নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেখ হাসিনার স্বদেশে ফেরা :গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণ

১৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪



জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আশার আলো দেখিয়েছে। দুটি ক্ষেত্রই বাংলাদেশের জনজীবনের মৌলিক জায়গা। আমাদের মনে আছে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা যেদিন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলেন, দেশের মানুষ- নর-নারী, আবালবৃদ্ধবনিতা জেগে উঠেছিল। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা শহরের অলিগলি পর্যন্ত জনতার ঢল ছিল। শেখ হাসিনার আগমন-শুভেচ্ছা স্বাগতম স্লোগানে মুখরিত ছিল গোটা শহর। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও যেন স্লোগানের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল।

সেদিন আমি অনেকের মধ্যে কথোপকথনে শুনেছি_ জনস্রোতের সবাই কি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ বা এ রাজনীতিপন্থি, নাকি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণই ছিল ওই জনস্রোতের মূল অংশ? আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সাধারণ মানুষ তো ছিলই, তবে অতি সাধারণের সঙ্গে সেদিন যুক্ত হয়ে ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও চেতনা লালনকারী প্রতিশ্রুতিশীল মুক্তিযোদ্ধা ও সমর্থক। নারী উপস্থিতির আধিক্য থেকে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ এটি যে, নারী প্রগতি ও নারী মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয় সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা শামিল হয়েছিলেন ওই দিনের জনস্রোতে। এখান থেকেই প্রশ্ন আসে_ কোন প্রত্যাশার জায়গাটি থেকে এই সচেতন নাগরিক সমাজ এবং নারী মুক্তিবাদীরা শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা-স্বাগতম জানিয়েছিলেন।

স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্তের জাল ছিন্নভিন্ন করে তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে এই লক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কী দিতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? তাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তিতে কতটা ফারাক? এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা ফারাক আছে! তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দুই আমলে জাতির অর্জনের দিকটি গৌণ নয়। কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা-দুর্ঘটনা আর অভ্যন্তরীণ সমস্যাদি অনেক অর্জনকে আড়াল করে রাখার প্রয়াস পেয়েছে। অতি সম্প্র্রতি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে গুম ও হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হাবিল-কাবিল, আজাজিল থেকে সরকারকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন।

আমি লেখক। রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্পৃৃক্ততা নেই। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং অর্জিত স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও আদর্শ লালনে আমার অঙ্গীকার আছে। এটি আমার ব্যক্তিগত অঙ্গীকার হলেও লেখালেখি এবং মতপ্রকাশের মাধ্যমে তা ব্যক্ত করার চেষ্টা করি। দ্বিতীয় অঙ্গীকার নারীর শতকরা ১০০ ভাগ অধিকার ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীর মর্যাদার জায়গাটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমৃত্যু কাজ করা।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গত দুই দফায় উলি্লখিত দুটি ক্ষেত্রে কতটুকু অগ্রগতি এনেছে, অগ্রগতির ক্ষেত্রে কোনো ইচ্ছাকৃত ঘাটতি আছে/ছিল কি-না, আমার মতো সরাসরি রাজনীতি না করা মানুষের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ ঘটেছে কি-না_ এর মধ্যেই লেখাটি সীমিত রাখব।

স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও চেতনার বিষয়টি আসলে কী? কী উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যার যা আছে তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এদেশের সাধারণ মানুষ? সাদামাটা জবাব হচ্ছে, একটি সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠ করা। ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখ নারীর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অবদান এবং গোটা জাতির ত্যাগের বিনিময়ে আমরা তা অর্জন করেছি। যেখানে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, সম্প্র্রদায়ভেদে মানুষ তার অধিকার ভোগ করবে।

সম্প্র্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে তৃণমূল পর্যায়ের মানবাধিকার কর্মীদের কর্মশালায় উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত গ্রাম কুয়াকাটায় গিয়েছিলাম। সচেতন নাগরিক সমাজের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছিলাম। তিনি বলছিলেন, 'শেখ হাসিনার সরকার আছে বিধায় অন্তত সংস্কৃতিচর্চা করতে পারছি। দেশব্যাপী পালা-পার্বণ আয়োজন করা যাচ্ছে। জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেড়শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে পেরেছি আমরা প্রত্যন্ত এলাকায়। অন্যথায় এত দিনে কোনো কোনো জেলার নামসহ দেশটির নাম পাল্টে যেত, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সঙ্গীত বদলে দেওয়া হতো। সাম্প্র্রদায়িক সম্প্র্রীতি দূরে থাক, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সম্পূর্ণরূপে দেশ ছেড়ে যেতে হতো।' আবার এ কথাও শুনতে হলো অন্য একজনের মুখ থেকে_ গত কয়েক বছরে যে বিচ্ছিন্নভাবে সাম্প্র্রদায়িক দাঙ্গা, হত্যা, অগি্নসংযোগ ইত্যাদি ঘটেছে, ক্ষেত্রবিশেষে সরকারদলীয় লোকেরাও ওই সব তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত ছিল। অর্থাৎ সরিষার মধ্যেই ভূত ছিল। এই নিরপেক্ষ কথাটি বলতে গেলে ওই সব নিরপেক্ষ ব্যক্তি ভূষিত হয়েছেন স্বাধীনতাবিরোধী নব্য রাজাকার অভিধায়। যদিও ওই পরিবারটির তিন প্রজন্মের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের বাইরে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। তার বক্তব্য, আমরা তো ব্যক্তিকে ভোট দিই না। আমরা মার্কায় ভোট দিই। আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাওয়ার জায়গা কোথায়? ঢাকায় নাগরিক সমাজের মধ্যেও এরূপ কথা আমি শুনেছি। ঢাকায় এমন কথাও উচ্চারণ করতে শুনেছি যে, গঠনমূলক নিরপেক্ষ সমালোচনা করলেও কোনো কোনো মন্ত্রী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এসব মন্ত্রী নিশ্চয়ই হাবিল-কাবিল কিংবা আজাজিল গোছের নয়। তবে রাজনীতি করতে সহনশীলতা এবং পরমতসহিষ্ণুতা থাকা আবশ্যক বলে আমি মনে করি।

