নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাংবাদিক হত্যাঃ ১০ বছরেও বিচার হলো না!!

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪

তিনি ছিলেন দৈনিক সংবাদ এবং ডেইলি নিউজের খুলনা প্রতিনিধি, বিবিসি’র খুলনা প্রতিনিধিও। প্রেসক্লাব থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাথায় বোমা মেরে নৃশংসভাবে তাঁকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। গ্রন্থের ছবিতে খুলনার রাস্তায় নিথর পড়ে আছে মস্তকবিহীন শরীর। পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে রক্তের স্রোত।



সাংবাদিকতার পেশাকে উপাসকের ব্রতীতে পালন করে যাওয়া সংশপ্তকের নাম মানিক সাহা।

সাংবাদিক মানিক সাহা ১৯৫৬ সালের ১০ জুন নড়াইল জেলার কালিয়া থানার চালিতাতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক পাঠশালায় তার লেখাপড়া শুরু। ১৯৬৬ সালে চালিতাতলা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় তিনি এসএসসি পাস করেন। উচ্চমাধ্যমিক পড়েন কালিয়ারই শহীদ আবদুস সালাম কলেজে। তারপর চলে আসেন খুলনায়। পড়েন সিটি কলেজ ও বিএল কলেজে। ছাত্রাবস্থা থেকেই মানিক সাহা ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন, জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমবার ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে এবং দ্বিতীয়বার স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণআন্দোলনের কারণে, যথাক্রমে ২৪ ও ৪ মাস কারাভ্যন্তরে ছিলেন তিনি। প্রথমবার কারাগার থেকেই বিএ পরীক্ষায় অংশ নেন। পরে এমএ ও এলএলবি পাস করেন। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি সাংবাদিকতায় বেশি সময় দিতে শুরু করেন।



তিনি বিবিসি, দৈনিক সংবাদ, একুশে টেলিভিশন এবং নিউ এজ পত্রিকার খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।এছাড়া তিনি খুলনা প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতিও। স্বাধীন, সাহসী, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিক ছিলেন মানিক সাহা। রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি সব সময়ই ছিলেন সব ধরনের অন্যায়, অপকর্ম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার, সাহসী এক কলমযোদ্ধা।

অবশেষে এই মানুষটিকে থামিয়ে দেওয়া হয় ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি। খুলনা প্রেসক্লাবের কাছেই সন্ত্রাসীদের বোমার আঘাতে তিনি নিহত হন।

এ সময় শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির সম্মেলন দেখে প্রেসক্লাবে আসছিলেন মানিক সাহা। প্রেসক্লাবের সামনের কক্ষেই বসতেন তিনি। কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন এক আগন্তুক। বেশ কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে কথা হয়। আগন্তুক বিদায় নিলে তিনিও রিকশায় বেরিয়ে পড়েন। রিকশা চলতে শুরু করে আহসান আহমেদ রোডে তার বাসার দিকে। ছোট মির্জাপুরের দিকের রাস্তায় তাকে বহনকারী রিকশাটি পৌঁছালে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। পরক্ষণেই দেখা যায়, মানিক সাহার নিথর দেহটি রাস্তার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে। মাথাটি যেন শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। মনে হচ্ছে, কেউ যেন মাথাটি কিছু একটা দিয়ে থেঁতলে গুঁড়ো করে দিয়েছে। আর এভাবেই সেদিন চিরতরে থেমে যান সাংবাদিক মানিক সাহা।



সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পর সেদিন রাতেই খুলনা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রণজিৎ কুমার পাল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে দু’টি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা দু’টির (হত্যা ও বিস্ফোরক) তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আরো তদন্তের নির্দেশ দিলে তদন্ত শেষে আরো একজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয়।

