নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈশা খাঁ-লেদা

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০৬

‘ঈশা খাঁর কথা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ে।

বেশি অত্যাচার হলে ঢাল-তলোয়ার আছে, এটা নিয়েই মোকাবেলা করব।

’ কথাগুলো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন কিশোরগঞ্জের ২০ দলীয় জোটের জনসভায়। দুই লাইনের এই কথাগুলো দিয়ে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের যুদ্ধংদেহী রাজনৈতিক অবস্থান সুস্পষ্ট করতে চাইলেও তাৎক্ষণিক একটা কারণ রয়েছে। অভিনব এক অভ্যর্থনায় তিনি মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেননি। বেলা ৩টায় তিনি যখন সার্কিট হাউসে পৌঁছান তখন একটি হাতির পিঠে চড়ে রাজকীয় পোশাক পরিহিত একজন কাঠের ঢাল-তলোয়ার নিয়ে তাকে সংবর্ধনা জানান। বাস্তবে জনসভায় লোক সমাগম দেখে নয়, রাজকীয় পোশাক ও ঢাল-তলোয়ার দেখে জোট নেত্রীর মাথা বোধকরি ঘুরে যায়। ঘুরবে না কেন! নিজেকে সামাল দিতে পারবেন কিভাবে! আঙ্গুর ফল দেখলে যেমন জিভে পানি আসে, ঠিক তেমনি রাজকীয় পোশাক দেখে মনে ভেসে ওঠে প্রধানমন্ত্রী কিংবা ন্যূনপক্ষে বিরোধীদলীয় নেতার সিংহাসনের কথা আর ঢাল-তলোয়ার দেখে মনে পড়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার জন্য রাজনৈতিক কৌশল-পদক্ষেপের কথা।
বেসামাল হয়ে কথাগুলো বলার পর স্বভাবিকভাবেই তার বোধোদয় ফিরে আসে। ক্ষমতার সিংহাসনে বসার লোভ যে জনগণের সামনে দেখাতে হয় না এটা তিনি ইতোমধ্যে বুঝে নিয়েছেন। তাই সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, ‘আমি ক্ষমতা চাই না। জনগণের সঙ্গে থাকতে চাই। ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন আমাকে অনেক বার বলেছে, দেশ থেকে চলে গেলে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু আমি যাইনি। সাহস করে এ দেশের মানুষের সঙ্গে থেকেছি।’ বিএনপি-জামায়াত নেত্রী খালেদা জিয়ার উল্লিখিত কথাগুলো অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রথমত, ঈশা খাঁর নামটা তিনি উচ্চারণ করলেন কেন? ‘বেশি অত্যাচার’ কথাটা বললেন কেন? ঢাল-তলোয়ারের প্রশ্নটা তুললেন কেন? সাহসের প্রশ্নটা সামনে আনলেন কেন? এই প্রশ্নগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করলেই সুস্পষ্ট হয়ে যাবে কোন অবস্থায় আছে আর কী করতে চায় ২০ দলীয় জোট।
এটা কার না জানা কিশোরগঞ্জের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত হয়ে আছে অতীত বাংলার স্বাধীনচেতা বীর বারভূঁঞা খ্যাত ঈশা খাঁর নাম। ঈশা খাঁ-মান সিংহ যুদ্ধ, জঙ্গালবাড়ি প্রভৃতি বাঙালি জাতির গর্বিত ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক হীন স্বার্থ ও উদ্দেশ্য সাধনে বিএনপি-জামায়াত জোট যে ইতিহাস-ঐতিহ্যবিমুখ বা একে খণ্ডিত বা বিকৃত করে প্রচারে আনে, এটা দেশবাসী সবার জানা। ১২ নভেম্বর খালেদা জিয়ার ভাষণ পড়ে ঈশা খাঁ নামটা যখন জানতে পারি; তখনই আমার মনে হতে থাকে, বিএনপি-জামায়াত জোট এবারে আবারো ভোল পাল্টাবে এবং ভারতবিরোধী জিগির শুরু করবে। কথাটা সত্য বলে প্রমাণিত হলো, যখন ১৭ নভেম্বরের দৈনিক পড়লাম। ঢাকা মহানগর কমিটির সঙ্গে আলোচনার সময় খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘গোপন চুক্তিতে বিপন্ন স্বাধীনতা। প্রতিদিনই দেশ কোনো না কোনোভাবে আগ্রাসী শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।’ পত্রিকার রিপোর্ট তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখলাম, ভাসুরের নাম যেমন উচ্চারণ করেন না মহিলারা, ঠিক তেমনি আগ্রাসী শক্তি কোন দেশ তাও উচ্চারণ করেননি তিনি। একটু খেয়াল করলেই এটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, বিএনপি সময় বিবেচনায় কখনো ভারতবিরোধী প্রচারণা তুঙ্গে তোলে আবার কখনো তা নিয়ে তৃণমূলে প্রচার চালালেও উচ্চবাচ্য করে না। এমনটা করার কারণ হচ্ছে, বিএনপি মনে করে ক্ষমতায় বসা কিংবা থাকার প্রধান ফ্যাক্টর হচ্ছে ভারত।
ক্ষুদ্র এ কলামে বেশি কথায় না গিয়ে বলা যায় এটা সর্বৈবভাবে হীনমন্যতা বশে ভুল চিন্তা এবং উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে দেয়ার নামান্তর। যেমন ভারতের জন্য নয়, বিএনপি এবার ক্ষমতার গদিতে যাওয়ার পথ নিজে নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন বয়কটের কৌশল নিয়ে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, বিএনপি ক্রমে ভারতবিরোধী প্রচারণা আবার তুঙ্গে তুলবে। ভারতের নির্বাচন সামনে রেখে বিজেপি ক্ষমতায় আসলে বিএনপি-জামায়াতের ভাগ্যে ক্ষমতার শিকে ছিঁড়বে বিবেচনায় বিএনপি কিছুদিন ভারতবিরোধী প্রচারণা প্রকাশ্যে আনেনি। ওই ভুল ভাঙায় এখন আবার ভারতবিরোধী প্রচারণা বিএনপি-জামায়াত জোট তুঙ্গে তুলছে। ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে ধরনের কথা খালেদা আবার কখন বলবেন, এ জন্য এখন দেশবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপি বিশেষত নেত্রী খালেদা জিয়া সব সময় ভাবেন, মানুষ অন্ধ বা বোকা; কিছুই বোঝে না। কিন্তু মানুষ সবই বোঝে। আর তাই এখন খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাইবে, বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কেন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মনমোহন সিং ক্ষমতায় থাকতে ভারতে গিয়ে ধরনা দিয়েছিলেন? কেনইবা বিজেপি নেতা মোদি ক্ষমতায় বসার পর কী কৌশল নেন তা দেখার জন্য চুপ করে বসেছিলেন? এটা কার না জানা, ঈশা খাঁ কখনো দিল্লির প্রভুত্ব মেনে নেননি, খালেদা জিয়াও মানতে চান না। ভালো কথা! স্বাধীনতা প্রিয় দেশবাসীও কোনো দেশের প্রভুত্বই মানবে না। কারণ বুকের রক্ত দিয়ে গড়া স্বাধীন দেশে পরাধীনতার গøানি মানুষ ভোগ করতে চাইতে পারে না। মানুষ চায়, ভারত বিষয়ে ক্রমাগত ডিগবাজি দেয়া নীতি-কৌশল বিএনপি বন্ধ করুক। অন্ধ ভারত বিরোধিতা যে দেশের উন্নতি-অগ্রগতির জন্য অমঙ্গলের তা এতদিনে মানুষ বুঝে নিয়েছে।
