হওয়া অবধারিত। এ আয়াতে মজলুম লোকদের মুক্তিদানের জন্য যুদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে এজন্য যে, তারা মানুষের দাসত্ব শৃঙ্খলে বন্দি। আর এ জন্যই তারা মজলুম। জালিমরা এই দুর্বল লোকদের দাসানুদাস বানিয়ে তাদের ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার ও জুলুম চালাচ্ছে। ইসলাম মানুষের দাসত্ব বরদাশত করতে প্রস্তুত নয়। দুনিয়ার যেখানেই মানুষ মানুষের দাস হয়ে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে, মুসলমানদের সার্বিক কর্তব্য হচ্ছে তাদের সার্বিক মুক্তির জন্য চেষ্টা করা। মানবতাকে যারা নিজেদের অধীন বানিয়ে নিতান্তই গোলামের ন্যায় জীবনযাপন করতে বাধ্য করছে, তারাই ইসলামের দুশমন। কেননা তারা স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে যতক্ষণ না তারা দাসমূলক জীবনকে মুক্ত ও স্বাধীন করে দিচ্ছে। এই জন্যই যারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করে তারা শহিদি মৃত্যুর মর্যাদা লাভ করে।
©somewhere in net ltd.