নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

সামাজিক ঐক্য এবং মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১১

এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। একটা সরকার আছে। আছে সংসদ। আছেন সাংসদ, আছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী। আছেন অসংখ্য রাজনীতিবিদ। ষোল কোটি মানুষের দেশে রাজনীতিবিদদের সীমা-সংখ্যা নেই। সবাই দেশপ্রেমের কথা বলেন। রাজনীতির কথা বলেন। কিন্ত কি সেই রাজনীতি। দেশপ্রেমটাইবা কি?
পুড়ছে মানুষ। পুড়ছে বাস-ট্রাক-লরি-টেম্পু, দাউ দাই পুড়ে যাচ্ছে জীবন্ত মানুষ। রাজনীতির নাম নিয়ে চলছে অবরোধ। অবরোধের নাম নিয়ে চলছে গাড়ি আটকে দেয়া। গাড়ি আটকে দেয়ার প্রয়োজনে চলছে চলন্ত কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনে আগুন দেয়া। আর এভাবেই যানবাহনে চড়া জীবন্ত মানুষগুলো নিয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে শিশু-কিশোর-তরুণী বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধার জ্বলন্ত অঙ্গার দেহ। বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছে শিশু-মা-বাপ এক সঙ্গে। এভাইে পুড়ছে যেন সারাটা দেশ। অথচ এই জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হওয়া দেশটিতে দানবের মতো অপশক্তি আগুনের মাঝেই জেগে উঠছে প্রতিদিন প্রতিরাতে। আমাদের বলতেই হয় এই দানব আর কিছু নয়, এই দানবের নাম রাজনীতি। রাজনীতির নামে একপক্ষে সরকার অন্যপক্ষে সংসদের বাইরে বাংলাদেশের একটা প্রধান রাজনৈতিক দল। আপাতদৃষ্টিতে আমরা ধরেই নিতে পারি বিএনপি নামক দলটির অবরোধ নামক কর্মসূচির অংশ হিসেবেই জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের ভিন্ন জেলায় ভিন্ন জনপদের যানবাহন। অবরোধে জনগণের সমর্থন প্রশ্নবিদ্ধ। তাই তো জনগণকে বাধ্য করা হচ্ছে। আতঙ্ক সৃষ্টি করছে তারা, সে জন্যই আমরা এর নাম দিতে পারি বিএপির বাধ্যতামূলক অবরোধ। যানবাহন পুড়াচ্ছে তারা বাধ্যতামূলক অবরোধের জন্য। অবরোধ একটা রাজনৈতিক শব্দ বটে। কিন্তু বিএনপির অবরোধ মানে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। এই আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই তারা চালাচ্ছে রাজনৈতিক হত্যা। তাও বিরোধী রাজনীতির মানুষদের নয়। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কিংবা পেশাজীবী কিংবা শিশুদের। আর সে জন্যই এই মানুষ পোড়ানোর দায়ভার তাদেরই বইতে হবে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, যতটুকু তারা তাদের বক্তৃতায় কথায় উচ্চারণ করছে সরকারের গুম-হত্যা-গ্রেপ্তারের কথা, তার এক অংশও তারা উল্লেখ করছে না পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোর কথা। প্রায় পনেরো দিন পর বিএনপির এক সিনিয়র নেতা গণমাধ্যমে এসে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। দেশব্যাপী এই নৃশংস হত্যা, জ্বলন্ত অঙ্গার হওয়া মানুষ প্রভৃতির পরও এতদিন পর মিডিয়ার এসে দুঃখপ্রকাশ করায় এটাই কি প্রমাণিত হয় না যে, প্রকারান্তরে তারাই জানিয়ে দিচ্ছে, তারাই পোড়াচ্ছে, ধ্বংস করছে মানুষ। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে সত্য হলো এদেরকে শুধুই বলা হচ্ছে দুর্বৃত্ত । আসলে এরা দুর্বৃত্তই নয়, বলতে হবে এরা রাজনীতির সৃষ্ট খুনি। স্বীকার করে নিতেই হবে একটা দলের ছত্রছায়াই এরা খুনের সঙ্গে লিপ্ত প্রকাশ্যে, সারা দেশজুড়ে। আর সে হিসেবে মানুষ পোড়ানোর দায়ভারটা নিতেই হবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান এই দল বিএনপিকেই।