প্রসঙ্গত বলতেই হয় নির্বাচনের পর একইভাবে জামায়াত প্রশ্নেও বিএনপি ডিগবাজি নীতি নিয়ে চলছে। নির্বাচনের পর ২০ দলীয় জোট বজায় রাখলেও জামায়াতকে নিয়ে জনসভা, জমায়েত করবে না এই কৌশল নিয়ে চলছিল বিএনপি। এই কৌশল এখন ত্যাগ করেছে দলটি। কিশোরগঞ্জের জনসভাটি ছিল ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে। পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, জামায়াতের সংগঠিত জমায়েতই ছিল কিশোরগঞ্জের জনসভার মূল জমায়েত। অবস্থাদৃষ্টে এটা সবাই স্বীকার করবেন যে, জামায়াতসহ উগ্র জঙ্গি দলগুলো রয়েছে প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধাবস্থায়। বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণসহ উগ্র জঙ্গি ধরা পড়ার ঘটনা এরই প্রমাণ বহন করে। নির্বাচনের পর বিএনপি দলটি জামায়াত ও উগ্র জঙ্গিদের থেকে নিজকে কিছুটা পৃথক রাখতে প্রয়াসী হয়েছিল। গৃহযুদ্ধ নয়, গণতান্ত্রিক মুখোশটি জনগণকে দেখাতে সচেষ্ট হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ওই কৌশল পরিত্যাগ করেছে এবং জামায়াত ও উগ্র জঙ্গিদের সঙ্গে গলায় গলায় বন্ধুত্বের নীতি নিয়ে চলতে উদ্যোগী হয়েছে। ইতোমধ্যে খালেদা জিয়া বলে দিয়েছেন, নির্বাচনের পর আন্দোলন স্থগিত করা সঠিক হয়নি। অর্থাৎ ঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। যুদ্ধ বিরতিতে ক্ষতি হয়েছে ২০ দলীয় জোটের। এই কৌশল পরিবর্তন করার ফলেই ঢাল-তলোয়ার নিয়ে আবারো যুদ্ধ বাধানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব তিনি চান না। জনগণের সঙ্গে থাকতে চান। এ প্রসঙ্গে বিবেচ্য বিষয় হলো, জনগণের সঙ্গে থাকতে চাইলে কি কেউ গৃহযুদ্ধ বাধাতে চায়! সংবিধান মানে না! ঢাল-তলোয়ার নিয়ে নামতে চায়! স্বাধীন দেশে সাংবিধানিক সরকার থাকা অবস্থায় ঢাল-তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ করার ঘোষণা যে বেআইনি এবং গণধিকৃত হতে বাধ্য; তা খালেদা জিয়া ও বিএনপি-জামায়াত জোট অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমন অবস্থান নিলে আইন অনুযায়ী সরকারের অগ্রসর হওয়াটা জরুরি বলেই জনগণ মনে করে।
‘বেশি অত্যাচার’ কথাটা খালেদা জিয়ার মুখ থেকে বের হয়ে এসেছে বোধকরি অসাবধানতাবশত। তবে এমনো হতে পারে রাজ পোশাক ও ঢাল-তলোয়ার দেখে অবচেতন মনের কথা আকস্মিকভাবে বের হয়ে এসেছে। বিএনপি দলটি জামায়াত ও উগ্র জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়ে এতদিন যা করেছে, তাতে আরো বেশি দমনমূলক নীতি নেয়া সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল। কিন্তু সরকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে তেমন নীতি নিয়ে অগ্রসর হয়নি। তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সবটা বোঝেন বলেই ‘অত্যাচার’ এখনো বেশি হয়নি মুখ ফসকে বলে দিয়েছেন। তিনি জানেন ক্ষমতা হাতে থাকলে অত্যাচার কতটুকু হিমালয়সম করা যায়। ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হাওয়া ভবন থেকে যে অত্যাচার-নিপীড়ন ও খুনখারাবি করা হয়েছিল, তা খালেদা জিয়ার সবটাই মনে আছে। ক্ষমতায় গেলে আবারো তিনি তা করবেন বলে স্থির করে রেখেছেন। নতুবা বলেন কী করে ক্ষমতায় গেলে তিনি বিরোধী দলকে ‘আস্ত’ রাখবেন না। অতীতেও তিনি আস্ত রাখেননি। দেশের কৃতী সন্তান কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মনজুরুল ইমাম, মমতাজউদ্দিনকে কি আস্ত রেখেছিল তরুণ তুর্ক তারেক রহমান! আস্ত রাখার জন্য কি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল? আইভী রহমান কি আস্ত শহীদ হয়েছিলেন!
