নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
প্রতিটি মানুষের জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য অধিকারের নাম মানবাধিকার । মানুষ এ অধিকার যেমন ভোগ করবে, তেমনি চর্চা করবে। আবার এ অধিকার ভোগ বা চর্চায় অন্যের ক্ষতিসাধন কিংবা প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সঙ্গে সহজাত ও আইনগত। আমাদের দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো মানবাধিকার প্রশ্নে দুষ্কৃতকারীদের ব্যাপারে যতটা সোচ্চার তাতে মনে হয় অপরাধ করার অধিকার প্রদানের নামই মানবাধিকার! অন্যপক্ষে দুষ্কৃতকারীদের হাতে যখন গোটা সমাজ ও দেশের মানুষ জিম্মি হয়ে নির্যাতিত, নিপীড়িত হয় কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যখন আহত-নিহত হয় তখন মানবাধিকারের প্রশ্নে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নীরবতা রহস্যজনক। র্যাব নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর লম্ফঝম্ফ যেমন লক্ষণীয় বিষয় ছিল। এ কথা ঠিক, র্যাবের কিছু সদস্য অতিউৎসাহী হয়ে কিছু কার্যকলাপে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। তবে এ কথা ভুলে গেলেও চলবে না যে, অপরাধ দমনে র্যাবের সাফল্য উল্লেখ করার মতো। অপরাধীদের কাছে র্যাব একটি আতঙ্কের নাম। অপরাধী মহলে এমন আতঙ্ক বিরাজ না করলে অপরাধ দমন সম্ভব হবে না। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ বিশেষ ইস্যুতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ব্যাপক উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করে প্রায়ই বিবৃতি দেয়। কিন্তু দেশে যখন আন্দোলনের নামে অরাজকতা হয়, সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন যখন হুমকির মুখে পড়ে তখন এসব সংস্থার নীরবতাই প্রমাণ করে তাদের বিবৃতি উদ্দেশ্যমূলক অথবা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রণোদনার ফল। ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রায়ই নীরব ভূমিকা মানবাধিকারের প্রশ্নে রহস্যের সৃষ্টি করে।
আমাদের দেশে র্যাব-পুলিশের হাতে সন্ত্রাসী, খুনি নির্যাতিত বা নিহত হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গলা ফাটা চিৎকার-চেঁচামেচি করে দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এটা যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবি তেমনি সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী, চাঁদাবাজ, লুটেরা অথবা ধর্ষক কর্তৃক সাধারণ মানুষ যেভাবে নির্যাতিত, নিপীড়িত হচ্ছে তা কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? অথচ অপরাধী যদি আইন প্রয়োগকারীর তৎপরতায় নির্যাতিত বা মৃত্যুবরণ করে তাহলে মানবাধিকারের নামে যেভাবে সংগঠনগুলোকে সোচ্চার হতে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের মানবাধিকার যেভাবে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসীর অপকর্মে লঙ্ঘিত হচ্ছে সে বিষয়ে তাদের ভূমিকা বরাবরই নীরব প্রশ্নবোধক থেকে যায়। বরাবরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করে তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। ৫ জানুয়ারির আগের প্রেক্ষাপটে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে মারার ক্ষেত্রে অভিযোগের তীর ছোড়া হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে। কিন্তু কখনোই বলা হয় না যে, রাষ্ট্রের আইন মেনে চলার দায়িত্ব নাগরিকের। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এমনকি আইনকে ভয় পাওয়াও নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য। কারণ আইনের দৃষ্টিতে অপরাধকে ভয় না পেলে সে আইন মানবে না। সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের প্রচলিত বিচার পদ্ধতি, আইন-আদালতকে পরোয়া না করে সরাসরি তার বিরুদ্ধাচরণ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অপরাধীর ভয় পাওয়ার কথা, সেখানে তাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। দায়িত্বরত অবস্থায় একজন পুলিশকে রক্তাক্ত করে রাস্তায় ফেলে রাখা হচ্ছে, নিহত হচ্ছেন পুলিশ, র্যাব বা বিজিবির সদস্যরা। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য কী হওয়া উচিত? তারা যখন আহত-নিহত হচ্ছেন, তখন কেন মানবাধিকারের বিষয় গুরুত্ব পায় না? যারা সর্বসাধারণকে নিরাপত্তা দেবে, কোনো দুষ্কৃতকারীর কারণে যদি তারাই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে, সেখানে কোনটি মানবাধিকারের বিষয় হিসেবে গুরুত্ব পাওয়া উচিত_ কেউ সে কথা বলছে না!
