নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে রাখা, না রাখা নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে বিএনপি। দলের মধ্যে কথা উঠেছে, জামায়াতের কারণে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে দলের মধ্যে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে দলের অধিকাংশ নেতা একমত বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এক ধরনের দূরত্বও তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়সহ নানা কারণে এ দূরত্ব বলে জানা গেছে। বিষয়টি প্রকাশ্য হয়ে ওঠে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির ভূমিকার কারণে। জামায়াত তাদের নেতাদের ধরপাকড়ের ঘটনায় বিএনপির প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি। উল্টো অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসনকে পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ করে ১৮ দলীয় জোটের মহাসমাবেশগুলোকে নিজেদের সমাবেশ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছে জামায়াত ও ছাত্রশিবির। কয়েকটি সমাবেশ ঘিরে তাদের এ চেষ্টা অনেকটা সফলও হয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, তবে জামায়াত নিয়ে আলোচনা হলেও সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে জামায়াতকে না রাখার সম্ভাবনাই বেশি বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ইতিমধ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাঁচাতে জামায়াত-শিবির আড়াই বছর ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে আসছে। বিএনপি সরাসরি এ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ না করলেও এক ধরনের নৈতিক সমর্থন ছিল বলে জনমনে ধারণা রয়েছে। জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করে বিএনপি কৌশলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে। বিএনপির এ দাবি নিয়ে খোদ দলের ও ১৮ দলীয় জোটের ভেতরে নানা প্রশ্ন ওঠে। তখন বিএনপির অধিকাংশ নেতার মধ্যে আলোচনা ওঠে জামায়াতকে ত্যাগ করা উচিত। আর ত্যাগ না করলে সরাসরি জামায়াতের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মাঠে থাকা উচিত। কিন্তু বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সামনে এগোতে থাকে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের এই কৌশল তৃণমূল নেতারা মেনে নিতে পারেননি। তবে এ নিয়ে সরাসরি কোনো নেতা মুখ খোলেননি। ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’- বিএনপির এই নীতির কারণে দলের প্রতি নানা মহলের সমর্থন কমতে থাকে। সরকারবিরোধী আন্দোলন চাইলেও নেতা-কর্মীরা মাঠে নামেনি। একের পর এক অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার পর দলের নেতা-কর্মীদের একটি বড় অংশ বিরক্ত হয়। ‘মার্চ ফর ডোমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আমি থাকতে না পারলেও নয়াপল্টনের সামনে গণজমায়েতে আপনারা থাকবেন।’ কিন্তু চেয়ারপারসনের এই নির্দেশ সত্ত্বেও নেতা-কর্মীরা ঘর থেকেই বের হয়নি। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার কারণে খালেদা জিয়াও গুলশানের বাসভবন থেকে বের হতে পারেননি। তবে বিএনপি নেতারা বলেছেন, চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ করে রাখার কারণেই কেউ বের হয়নি।
সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামীকে ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপির ভেতরে দুটি মত কাজ করছে। একটি পক্ষ বলছে, জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী। এই দলটি বিএনপির সঙ্গে আছে বলেই টিকে আছে। অন্যথায় এই দলের অস্তিত্ব থাকত না। আরেকটি পক্ষ বলছে, ১৯৯৬ সালের আন্দোলনে জামায়াত যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল তখন এ রকম কোনো কথা ওঠেনি। আসলে বিএনপিকে কোণঠাসা করার জন্যই আওয়ামী লীগ উঠে-পড়ে লেগেছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতায় আছে, জামায়াত যদি সহিংস রাজনৈতিক দল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে তাহলে সরকার তাদের নিষিদ্ধ করে দিক। এখানে বিএনপির ছাড়া না ছাড়ার কোনো বিষয় নয়।
গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জামায়াত ছাড়লে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারে বা বিএনপি তাদের রাজনীতির বিষয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে এবং কারো দ্বারা নির্দেশিত হবে না।
তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে খালেদা জিয়া বলেছেন, সময় হলে জানানো হবে জামায়াতের সঙ্গ কখন ছাড়া হবে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরো চিফ অ্যালেন বেরির প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে তাঁর দলের জোটবদ্ধ থাকার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার ইঙ্গিত দেন। জামায়াতের সঙ্গে জোট ত্যাগ করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আমাদের স্থায়ী জোট নয়। এই মুহূর্তে আমি তাদের সঙ্গ ত্যাগ বরতে পারি না। কিন্তু সময় আসুক, তখন আমি দেখব।’
