নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
এক সময়ে যারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি’— এখন তারাই বলছেন, ‘বাংলাদেশ রত্নভাণ্ডার’। যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি কিসিঞ্জার কয়েক যুগ আগে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি।’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি ম্যাগাজিন মন্তব্য করেছে, ‘বাংলাদেশ রত্নভাণ্ডার’। লর্ড ক্লাইভ পলাশী যুদ্ধ জয়ের পর বলেছেন, ‘বাংলার একজন ছোট ধনীর যে পরিমাণ সম্পদ ছিল সেই পরিমাণ সম্পদ ব্রিটেনের একজন বড় ধনীরও ছিল না। তাহলে বিদেশিদের উক্তি থেকেই প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশ সর্বযুগে সর্বকালে সম্পদশালী ছিল, ছিল রত্নভাণ্ডার; তলাবিহীন ঝুরি নয়। তাই তো ব্রিটিশ, ফরাসি, দিনেমার, ওলন্দাজ বেনিয়ারা এদেশে তেজারতির লক্ষ্যে সেকালে এসেছিল। ব্রিটিশ বেনিয়ারা তখনকার ব্রিটেনের রানীর সনদ নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যের অজুহাতে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদেদৗলাকে পরাজিত করে বাংলার মসনদ দখল করে। এরপর থেকে বেনিয়া ব্রিটিশ সরকার এদেশের রত্নভাণ্ডার লুট করে নিজ দেশে পাচার করে। পাকিস্তানিরাও এদেশ শাসনকালে ব্রিটিশের শাসন ও শোষণনীতি অনুসরণ করে। ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশের রত্নভাণ্ডারের ইতিহাস বিদেশি বেনিয়াদের পূর্ব থেকেই জানা আছে। কাজেই তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিকল্প হিসেবে এনজিও এবং বহুজাতিক করপোরেট কোম্পানির নামে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ-সন্ধানী রূপে তত্পরতা চালায়, চেষ্টা তদবির, কূটনীতিক কৌশলের মারফত সফলতা অর্জন করে। তাদের তৈরি পণ্যের বিস্তৃত বাজারের অনুকূল পরিবেশ এদেশে সৃষ্টি করে, তাদের রাষ্ট্রদূতেরা তাদের দেশের এনজিও নামের বেনিয়া এবং শিল্পপতির অতি লাভের ব্যবস্থা করে। এদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ের সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে এবং আর্থিক বিনিয়োগ ও লগ্নি ব্যবসায়ের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। মুক্তবাজার অর্থ ব্যবস্থার সুবাদে শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলো এদেশকে তাদের তৈরি পণ্যের অবারিত বাজারে পরিণত করে। শিল্পোন্নত ধনী দেশের রাষ্ট্রদূতেরা তাদের দেশের বণিকদের অতি লাভ পাইয়ে দিতে এদেশের কেবল অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে না, রাজনীতির ওপরও প্রভাব ঘটায় এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের রাজনৈতিক ও কূটনীতিক প্রচেষ্টা ও কৌশল আরোপ করতে দেখা গেছে এদেশের ৪২ বছরের বিভিন্ন সরকারের ওপর। তাদের ব্যবসায়ের অতি লাভের প্রত্যাশায় হামিদ কারজাইর মতো তাঁবেদার সরকার কামনা করে তারা। তাই ইইউ পার্লামেন্ট ও কংগ্রেসে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে একাধিকবার শুনানি চলে। বাংলাদেশ যে প্রকৃতপক্ষে রত্নভাণ্ডার, তলাবিহীন ঝুরি নয়, তার ঐতিহাসিক প্রমাণের পাশাপাশি এখন এর ভৌগোলিক প্রমাণ হাজির করছি।
বাংলাদেশের অফুরন্ত খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের হাতছানিতে বিদেশি বেনিয়ারা সেকালের মতো একালেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য এদেশে এসেছে এবং আসছে। প্রথমে এদেশের খনিজ সম্পদসমূহের বিবরণ দিচ্ছি। বাংলাদেশের প্রধান খনিজ সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম। বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে অফুরন্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ আছে। গ্যাসের মজুদের সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছে না। কারণ অনুসন্ধানের ফলে প্রতিবছর নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হচ্ছে। তবে বেশ কিছুদিন আগে এক জরিপে অনুমান করা হয়েছিল এদেশে ৩৬.