বলতেই হবে বিএনপি গত পাঁচ-ছয়টি বছর থেকে কোনো না কোনোভাবে ব্যর্থই হয়েছে রাজনীতির মাঠে। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আন্দোলনের এক পর্যায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত ১৯ ডিসেম্বর (১৯১৩) বিরোধী দলের প্রতি আহবান করেছিলেন নির্বাচনে আসার জন্য এবং বলেছিলেন নির্বাচনে এসে সংবিধানের বিধি-নিষেধ রক্ষা শেষে একটা মধ্যবর্তী নির্বাচনের আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিএনপি কোনো অজানা কারণেই নির্বাচনে না এসে একদম শূন্য মাঠে আওয়ামী লীগের জোটকে গোল করতে দিল। ১৫৩টা আসনে তো এমনকি মাঠ ছাড়াই গোল হলো। ভেঙে পড়লো বিএনপি নামক সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মনোবল। সে জন্যই হয়ত তাদের সামনে যেন আর কোনো পথ খোলা নেই। জামায়াতকে দিয়ে হত্যা-অগ্নোৎসব-মানুষ পোড়ানো প্রভৃতি করিয়েছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে সব। আন্দোলন স্থিমিত হয়ে যায়। বিএনপি কাগুজে বাঘ হয়ে মাঝে মাঝে হুংকার দেয়। কিন্তু মাঠে নামার মতো গণভিত্তি তারা হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের প্রতি বিভিন্ন দেশের সমর্থন আরো হতাশ করে দেয় বিএনপি নামক সংগঠনটিকে। এমনকি শেষ ভরসা হিসেবে ভারতের মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের উত্থান এবং সরকার গঠনে তারা প্রাণ পেয়েছিল। কিন্তু সে প্রাণেও বাতাস লাগেনি। মুখ ফিরিয়ে নেয় মোদির সরকারও। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে তাই শেষ পদক্ষেপ তাদের অবরোধ কিংবা হত্যাযজ্ঞ।
কথা হলো এই যে চলমান হত্যাযজ্ঞ, তার দায়ভার আমরা দিতেই পারি বিএনপি কিংবা এই জোটকে। কিন্তু একটা গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে রাষ্ট্র আছে, সরকার আছে, আছে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, সেখানে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। চলমান হত্যাযজ্ঞ এখন একটা আতঙ্কের নাম। এই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে অনেক কিছু। বিএনপি বলছে সমঝোতার পথে আসার জন্য। উচ্চারিত হচ্ছে সমোঝতা-সংলাপের কথা। মনে হচ্ছে সে পথ যেন রুদ্ধ। কারণ প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন খুনিদের সঙ্গে তাকে এক পাল্লায় না মাপার জন্য। তাছাড়া ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা যে নেই, সে কথা মন্ত্রী আর আওয়ামী লীগের নেতাদের মুখ থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে। অথচ সংলাপ মানেই বিএনপির পক্ষ থেকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তাব। অতএব সে পথ খোলা নেই। তাহলে কোনো পথই কি খোলা নেই? বাংলাদেশটা কি তাহলে এখন এক অন্ধকার সুড়ঙ্গের মতো, যেখান দিয়ে হাঁটছে বাংলাদেশের অগণন মানুষ। একফুটো আলোর জন্য মাথা খুঁটছে প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই আলোক রশ্মি এখন দেখাতে পারেন একমাত্র রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাই।