অন্যদিকে খালেদা জিয়া গত বৃহস্পতিবার ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট বা ঐক্যের বিষয়টি শুধুই কৌশলগত ব্যাপার। জামায়াতের সঙ্গে জোট বলেন বা ঐক্য বলেন তা আওয়ামী লীগই আগে করেছে। এরশাদের আমলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কেউ নির্বাচনে যাব না। তারপর মাঝ রাতে এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে গেল আওয়ামী লীগ। জামায়াতের সঙ্গে কথা বলে তাদের নিয়ে গেল। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিটা আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের। সে জন্য তখন আওয়ামী লীগ অনেক নাশকতা করেছে। আওয়ামী লীগ এখনো জামায়াতের সঙ্গে সেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এই জোট সম্পূর্ণভাবে কৌশলগত।
এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, দলের ভেতরে আলোচনা চলছে, জামায়াতে ইসলামীর সহিংস আন্দোলনের কারণে বিএনপির অনেক ক্ষতি হয়েছে। লাভের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি পিছিয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারেও আলোচনা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ও ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তবে কবে কখন বৈঠক হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না বলে ওই নেতা জানান।
বিএনপির জেলা পর্যায়ের এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী যে অপকর্ম করছে, সহিংস রাজনীতি করছে, তার সব দোষ এখন বিএনপির ওপর পড়ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হলে জামায়াতের সঙ্গ অবশ্যই ছাড়তে হবে। না ছাড়লে বিএনপির অবস্থা ভবিষ্যতে আরো করুণ হবে। সব দোষ বিএনপির ঘাড়ে পড়বে।
বাড়ছে দূরত্ব : এর আগে ১৮ দলের মহাসমাবেশগুলোতে জামায়াত-শিবিরের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন এবং মঞ্চ ঘিরে তাদের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি এত বেশি ছিল যে, দেখে মনে হয়েছে, এসব সমাবেশ যেন জামায়াত-শিবিরের আয়োজনেই হয়েছে। ১৮ দলের সাম্প্রতিক অবরোধ-হরতাল কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবিরের একচেটিয়া সহিংস তৎপরতায় বিএনপিকে নিষ্প্রভ মনে হয়েছে। বিষয়টি এমন যে, সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম যেন জামায়াতই করছে।
বিএনপি-জামায়াতের এই দূরত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেখুন, জামায়াতের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব নতুন নয়; দূরত্ব আগে থেকে আছে বলেই আপনারা এখন প্রশ্ন তুলছেন। বিএনপি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে, এটি মুক্তিযোদ্ধাদের দল। জামায়াতে ইসলামী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নয়, তারা মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেয়নি। আমরা তাদের নিয়ে একসঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি এবং করছি। কিন্তু দূরত্বটাও আছে।’
সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর ১৮ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপির পক্ষ থেকে যে রকম প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়, তাতে জামায়াত ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবি নিয়েই ব্যস্ত ছিল বিএনপি। জামায়াত মনে করে, তাদের নেতার ফাঁসির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
১৮ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অতীতে চারদলীয় জোট বলতে বিএনপি-জামায়াতের দ্বিদলীয় জোট ছিল। তখন সংসদে আমাদের এমপিও ছিলেন। কিন্তু আমরা কিছুই পাইনি। যা পাওয়ার সবই পেয়েছে বিএনপি-জামায়াত। আগামীতে ক্ষমতায় গেলে এই ১৮ দলীয় জোট কার্যত আগের মতোই বিএনপি-জামায়াত জোট হয়েই থাকবে। তবে আমরা ছোট দল হলেও আমাদের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। যা-ই হোক, বিএনপি-জামায়াতের ভেতর দূরত্ব যদি না-ই বাড়ত, তাহলে হরতাল-অবরোধসহ ১৮ দলের কর্মসূচিগুলোর এ হাল কেন?’ তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম রাতারাতি জেগে ওঠা সংগঠন। তারা নিজেদের যে শক্তির জানান দিয়েছে, সেটাও তো এখনো বিএনপি-জামায়াত মিলে পারেনি এবং পারবে বলেও আমার মনে হয় না।’ ছোট ইসলামী দলগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী এই দলের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের দূরত্ব আরো কিছুটা বাড়বে। শিগগির আরো কিছু আলামত দেখতে পাবেন।’
১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইদানীং বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়া মারফত জানতে পেরেছি।’ বেশ কিছুদিন হলো ১৮ দলের মিটিং হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব আছে কি নেই তা জানতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কোনো নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সুত্র
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৭
তালপাতারসেপাই বলেছেন: !
২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪৩
Birds Lover বলেছেন: বি এন পির জন্য জামাতের সঙ্গত্যাগ জরুরী।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: ?