এর মধ্যে আসামিদের মধ্যে তিনজন ক্রসফায়ারে নিহত হন। নিহতরা হলেন- আব্দুর রশিদ, আলতাফ ওরফে বিডিআর আলতাফ এবং মাহফুজ ওরফে মফিজ ওরফে নাসিম ওরফে শফিকুল ইসলাম।

এছাড়া চারজন জেলহাজতে রয়েছেন। তারা হলেন- সুমন ওরফে নূরুজ্জামান, আকরাম হোসেন, আলী আকবর শিকদার, মো. হাই ইসলাম ওরফে কচি।

পলাতক রয়েছেন বেলাল, সাত্তার, ওমর ফারুক, সরোয়ার হোসেন ওরফে সাকা ও মিঠুন।



২০০৪ সালের পর থেকে প্রতি বছর ১৫ জানুয়ারি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় সংবাদিক মানিক সাহার প্রতি। শ্রদ্ধা জানাতে আসা সবাই ফিরে যান প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারার গ্লানি মাথায় নিয়ে।

জঘন্যতম এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর সেই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর খুলনায় ছুটে এসেছিলেন। বলেছিলেন, প্রকৃত হত্যাকারীরা চিহ্নিত হবে, সাজা পাবে।



মানিক সাহা ছিলেন দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক, পরোপকারী, মানবদরদী, কর্মনিষ্ঠ ও সজ্জন মানুষ। এ মানুষটি হত্যার পর ১০ বছর অতিবাহিত হলেও দুর্বল পুলিশি তদন্ত ও চার্জশিটের কারণে আমরা খুনিদের বিচার পাইনি। এছাড়া একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সাক্ষ্য না দেওয়ায় মামলাটি সঠিকভাবে এগোতে পারেনি। প্রকৃত হত্যাকারী চিহ্নিত না হওয়ায় এবং খুনিরা সাজা না পাওয়ায় মানিক সাহার স্বজনেরা আজ হতাশ!



কিন্তু গত ১০ বছরেও একুশে পদকপ্রাপ্ত নির্ভীক সাংবাদিক মানিক সাহার হত্যাকাণ্ডটির বিচার কাজ শেষ হয়নি। একেক করে পেরিয়ে গেছে ১০টি বছর। কিন্তু খুলনার সাহসী ও স্পষ্টবাদী এই সাংবাদিক হত্যার বিচার আজও হলো না! খুলনার চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার না হওয়ার উদাহরণ থাকায় এ মামলার বিচার নিয়ে মানিক সাহার স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

এই দীর্ঘ সময়ে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ না হওয়ায়, নিহত সাংবাদিক মানিক সাহার স্ত্রী নন্দা সাহা, মেয়ে নাতাশা ও পর্শিয়া আজ আশাহত। সেই সঙ্গে নিরাশায় খুলনার স্থানীয় সাংবাদিকেরাও।



মানিক সাহাকে যাঁরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে চিনতেন তাঁদের কল্পনাতেও আসেনি কিভাবে অমন সজ্জন, নির্লোভ, ‌পেশাঅন্তপ্রাণ একজন সমাজদরদী ও দেশপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে ঐভাবে নৃশংসতার বলি হতে হলো।



মানিকের অপরাধ, তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী থেকে দেশ ও মানুষের ভালর জন্য কাজ করতেন। তার মানে তৎকালীন দেশ শাসকরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল, যা বোধহয় এখনও চায়। নইলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে একের পর এক বক্তৃতা-বিবৃতি এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম চালায় কি করে।



বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তুলেছিলেন। ছুটে এসেছিলেন নিহতের পরিবারে কাছে। এতে করে খুলনা অঞ্চলের মানুষ আশা করেন, বর্তমান সরকারের আমলেই হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উন্মোচিত হবে। শাস্তি পাবে প্রকৃত দোষীরা। বর্তমানে মামলা দু’টি (হত্যা ও বিস্ফোরক) মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সায়েদুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলার পরবর্তী দিন ১৯ জানুয়ারি। আমরা সুবিচারের আশাবাদী।

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.