খালেদা জিয়া মুখে না বললেও মনে মনে জানেন, গণতন্ত্রের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ বিএনপি-জামায়াতের পর্যায়ে উঠে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্র্রদর্শন করতে পারবে না। তাই যথাযথ সত্য কথাটা তার মুখ থেকে বের হয়ে এসেছে। অবশ্য ‘বেশি আত্যাচার’ কথাটা বলার আরো একটি কারণও রয়েছে। খালেদা জিয়া শতবার ঘোষণা দিয়ে চেষ্টা করেও আন্দোলনে দলকে নামাতে পারছেন না। দল নেত্রীর কথা না মেনে থেকে যাচ্ছে ঘরের ভেতরে। এমনকি ঢাল-তলোয়ার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নামবে কি, নিজেদের মধ্যেই কমিটি গঠন নিয়ে মারপিট করছে, বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এই অবস্থায় তিনি বেশি অত্যাচার হচ্ছে বলবেন কিভাবে? যদি বলেন তবে আবারো আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে হয়। বস্তুতপক্ষে আরো কথাটা বলার অর্থ হচ্ছে, এখন আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা সম্ভব নয়; পরে যখন বেশি হবে তখন ঢাল-তলোয়ার নিয়ে নামা যাবে।
তবে যত চেষ্টাই খালেদা জিয়া করুন না কেন, ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার হয়ে ঘরের ভেতরে কিংবা নিদেনপক্ষে জনসভার মধ্যেই তাকে থাকতে হবে। তিনি বলেছেন সাহস থাকায় তিনি দেশ ছেড়ে যাননি। কথাটা যদি সত্য হয় তবে খালেদা জিয়াকে প্রশ্ন করতেই হয়, সাহস কি তার বড় ছেলে বিএনপির দুই নম্বরী নেতা তারেক রহমানের ছিল বা আছে? প্রসঙ্গত, ছোট ছেলে কোকোর মামলা এড়িয়ে ভয়ে বিদেশে থাকাটা আইনসিদ্ধ নয়। তবু থাকতে পারে, কেননা সে রাজনীতি করে না। কিন্তু তারেক জিয়া! সাহস আর হিম্মত তার কতটুকু, জনগণ তা ভালো করেই বোঝে। অবশ্য এটা সবচেয়ে বেশি বোঝে বিএনপির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের বলবেন আন্দোলনের রাস্তায় নামতে, ঢাল-তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে নামতে আহ্বান জানাবেন, আর ছেলেকে নিরাপদে বিদেশে রাখবেন, এটা হয় না। এ কারণে বিএনপি নেত্রী কখনো নেতাকর্মীদের রাস্তায় আন্দোলনে নামাতে পারবেন না। যতোটুকু জানা যায়, বিএনপি সংগঠনের ওপর থেকে নিচু পর্যায় পর্যন্ত কথাটা ইতোমধ্যে উঠেছে যে, কেন তারেক জিয়া থাকবেন বিদেশে এবং বিদেশ থেকে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কলকাঠি নাড়বেন? নিজে নিরাপদে থেকে নেতাকর্মীদের আইন অমান্যের দিকে ঠেলে দিলে তারা তা মানবে কেন? দলে বিদ্রোহ করবেই। আর এই বিদ্রোহের বহিঃপ্রকাশই ঘটছে দলীয় হাতাহাতি, মারামারি ও রক্তারক্তির মধ্য দিয়ে।
খালেদা জিয়া ভালো করেই বোঝেন তিনি শূন্যে তলোয়ার ঘুরাচ্ছেন। আর তাই ইতোপূর্বে একবার বলেছিলেন, নেতারা ঘরে বসে আঙুল চোষেন। আর এখন নেতাদের নিষ্ক্রিয় থাকার জন্য গালমন্দ করছেন। জাতীয়তাবাদী দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় তিনি বলেছেন, নির্বাচনের পর ‘বিদেশিরা’ যখন বলেছেন আন্দোলনে বিএনপি নেই কেন? তখনো নেতাদের টনক নড়েনি। কেউ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেননি। ইতোমধ্যে তিনি নিজে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া রাস্তায় নামলেন না কেন? তারেক জিয়াইবা বিদেশে পালিয়ে থাকলেন কেন, দেশে এসে রাস্তায় নামলেন না কেন? এই ‘কেন’-এর জবাব পাওয়া যাবে না নেতাদের ভয়ভীতির মধ্যে, জবাব খুঁজতে হবে বিএনপি নেত্রী ও তার পুত্রের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক নীতি-কৌশলের মধ্যে। নীতি-কৌশল ভুল বলেই নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকে, রাস্তায় নামে না। কেবল আন্দোলনের নামে ক্যাডাররা বোমা-ককটেল ফাটায়, বাসে-বাড়িঘরে-উপাসনালয়ে আগুন দেয়, নাশকতায় নামে, পুলিশ মারে। প্রশ্নটা হলো ভুল করবেন মা-ছেলে অর্থাৎ এক নম্বর ও দুই নম্বর নেতা আর গালি খাবে অন্য নেতারা এটা হতে পারে না। অতীতের ভুল স্বীকার না করে বরং আরো ভুল পথে ঢাল-তলোয়ার দিয়ে নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে বললে কাজের কাজ হবে না; নিধিরাম সর্দার হয়েই খালেদা জিয়াকে ঘরে বসে কেবল নেতাদের গালিগালাজ করতে হবে।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার এসব কথাবার্তা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, আন্দোলনে জনগণ দূরে থাকুক, নেতাকর্মীদের পর্যন্ত তিনি নামাতে পারছেন না। এই অবস্থায় কী করবেন তিনি এবং তার মুরব্বি বিদেশিরা। এটা কার না জানা, আন্দোলন শত চেষ্টা করেও যখন নীতি-কৌশলের কারণে হয় না; তখন ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পথই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। সামনের দরজা যখন হয় বন্ধ; তখন পেছনের দরজাই হয় ক্ষমতায় যাওয়ার প্রধান অবলম্বন। বিএনপির অতীত ইতিহাস জড়িত হয়ে আছে, এমনকি জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় যাওয়া এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠার মধ্যে রয়ে গেছে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কিশোরগঞ্জের জনসভায় বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সব সময় মানুষের সঙ্গে ছিলেন। প্রশ্ন হলো, যখন তিনি সংবিধান বাতিল করে ক্ষমতা দখল করেছেন, তখন মানুষ ছিল কোথায়? সংবিধান সামরিক ফরমান বলে বাতিল করার সময় কোথায় ছিল মানুষ? ১৫ আগস্টের খুনিদের যখন পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন এবং আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন, তখন কোথায় ছিল জনগণ! বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয় জনগণকে দিয়ে জনতার মধ্যে বসে নয়, ক্যান্টনমেন্টে বিএনপির জন্ম। এ সব দিক বিচারে বিএনপির জন্ম-উত্থান ও বিকাশ ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মধ্য দিয়ে। তাই বিএনপি যে আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের পথটা বেছে নিয়েছে এবং এ পথেই অগ্রসর হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমান দিনগুলোতে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের আলামত নানাভাবে নানা দিক থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বাংলাদেশের জঙ্গিদের অপতৎপরতা এর একটা বড় প্রমাণ। ঈশা খাঁ আর ঢাল-তলোয়ারের কথা উপরে উপরে বলার অর্থ এটাও হতে পারে যে, প্রকাশ্যে গরম কথা বলে জনগণের দৃষ্টিকে সেখানে রেখে ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। বলাই বাহুল্য একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক কেবল পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উল্লিখিতভাবে অনুমানই করতে পারে কিন্তু দশদিক দেখে-শুনে-বুঝে কৌশল-পদক্ষেপ গ্রহণ করা ক্ষমতা-সংশ্লিষ্টদের কাজ। এই কাজ যথাযথভাবে করা হচ্ছে বলেই বিদ্যমান বাস্তবতায় দেশবাসী বিশ্বাস করতে চায়।

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.