নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ গুম, ইতিহাস গুম!!!

০৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:৩০

দেশে মানুষ গুম এবং খুনের ঘটনা আতঙ্কজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি দলের একজন মুখর প্রতিনিধি বর্তমানে কার্যত : পদবিহীন, ক্ষমতাবিহীন, এসব সময়ে তুচ্ছ তুচ্ছ আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে 'সত্য-সত্য' কথা বলার বাতিক পেয়ে যায় এমন লোকদের। বাতিকটি অবশ্যই মতলবি। মন্ত্রী হওয়ার আগে আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী এমন কৌশল নিয়ে মতলব-পূরণে সফল হয়েছিলেন বটে। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পন্থাটি মন্দ নয়। সেদিন তুচ্ছ আলোচনা সভায় মন্ত্রিত্ববিহীন ওই মুখর মহোদয় বলেই ফেললেন, সরকারের বাইরে সরকার দেখা যাচ্ছে, খুন-গুম-অপহরণ বেড়েই চলেছে। একথা বলে গণমাধ্যমে তিনি উনুন হলেন। সরকারকে বিশেষত সরকার প্রধানকে বিব্রত করার লক্ষ্যভেদ করতেও নিশ্চয়ই সফল হলেন। এভাবেই হয়তো বা ফের তিনি মন্ত্রী হবেন অন্য কোন দফতরে/নবঘোষণায় কোন কালো বেড়াল বস্তাবন্দী করবেন, নতুন কোন বস্তাপচা কেলেঙ্কারি এড়াতে যত্নবান হবেন নিশ্চয়ই।

কিন্তু কেউ বলুন আর না-ই বলুন, গুম-খুন-অপহরণ ব্যাপারটি মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ছে। জনগণের একজন হিসেবে এজন্য দায়ী করব সরকারকেই। শুনেছি ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলম চাঁদাবাজিতে বিএনপির নগর নায়কদেরও হার মানাতেন। সেই চৌধুরী গুম হয়ে গেলেও নাকি তাই নগর বিএনপি নেতৃত্বের তেমন প্রতিবাদ ছিল না। চাঁদাবাজ চৌধুরীর বিচার এবং শাস্তি হোক, তাই বলে গুম কেন? সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সঙ্গে 'বেয়াদবি'র জন্য সমালোচিত, নানাভাবে বিতর্কিত বিএনপির উদীয়মান শার্দুল ইলিয়াস আলীকে তো রাজনৈতিকভাবে এবং আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে হতো। হঠাৎ 'গুম' এর মতো কৌশল কি সরকারের বাইরের প্রভাবশালী 'কোন শক্তি' করেছে, এমন প্রশ্ন খোদ বিএনপি নেতৃত্বের মাঝেও দেখি।

২০১৩ সালের পথের পাঁচালিতে দেখেছি বিরোধীদলের সর্বোচ্চ শক্তিতে হিংস্র সহিংসতায় সরকার পতনের সর্বাত্মক আঘাত হানার একের পর এক মরিয়া প্রচেষ্টা। এই কৌশলে তারা সফল হবে ভেবেছিল। ১৯৭১ সালের পর সারা দেশজুড়ে এমন সহিংসতার বিস্তার কেউ দেখেনি। বিশেষত যুদ্ধাপরাধ সংশ্লিষ্ট মহল এবং প্রধান বিরোধীদল একজোট হয়ে নৃশংসতার যে ছক কার্যকর করছিল, পুলিশের মাথা থেঁতলে দিয়ে বীভৎসতা সৃষ্টি করছিল, দেশজুড়ে রেল লাইন তুলে ফেলে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে প্রাণ কাড়ছিল, হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়ে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস ও অকার্যকর করে সরকার ঘোষিত নির্বাচন বানচাল করে দিতে যা ইচ্ছে তা করছিল, এমন পরিস্থিতিতে মানুষ হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল। বিরোধীদের এই সর্বাত্মক আঘাতে ধ্বংস করা হয়েছিল শত শত স্কুল, হাজার হাজার বৃক্ষ।

