নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করে প্রথমে তারেক জিয়া এবং পরে বেগম খালেদা জিয়া যে ইতিহাস বিকৃতির সূত্রপাত করেছেন তার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে মিডিয়া ও ফেসবুক-অনলাইনে। ২৬ মার্চ (২০১৪) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্য মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে।
সেখানে তিনি বলেছেন, 'কিছু অর্বাচিন ইতিহাস বিকৃত করছে।' তিনি তারেক জিয়ার অপদাবির প্রতি লক্ষ্য করেই মন্তব্যটি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিক্রিয়ার পর দেশ-বিদেশের মিডিয়া, ফেসবুক-অনলাইন, রাজনৈতিক ও নানা সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিক বক্তব্য-মতামত ও মন্তব্য পেয়েছি আমরা।
বিশেষত 'বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী'র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনের মন্তব্য ছিল পরিষ্কার। তিনি জানিয়েছেন, বিএনপি'র এ ধরনের মিথ্যাচার নতুন কিছু নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে তারা ধারাবাহিক এই অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাসকে বিকৃত করাই তাদের একমাত্র কাজ। বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এবং সঠিক ইতিহাসপ্রেমী মানুষ তারেক-খালেদার দাবিকে হাস্যকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
মূলত একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চকে স্মরণ করে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী যখন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দীপ্ত শিখার মতো উজ্জীবিত তখন ২৫ মার্চ লন্ডন থেকে বিএনপি'র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এবং ২৭ মার্চ ঢাকার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করেন।
অথচ বিএনপির ওয়েবসাইটে জিয়া হচ্ছেন দেশের সপ্তম প্রেসিডেন্ট। এখন তাদের দাবি জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই যুদ্ধ হয়েছে। এই দাবির প্রতিবাদ জানিয়েছে সচেতন বাঙালি জাতি। এ পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব উত্সাহ আর উদ্দীপনার জোয়ার দেখা যাচ্ছে তারেক-খালেদা জিয়ার দাবিকে ঘিরে। একথা সত্য মুক্তিযুদ্ধের সব কৃতিত্ব দেশের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের। কিন্তু একইসঙ্গে বিদেশি বন্ধুদেরও। বিশেষত যারা একাত্তরে সহমর্মী হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন; অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। এসব ইতিহাস খুঁড়েই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করতে হবে নিরন্তর।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধৃত বৈষম্যহীন ও ন্যায়বিচার সমুন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন, যে রাষ্ট্রে বলিষ্ঠ জাতি হিসেবে আমাদের বিকাশ প্রত্যাশিত, সেই রাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধী মুক্ত হবে এবং বিশ্বে বাঙালি জাতি হিসেবে মর্যাদার শ্রেষ্ঠ আসনটি অলঙ্কৃত করবে - এই প্রত্যয় জাগ্রত আজ দেশের সকল মানুষের ভেতর। কেবল কতিপয় মিথ্যাচারী আজো সক্রিয় তাদের ক্ষমতার লোভে; তবে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের চেতনা দিয়ে আমরা তাদের প্রত্যাখ্যান করেছি। তারেক-খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনের আওয়ামী লীগ নেতারা। মিথ্যা, হীন এবং বানোয়াট দাবি ইতিহাসের চূড়ান্ত বিকৃতি বলেছেন তারা।
আওয়ামী লীগ দল হিসেবে বলেছে, তারেক জিয়া উদ্ভট তথ্য দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে। মিথ্যাচার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এমনকি বিএনপি'র সিনিয়র নেতারা বিব্রত হয়েছেন তারেক-খালেদার দাবির কথা শুনে। কেউ কেউ বলেছেন, সীমাহীন মূর্খতার অসীম উদাহরণ তারেক জিয়া। বাপের প্রতি সামান্যতম ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা যদি থাকতো তাহলে সে তার পিতাকে এই নির্লজ্জ মিথ্যাচারের বলির পাঠা বানাত না।
সামাজিক যোগাযোগে তথা ফেসবুক ও ব্লগে লিখিত হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মতামত। যেমন- সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুকে ২৮ মার্চ (২০১৪) লিখেছেন- ''বিএনপির নিজেদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে জেনারেল জিয়াউর রহমান ৭ম রাষ্ট্রপতি ছিলো। সে কখনোই কারো দ্বারা নির্বাচিত হয়নি। সামরিক শাসনের অধীনে সে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করেছিলো। সাংবিধানিক এবং গণতান্ত্রিকভাবে সে কখনোই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলো না। সে ছিলো এক সামরিক স্বৈরশাসক। খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে মিথ্যাবাদী। তারা মিথ্যার উপর ভর করে তাদের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নির্মাণ করেছে। এমনকি আমাদের মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছে যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু খালেদা সেই মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আসছে যে জিয়াই তা করেছে এবং এটি সে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল একইদিন লিখেছেন- ''সম্মানিত বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গতকালের বক্তৃতার উল্লেখযোগ্য এবং প্রাতঃস্মরণীয় অংশবিশেষঃ ১। মেজর জিয়া শুধু স্বাধীনতার ঘোষক নন, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। (ম্যাডাম সঠিক। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়া মুক্তিযুদ্ধকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন সেনা কর্মকর্তা হিসাবে মাসিক ৪০০ টাকা বেতন গ্রহণ করতেন। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একজন সেক্টর কমান্ডার হিসাবে জেনারেল ওসমানীর সভাপতিত্বে নিয়মিত সেক্টর কমান্ডারস মিটিং-এ অংশ নিতেন। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার অধীন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য মন্ত্রীকে দেখামাত্র স্যালুট করতেন। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়া দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক লে: কর্নেল, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার এবং পরবর্তীতে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছিলেন। এদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়া নিজে আবেদনপত্র লিখে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। ম্যাডামের প্রতি আমার প্রশ্ন- এ কেমন রাষ্ট্রপতি যিনি বাকশালী সরকারের বেতনভুক্ত একজন সেনা কর্মকর্তা হিসাবে চাকরি করেন?) ১৯৭১ এ আমাকে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। আমি যাই নাই। ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। (ম্যাডাম এখানেও সঠিক। ভারতে অবস্থানরত সেক্টর কমান্ডার জিয়া তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুক্তিবাহিনীর লোক পাঠিয়েছিলেন। বিস্তারিত আছে মেজর হাফিজের বই 'যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা'য়। তখনও বেগম জিয়া ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে যাননি। ছিলেন বড়বোন খুরশীদ জাহান হক চকোলেটের বাসায়। জিয়া সাহেবের চিঠি পাওয়ার পর তিনি ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেন। কারণ, তিনি বিদেশে(ভারতে, জিয়ার কাছে) যেতে চাননি। দেশকে (পাকিস্তানকে) ভালোবেসে পাকবাহিনীর আশ্রয়ে ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান নিয়েছেন। যুদ্ধের শেষদিকে যখন ক্যান্টনমেন্টে বম্বিং হচ্ছিল তখনও আমি সাহস হারাইনি।(ব্রাভো! পাক সার জমিন সাদ বাদ)'' একইদিন আমেরিকা প্রবাসী ঔপন্যাসিক রীতা রায় মিঠু 'সৌন্দর্য্যের ক্ষমতা!' শীর্ষক ফেসবুক মন্তব্যে লেখেন- ''গতকাল কলিকাতা থেকে বাসে চড়ে ঢাকা আসার পথে দুই-চারজন বন্ধুকে ফোন করেছিলাম, দেশের হাল হকিকত জানতে চেয়েছিলাম। এক বন্ধু খুব হতাশা নিয়ে জানালেন, খালেদা জিয়া নাকি বলেছেন যে, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমান। বললাম, এতে অত হতাশ হওয়ার কী আছে। এমন কত কথাই তো বেগম জিয়া বলে থাকেন, সুন্দরী তো, তাই অমন আনসান কথা বলেন।/ -তাই বলে এমন ইতিহাস বিকৃতিমূলক কথা?/-হ্যাঁ,ইতিহাস তারাই বিকৃত করে থাকে যারা ইতিহাস আর পাতিহাসে তফাত বুঝে না। বেগম জিয়া হয় বাংলাদেশের ইতিহাস জানেনই না, অথবা ইতিহাসের গুরুত্ব বুঝেন না।/-উনি তো তিনবারের প্রধানমন্ত্রী! -হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী তো ঠিকই, তারপরেও সুন্দরী বলে কথা, সুন্দরীরা যখন যা বলে, যেথায় যা কিছু করে সাতখুন মাফ হয়ে যায়। এভাবে ফেসবুক-অনলাইনে মন্তব্যের পর মন্তব্যে ভরে গেছে প্রকৃত ইতিহাসপ্রেমীদের অনুভূতির কথামালায়। অন্যদিকে ইত্তেফাকসহ অনেক দৈনিক পত্রিকা একাধিক সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় প্রকাশ করে ইতিহাস বিকৃতির দায়ভার বিএনপি'র কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে। প্রবাসী কলামিস্ট ও প্রখ্যাত লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী একাধিক পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় লিখে বিষয়টি পাঠকদের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। প্রকৃত ইতিহাস অন্বেষণে ব্লগাররা লিখেছেন অজস্র মতামত। আমার ব্লগে শরীফ শুভ্র লিখেছেন, ''খালেদা জিয়ার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হওয়া যায় যে, একটা দলের নেতৃস্থানীয়রা কীভাবে একটা দেশের ইতিহাস বিকৃতি করতে পারে, আর সেই দলটি ক্ষমতায় থাকলে দেশের ইতিহাস কোথায় গিয়ে ঠেকবে?'' সামহয়্যার ইন ব্লগে মাইনুদ্দিনের পোস্টের শিরোনাম 'বাংলাদেশের প্রথম কাল্পনিক প্রেসিডেন্ট'। ইতিহাসের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, 'এ বক্তব্য অনভিপ্রেত ও অনৈতিহাসিক'। ৩০ মার্চ জনৈক কলামিস্টের একটি শিরোনাম ছিল 'বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে বিএনপির নোংরা খেলা'। তার আগে ২৯ মার্চ অপর এক লেখক লিখেছেন, 'প্রথম রাষ্ট্রপতি বিতর্ক: একটি বেসুরা বংশীবাদকের কাজ' শিরোনামে নিবন্ধ। তবে তারেক-খালেদার পক্ষেও নিবন্ধ লেখা হয়েছে। যেমন যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন দৈনিক আমার দেশ অনলাইনে লিখেছেন 'প্রথম রাষ্ট্রপতি বিতর্ক: শেখ হাসিনার ভাষায় 'অর্বাচিনের' বিকৃত ইতিহাস।' এখানে তিনি তারেক-খালেদার পক্ষে নিজের মতামত তুলে ধরে বলেছেন, 'মুক্তিযুদ্ধ হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে আসেনি'। আমাদের মতে, প্রকৃত ইতিহাস অন্বেষণে এই ব্যক্তি ব্যর্থ হয়েছেন। একাত্তরের ইতিহাস যে মার্চ মাসে শুরু হয়নি এটা ভুলে গেছেন তিনি। বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলো বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্য তুলে ধরেছে এভাবে Bangladesh's ex-PM sued for `distorting history'। উপরন্তু বাংলাদেশে ভ্রমণরত বিদেশি ব্যক্তিবর্গ খালেদা জিয়ার মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। সুত্র
©somewhere in net ltd.