নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাপাতি দিয়ে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা কিংবা ধ্বংস করা যায় না

০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৫০

উপুড় হয়ে পড়ে থাকা রক্তাক্ত অভিজিতের পাশেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে তার মস্তিষ্ক। এ চিত্রই অভিজিতের মৃত্যুর কারণ বলে দেয়। তার মৃত্যুর কারণ তার মস্তিষ্ক, তার চিন্তা। ওই ছোট্ট মস্তিষ্ক বিনে অভিজিতের বিশাল দেহের আর কোনো অংশের সঙ্গে তাদের শত্রুতা নেই। তাই হন্তারক তার চিন্তাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে। এখানে দাঁড়িয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়- দিন দিন মানুষ আর জানোয়ারের মধ্যে দূরত্ব ঘুচে যাচ্ছে। এসব জানোয়ার চিন্তা করতে পারে না তো বটেই, উপরন্তু চিন্তার প্রতিপক্ষ হিসেবে এদের হাতে উঠে আসে চাপাতি। একজন মানুষ ‘মানুষ’ হয়ে ওঠে শুধু মাত্র তার চিন্তার মাধ্যমে। এখানেই তার সঙ্গে জন্তুর পার্থক্য। আজকাল চারদিক যেন জন্তুতে ভরা। অভিজিতের স্ত্রীর ছবিটা দেখেও তাই মনে হয়। টিএসসির মতো মানুষে থৈ থৈ করা জায়গায় নিজের রক্তস্নাত শরীর নিয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েও মস্তিকবিচ্ছিন্ন স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বিহŸল হয়ে যেন কিছু খুঁজছিলেন। হ্যাঁ, মানুষের পৃথিবীতে তিনি তখন মানুষ খুঁজছিলেন! মানুষের পৃথিবীতে মানুষের এত অভাব!

অভিজিতের মৃত্যু নিশ্চিত হতে হয়তো দেরি হয়েছিল কিন্তু ঝাঁ করে চারদিক থেকে এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটতে দেরি হয়নি যারা বলছে, অভিজিৎ এই লিখেছিল, ওই লিখেছিল, তার এই বিশ্বাস, ওই বিশ্বাস…। থামুন! অভিজিতের এই নৃশংস মৃত্যুতে ব্যথিত হওয়ার জন্য কি এইটুকু যথেষ্ট নয় যে অভিজিত একজন মানুষ আর আপনিও একজন মানুষ? সোজা কথা, বিশ্বাস যাই হোক, দিনশেষে তিনি তো মানুষ। আমি মনে করি, মানুষই মুখ্য বাকি সব গৌণ। মানুষেই আমার দ্ব্যর্থহীন অভিনিবেশ। মানুষের আগে বিশ্বাস আসতেই এসব চাপাতি আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে, যাবে। মানুষের মস্তক গড়াগড়ি খাচ্ছে ফুটপাথে। মানুষ, মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠার আগে যদি বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকে তাহলে ভবিষ্যতে এই পৃথিবী আবাদ করবে জিন আর জন্তু জানোয়াররা। তাই যত যুক্তিই আসুক না কেন আজ আমি অভিজিতের প্রাণের পক্ষেই দাঁড়াব, দাঁড়ানো উচিত।

শুধু বিশ্বাস বা লেখালেখি কেন, অভিজিৎ যদি এমনিভাবে অন্য আরেকজনের মস্তক বিচ্ছিন্ন করে থাকেন, তাহলেও তার মস্তক বিচ্ছিন্ন করার কোনো কারণ নেই, কোনো যুক্তি নেই। এক অপরাধ দিয়ে আরেক অপরাধকে জাস্টিফাই করার ভাইরাস আমাদের রাজনীতিবিদ আর বুদ্ধিজীবীদের রক্তের কণিকায় লেপ্টে গেছে। ১ ঘণ্টার টকশোর ৫০ মিনিট ধরে দুজন দুই আমলের কুকর্মের ইতিহাস বয়ান করেন। আপনারাও এটি করেছিলেন, ওটি করেছিলেন। রাত জেগে এসব আমরা গলাধঃকরণ করি। করি। তাই অভিজিতের রক্তাক্ত লাশ দেখেও আমাদের প্রথমেই মনে হয় সে বেঁচে থাকতে কী লিখে গিয়েছিল, কী বিশ্বাস করত! এই জাস্টিফাই করার প্রবণতার বিরুদ্ধে অভিজিতের দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল- ফেসবুক ঘেঁটে তার উত্তর পেয়ে গেলাম। অভিজিৎ তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “কাদের মোল্লার বিচারের মাহাত্ম্য দিয়ে মহিলা আইনজীবী পিটানো জায়েজ করা যাবে না, যাবে না পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত আমলের ইডেন কলেজের ছাত্রীদের কী হয়েছিল- সেই ছবি দিয়ে কাউন্টার দেয়ার চেষ্টা করেও। সিমপ্লি- ঃড়ি ৎিড়হমং ফড়হ’ঃ সধশব ধ ৎরমযঃ. একেকটা ছবি সেই আমলের নির্যাতনের সিম্বল হয়ে দাঁড়ায়। বাসন্তীর জাল পরা ছবিটা (সেটা যত সাজানোই হোক না কেন) যেমন মুজিব আমলের লুটপাট আর দুর্ভিক্ষের সিম্বল হয়ে গিয়েছিল, গিয়েছিল আওয়ামী-বাকশালী সরকারের পতনের নিয়ামক হয়ে, আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি মহিলা আইনজীবীদের মাটিতে ফেলে বেধড়ক লাঠিপেটা করার ছবিটাও এবারের আওয়ামী শাসনামলের সিম্বলে পরিণত হবে। দলমত নির্বিশেষে এ ধরনের বর্বরতার প্রতিবাদ হওয়া দরকার। আমার বন্ধু-তালিকার ‘চেতনাইজড’ বাঙালিরা হয়তো ক্ষেপে উঠবেন, কিন্তু আমার কাছে সঠিক স্ট্যান্ড এটাই।”

সমাজের এত মানুষের মধ্যে র‌্যাশনাল মানুষ কই? দিন দিন যুুক্তি-দ্ব›দ্ব এখানে ভীষণ অপাঙ্ক্তেয় হয়ে উঠছে। কেউ কী বলতে পারবে, কোন আইনের ভিত্তিতে, কোন ধর্মীয় বিধানের ভিত্তিতে, কোন নৈতিকতার ভিত্তিতে খুন করা হলো অভিজিৎকে। লজ্জা, ক্ষোভ, ঘৃণা, কোনো কিছুই, কোনো শব্দই আজ যুৎসই মনে হচ্ছে না। যেন যুক্তি আর চিন্তাহীনতার এক ঘন্ধকার আমাদের সামনে! হে ঘাতক, যুগে যুগে কাপুরুষরাই পেছন থেকে আঘাত করেছে। তোমার অবস্থান যদি সত্যই হবে তবে সামনে থেকে (যুক্তি দিয়ে) আঘাত কর। জানি, সেটা সম্ভব নয়। কারণ তুমি মানুষ নও। তাই হে হন্তারক, আপাতত তোমার মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় যাওয়ার দরকার নেই। আগে নিজের মানুষ পরিচয়টি নিশ্চিত কর। চিত্তের বিকাশ কর। আগে তোমার হৃদয়ের পরিচর্যা কর, তারপর বিশ্বাসের। চাপাতি দিয়ে যেমনিভাবে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করা যায় না তেমনিভাবে বিশ্বাস ধ্বংসও করা যায় না।

সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.