৮২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ আছে। সাম্প্রতিক কোনো জরিপ হলে গ্যাসের মজুদ এর চাইতে আরও অনেক বেশি যে হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা নিশ্চিত। বিভিন্ন অনুসন্ধানের ফলে জানা গেছে, বাংলাদেশে লৌহ, তামা ইত্যাদি ধাতব খনিজ রয়েছে। অধাতব খনিজের মধ্যে চুনাপাথর, সিলিকা বালু, পাথর বা কঠিন শিলা, নুড়িপাথর, চিনামাটি, গন্ধক, তেজস্ক্রিয় পদার্থ— জিরকন, রুটইন, ইলমেসাইট, মোনাজাইট, লিওকক্সিন প্রভৃতি রয়েছে বাংলাদেশের নানা স্থানে। তেজস্ক্রিয় পদার্থ আণবিক শক্তি উত্পাদনে ব্যবহূত হয়। তেজস্ক্রিয় পদার্থ সর্বাপেক্ষা মূল্যবান খনিজ। বাংলাদেশে অন্য মূল্যবান তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়াম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আণবিক শক্তি উত্পাদনের খরচ খুবই কম, বিদ্যুত্ শক্তি উত্পাদনের চাইতে অনেক কম। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বাংলাদেশে সোনা প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে খাটো করে দেখা যাবে না। প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের মতো শক্তি সম্পদ কয়লারও প্রাচুর্য রয়েছে বাংলাদেশে। নদীবিধৌত উর্বর সমভূমি এবং বাংলদেশে কৃষি কাজের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এদেশে ধান, পাট, গম, ভুট্টা, আলু, ডাল, ইক্ষু, তুলা, তৈলবীজ, চা, তামাক, পান, ফলমুল, শাকসবজি ইত্যাদি খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল প্রচুর উত্পন্ন হয়। বাংলাদেশ থেকে চা ও মাছ রফতানি হয়। বাংলাদেশের নদ-নদী, হাওর-বিল, সাগর, পুকুর-জলাশয়, মত্স্য সম্পদসহ বহু জলজ সম্পদের আধার। জলজ সম্পদের মধ্যে ঝিনুক যার ভিতরে মূল্যবান মুক্তা রয়েছে, তাও প্রচুর পাওয়া যায়। আজকাল মুক্তার জন্য ঝিনুকের চাষও চলছে বাণিজ্যিকভাবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মত্স্য সম্পদের মতো প্রাণিজ সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম।
মানুষের জীবনযাত্রায় প্রাণিজ সম্পদের গুরুত্ব সর্বাধিক। চাষাবাদে, পরিবহনে, শীত নিবারণে পোশাক, জুতা ও চামড়াজাত দ্রব্য উত্পাদনে, পুষ্টিকর খাবার হিসেবে আমিষের অভাব পূরণে প্রাণিজ সম্পদের গুরুত্ব ও উপযোগ অস্বীকার করার জো নেই। প্রাণিজসম্পদ দুরকমের। গৃহপালিত প্রাণি ও বন্য প্রাণি। গৃহপালিত প্রাণিদের মধ্যে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, ঘোড়া, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি। বন্য প্রাণিদের মধ্যে হরিণ, বাঘ, হাতি, চিতাবাঘ, বাইসন, বন্য গরু, বন্য কুকুর, শূকর, বনবিড়াল, নানা ধরনের বিষাক্ত সাপ ও পাখি ইত্যাদি। বনাঞ্চলের পানিতে কুমির ও সুন্দরবনের ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের বনজসম্পদ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। বনভূমি হতে প্রাপ্ত সম্পদকে বনজ সম্পদ বলা হয়। বাংলাদেশের বনভূমি হতে আমরা নানা ধরনের ফলমুল, জ্বালানি, কাঠ, বাঁশ, বেত, গোলপাতা, হোগলা, মোম, মধু, বন্যপশু ও এদের চামড়া, শিং ও দাঁত, নানা ধরনের ঔষধি গাছ ইত্যাদি পেয়ে থাকি। বনভূমি দেশের জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখে। সুন্দরবন, মধুপুর ও ভাওয়ালের বনভূমি, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের (বরেন্দ্র) বনভূমি, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বনভূমি, সিলেট অঞ্চলের বনভূমি নিয়ে বাংলাদেশের বনাঞ্চল।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশ না হলেও এদেশে অনেক সম্ভাবনাময় শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেছে। এই শিল্পগুলো হচ্ছে গার্মেন্ট শিল্প, বস্ত্র শিল্প, সারশিল্প, চিনি শিল্প, পাট শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, কাগজ শিল্প, রেশম শিল্প, রাবার শিল্প, লৌহ ও ইস্পাত শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, দিয়াশলাই শিল্প, তামাক শিল্প, কুটির শিল্প, চা শিল্প, কাঁচ শিল্প ইত্যাদি। এসব শিল্প কারখানায় প্রস্তুত দ্রব্যাদি বাংলাদেশের মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে থাকে। গার্মেন্ট শিল্পের তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এক জরিপে জানা গেছে, পোশাক রফতানি আয় ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ বর্তমানের চাইতে দ্বিগুণ হলে বাংলাদেশের জন্য আর বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশের অন্যান্য রফতানি দ্রব্য পাট, পাটজাত দ্রব্য, হস্তজাত দ্রব্য, চামড়া, রেয়ন, পার্টেক্স, গোল আলু, শাকসবজি, পান-সুপারি, কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট। বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যা দেশের প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পদরাজি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করে দেশকে একটি ধনী দেশে রূপান্তরিত করার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এখানে শিল্প ও কৃষিপণ্যের বাজার বিস্তৃত। অর্থাত্ ১৬ কোটি ভোক্তা দেশের শিল্পজাত ও কৃষিজাত পণ্য ভোগ-ব্যবহার করে। ফলে এখানে কৃষির পাশাপাশি শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। এই জন্য দেশের মোট জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করা একান্ত দরকার। এ লক্ষ্য হাসিলে দেশে শিক্ষার প্রসার ঘটানো নেহায়েত জরুরি। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সেখানে সকলেই শিক্ষিত অর্থাত্ শিক্ষার হার ১০০%। এদিক থেকে আমাদের দেশের শিক্ষার হার নগণ্য বলা শ্রেয়। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি তার দেশের প্রাপ্ত সম্পদরাজির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে না। তাই পৃথিবীর শিক্ষিত জাতিসমূহ উন্নতি লাভ করেছে সর্বক্ষেত্রে। এ জন্য উন্নত দেশের মতো দেশের বাজেটের ৬০ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করে ব্যয় করা একান্ত কাম্য। আমাদের যত রকমের সমস্যা আছে তা সমাধানের লক্ষ্যে দেশের বিশ্ববিদ্যালগুলোতে গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তি সৃষ্টি করে তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে সমস্যা সমাধান দ্রুত সম্ভব। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘২০৪১ সালে এদেশ একটি ধনী দেশে পরিণত হবে।’ একথা বাস্তব সত্য। কেননা উন্নত দেশগুলো স্বাধীনতা লাভের ৩০ বছরের মধ্যে উন্নত হয়েছে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া একটি উত্কৃষ্ট উদাহরণ। তবে বাংলাদেশ কেন ৪২ বছরেও উন্নত হলো না। কারণ বিগত ৪২ বছর জাপান ও মালয়েশিয়ার মতো কোনো জনবান্ধব সরকার ছিল না এদেশে। অধিকন্তু দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সম্পদের অপব্যবহারের কারণে কিছু ধনিক বণিক রাজনীতিক, আমলাদের দ্বারা কুক্ষিগত হয়েছে দেশের বিপুল পরিমাণ সম্পদ। এতে দেশের বিপুলসংখ্যক তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বঞ্চিত হয়েছে তাদের প্রাপ্তি থেকে। এ ব্যাপারে ইতালির একজন অর্থনীতিবিদ একটি সূত্র দাঁড় করিয়েছেন। তার সূত্রটি হলো সারা পৃথিবীর ৮০ ভাগ গরিব মানুষ ২০ ভাগ সম্পদ ভোগ ব্যবহার করে এবং বাকি ২০ ভাগ ধনী মানুষ বিশ্বের মোট সম্পদের ৮০ ভাগ ভোগ ব্যবহার করে আসছে। আমার মতে, বাংলাদেশে এই সূত্র হবে এরকম— বাংলাদেশের ৯৫ ভাগ গরিব মানুষ দেশের মোট সম্পদের মাত্র ৫ ভাগ ভোগ ব্যবহার করে এবং ৫ ভাগ ধনী মানুষ ৯৫ ভাগ সম্পদ ব্যবহার করে। এই জন্য এই দেশ ৪২ বছরেও উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর কাঙ্ক্ষিত জিডিপি থেকে ১%-২% ভাগ জিডিপি হ্রাস পাচ্ছে।
বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলোর কাতারে দাঁড়াতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দুর্নীতিরোধ এবং একটি জনবান্ধব সরকার ও উন্নত রাষ্ট্রব্যবস্থার বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। সু্ত্র
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৭
নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: কিন্তু আমরা এইদেশের জনগণ এই সম্পদের সুবিধা পাচ্ছিনা একমাত্র এই রাজনীতির কারনে।