আমার দ্বিতীয় প্রসঙ্গ, নারী অধিকার ও সর্বস্তরে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের কার্যক্রম গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ৩ মে ২০১৪ বরগুনায় অনুষ্ঠিত তৃণমূল মানবাধিকার কর্মী সমাবেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী সেতুর বক্তব্য ছিল এমন, 'আজ আমরা এখানে এসে সবার সামনে মাইকে কথা বলতে পারছি, আমার বড় বোন মিতু সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ে চাকরি করছে, আমাদের প্রতিবেশী হালিম চাচার মেয়ে ফাতিমা গ্রাম স্বাস্থ্যকর্মীর চাকরি পেয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করছে। আমার বড় বোন মিতুর বিয়ের প্রস্তাব এলে পাত্র বেকার এবং বখাটে বিধায় বুবু বিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে। বুবু বলেছে, বিয়ের সময় হলে বুবুই বাবাকে বলবে। দুই-তিন বছর অপেক্ষা করতে বলেছে বাবাকে। বাবা মেনে নিয়েছে। বুবুর সিদ্ধান্তই কার্যকরী হয়েছে। আমিও বুবুর মতো পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছি। ছোটখাটো বিষয়েও বুবু এবং মায়ের মতামত নিতে শুরু করেছেন বাবা। প্রসঙ্গ টেনে সেতু সব শেষে বলে, সমাজ থেকে বখাটেদের উপদ্রবটা কমাতে পারলে আমরা মেয়েরা আরও এগিয়ে যেতে পারব। দেখলাম এসব কিশোরী জানে, বিদ্যালয়ে মেয়েদের ভর্তির হার বেশি এবং তাদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে।

মেয়েদের জন্য যে এত বড় জায়গা তৈরি হয়েছে, তা রাতারাতি হয়নি। তার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন কাজ করেছে। নারীদের মর্যাদার জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন অনবরত। ১৯৯৭ সালে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের জন্য আইন পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী 'জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-১৯৯৭' ঘোষণা করেন। জাতীয় কর্মপন্থা-১৯৯৮ প্রণয়ন করেন। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ ঘোষণা করেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩টি সংরক্ষিত আসনে সদস্যপদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের বিধান করা হয়। তার নেতৃত্বাধীন সরকার সিডও সনদে সংরক্ষিত ধারা ১৩(ক) ও ১৬,১(চ) ধারার ওপর থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করে। এসব কিছুর ভেতর থেকে নারীর পাশাপাশি জেগে উঠেছে কিশোরীরা।

২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণীত হয়। ২০০১ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন মাস থেকে চার মাসে উন্নীত করা হয়। পরে এই ছুটি ৬ মাসে সবেতন বাড়ানো হয়। সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বাবার নামের সঙ্গে মায়ের নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। মাতার নাগরিকত্বের ভিত্তিতে সন্তানের নাগরিক পরিচয় নির্ধারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তার সরকারে নারীদের মন্ত্রী, সচিবসহ বড় পদে আসীন করেছেন। নীতিনির্ধারণী জায়গায় নারীদের কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়ন তৃণমূল পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায়ে বিন্যস্ত করেছেন। বিশ্বজুড়ে জেন্ডার ইকুয়ালিটির জায়গা তৈরির যে প্রচেষ্টা; বাংলাদেশ সে জায়গা থেকে একদম পিছিয়ে নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় তো নয়ই। সেজন্য তৃণমূলের কিশোরীরা এমন স্বাচ্ছন্দ্যে মাইকে কথা বলার জন্য সাহসী হয়েছে। এই অর্জন শতভাগে উন্নীত করবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সপরিবারে নিহত হলেন বঙ্গবন্ধু। কালো পর্দার যবনিকা পড়ল বাংলাদেশের ইতিহাসের পাটাতনে। মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থানে যারা সহযোগিতা করেছিল, তারা ছিল দেশের আপামর মানুষের ললাটে রক্ত-তিলক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার ভেতর দিয়ে পরিশুদ্ধ হতে চাই আমরা। দুর্নীতি, গুম, হত্যার ঊধর্ে্ব মানবিক মর্যাদায় জীবনযাপন করতে চাই আমরা। আপনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই দিনে আমরা আপনার কাছ থেকে গ্গ্নানিমুক্ত স্বদেশ চাই। আপনার সততা, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.