নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে আপাতত তিনটি বিষয়ের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। এগুলো হলোঃ
এক. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, উদ্দেশ্য জন-আস্থা ফিরে পাওয়া;
দুই. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করা, উদ্দেশ্য নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট কূটনৈতিক টানাপড়েনের অবসান ও সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এবং
তিন. জিএসপি সুবিধা নিশ্চিত করা, উদ্দেশ্য পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা, বহির্বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় ও সংহত করতে খুব শিগগির কয়েকটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রে সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নতুন সরকারের মূল অগ্রাধিকার কী- জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সরকারের প্রথম কাজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। এরপর অন্য বিষয়গুলো প্রায়রিটির ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অটুট রাখতেও কাজ করবে এ সরকার।’
আগামী ছয় মাসে এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে আনতে চায় নতুন সরকার। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা বলেছেন, এগুলো আয়ত্তে আনতে পারলে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা সম্ভব হবে। তাঁরা জানান, এসব বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কাজ করবেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চার-পাঁচ ব্যক্তি। তাঁরা হলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ড. গওহর রিজভী, ড. মসিউর রহমান ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী (পররাষ্ট্র বা বাণিজ্য বা উভয়ই)।
এ বিষয়গুলোতে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার ওপর নির্ভর করছে সরকারের মেয়াদ। ক্ষমতায় টিকে থাকতে, সরকারের কার্যকালের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করতে আপাতত এ কয়েকটি ইস্যুকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকার। এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পারলে বড় কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না বলে ধারণা করছে ক্ষমতাসীনরা। নতুন সরকার শপথ নেওয়ার পরই এগুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। নতুন সরকারের একাধিক মন্ত্রী শপথ নেওয়ার পর এসব ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এসব ক্ষেত্রে কাম্য সময়ে কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জন করতে পারলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা, বহু আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণ, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা ও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের কাজে গভীরভাবে মনোনিবেশ করতে পারবে সরকার। জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড এ সরকারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের তালিকাভুক্ত।
নতুন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হারানো জন-আস্থা ফিরে পাওয়া। ইশতেহার বাস্তবায়ন, গণমানুষের দোরগোড়ায় যোগাযোগব্যবস্থার সুবিধা পৌঁছানো- এসব কাজেও মনোযোগী হবে সরকার। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে এমনটাই জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রভাবশালী এক মন্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, কাম্য সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপাতত কয়েক মাস তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী এ মন্ত্রণালয় চলবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি আমলে নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও মেধাবী কাউকে দায়িত্ব দিতে চান শেখ হাসিনা। তাই এখনো এ মন্ত্রণালয়ে কাউকে মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
আবারও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেগম মতিয়া চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরোধী দল নষ্ট করতে চেয়েছে ঠিক; কিন্তু আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। ভবিষ্যতেও সরকার তা নিয়ন্ত্রণে রাখবে। বিদেশি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।’ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিদেশ সম্পর্ক তো খারাপ নেই। যদি খারাপ হতো, তাহলে শপথ অনুষ্ঠানে তাঁরা (কূটনীতিকরা) এলেন কেন? আসলে তাঁরা একেক সময় একেকটা কথা বলেন। এগুলোর জবাব সব সময় আমরা দিতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘ইশতেহারকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা কাজ করে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ঘনিষ্ঠদের ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন কোন কাজগুলো সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবে। তাঁর নির্দেশনায় সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করা ও জিএসপি সুবিধা নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করতে ‘লবিস্ট’ নিয়োগের কথাও সরকারের ভাবনায় রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য যতটা কঠোর হওয়া দরকার, ততটা কঠোর হবেন বলে প্রকাশ্যে জনসভায় ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নাশকতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারলে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে সরকার ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক তৎপরতা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে এবং হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল।
জন-আস্থা ফিরে পাওয়ার নিরিখে মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও রয়েছে আওয়ামী লীগের। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, সরকারের চিন্তাভাবনায় মধ্যবর্তী নির্বাচন রয়েছে। সময় অনুকূল মনে হলে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে দলের অন্যতম এক সম্পাদক কালের কণ্ঠকে বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আগ্রহ আছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে আসা ছাড়া এটি হবে না। আর পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে নবগঠিত সরকার সাধ্যমতো কাজ করে যাবে।
অন্য একটি সূত্র জানায়, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ওপরও মধ্যবর্তী নির্বাচন অনেকটা নির্ভর করছে। তারা যত আগে আদায় করে নিতে পারবে, তত আগেই মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে। সরকারের কৌশলের কাছে তারা পরাস্ত হলে পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকবে এ সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, সরকারের পরিকল্পনায় দুটিই আছে। ক্ষমতার পাঁচ বছর পার করে দেওয়া অথবা পরিস্থিতি মোতাবেক মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়া। এ ব্যাপারে বিএনপি ও এর জোট কতটা কী করতে পারে, তা দেখার আছে।
সু্ত্র
©somewhere in net ltd.