নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

২০২১ সাল : ভীষণ ভিশন

০৮ ই মে, ২০১৪ সকাল ৮:৫০

হঠাৎ করে দু'দেশের অভিন্ন তিস্তা ভাটির দেশটিতে শুকিয়ে গেল। আমাদের বর্তমান তিন ধারার বাম শক্তি তিস্তা ইস্যুর ধারাতে পর পর তিনটি সড়ক অভিযানে তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়াতে ক্ষোভের মোহনায় পৌঁছাল। উজানের দেশটির কাছে ভাটির দেশের 'নতজানু' কৌশলকে তারা তিস্তা সংকটের অন্যতম উৎস হিসেবে চিহ্নিত করল।

৫ জানুয়ারি, ২০১৪ অধ্যায়ের পর 'মাঠে নামা' প্রশ্নে দ্বিধান্বিত দেশের প্রধান বিরোধী দলটিও সব সংকোচ ঝেড়ে ফেলে তিস্তা সড়ক অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ল। দলনেত্রীকে তারা দেশনেত্রী বলতে ভালোবাসেন। ঐ 'লংমার্চে' মূল নেত্রী নামেননি। অতএব অভিযানের ধারাটিও তিস্তা ধারার মতোই কেমন জীর্ণ-দীর্ণ-শীর্ণ হয়ে পড়ল।

হঠাৎ সেই বিরোধী মার্চের সময়কালেই তিস্তার মরা গাঙে বান না ডাকলেও কিঞ্চিৎ জলধারা চলে এলো। অমনি বিরোধী নেতারা সব 'কেরামত আলী' বনে গেলেন। ঐ মার্চের ভয়েই নাকি উজানের দেশটি ভড়কে গিয়ে পানি ছেড়ে দিয়েছে। তিস্তার পানি এলো। দু'দিন বাদে ফুরিয়েও গেল। তবু বিরোধী পক্ষ পুনঃ আরেকটি মার্চ ডাকলো না। ডাকলেই তো কেল্লা ফতে হয়ে যেত। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের শতবর্ষী জাগতিক সমস্যাটি নিমেষে সুরাহা হয়ে যেত। হায়রে এমন সড়ক মার্চে যদি এমন গুরুতর বিশ্ব সংকটটি 'ফুড়ুৎ' সমাধান হয়ে যেত।

তিস্তা নদী ভারতের সিকিম রাজ্যের পাহাড় থেকে নেমে এসেছে। বাঁধ ব্যবসায়ীদের মুনাফার লোভ ঐ তিস্তার উৎস পাহাড়ে পৌঁছেছে। সেই পাহাড়ের ভিতরে স্রোতধারা বিকল্প গুহায় ঢুকিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কলাকৌশলে তিস্তার মৃত্যু ঘটানোর আয়োজন চলছে। এ নিয়ে খোদ সিকিমের পাহাড়ি লেপচা সম্প্রদায় দীর্ঘ অনশন সংগ্রাম পরিচালনা করেছে। এছাড়া তিস্তার প্রবাহে সিকিম এবং পশ্চিম বাংলার ওপর কয়েকটি বাঁধ তৈরি করে সেচ ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে ওরা। তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যবস্থা না করেই ভাটিতে 'তিস্তা ব্যারেজ' কোন হিসেবে বাংলাদেশ করেছে জানি না। উজান থেকে পানি না এলে যে এখন ভাটিতে হাহাকার। তিস্তা ব্যারেজ এবং সেচ ব্যবস্থার পরিণতি করুণতর হয়ে পড়ে।

