নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী ও শিল্পীসহ বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ পেশার অনেক গুণী মানুষ। সেই থেকে প্রতিবছর আমরা পালন করি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। শিশু, কিশোর, যুবক, আবাল বৃদ্ধ বণিতা সেই থেকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত এই শব্দটির সাথে পরিচিত হতে শুরু করেছে এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে এসব মহান নারী পুরুষের অবদান সম্পর্কিত ধারণা লাভ করে আসছে। এই বুদ্ধিজীবী শ্রেণী যে একটি জাতির, একটি দেশের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবক এবং সম্পদ এই সত্য বোধহয় মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী কর্তৃক এদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্য দিয়ে আরও বেশি পরিষ্কার হয়ে ওঠেছে ইতিহাসে এবং বলাবাহুল্য সাধারণ মানুষের কাছেও। সত্তর দশকের একটি সময় পর্যন্ত এই শব্দটি একটি বিশেষ গোষ্ঠীর পরিচিত বহন করলেও আশির দশকে এই শব্দটি নতুন মাত্রা ও আঙ্গিকে উপস্থাপিত হতে শুরু করে। আর এই নতুন আঙ্গিক ও মাত্রাটি হল 'সুশীল সমাজ'। নব্বই দশকে যেন এই সুশীল সমাজ পূর্ণ যৌবনায় আবির্ভূত হয় এবং সেই থেকে অদ্যাবধি। বাংলাদেশের 'সুশীল সমাজ' শব্দটি ইংলিশ ভার্সানে 'সিভিল সোসাইটি' আধুনিক বিশ্বে বিশেষ কাঙ্ক্ষিত ও অপরিহার্য শব্দ। 'উন্নয়ন' 'গণতন্ত্র' ইত্যাদি বিকাশে এই 'সিভিল সোসাইটি' শব্দটি ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে পশ্চিমা দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশের মানুষের 'মস্তিষ্ক ধোলাই' এর একটি অন্যতম উপকরণ হিসেবে কাজ করে থাকে। ফলে এ গোষ্ঠীর চিন্তা চেতনায় কথনে পশ্চিমা স্বার্থই সংরক্ষিত হয়, দেশ ও জাতির নয়। রাজনীতিকদের মত তারা সুশীলকেও কব্জা করে রাখে।
বাংলাদেশে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে এক শ্রেণীর বিবেক বর্জিত, মূল্যবোধহীন 'সুশীল সমাজ'এর জন্ম, তাদের মোটা তাজাকরণ কর্মসূচির ন্ক্সা, পরিকল্পনা, প্রায়োগিক সম্ভাব্যতা এবং বাস্তবায়ন এর ক্ষেত্রে ফরেন এইড বেশ সক্রিয় থেকেছে বরাবর। বিভিন্ন নামফলকের মাধ্যমে বিভিন্ন কলাকৌশল আর ভাবধারায় বেসরকারি সংগঠন উত্পাদনের মাধ্যমে বেশ কিছু সুশীল ব্যক্তির জন্ম দিতে তারা সক্ষম হয়েছে। আর এই বৈদেশিক অনুদানের মোটা অংকের অর্থ, সুযোগ, সুবিধার মাধ্যমে এই গোষ্ঠী তথাকথিত বুদ্ধির দৌড়ে সহায় সম্পদ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে অবলীলায়। এই সুশীল সমাজের অবস্থান শহরের অভিজাত পাড়ায়। বক্তব্য, মতামত প্রদানের জন্য বরাদ্দ পাঁচতারা হোটেল। চলাচলের জন্য প্রাদো বা পাজেরো কিংবা অত্যাধুনিক যান নিত্যদিনের ভাবনা তাদের। ফলে ষাট বা সত্তর দশকের শুরু পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী এবং বর্তমান সুশীল সমাজের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত।
৪৩ বছর বয়সী একটি দেশের যে রাজনৈতিক সংকট তার জন্য বোধহয় শুধু রাজনীতিকরাই দায়ী নন। দেশের চাইতে, জাতির চাইতে রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় আর ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেবার যে দেউলিয়া আচরণ তার জন্য অনেকাংশে দায়ী সুশীল সমাজের কেউ কেউ। স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে তারা বিভাজিত। তারা 'মদদ' আর 'বুদ্ধি প্রণেতা' হিসেবে রাজনীতিকদের চেতনায় বসবাস করেন। রাজনীতির এঁটো খান তারা। রাজনীতিক আর সুশীল যেন পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক হয়ে বাঁচেন। এই ধারাবাহিকতায় এক সময়ে সুশীল সমাজ থেকে বের হয়ে তারাও রাজনীতিক হয়ে ওঠেন। আবার এই সুশীল সমাজের ব্যক্তিগণ কোন না কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। ফলে