বিরোধীদের ঠেকাতে সরকারও তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহারে কসুর করেনি বিন্দুমাত্র। দেশে যেন যুদ্ধাবস্থা চলছিল। লাঠি-গুলি-টিয়ারগ্যাস-কারাগার-খুন-অপহরণ-গুম প্রভৃতি সব কৌশলেই প্রতিপক্ষ দমনে সরকার দ্বিধাহীনভাবে এগিয়ে গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর্বকে সরকার 'সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতা' হিসেবে উপস্থাপিত করে কূটনৈতিক যুদ্ধেও সফল হলো। রাষ্ট্রযন্ত্রের অমোঘ শক্তিকে চ্যালেঞ্জ দিয়েও বিএনপি-জামায়াত সফল হতে পারেনি। তদুপরি জামায়াত-বিএনপি সফল হলে ধর্মীয় জঙ্গি শক্তির পুনরুত্থানে দেশের মানুষের বারোটা বেজে যাবে_ এই আতঙ্কও বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে গেছে। ৫ জানুয়ারি, ২০১৪ সালের মুষ্টিযুদ্ধের বাউটে বিপর্যস্ত হয়েছে বিরোধীরাই।

সেই জানুয়ারি থেকে এপ্রিল। এ কয়েক মাসে বিপর্যস্ত কোমরকে চিকিৎসা করে শক্ত-সমর্থ করে তোলার কাজে বিরোধীপক্ষ মশগুল রয়েছে। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে পুনরায় আঘাত হানতে ক্ষমতাসীন দুর্গে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের 'অনৈতিক' ভিত্তিতে যে সরকার দুর্বল, তাকে আঘাত হানার নানা প্রস্তুতি চলছে ঢাকা-লন্ডন-ওয়াশিংটন-রিয়াদসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে। সরকার ও নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে নেই।

হামলা-মামলা-গ্রেফতারে বিরোধীপক্ষের নেতৃত্বকে দুর্বল করে দেয়ার কাজ চলছে। তদুপরি গুম-খুন-অপহরণ তো চলছেই। লাশ ভাসছে, লাশ ডুবছে। এতে সরকার কতটুকু আছে, এমনকি সে প্রশ্নও উঠছে। কেননা সুযোগ মতো প্রতিপক্ষ দমাতে গুম-খুন কৌশলে রাষ্ট্রশক্তির কোন কোন অংশকে সরকারে জানার বাইরেও ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, সে প্রশ্ন এখন বাজারে। বাংলাদেশে যেকোন ঘটনা প্রবণতায় 'হুযুগ' আর 'হিড়িক'-এর ভূমিকা কম নয়।

এমনটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিএনপি আসলে র‌্যাব গঠন করে, সেনাবাহিনীর বিশেষ অপারেশনে যখন 'অপরাধী' খুন করা হচ্ছিল, তখন আওয়ামী প্রতিবাদ ছিল তুঙ্গে। এসব 'অপরাধী'দের অনেকেই চিহ্নিত দুর্বৃত্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষ ছিল খুশি এবং তৃপ্ত। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও ফাঁকফোকরে মানুষ বীতশ্রদ্ধ। অতএব নগদ বিচারের প্রতিই মানুষের বিশেষ পক্ষপাত। তখন 'মানবাধিকার' খর্ব করার কথা উঠলেও শফিক রেহমান-নেতৃত্বাধীন মহল বিচার-বহির্ভূত ব্যবস্থাদির সুফল বয়ানে ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল।