এখন প্রয়োজন উজান-ভাটির দেশের মধ্যে সমঝোতা। গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, বরাক-মেঘনাসহ সকল উজান ভাটির দেশ গণচীন, নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ অববাহিকা সমঝোতা গড়ে তোলা। তা কে মানবে কাকে? উজানের গণচীন মানে না ভাটির ভারতকে। ভারত মানে না নেপাল-বাংলাদেশকে। জোর যার মুল্লুক তার। তা প্রাকৃতিক সকল প্রকার সম্পদ তেল, পানি, খনিজ_ সবটার বেলাতেই। চাঁদ আর মঙ্গলের, মহাসমুদ্রের খনিজ সম্পদ নিয়ে এখন বড় বড় মোড়লদের বড় বড় ফাঁদ তৈরি হচ্ছে। আর আমরা বাংলাদেশ আমাদের সমুদ্রে নিজেদের হক পাওনা প্রতিষ্ঠিত করতেই ঘাম ঝরাচ্ছি কত কাল ধরে।

তিস্তার করুণ দশাও কাটেনি। অভিন্ন নদীর পানির ভাগ-বাটোয়ারার জটিল সমস্যার এতটুকু সুরাহা হয়নি পৃথিবীর এই অঞ্চলে। কিন্তু হঠাৎ মনে হচ্ছে বাংলাদেশে বুঝি তিস্তা সংকট হামালদিস্তায় পিষে একশেষ করে দেয়া হয়েছে। কেন না এখন এসে গেছে 'গুম-খুন-অপহরণ-এর বুম, অভাবনীয় নৃশংস কা- চলছে এখানে-সেখানে, বিশেষত নারায়ণগঞ্জে। রক্ষকের দলই ভক্ষকে পরিণত হয়েছে। শাসকদলেরই একগোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠী নিধনে ভয়ঙ্কর প্রকল্প হাসিল করেছে। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত কোথাও বিশেষ বাহিনী দ্বারা, 'গুম-খুন-অপহরণ' চালিয়ে আখেরে ফল মেলেনি। নিপীড়িত মানুষ প্রথমে খুশি হয়। তারপরে খুশির কোলা ঐ কোলাব্যাঙ ফেটে যায় অচিরেই ভক্ষকে পরিণত রক্ষকের কেরামতিতে। শীতলক্ষ্যা নদীতে ভক্ষকেরা খেলেছে নিষ্ঠুর খেলা। প্রকৃত অর্থেই এখন রাষ্ট্রের পরিচালক ঐ সরকার পড়েছে বিটকেলে বেকায়দায়। রাজনীতিবিদ প্রশাসন বাহিনীর সম্মিলিত যে ভয়াল দানব চক্র নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছে হাজার কোটি টাকার মহোৎসবে, সরকারের সর্বোচ্চ মহল যদি দানব চক্রবিরোধী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কোনক্রমেই এবার পার পাবে না। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা নারায়ণগঞ্জে লাশ হয়ে ভাসে।

এমনি সুযোগ যদি বিরোধীপক্ষ না নেয়, কে আর নেবে। তারা এখন তিস্তা সংকট ভুলে গেছে। 'গুম-খুন-অপহরণ' ইস্যু নিয়ে বুঝি সুপ্ত বিসুবিয়াস উপ্ত হয়ে উঠেছে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধের সপক্ষের শুভশক্তি পর্যন্ত বিব্রত-হতবাক হয়ে পড়ছে। নৈতিক অবস্থান শক্ত না থাকলে যে সংগ্রামশীল থাকা কঠিন হয়ে যায়।

তিস্তা সংকটের সুযোগ নিয়েছে বিরোধীদল মাঠে নামার জন্য। অপহরণ সংকটের সুযোগে মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের প্রধান তার অধঃস্তনকে গায়েব করে। অনেক ঋণগ্রস্ত ব্যবসায়ী পালিয়ে অপহরণের কাহিনী ফাঁদে। ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ে 'গুম-খুন-অপহরণ' অস্ত্রটি ব্যবহারের ধুম লেগে গেছে। এমনি অস্থির বিদিশা পরিস্থিতির মাঝেই কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় ঘটে গেছে এক ভীবৎস অত্যাচারের কা-, আমরা দেশবাসী খুব সহজেই ঐ ভয়াবহ কা-টি ভুলে যেতে বসেছি।