অথচ দুপক্ষই অনড়। কেউ ছাড় দিতে রাজি নন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংসদ, বিজিবি প্রধান বলেছেন সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের সরাসরি গুলি করার কথা। কিন্তু এই গোলাগুলিতেই কি শেষ রশ্মিটুকু দেখবে বাংলাদেশের মানুষ। অথচ সরকারের সামনে আর হয়ত কোনো পথও খোলা নেই। গুলি আর দুর্বৃৃত্তদের হত্যা করে দেশের আপামর মানুষের সমর্থন কি পাবে সরকার, সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাবে। জনগণ যেন ঐ গোলাগুলিকে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসেবেই ধরে না নেয়, সে ব্যাপারটুকুও ধারণায় রাখতে হবে। বিএনপির চালানো চলমান সন্ত্রাসকে কি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দিয়েই রুখতে হবে। সংলাপ না হলে এর বিকল্পও নেই। সংলাপ-সমঝোতা না হলে রাজনীতিতে হিংসা বাড়তেই থাকবে। দলকেন্দ্রিক রাজনীতি করতে গিয়ে এখন ব্যক্তিগত রেষারেষি ব্যাপকতা পেয়েছে। রাজনীতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, সামাজিক বন্ধন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক নোংরামির কাছে। পরস্পর বিরোধী রাজনীতির কারণে একটা দ্ব›দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ এই দ্ব›দ্ব আদর্শের নয়। কারণ আদর্শ কিংবা নীতিবোধ দিয়ে জনগণকে কাছে টানতে হয়। নীতির কথা এখন কেউ বলার প্রয়োজনই মনে করে না। এখন জনগণকে কাছে টানতে হলে পেশিশক্তির প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজন পড়ে থানা-পুলিশের সঙ্গে প্রগাঢ় সম্পর্কের। যে যত বেশি অপতৎপরতায় জড়িত, সে তত বেশি শক্তিশালী। সমাজ তাকেই মেনে চলে, চলতে হয়। আর সে কারণেই দ্ব›দ্ব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সামাজিক প্রতিপত্তি অর্থ-ক্ষমতা প্রভৃতির জন্য পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ বাড়ছে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাটুকু কমে যাচ্ছে। কারণ চারদিকে যেন অদ্ভুত বিশ্বাসহীনতা গ্রাস করছে বাংলাদেশের মানুষগুলোকে।
দেশ শুধু নয়, প্রবাসে কিংবা অভিবাসেও ছড়িয়ে পড়েছে এ বিশ্বাসহীনতা। নেতৃত্বের চাপিয়ে দেয়া বিশ্বাস-বক্তৃতা কর্মীদের বড় বেশি প্রভাবিত করছে। ইতিহাসের সত্যকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে অল্প শিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত নেতাদের বক্তৃতা এদের উদ্বুদ্ধ করছে এবং নীতিবোধের বাইরে গিয়ে পারস্পরিক রেষারেষি কিংবা দ্ব›েদ্বর মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে তারা। এমনকি পশ্চিমা দেশে বাস করেও গণতান্ত্রিক সহনশীলতা বলতে কিছুই শিখছে না ঐ রাজনৈতিক কর্মীরা। শুধুমাত্র একটা পদ-পদবি পাওয়ার লোভে যে যত বেশি পারে অন্য রাজনীতির আদর্শিক সমালোচনার চেয়ে বিরোধী নেতা কিংবা ব্যক্তির নগ্ন আলোচনায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। দেশে চলছে যে রাজনৈতিক নীতিহীনতা কিংবা বাকযুদ্ধ সেই বাকযুদ্ধ প্রবাসেও এসে জায়গা করে নিয়েছে। এখানেও সামাজিক ঐক্য-সৌহার্দ্য ক্রমেই যেন ক্ষয়ে যাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কি, এ থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক আলোচনার কোনোই বিকল্প নেই। দেশীয় রাজনীতির সুস্থতাই আমাদের এই অভিবাসেও দিতে পারে একটা নির্ভেজাল সামজিক বন্ধন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.