এ সকল প্রতিষ্ঠান ঐ ব্যক্তির নেতৃত্বেই সমষ্টির স্বার্থের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ। তাদের তত্পরতা দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ ও গবেষণার ক্ষেত্রে। এভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক মর্তাদশের সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে এই সুশীলের ছত্রছায়ায়। দেখা গেছে দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় মুহূর্তে এ সকল প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ ও জাতির স্বার্থ বহির্ভূত অবস্থান নিয়েছে। দুর্ভাগ্য যে, জীবিকার প্রয়োজনে ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের নিরীহ কর্মচারীরা বলদের মত আজ্ঞা পালন করে রাজনৈতিক অপবাদে পিষ্ট হচ্ছেন। যে রাজনৈতিক মতাদর্শ হয়ত তারা ধারণ করেন না।
যে কোন মানুষেরই রাজনৈতিক অধিকার তথা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবার ব্যক্তিগত অধিকার আছে। এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু তিনি যখন একজন সামাজিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন বা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত বিশেষ অবস্থায় অবস্থান করেন বা অবস্থান নেন, তখন তার আচরণ ও বিচরণ বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা জরুরি। কেউ হয়ত ভাবতে পারেন এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তি যখন তখন তো তার ব্যক্তিগত বিষয় থাকবে। এক্ষেত্রে দ্বিমতের অবকাশ নেই। কিন্তু ব্যক্তি জীবন যদি সমাজ জীবনের চাইতে বেশি মুখ্য হয়ে যায় তাহলে সমাজ, সভ্যতার গুরুত্ব লোপ পায়। সমাজ সমৃদ্ধ হবার জন্য এই ধরনের ব্যক্তির কাছ থেকে তেমন কিছুই পায় না। যা পায় তাহল বিড়ম্বনা ও প্রতিবন্ধকতা আর সংশয়। যদি আমরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকাই, কি দেখি? আগামী দিনের শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তুলবার কারিগর হিসেবে বিবেচিত যে শিক্ষক সমাজ তাদের অনেকেই কোন না কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে শিক্ষা প্রদানের চাইতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি সক্রিয় থাকছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিভাবকত্ব নিয়েছেন।
এমনও শোনা গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের নিয়োগও দলীয় বিচার বিচেনায় হয়ে থাকে। পেশার গুরুত্বের চাইতে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী বোধ প্রকট। সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, বেসরকারি সংগঠনের নির্বাহী এবং শিল্পীদের অনেকেই আজ এই কাতারে। তারা যা বলেন তা তার সমর্থিত রাজনৈতিক সংগঠনের কীর্তি, যে গান গাইছেন তা তার সমর্থিত রাজনৈতিক সংগঠনের গুণগান। বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তিই আজ রাজনৈতিক স্বার্থ দ্বন্দ্বে এতটাই বিভাজিত যে, শুধু ব্যক্তি হিসেবেই তার এই পরিচিতিতে তিনি ক্ষান্ত থাকেননি উপরন্তু তিনি তার প্রতিষ্ঠানকেও দাঁড় করিয়েছেন তার মতাদর্শের সারিতে।
উল্লিখিত কারণে বাংলাদেশে যে সব নৃশংস, সহিংস ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিকভাবে এসব ঘটনায় কখনই সুশীল সমাজের সকল সদস্য একমত হতে পারেননি যেমন, এক সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারেননি। রক্তাক্ত, পোড়া জাতির প্রতি হয়ত কখনও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন কিন্তু প্রতিরোধে নিজের বিবেক, দেশপ্রেমকে জাগ্রত করতে পারেননি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের মাটিতে আজ ব্যক্তি স্বার্থের অবাদ ফলন। মূল্যবোধহীন শিক্ষা, মানসিকতায় এই ফলন লাগামহীন। অভাগা জাতি আমরা ! অভাগা দেশ !