২০০৮ সালে নির্বাচনী সনদে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' নামক শব্দ-ধ্বনিতে বাংলাদেশকে ঝঙ্কৃত করে তুলেছিল, ২০১৪ সালে এসে বলতে পারি, যারা যতো ব্যঙ্গ-বিদ্রূপই করুক না কেন, সব মিলিয়ে কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত সরকারি ডিজিটাল ব্যবস্থা ভালোই এগিয়েছে। রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে গত বছর যখন পয়ঃপ্রণালী-নর্দমায় কাজ করার একজন কর্মীকে কাঁদায় লেপ্টে যাওয়া শরীরে ম্যানহোল থেকে উঠে লুঙ্গির কোঁচড় থেকে মোবাইল সেট বের করে কথা বলতে দেখেছি, তখনই ভেবেছি ডিজিটাল বাংলাদেশ বিপুল এগিয়ে গেছে।

এতো হচ্ছে ভালো ডিজিটালের কথা। কিন্তু দানব ডিজিটাল যে কী ভায়ানক হতে পারে ভুক্তভোগীরাই সে বেদনা সে যাতনা বুঝতে পরে। হোমনার ঘটনাটাই ধরুন না কেন।

আজকাল ফেসবুকের যুগ। লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, ট্যাগের কলিকাল, যে কেউ যে কারো ভালোমন্দ ছবি কিংবা কথা যে কাউকে ট্যাগ করে দিতে পারে। যে কথাটি আপনার নয়, সে কথাটি আপনার ফেসবুকে ঢুকে যেতে পারে, হোমনার সদর থেকে অনেক দূরে নিরালা এক প্রান্তরে একটি ছোট হিন্দু সমাজের বসতি আছে। এমনকি ১৯৭১ সালেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নজর এড়িয়ে ঐ প্রান্তটি নিরাপদেই ছিল। পৃথিবীর মধ্যে এখন বুঝি সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ এলাকাটির জমিজমাই সবচেয়ে দামি হয়ে উঠেছে। ঐ নিরালা হিন্দু পল্লীর ওপর চোখ পড়েছে মুনাফালোভীদের। অতএব হিন্দু তরুণের ফেসবুকে হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর সম্পর্কে অবমাননাকর কথা রয়েছে এমন গুজব তুলে দেয়া হলো। এলাকার সাত-আটটি মাদ্রাসা উত্তেজনায় টগবগ করে উঠলো। কয়েক হাজার মাদ্রাসা ছাত্র লাঠিসোটা-অস্ত্র নিয়ে কয়েক মাইল দূর থেকে এসে হামলে পড়লো হিন্দু পল্লীর ঘর-বাড়ি-মানুষের ওপর। ডিজিটাল স্পর্শ তেমনভাবে পড়েনি ওখানে। অথচ ডিজিটাল-দানব এসে সব ল-ভ- করে।

বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল মাটাল, হঠাৎ করে সব কিছু, সব স্তর কেমন ডিজিটালাইজ হয়ে গেছে। কোন মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে জোর করে নগ্ন করে ছবি তুলে তা মোবাইলে ছড়িয়ে দিয়ে বস্ন্যাক মেইলের মতো রুচিহীন কাজ করে চলেছে একদল নীতিভ্রষ্ট মানুষ। কক্সবাজার-রামুতেও বৌদ্ধদের দেশছাড়া করে দেবার ষড়যন্ত্রে এমন ফেসবুক কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করে বিপুল ঐতিহ্যবাহী দলিলসহ ভাস্কর্য, মূর্তি, ঘর-বাড়ি ভাঙচুর ও ধ্বংস করে দিয়েছে।

ফেসবুকে দেখলাম একটি স্ট্যাটাস অনেকটা এরূপ : ২০২১ সাল, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। অনেক উন্নত হবে ঐশ্বর্যে। তবে ততোদিনে বাংলাদেশ হবে হিন্দুশূন্য। স্ট্যাটাসটিতে অমোঘ সত্যের শত শত কাহিনী লুকানো আছে। আমাদের ভিশন ২০২১ যে তাহলে ভীষণ বিপাকে পড়ে যাবে, যদি এভাবেই দেশ চলে!

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.