নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ইহকালের কর্মফল অনুসারে পরকালে মানুষের বিচার নিশ্চিতের কথা স্পষ্টভাবে জানান দিয়েছে ইসলাম ধর্ম। কিন্তু পরকালের বিচারের আলামত জীবদ্দশাতেই যে মূর্তিমান হয় এমন বয়ানও দিয়ে থাকেন ধর্মবেত্তাগণ। বিশেষত পাপের প্রায়শ্চিত্ত জীবদ্দশাতেই শুরু হয়। বে-চশম দাদন ব্যবসায়ীদের মৃত্যু হয়েছে নিজের মলমূত্র খেয়ে, এমন নজির গ্রামবাংলায় আছে অনেক। কর্মজীবনে কুসীদ গ্রহণকারীর ঔরসে পঙ্গু কিংবা পাগল সন্তান জন্মালে দুর্মুখরা বলে এটি কর্মফল। এই কর্মফলের সমান্তরালে নিয়তির প্রতিশোধও যুক্ত হতে পারে। নবাব সিরাজউদদৌলাকে ছুরিকাঘাতে হত্যাকারী মীর মিরনের মৃত্যু হয়েছিল বজ্রপাতে।
’৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যার নীলনক্সা প্রণয়নকারীদের অন্যতম নায়ক জুলফিকার আলী ভুট্টোর মৃত্যু হয়েছিল ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে। এমন নজির টানতে চাইলে টানা যাবে অনেক। এ সমস্ত নজিরকে নিয়তির প্রতিশোধ বলে গণ্য করা যায়। বস্তুত নিয়তির প্রতিশোধ এবং কর্মফলজনিত প্রায়শ্চিত্তকে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হিসেবে ধরে নিতে হবে। নিয়তির প্রতিশোধ এবং কর্মফলজনিত প্রায়শ্চিত্তের প্রকাশ ঘটতে পারে নানান আঙ্গিকে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ্যে জুতাপেটার মধ্যে নিয়তির প্রতিশোধ নিহিত নাকি কর্মফলের প্রতিদান বিদ্যমান, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে।
তবে বিষয়টি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে যারা অতিমাত্রায় সচেতন এবং বিস্মৃতির ব্যামো যাদের পুরো মাত্রায় কব্জা করতে পারেনি তাদের স্মৃতিতে নিশ্চয় আশির দশকের জুতাপেটার ঘটনাবলী এখনও অম্লান অবয়বে টিকে আছে। ১৯৮০ সালে পার্লামেন্ট লবিতে জুতাপেটা নিয়ে হৈচৈ কম হয়নি। জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী মন্ত্রী মেজর জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশু তৎকালীন মুসলিম লীগ দলীয় এমপি কাজী কাদেরকে জুতাপেটা করেছিলেন। কথা কাটাকাটির জের ধরে রাজাকারের বাচ্চা বলে পায়ের জুতা খুলে কাজী কাদেরকে লাঞ্ছিত করেছিলেন শিশু। এ নিয়ে দারুণ ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল ডানপন্থী মহলে। প্রেসিডেন্ট জিয়া সেটিকে সামাল দিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়ার তিরোধানের পর মন্ত্রিসভাতে শাহ আজিজুর রহমানের দাপট বেড়ে গেলে ঘটনাটির খেসারত দিতে হয়েছিল মেজর জেনারেল শিশুকে। পাকিস্তানপন্থী কাজী কাদেরকে জুতাপেটার কারণে মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশু বিএনপির সংশ্রব ত্যাগ করে দেশান্তরী হয়েছিলেন কিনা, কে জানে। তবে মেজর জেনারেল নুরুল ইসলাম শিশুর জুতাপেটার ধারাবাহিকতা পরবর্তীকালেও ছিল। দুটি স্মরণীয় জুতাপেটার প্রত্যক্ষদর্শী আমি নিজেই। এ দুটি ঘটনা অলীক নয়। সমসাময়িক পত্র-পত্রিকা ঘাঁটলে ঘটনা দুটির বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যাবে না। ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারির ঘটনা। বিশেষ কাজে সেদিন ঢাকাতে ছিলাম। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত তৎকালীন এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মরহুম মোঃ ইলিয়াছ সাহেবের সঙ্গে দেখা করার জন্য ফোনে তার এমপি হোস্টেল কক্ষে যোগাযোগ করলে তিনি বলেছিলেন, জোহরের নামাজের সময় বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে তিনি আসবেন। ফিলিস্তিন যুদ্ধে শহীদ দু’জন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধার জানাজার নামাজ সেখানে অনুষ্ঠিত হবে। এ জানাজা অনুষ্ঠানে শরিক থাকার জন্য তিনি আমাকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন। গোলাম আযমকে সরাসরি দেখেছিলাম ১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে, মৌলভীবাজারের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে। ঘরের ভেতরে রাজনৈতিক মিটিং চলছিল দেশব্যাপী। তাঁর বক্তব্যে এবং অবয়বে অহমিকার ছাপ ছিল স্পষ্ট। গোলাম আযম বলেছিলেন- আমি মাস্টার্স ডিগ্রীধারী একজন প্রফেসর। একজন অর্ডিনারি গ্র্যাজুয়েট ও চরিত্রগতভাবে ‘গু-া’ শেখ মুজিবকে নেতা মানব কোন দুঃখে? শেখ মুজিব পাকিস্তান ভাংতে চায়, আর আমি পাকিস্তানের ভিত্তি মজবুত করতে চাই...। ঐতিহাসিক বাস্তবতার আলোকে এবং জন্মই যার আজন্ম ভুলের মাসুল দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত গোলাম আযম গং অখ- পাকিস্তানের ভিত্তিকে কালের ফাটল থেকে রক্ষা করতে পারেননি। এই গ্লানিকে মানসপটে ধারণ করে পশ্চিম পাকিস্তানের বাসিন্দা হয়েছিলেন গোলাম আযম। সেখান থেকে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলেছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। ’৭৭ সালে সুতোর টানে পাকিস্তান থেকে ছুটে এসেছিলেন শেখ মুজিব প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে। জানাজা শেষ হতে না হতেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির উপনেতা মহীউদ্দীন আহমদ হাঁক দিলেনÑ ধর শালাকে, ধর। অমনি একদল তরুণ মুসল্লি ধাওয়া করল গোলাম আযমের দিকে। কুলাউড়া থেকে নির্বাচিত তৎকালীন আওয়ামী লীগ এমপি মরহুম আবদুল জব্বার জুতা হাতে নিয়ে দৌড় দিলেন। শুরু হলো গোলাম আযমের ওপর কিল, থাপ্পড় ও জুতাপেটা। আরেক জুতাপেটার ঘটনা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেছিলাম তিন বছর পর। সেটি ১৯৮৪ সালের সম্ভবত সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। তারিখটি মনে নেই, তবে দিনটি ছিল সোমবার। ‘উল্টা দাড়ির সঙ্গে রাজনীতি করে ভুল করেছি’ এমন বক্তব্য দিয়ে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাদা ডেমোক্র্যাটিক লীগ গঠন করলেও খন্দকার মোশতাক আহমদ তার নেতৃত্বাধীন ডেমোক্র্যাটিক লীগের সঙ্গে আরও কয়েকটি ভক্সওয়াগন পার্টিকে যুক্ত করে একটি জোট গঠন করেছিলেন। নবগঠিত এ জোটের সমাবেশ ডাকা হয়েছিল এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। জানা গেল, সিলেটগামী উল্কা ট্রেনে নেতারা আসছেন। ত্রিশ-চল্লিশ মিনিটের মাথায় উল্কা ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে পৌঁছলে শুরু হয় তোলপাড়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একটি লড়াকু মিছিল ততক্ষণে স্টেশন প্লাটফর্মে অবস্থান নিয়েছে। নেতারা ট্রেন থেকে অবতরণের পর পরই শুরু হলো ধরধর মারমার কা-। চোখের পলকে প্রতিরোধকারীরা খন্দকার মোশতাক আহমদসহ অন্য নেতাদের ঘিরে ফেলে শুরু করল কিল, থাপ্পড় ও জুতাপেটা। এ হামলা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য অলি আহাদ একজন দক্ষ এ্যাথলেটের মতো দৌড়ে লাফ দিয়ে রেলস্টেশনের কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করলেও ভর সামলাতে না পেরে চিৎপটাং হয়েছিলেন। মেজর জয়নাল আবেদীন নামে আরেক নেতা নিজের মেজর পরিচিতি তুলে ধরলেও ক্ষ্যাপাদুর্ভাসারা বলে উঠেছিল শালা তুই মেজর না রাজাকার? তার ওপরও লাঠির বাড়ি এবং কিল, থাপ্পড় বর্ষিত হচ্ছিল। ততক্ষণে থাপ্পড় ও জুতাপেটার ধারাবাহিকতায় খন্দকার মোশতাক আহমদের মাথার টুপি উড়ে গেছে। গায়ের শেরওয়ানির অবস্থাও নাজেহাল। দেখলাম আক্রমণের ঘেরাটোপ অতিক্রম করে খন্দকার মোশতাক এক দৌড়ে প্লাটফর্মের একটি টংদোকানের নিচে ঢুকে পড়লেন আত্মরক্ষার্থে। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তখন আমার মধ্যে অপার কৌতূহল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির পর ৮৩ দিনের জন্য মসনদের অধীশ্বর খন্দকার মোশতাক আহমদ একটি রেলস্টেশনের টংদোকানের নিচে কি হালতে আছেন, তা স্বচক্ষে না দেখলে পরবর্তী জীবনে শুধু আক্ষেপই থাকবে। খন্দকার মোশতাক টংদোকানের নিচে ঢুকে পড়ার পর হামলাকারীরাও দোকানটি ঘিরে ফেলেছিল। গর্ত থেকে শিয়াল বের করার লক্ষ্যে যেভাবে গর্তে গুঁতা মারা হয় সেভাবে হামলাকারীরাও টংদোকানের নিচে বাঁশের লাঠি দিয়ে গুঁতানো আরম্ভ করেছিল। সাহস করে ভিড় ঠেলে ঘর্মাক্ত দেহে কোনক্রমে টংদোকানের কাছাকাছি যেতেই দূরে পুলিশের হুইসেল শুনলাম। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা হাতের লাঠি দিয়ে টংদোকানের নিচে শেষ গুঁতো মেরে সটকে পড়তে লাগল। আমি তখনও নির্বিকার দাঁড়িয়ে। কালো সানগ্লাস পরিহিত থানা দারোগা আওয়াজ দিলেন- স্যার, আপনি বেরিয়ে আসুন, আমরা এসে গেছি। দেখলাম কনুইয়ের ওপর ভর করে হামাগুঁড়ির স্টাইলে খন্দকার মোশতাক আহমদ টংদোকানের নিচ থেকে বেরিয়ে আসছেন। মাথার ক্যাপ উধাও, শেরওয়ানি ছিন্নভিন এবং পাজামার অবস্থা তথৈবচ। টংদোকানের নিচ থেকে বেরিয়ে এসে খন্দকার মোশতাক তটস্থ দৃষ্টিতে চারদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি বলছিলেন, তা শুনতে পারিনি। তারপর পুলিশের বেষ্টনীর ভেতরে ঢুকে প্রস্থান করলেন স্মরণীয় রেলস্টেশন থেকে। রেলস্টেশনে রং-বেরঙের মানুষের উপস্থিতি থাকে সব সময়। পাগল কিসিমের কে একজন বলেছিল দুনিয়াদারির আজব খেলা, কেউ পায় ফুলের মালা, কেউ খায় জুতারঠেলা।
সুত্র
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩২
নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: নিযামী সেদিন ডাকসুতে জুতার বাড়ি খায়নি - তার দিকে কাঁচের বোতল ও ডায়েরি ছুঁড়ে মারা হয়েছিল। বোতলের ভাঙা কাঁচের আঘাতে মাথায় রক্তপাত হয়েছিল। তাকে কয়েকদিন হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল।
৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৬
আমিনুর রহমান বলেছেন:
’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির পর ৮৩ দিনের জন্য মসনদের অধীশ্বর খন্দকার মোশতাক আহমদ একটি রেলস্টেশনের টংদোকানের নিচে কি হালতে আছেন, তা স্বচক্ষে না দেখলে পরবর্তী জীবনে শুধু আক্ষেপই থাকবে।
সত্যিই আক্ষেপ হচ্ছে
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:০৭
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
মহীউদ্দীন আহমদ হাঁক দিলেনÑ ধর শালাকে, ধর। অমনি একদল তরুণ মুসল্লি ধাওয়া করল গোলাম আযমের দিকে। কুলাউড়া থেকে নির্বাচিত তৎকালীন আওয়ামী লীগ এমপি মরহুম আবদুল জব্বার জুতা হাতে নিয়ে দৌড় দিলেন। শুরু হলো গোলাম আযমের ওপর কিল, থাপ্পড় ও জুতাপেটা। আরেক জুতাপেটার ঘটনা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেছিলাম তিন বছর পর। সেটি ১৯৮৪ সালের সম্ভবত সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা।
দুনিয়াদারির আজব খেলা, কেউ পায় ফুলের মালা, কেউ খায় জুতারঠেলা।
জাহান্নাম বাস জীবদ্দশায় দেখে গেছে ।
মোনাফেক বেঈমান ।