১৯৯৬-২০০১ আমলের চেয়ে ২০০৯-২০১৩ আমলে আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর বেশি বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। বিরোধী মহল এবার 'মানবাধিকার গেল, মানবাধিকার গেল, বলে হৈ হৈ শুরু করে দিল। যে ভাষায় শফিক রেহমানের জবাব দিয়েছিল ক্ষমতায় থাকার সময়, সেই ভাষায় এখনকার ক্ষমতাসীনরাও জবাব দিতে থাকল। 'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন খারাপ তখন মানবাধিকার কর্মীরা কোথায় থাকে?' এবং অভিযোগ দুটি আমলেই উঠল।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ে সাধারণভাবে মানুষ খুশি হয় দাগি অপরাধীদের খুন হতে দেখলে। কিন্তু নগদ এ পরিতৃপ্তি পৃথিবীর কোথাও বেশিদিন থাকেনি কিছুকালের মধ্যেই রাষ্ট্রীয় হেফাজতে হত্যাকারী মানবগুলো বড় দানবে পরিণত হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তারা। ব্যক্তিগত ক্রোধ-আক্রোশ মেটাবার ভাড়াটে বাহিনী হয়ে যায় তারা। যা ইচ্ছে তা করার হিংস্রতার নিমজ্জিত হয় তারা। ল্যাটিন আমেরিকাজুড়ে দীর্ঘকাল ধরে এক-এগারোর এমনি গুম-খুন অপহরণের ভয়ঙ্কর অধ্যায় গড়ে তোলে। সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা স্টালিনতো 'বিপ্লব' রক্ষার্থে অগণিত পার্টি সাথীদেরই গুম-খুন অপহরণ-নির্যাতন-নির্যাতনের কৌশলে দমন করেছিলেন প্রতিপক্ষ ভেবে। পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট নেতৃত্ব স্টালিনের কথা শুনছিল না। আলোচনা করবেন বলে পোলিশ কমিউনিস্ট নেতৃত্বকে ভেবে আনলেন মস্কো থেকে। সেই নেতৃবৃন্দ আজও ফেরেননি পোল্যান্ডে এই ষাট বছর পরও। বিরোধী দমনে 'গুম' বিশ্বব্যাপীই একনায়ত্বমূলক শাসনের এক 'প্রিয়' অস্ত্র।

'গুম' দিয়ে সোভিয়েত বিপ্লব রক্ষা পায়নি। 'গুম' দিয়ে বাংলাদেশের 'মুক্তিযুদ্ধ' ও রক্ষা পাবে না। জনগণের সচেতনতা ছাড়া কার্যত : সমাজের 'উন্নতমান' রক্ষার কোন বিকল্প পন্থাই নেই। লুটপাটের অর্থনীতি দিয়ে, সুশাসন ল-ভ- করে, জোর জবরদস্তিতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের পরাজিত করার কোন সুযোগ কিংবা সম্ভাবনা শতকরা একশতভাগ অসম্ভব। উন্নতমানের শাসন ব্যবস্থা গড়ে সাধারণ মানুষের জন্য অর্থনীতি গড়ে তুলে মানুষের মন জয় করতে হবে_ এই কথাটির বিরোধিতা করার নির্বুদ্ধিতা মুক্তিযুদ্ধপন্থি মহলে কেউ আছেন কি? এক্ষেত্রে 'গুম' অস্ত্রটি বুমেরাং হয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুলবে মাত্র।

দেশে চলছে যখন 'মানুষ গুম' করার হিড়িক, তখন বিরোধীপক্ষের 'জননী ও সন্তান' একযোগে বাংলাদেশের 'ইতিহাস গুম' করে ফেলার এক সর্বনাশা ছক এঁকে চলেছেন। আমাদের সংবিধানকে ভেতর থেকে ইঁদুরের মতো কেটে চলেছেন। 'ইতিহাস গুম' করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক দার্শনিক ভিত্তিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলার মোক্ষম অস্ত্র ব্যবহারে তারা এখন উন্মাদসম। 'প্রথম রাষ্ট্রপতি, অবৈধ প্রথম প্রধানমন্ত্রী' প্রভৃতি কথা তুলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসকে বিতর্কিত করে তারা বাজার গরম করে চলেছেন। যদিও 'ইতিহাস গুম' করার এই প্রচেষ্টা একাধারে হাস্যকর, মূর্খতা ও অর্বাচীনতারই বিকট প্রমাণ মাত্র।

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.