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী ও শিল্পীসহ বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ পেশার অনেক গুণী মানুষ। সেই থেকে প্রতিবছর আমরা পালন করি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। শিশু, কিশোর, যুবক, আবাল বৃদ্ধ বণিতা সেই থেকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত এই শব্দটির সাথে পরিচিত হতে শুরু করেছে এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে এসব মহান নারী পুরুষের অবদান সম্পর্কিত ধারণা লাভ করে আসছে। এই বুদ্ধিজীবী শ্রেণী যে একটি জাতির, একটি দেশের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবক এবং সম্পদ এই সত্য বোধহয় মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী কর্তৃক এদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্য দিয়ে আরও বেশি পরিষ্কার হয়ে ওঠেছে ইতিহাসে এবং বলাবাহুল্য সাধারণ মানুষের কাছেও। সত্তর দশকের একটি সময় পর্যন্ত এই শব্দটি একটি বিশেষ গোষ্ঠীর পরিচিত বহন করলেও আশির দশকে এই শব্দটি নতুন মাত্রা ও আঙ্গিকে উপস্থাপিত হতে শুরু করে। আর এই নতুন আঙ্গিক ও মাত্রাটি হল 'সুশীল সমাজ'। নব্বই দশকে যেন এই সুশীল সমাজ পূর্ণ যৌবনায় আবির্ভূত হয় এবং সেই থেকে অদ্যাবধি। বাংলাদেশের 'সুশীল সমাজ' শব্দটি ইংলিশ ভার্সানে 'সিভিল সোসাইটি' আধুনিক বিশ্বে বিশেষ কাঙ্ক্ষিত ও অপরিহার্য শব্দ। 'উন্নয়ন' 'গণতন্ত্র' ইত্যাদি বিকাশে এই 'সিভিল সোসাইটি' শব্দটি ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে পশ্চিমা দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশের মানুষের 'মস্তিষ্ক ধোলাই' এর একটি অন্যতম উপকরণ হিসেবে কাজ করে থাকে। ফলে এ গোষ্ঠীর চিন্তা চেতনায় কথনে পশ্চিমা স্বার্থই সংরক্ষিত হয়, দেশ ও জাতির নয়। রাজনীতিকদের মত তারা সুশীলকেও কব্জা করে রাখে।
বাংলাদেশে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে এক শ্রেণীর বিবেক বর্জিত, মূল্যবোধহীন 'সুশীল সমাজ'এর জন্ম, তাদের মোটা তাজাকরণ কর্মসূচির ন্ক্সা, পরিকল্পনা, প্রায়োগিক সম্ভাব্যতা এবং বাস্তবায়ন এর ক্ষেত্রে ফরেন এইড বেশ সক্রিয় থেকেছে বরাবর। বিভিন্ন নামফলকের মাধ্যমে বিভিন্ন কলাকৌশল আর ভাবধারায় বেসরকারি সংগঠন উত্পাদনের মাধ্যমে বেশ কিছু সুশীল ব্যক্তির জন্ম দিতে তারা সক্ষম হয়েছে। আর এই বৈদেশিক অনুদানের মোটা অংকের অর্থ, সুযোগ, সুবিধার মাধ্যমে এই গোষ্ঠী তথাকথিত বুদ্ধির দৌড়ে সহায় সম্পদ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে অবলীলায়। এই সুশীল সমাজের অবস্থান শহরের অভিজাত পাড়ায়। বক্তব্য, মতামত প্রদানের জন্য বরাদ্দ পাঁচতারা হোটেল। চলাচলের জন্য প্রাদো বা পাজেরো কিংবা অত্যাধুনিক যান নিত্যদিনের ভাবনা তাদের। ফলে ষাট বা সত্তর দশকের শুরু পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী এবং বর্তমান সুশীল সমাজের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত।
৪৩ বছর বয়সী একটি দেশের যে রাজনৈতিক সংকট তার জন্য বোধহয় শুধু রাজনীতিকরাই দায়ী নন। দেশের চাইতে, জাতির চাইতে রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় আর ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেবার যে দেউলিয়া আচরণ তার জন্য অনেকাংশে দায়ী সুশীল সমাজের কেউ কেউ। স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে তারা বিভাজিত। তারা 'মদদ' আর 'বুদ্ধি প্রণেতা' হিসেবে রাজনীতিকদের চেতনায় বসবাস করেন। রাজনীতির এঁটো খান তারা। রাজনীতিক আর সুশীল যেন পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক হয়ে বাঁচেন। এই ধারাবাহিকতায় এক সময়ে সুশীল সমাজ থেকে বের হয়ে তারাও রাজনীতিক হয়ে ওঠেন। আবার এই সুশীল সমাজের ব্যক্তিগণ কোন না কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। ফলে এ সকল