একদল দেশের বিচারব্যবস্থা মানছে না। দেশের প্রচলিত আইন মানে না তারা। উপরন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করছে। দেশের বিচারব্যবস্থাকে ভ-ুল করার তৎপরতায় মেতে উঠেছে যারা তাদের নিবারণ করতে গিয়ে বাহিনী সদস্যদের গুলিতে যদি এরা নিহত হয়, তাহলে এটা কেন মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে? এটা যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় তাহলে এই যে নির্বিচারে মানুষকে পেট্রলবোমায় পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? এখন এ পরিস্থিতি সামলাতে হলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে এটাই তো স্বাভাবিক। আর এ কারণে দুষ্কৃতকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জও করছে। এ পরিস্থিতিতে দুষ্কৃতকারীদের কেউ নিহত, আহত অথবা শাস্তির আওতায় এলে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে না।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে মানবাধিকার সংগঠনের ছড়াছড়ি দেখে বোঝা মুশকিল মানবাধিকার কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ইস্যুতে পরিণত হলো কি না। বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে_ জেলা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে মানবাধিকার সংগঠনের শাখা অফিস তৈরি এবং মানবাধিকার কর্মীর পরিচয়পত্র বিক্রির মাধ্যমেও টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। কথিত এসব মানবাধিকার সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদে সর্বজনগ্রহণযোগ্য বিচারপতি, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের নাম রেখে প্রতারণা করা হচ্ছে। দেশের বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠক ও বিচারপতিদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ধনাঢ্য ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকেও মাসহারা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অন্তত একশ'র বেশি কথিত মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠন শ্রমিকদের ইস্যুতে বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে গোপন অাঁতাতের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা লুটে নিচ্ছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণাকারী শতাধিক মানবাধিকার সংগঠন চিহ্নিত করেছে এনজিও ব্যুরো। শিগগিরই এসব সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলসহ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মস দপ্তর। সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে_ সাইনবোর্ড ও প্যাডসর্বস্ব ভুঁইফোড় এসব সংগঠনের কর্মকা-ে ক্ষুণ্ন হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাবমূর্তি। নামসর্বস্ব কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো লব্ধ প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে এমনভাবে নিজেদের নাম রাখছে, যাতে বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এসব সংগঠনের মানবাধিকার 'বাণিজ্য' নাকি এখন জমজমাট।
অভিযোগ উঠেছে_ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা সংগঠনগুলো দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে বিদেশি অর্থ আদায় থেকে শুরু করে থানা ও আদালতে তদবিরের মাধ্যমে অপরাধী ছাড়ানোর মতো কাজেও লিপ্ত। এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নির্যাতিতদের আইনি সহায়তা দেয়ার নামেও সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে তারা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠনের নামের সঙ্গে মিল রেখে প্রতারণার জাল ছড়ানো হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ও রাস্তার পাশে টানিয়ে দেয়া হয়েছে নানা চটকদার সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডে 'বিবাহ, তালাক, যৌতুক, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, পারিবারিক বিরোধ, জমি নিয়ে ঝামেলা, দেনমোহরসহ গরিব-অসহায়দের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা'র আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলা হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েও আইনি সহায়তার নামে প্রতারণা করা হয়। অনেকে নামের মারপ্যাঁচের ঘোরে পড়ে এসব প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয়ে মানবাধিকারের সুরক্ষা পাওয়া দূরে থাক, উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এনজিও ব্যুরো, সমাজসেবা, সমবায়, সমাজকল্যাণ, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্মসের দপ্তর থেকে সোসাইটি অ্যাক্টের অধীনে নিবন্ধন নিয়ে মানবাধিকারের নামে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে সূত্রগুলো উল্লেখ করেছে। অভিযোগ আছে_ প্রতারক চক্রের একটি বড় অংশ বিভিন্ন অখ্যাত আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার কার্ডধারী সাংবাদিক। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মতো একই ধরনের বা কাছাকাছি নাম রয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠনের (সূত্র : সমকাল)।
মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রাথমিক ও বিশেষ দায়িত্ব সরকারের হলেও আমাদের নাগরিকেরও সমান দায় রয়েছে। রাষ্ট্র এককভাবে তার প্রশাসন বা পুলিশ দ্বারা এই মানবিক বিপর্যয়ের পাহারা দিয়ে সমাধান করতে পারবে না। আমাদের নাগরিক দায়িত্ব প্রদর্শন করাও জরুরি। - See more at: Click This Link
©somewhere in net ltd.