প্রতিষ্ঠান ঐ ব্যক্তির নেতৃত্বেই সমষ্টির স্বার্থের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ। তাদের তত্পরতা দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ ও গবেষণার ক্ষেত্রে। এভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক মর্তাদশের সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে এই সুশীলের ছত্রছায়ায়। দেখা গেছে দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয় মুহূর্তে এ সকল প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ ও জাতির স্বার্থ বহির্ভূত অবস্থান নিয়েছে। দুর্ভাগ্য যে, জীবিকার প্রয়োজনে ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের নিরীহ কর্মচারীরা বলদের মত আজ্ঞা পালন করে রাজনৈতিক অপবাদে পিষ্ট হচ্ছেন। যে রাজনৈতিক মতাদর্শ হয়ত তারা ধারণ করেন না।
যে কোন মানুষেরই রাজনৈতিক অধিকার তথা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবার ব্যক্তিগত অধিকার আছে। এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু তিনি যখন একজন সামাজিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন বা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত বিশেষ অবস্থায় অবস্থান করেন বা অবস্থান নেন, তখন তার আচরণ ও বিচরণ বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকা জরুরি। কেউ হয়ত ভাবতে পারেন এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তি যখন তখন তো তার ব্যক্তিগত বিষয় থাকবে। এক্ষেত্রে দ্বিমতের অবকাশ নেই। কিন্তু ব্যক্তি জীবন যদি সমাজ জীবনের চাইতে বেশি মুখ্য হয়ে যায় তাহলে সমাজ, সভ্যতার গুরুত্ব লোপ পায়। সমাজ সমৃদ্ধ হবার জন্য এই ধরনের ব্যক্তির কাছ থেকে তেমন কিছুই পায় না। যা পায় তাহল বিড়ম্বনা ও প্রতিবন্ধকতা আর সংশয়। যদি আমরা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকাই, কি দেখি? আগামী দিনের শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তুলবার কারিগর হিসেবে বিবেচিত যে শিক্ষক সমাজ তাদের অনেকেই কোন না কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে শিক্ষা প্রদানের চাইতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি সক্রিয় থাকছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিভাবকত্ব নিয়েছেন।
এমনও শোনা গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের নিয়োগও দলীয় বিচার বিচেনায় হয়ে থাকে। পেশার গুরুত্বের চাইতে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী বোধ প্রকট। সাংবাদিক, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, বেসরকারি সংগঠনের নির্বাহী এবং শিল্পীদের অনেকেই আজ এই কাতারে। তারা যা বলেন তা তার সমর্থিত রাজনৈতিক সংগঠনের কীর্তি, যে গান গাইছেন তা তার সমর্থিত রাজনৈতিক সংগঠনের গুণগান। বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তিই আজ রাজনৈতিক স্বার্থ দ্বন্দ্বে এতটাই বিভাজিত যে, শুধু ব্যক্তি হিসেবেই তার এই পরিচিতিতে তিনি ক্ষান্ত থাকেননি উপরন্তু তিনি তার প্রতিষ্ঠানকেও দাঁড় করিয়েছেন তার মতাদর্শের সারিতে।
উল্লিখিত কারণে বাংলাদেশে যে সব নৃশংস, সহিংস ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিকভাবে এসব ঘটনায় কখনই সুশীল সমাজের সকল সদস্য একমত হতে পারেননি যেমন, এক সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদও করতে পারেননি। রক্তাক্ত, পোড়া জাতির প্রতি হয়ত কখনও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন কিন্তু প্রতিরোধে নিজের বিবেক, দেশপ্রেমকে জাগ্রত করতে পারেননি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশের মাটিতে আজ ব্যক্তি স্বার্থের অবাদ ফলন। মূল্যবোধহীন শিক্ষা, মানসিকতায় এই ফলন লাগামহীন। অভাগা জাতি আমরা ! অভাগা দেশ !
সুত্র
©somewhere in net ltd.